1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বান্দরবানে হামলা: আগুনে নি:স্ব আটটি ম্রো পরিবার

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৮ জানুয়ারি ২০২৩

বান্দরবানের লামায় ম্রো পল্লিতে হামলা ও আগুনের ঘটনায় কমপক্ষে আটটি পরিবার নি:স্ব হয়ে গিয়েছে। এই আগুন ও হামলার ঘটনায় গত সাত দিনেও কেউ আটক হয়নি। এই ঘটনা পরিকল্পিত বলেই অভিযোগ আনা হচ্ছে।

হামলার সময় এলাকায় লুটতরাজ চালানো হয় বলে অভিযোগ
হামলার সময় এলাকায় লুটতরাজ চালানো হয় বলে অভিযোগছবি: Privat

নতুন বছরের শুরুতে ভোর রাতে বান্দরবানেরলামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে রেঙয়েন কারবারি পাড়ায় ম্রোদের ঘরে আগুন দেয়া হয়। একই সঙ্গে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগও পাওয়া গেছে। আর এই অভিযোগ সেখানকার লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

২ জানুয়ারি রাত একটা থেকে ভোর রাত ৪টা পর্যন্ত  দিকে  পাঁচ-ছয়টি ট্রাকে করে বহিরাগতরা এসে রেঙয়েন ম্রো পাড়ায় আগুন দেয় বলে অভিযোগ।

তাদের নেতা রেঙয়েন কারবারি ডয়চে ভেলেকে জানান, "রাতে আমরা ঘুমিয়ে পড়েছি। হঠাৎ দেখি কয়েকটি ঘরে আগুন জ্বলছে। রাবার বাগানের ২০-২৬ জন লোক বেশ কয়েকটি  ট্রাকে করে আসে। তার তিনটি ঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। তিনটি ঘরই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। আরো পাঁচটি ঘর তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে কুটি কুটি করে ফেলে। ঘরের বাসিন্দারা এসময় প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে পাশের পাড়ায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। কেউ কেউ পাশের ঝোপে লুকিয়ে থাকে।”

তিনটি ঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়: রেঙয়েন কারবারি

This browser does not support the audio element.

তিনি অভিযোগ করেন, " হামলাও আগুনের সময় ওই বাড়িগুলোসহ আশপাশের বাড়িতে লুটতরাজ চালানো হয়। তারা মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে যা পেয়েছে তা নিয়ে গিয়েছে। আর আগুনে ঘরে রাখা চালসহ খাদ্যদ্রব্যও পুড়েছে। পরিবারগুলো নি:স্ব হয়ে গিয়েছে। ”

তার অভিযোগ," পাশের রাবার কোম্পানি অনেক দিন ধরেই ম্রোদের জমি ও বাড়িঘর দখলের জন্য বার বার হামলা করছে।। এর আগে ২০২২ এবং ২০১৯ সালেও হামলা ও আগুন দেয়া হয়।”

রেঙয়েন কারবারি বলেন," আমি বাদি হয়ে রাবার বাগানের যারা হামলাকারী তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। কিন্তু পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। রাবার কেম্পানির দেলোয়ার, নুর ও মহসিনের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে।”

পাশের পাড়ার কারবারি লাংকম ম্রো বলেন," রাবার কোম্পানির লোকজন হামলা ও আগুন দেয়ার আগে গুলি বা বোমা ফুটিয়ে শব্দ করে। তাতে ওই পাড়ার লোকজন ভয়ে পালিয়ে যায়। পালিয়ে না গেলে সবাই পুড়ে মারা যেত।”

তিনি অভিযোগ করেন," হামলাকারীরা হাঁস, মুরগি, ছাগল, টাকা পয়সা সব নিয়ে যায়।”

প্রেমসেন ম্রো অভিযোগ করেন," রাবার কোম্পানি এরইমধ্যে তিন হাজার একর জমিতে রাবার বাগান করেছে। তারা এখন ম্রোদের ৪০০ একর জমিও দখল করতে চায়। আর তাদের সহায়তা করছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।”

'রাবার কোম্পানি ম্রোদের জমি দখল করতে চায়'

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, " হামালা ও আগুনের সময় পুলিশ ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে ফোন করলেও তারা ফোন ধরেননি। আর হামলার পর দুপুরের দিকে পুলিশ আসে তদন্ত করতে। কিন্তু হামলার দিন বিকেলে পুলিশ এসে আমাদের হুমকি দিয়ে যায়। বলে আমরা ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে পারবনা। রাতেই হামলা হয়।”

এই শীতে হামলার শিকার পরিবারগুলো এখন খোলা আকাশের নিচে আছে। কেউ পাশের পাড়ায় আশ্রয় নিয়েছে। রবিবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে তিনটি পরিবারকে কিছু ঢেউটিন এবং সবাইকে কম্বল ও কিছু খাদ্য দেয়া হয়েছে।

লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজার মো. কামাল উদ্দিন হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে করে বলেন," আমি ঘটনার সময় রাবার বাগানে ছিলাম না, ঘটনা শোনার পর দুইদিন আগে আমি বাগানে এসেছি। রাতের অন্ধকারে কে বা কারা হামলা করেছে আমরা জানিনা। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে।”

তিনি দাবি করেন," এক হাজার ৬০০ একর জমি বরাদ্দ নিয়ে আমরা রাবার বাগান করছি। তবে এখন যেটাকে ম্রো পাড়া বলা হচ্ছে এখানে আগে তারা ছিলোনা। বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা এসেছে। তারা আমাদের জমিতে ঢুকে মাঝেমধ্যে জুম চাষ ও ঘরবাড়ি বনানোর চেষ্টা করে।”

আর লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম চৌধুরী ঘটনার সময় পুলিশ না যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন," পুলিশ খবর পেয়ে যত দ্রুত সম্ভব গিয়েছে। তারা হয়তো দেখতে পায়নি।”

'খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গিয়েছে পুলিশ'

This browser does not support the audio element.

তিনি জানান," ম্রোদের  দায়ের করা মামলার তদন্ত হচ্ছে। যারা জড়িত তাদের আমরা অবশ্যই আইনের আওতায় আনব। আর আগের হামলার মামলাগুলোরও তদন্ত হচ্ছে।”এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, রেঙয়েন ম্রো পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরাপাড়া ও লাংকম ম্রোপাড়া- এই তিনটি জুমিয়াপাড়া পাশাপাশি অবস্থিত। এর আগে গত বছর ২৬ এপ্রিল তিনটি পাড়ার জুম ভূমি, বাগান ও প্রাকৃতিক বন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই আগুনে ৪০০ একর এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ