1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাদুড়ঝোলা বাসে দ্বিগুণ ভাড়া

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৮ আগস্ট ২০২০

করোনায় সামাজিক দূরত্ব না মেনে যাত্রী বোঝাই করা হলেও গণপরিবহনে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ৷ এ নিয়ে যাত্রী ও বাসের কর্মীদের মধ্যে প্রতিদিনই ঝামেলা হচ্ছে৷ বেশি ভাড়া নেয়ার কারণ জানতে চাইলে সাফ জবাব, ‘‘সরকারকে জিজ্ঞেস করুন৷’’

ফাইল ছবিছবি: DW/M. R. Rahman

সাদ্দাম হোসেনের বাসা মোহাম্মদপুর এলাকায়৷ নানা কাজে এই করোনার মধ্যেও তাকে বাইরে যেতে হয়৷ করোনার আগে মোহাম্মদপুর থেকে শাহবাগ যেতে তার বাস ভাড়া ছিল ১০ টাকা৷ এখন লাগে ২০ টাকা৷ এয়ারপোর্ট যেতে লাগত ৩৫ টাকা এখন লাগে ৭০ টাকা৷ কিন্তু এতেও তার আপত্তি থাকতো না যদি নির্দেশ মত সামাজিক দূরত্ব মানা হত৷ তিনি বলেন, ‘‘বাসসহ কোনো গণপরিবহনেই এখন আর সামাজিক দূরত্ব মানা হয় না৷ সিটতো খালি থাকেই না দাঁড়িয়েও লোকজন যাতায়াত করেন৷ কিন্তু ভাড়া নেয়া হচ্ছে দ্বিগুণ৷’’

২৫ মার্চ থেকে করোনার কারণে সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়৷ ২ জুন থেকে আবার চালু করার সময় ১১টি শর্ত দেয়া হয়৷ তারমধ্যে প্রধান শর্ত হলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বাসের অর্ধেক সিট খালি রাখতে হবে, এক সিট বাদ দিয়ে যাত্রীরা বসবেন৷ আর যাত্রী যেহেতু কম হবে তাই যাতে লোকসান না হয় সেজন্য ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়িয়ে দেয়া হয়৷ এরপরও সরকারি এই ঘোষণার সুযোগ নিয়ে বাস্তবেভাড়া বাড়ানো হয় শত ভাগ৷ কিন্তু সিট ফাঁকা রাখাতো দূরের কথা এখন বাদুড়ঝোলা হয়ে বাসে চড়ছেন যাত্রীরা৷ কিন্তু ভাড়া দিতে হচ্ছে দ্বিগুণ৷

যাত্রীদের কথা, প্রথম কয়েক সপ্তাহ সামাজিক দূরত্ব মানা হলেও এখন আর যেহেতু মানা হচ্ছে না তাহলে তারা দ্বিগুণ ভাড়া কেন দেবেন? সাদ্দাম জানান, ‘‘এই অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে এখন প্রায় প্রতিদিনই যাত্রীদের সাথে বাসের হেলপার-কন্ডাকটারদের সাথে ঝামেলা হয়৷ হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে৷ আমার সাথেও ঝামেলা হয়েছে৷ ভাড়া কেন বেশি দেব জিজ্ঞেস করলে বলে, সরকারকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন৷’’

ভাড়া কেন বেশি দেব জিজ্ঞেস করলে বলে সরকারকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন: যাত্রী

This browser does not support the audio element.

শাহারুল ইসলাম নামে আরেকজন জানান, দূরপাল্লার বাসেও একই অবস্থা৷ তিনি কয়েকদিন আগে ঢাকা থেকে তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা যান৷ যাওয়া আসার সময় বাসে কোনো সিট খালি ছিল না৷ কিন্তু ভাড়া দ্বিগুণই নিয়েছে৷ বেশি ভাড়া কেন জানতে চাইলে বলে, ‘‘বাসে চড়েন কেন? আপনারা চড়েন বলেইতো আমরা সিট খালি রাখতে পারি না৷’’

যাত্রীরাও এখন আর স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে ঠাসাঠাসি করেই বাসে উঠছেন৷ তাদের কথা, সব কিছু খুলে গেছে, অফিস- আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তো যেতে হয়৷ বাসে না গেলে যাব কিভাবে? আর এটা হয়েছে পরিবহন মালিকদের জন্য একটি বড় সুযোগ৷ তারা বাস বোঝাই করছেন, আবার ভাড়াও নিচ্ছেন দ্বিগুণ৷

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, বাস ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তই ছিলো ভুল৷ জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করে আর প্রকৃত সিটের হিসাব করলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলেও বাস ভাড়া একই রাখা যেত৷ কিন্তু মালিকরা তাদের মুনাফার জন্য সরকারকে চাপ দিয়ে ভাড়া বাড়িয়ে নিয়েছে৷ দেশে একবার ভাড়া বাড়লে তা আর কমানো কঠিন৷ সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘শুধু বাস নয়,সব ধরনের পরিবহনে এই সুযোগে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে৷ যাদের আয় কম তারাই গণপরিবহনে চলাচল করেন৷ করোনায় তাদের আয় কমে গেলেও দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে চলতে হচ্ছে৷ এটা জুলুম৷ স্বাস্থ্যবিধিও মানা হচ্ছে না আর ভাড়াও দ্বিগুণ আদায় করা হচ্ছে৷ এর অবসান হওয়া প্রয়োজন৷’’

ভাড়া কমানো তো সরকারের সিদ্ধান্ত ছাড়া হবে না: মালিক সমিতির নেতা

This browser does not support the audio element.

পরিবহন মালিকেরা জানান, তাদের পরিবহন ব্যবসায় গতি ফিরে এসেছে৷ এখন যেহেতু সব কিছু খুলে দেয় হয়েছে তাই যাত্রী এখন স্বাভাবিক সময়ের মতোই৷ কিন্তু সরকারের নির্দেশনা না পেলে ভাড়া তারা কমাতে পারেন না বলে তাদের দাবি৷

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, তারা এরই মধ্যে যোগাযোগ সচিব এবং বিআরটিএ'র চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছেন৷ চিঠিতে আগের নির্দেশনা বাতিল করে স্বাভাবিক সময়ের মতো গণপরিহন চালানোর অনুমতি চেয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যাত্রীর চাপ এখন অনেক৷ তাই সিট খালি রেখে গণপরিবহন চালানো যাচ্ছে না৷ দূরপাল্লার বাসেও একই অবস্থা৷ আর করোনা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে৷ তাই সরকারের নির্দেশ পেলেই আমরা ভাড়া স্বাভাবিক সময়ের মত নেব৷ বাড়তি ভাড়া নেব না৷’’

তিনি দাবি করেন, ‘‘ভাড়া কমানো তো সরকারের সিদ্ধান্ত ছাড়া হবে না৷ কারণ যাত্রী বেশি হলেও সরকারের তো নিষেধ আছে৷ আর পথে পথে তো পুলিশের তল্লাশি হয়৷ যা হচ্ছে যাত্রীদের চাহিদার কারণে হচ্ছে৷ তারাও উঠছে৷ আমরাও নিচ্ছি৷’’

এনিয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি৷ তবে জানা গেছে বুধবার বিআরটিএতে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে৷ ওই বৈঠকে স্বাস্থ্যবিধি ও ভাড়া নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ