২৩ তারিখ শুরু হওয়ার কথা অলিম্পিক। কিন্তু তার আগে অসংখ্য খেলোয়াড় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
বিজ্ঞাপন
এবারের অলিম্পিক নিয়ে গোড়া থেকেই নানা ধোঁয়াশা ছিল। আদৌ এই পরিস্থিতির মধ্যে অলিম্পিকের আয়োজন করা ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু অলিম্পিক কমিটি এবং জাপানের সরকার জানিয়ে দিয়েছিল, সমস্তরকম সুরক্ষার ব্যবস্থা করে অলিম্পিকের আয়োজন হবে।
টোকিও অলিম্পিক: জাপান এখনো সংশয়ে
আবার না পিছালে দু মাসের মধ্যেই শুরু হবে টোকিও অলিম্পিক৷ কিন্তু জাপানের অনেক মানুষ ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আসরকে এখনো মন থেকে মেনে নিতে প্রস্তুত নন৷ করোনা আতঙ্ক এখনো ছাড়েনি তাদের৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Kim Kyung Hoon/REUTERS
‘অর্থনীতির স্বার্থে হওয়া দরকার, তবে সবার নিরাপত্তার দিক দেখলে একেবারেই নয়’
ফিনল্যান্ডের নাগরিক থেরেজ উইক টোকিওর এক বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করেন৷ তার মতে, ‘‘ দেশের অর্থনীতির স্বার্থে আয়োজনটা হওয়া দরকার, তবে সবার নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিলে তা একেবারেই হওয়া উচিত নয়, বরং পরিকল্পনা বাতিল করা উচিত৷’’
ছবি: Kim Kyung Hoon/REUTERS
‘মানুষকে সক্রিয় এবং স্বপ্ন পূরণে সচেষ্ট দেখতে চাই’
টোকিওর এক পোষা প্রাণির দোকান মালিক নোবুয়াকি মোরিবে বলেন, ‘‘করোনা ভাইরাস আরো কিছুদিন থাকবে, তাই মানুষের হাল ছেড়ে দেয়া উচিত নয়৷ আমি মানুষকে সক্রিয় এবং তাদের স্বপ্ন পূরণে সচেষ্ট দেখতে চাই৷’’
ছবি: Kim Kyung Hoon/REUTERS
‘এ সময়ে এর প্রয়োজন নেই’
ডাবল-ডাচ রোপ জাম্পার কাই মনে করেন জাপানের মানুষ যখন করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের আগমনের আশঙ্কায়, তখন এমন আয়োজনের খুব প্রয়োজন ছিল না৷ টোকিওর ইয়োয়োগি পার্কে প্র্যাকটিস করতে করতে তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয় এখন অলিম্পিক আয়োজনের দরকার নেই৷ তবে তারা (আয়োজক কমিটি) যদি মানুষকে খুব উজ্জীবিত করতে পারে, সবার মনে আনন্দ ফিরিয়ে আনতে পারে, তাহলে তা হতে পারে৷’’
ছবি: Kim Kyung Hoon/REUTERS
‘এখনো তো খুব কম মানুষই টিকা পেয়েছে’
টোকিওর ব্যাংক-কর্মী তাকাশি কিতাহারা মনে করেন জাপানের অধিকাংশ মানুষ এখনো করোনার টিকা পায়নি, সুতরাং এমন পরিস্থিতিতে চতুর্থ ঢেউকে আহ্বান জানানোর মতো পদক্ষেপের কোনো মানে হয় না, ‘‘এখানে কয়েক শতাংশ মানুষ এখনো টিকা পেয়েছে৷ তাই আমার মনে হয় এই পরিস্থিতিতে গেমস আয়োজন করার সিদ্ধান্ত খুবই বিপজ্জনক৷’’
ছবি: Kim Kyung Hoon/REUTERS
‘নিয়ম মানলে আয়োজন করা সম্ভব’
৫৭ বছর বয়সি কেনিচি হোন্ডা অবশ্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে অলিম্পিক গেমস আয়োজনের পক্ষে৷ তার মতে, ‘‘তারা (আয়োজক) বলছে, বেসবলে দর্শক থাকবে, সুমো কুস্তিতে দর্শক থাকবে- এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাও নেয়া হবে৷ সেক্ষেত্রে তো মনে হয়, এমন আয়োজন করা যেতেই পারে৷’’
ছবি: Kim Kyung Hoon/REUTERS
‘ক্রীড়াবিদদের কথা ভাবলে মনে হয় অলিম্পিক হওয়া উচিত’
যোগ ব্যায়ামের ইন্সট্রাক্টর কাইকো ইয়ামামুরা বলেন, ‘‘এটা ঠিক অংশগ্রহণকারী ক্রীড়াবিদদের মাধ্যমে করোনার অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলো চলে আসার ঝুঁকি রয়েছে৷ সেরকম হলে তো বিপজ্জনক৷ তবে ক্রীড়াবিদরা যে এ আয়োজনের জন্য দীর্ঘদিন কঠোর পরিশ্রম করেছেন, তাদের কথা ভাবলে মনে হয়- চলো অলিম্পিকটা আয়োজন করে ফেলি৷’’
ছবি: Kim Kyung Hoon/REUTERS
‘এমন পরিস্থিতিতে অলিম্পিক আয়োজনের পরিকল্পনা অবিশ্বাস্য’
আয়োজক কমিটি আগেই জানিয়েছে, এক বছর পর শুরু হতে যাওয়া টোকিও অলিম্পিক দেখতে বিদেশি দর্শকরা যেতে পারবেন না৷ ৭৩ বছর বয়সি সাবেক চাকরিজীবী মিরেই সাকাই মনে করেন, ‘মহামারি সারাবিশ্বে যখন আতঙ্ক ছড়িয়ে চলেছে, তখন বিদেশি (ক্রীড়াবিদদের) এভাবে আমন্ত্রণ জানানো সত্যিই অবিশ্বাস্য৷’’
ছবি: Kim Kyung Hoon/REUTERS
‘বাতিল করলে জাপান পস্তাবে’
সুশি রেস্তোরাঁর মালিক তাকাশি ইওনেহানা বলেন, ‘‘অলিম্পিক আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নিলে জাপানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে৷ তখন জাপান পস্তাবে৷আমি মনে করি,আগামি দুমাসে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে অলিম্পিকও হওয়া উচিত৷’’
ছবি: Kim Kyung Hoon/REUTERS
’৯৭ বছর বয়সি শ্বশুর অপেক্ষায় আছে’
সাচি ওহাশি জানালেন জাপানে এমন মানুষও আছে যারা ১৯৬৪ সালের টোকিও অলিম্পিক দেখেছিলেন৷ তারা সবাই জীবদ্দশায় দেশের মাটিতে দ্বিতীয় অলিম্পিক গেমস দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন৷ সাচি জানালেন, তার ৯৭ বছর বয়সি শ্বশুরও জাপানে আবার অলিম্পিক দেখার জন্য উদগ্রীব৷
ছবি: Kim Kyung Hoon/REUTERS
9 ছবি1 | 9
বস্তুত, সেই মতোই অলিম্পিকের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দর্শকদের মাঠে ঢুকতে দেওয়া হবে না। গেমস ভিলেজে অতিরিক্ত সুরক্ষা, সাংবাদিকদের জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি করা হয়েছে। বায়ো বাবল বা জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করা হয়েছে খেলোয়াড়দের জন্য। কিন্তু তাতেও শেষ পর্যন্ত লাভ হয়নি। জৈব বলয়ের মধ্যেও বহু খেলোয়াড় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। করোনা ধরা পড়েছে। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক হয়েছে যে, অলিম্পিক কমিটি নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। আদৌ এই পরিস্থিতিতে অলিম্পিক চালু করা ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করেছেন অলিম্পিককমিটির প্রধান তোসিরো মুতো। তিনি জানিয়েছেন, যে ভাবে করোনা ছড়াচ্ছে তাতে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও অলিম্পিক বাতিলের প্রসঙ্গটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্রুত তারা সিদ্ধান্ত জানাবেন।
গত কয়েকদিনে জাপানে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। ফলে জাপানের নাগরিক সমাজের মধ্য থেকেও অলিম্পিক বাতিলের দাবি উঠেছে। জাপানের চিকিৎসক এবং ভাইরোলজিস্টরা আগেই এ বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করেছিলেন।