সোমবার বিকেলেই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ঢুকে পড়ে স্থলভাগে। তবে ঝড়ের মধ্যস্থল স্থলভাগে ঢুকেছে রাতের দিকে। বরিশাল এবং চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চলে ঝড় স্থলভাগে আছড়ে পড়ে। তবে সিত্রাং যতটা বেগে আসবে ভাবা গেছিল, ততটা বেগে আসেনি। স্থলভাগে আসার পরেই তা নিম্নচাপে পরিণত হয় বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।

দুপুর থেকেই উত্তাল ছিল চট্টগ্রামের সমুদ্র। যত বিকেল গড়িয়েছে, সমুদ্র তত উত্তাল হয়েছে। ঝড় আসার মুহূর্তে চট্টাগ্রামের সুমদ্রের ছবি।

সকাল থেকেই সতর্ক ছিল প্রশাসন। উপকূলবর্তী মানুষদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সমুদ্রে কাউকে নামতে দেয়া হয়নি। মৎস্যজীবীদের সমুদ্র থেকে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

বরগুনার সাইক্লোন শেল্টারে কয়েক হাজার মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে পৌঁছে গেছিলেন আমাদের প্রতিনিধি।

সব মানুষকে শেল্টারে নিয়ে যাওয়া যায়নি। বরগুনায় ঝড়ের দাপটে এখনো পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান প্রথম আলোকে দুপুরেই জানিয়েছিলেন, সিত্রাংয়ের প্রভাবে ১৩ জেলায় ক্ষতির আশঙ্কা আছে। ঝড়ের শক্তি কমে যাওয়ায় সন্ধের পর অবশ্য বিপদ সংকেতের মাত্রা কমিয়ে দেওয়া হয়।

ছোট বাচ্চাদের নিয়েও মায়েরা চলে এসেছেন ক্যাম্পে। বাড়িতে সব ছেড়ে চলে এসেছেন তারা। জানেন না, ফিরে গিয়ে কী দেখবেন বাড়িতে। আদৌ বাড়ি টিকে থাকবে তো!

অনেকেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। সোমবার বিকেলে কক্সবাজারে বাস ধরার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

ঝড়ের কারণে সোমবার দুপুর থেকেই লঞ্চ চালানো বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন। ফলে অন্য গণপরিবহনেই াস্থা রাখতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে।

ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের মাঝামাঝি এলাকায় উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং৷ জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের পূর্বাভাস বলছে, বাংলাদেশ সময় সোমবার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের চোখ বা কেন্দ্রভাগ পটুয়াখালীর রাঙাবালি বা চর মন্তাজ এলাকায় উপকূল স্পর্শ করবে। তখন বাতাসের গতিবেগ থাকবে সর্বোচ্চ ৫০ নট বা ঘণ্টায় ৯৩ কিলোমিটারের মত।

দেশের উপকূলীয় সব জেলাতেই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে৷ পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালীসহ উপকলীয় জেলাগুলোতে প্রবল ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি চলছে বলে জানাচ্ছেন বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজে প্রতিনিধিরা৷

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, সিত্রাংয়ের প্রভাবে ১৩ জেলায় ক্ষতির আশঙ্কা বেশি৷ এগুলো হচ্ছে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বরিশাল৷

মোংলা ও পায়রার পাশাপাশি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকেও ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। তবে কক্সবাজারের জন্য আগের মতই ৬ নম্বর বিপদ সংকেত বহাল রয়েছে।

সিত্রাংয়ের প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করায় সারাদেশে লঞ্চসহ সকল ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ৷

সিত্রাং উপকূলের দিকে এগিয়ে আসায় চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি থেকে পণ্যবাহী সব জাহাজকে বর্হিনোঙরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷ ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷

সিত্রাংয়ের প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বরিশাল বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ৷ ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷

সিত্রাংয়ের প্রভাবে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে উচ্চ জোয়ারে ও উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে ১৩টি মাছ ধরার ট্রলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তবে এতে কেউ হতাহত বা নিখোঁজের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা৷ সেন্টমার্টিন ইউপির চেয়ারম্যান মো. মুজিবুর রহমান জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব সমুদ্র উপকূলে সোমবার সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে৷ ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷