বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে দুই নেত্রীর সঙ্গে জাতিসংঘের মহাসচিব কথা বলার পরও সংকট কাটার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ কোনো দলই ছাড় না দিয়ে যে যার অবস্থানে অনড়৷ বিএনপি যাচ্ছে আন্দোলনের দিকে আর আওয়ামী লীগ প্রচারণায়৷
বিজ্ঞাপন
গত সপ্তাহে দেশের দুই নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট নিয়ে টেলিফোনে কথা বলেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন৷ এর আগে পাঠান তাঁর দূত৷ জাতিসংঘ মহাসচিবের টেলিফোনের পর সাধারণ মানুষ এবং সুশীন সমাজ আশা করেছিল, নির্বাচনকালীন সরকার-ব্যবস্থা নিয়ে দুই দলের মধ্যে হয়ত সমঝোতার একটি উদ্যোগ দেখা যাবে৷ হয়ত সেখানে দুই দলই একটু ছাড় দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সামাধানে পৌঁছাবে৷ কিন্তু দুই দল জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও, তাদের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি৷
মুহাম্মদ ইউনূসের আরেকটি অর্জন
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদক গ্রহণ করেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷ বুধবার ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ভবনের রোটান্ডায় ইউনূসের হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন জন বোয়েনার৷
ছবি: Getty Images
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঝুড়িতে আরেকটি সম্মাননা যোগ হলো৷ বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদক গ্রহণ করেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা৷ তবে নিজের দেশে বর্তমানে বেশ চাপের মধ্যে আছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী অধ্যাপক ইউনূস৷
ছবি: Getty Images
সম্মাননা গ্রহণ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উভয় কক্ষের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ভবনের রোটান্ডায় অধ্যাপক ইউনূসের হাতে সম্মাননা তুলে দেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার জন বোয়েনার৷ এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যান্সি পেলোসি (বামে)৷
ছবি: Getty Images
বাংলাদেশের মানুষকে উৎসর্গ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা কংগ্রেশনাল গ্রহণ করার পর ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘‘সকলে আমার কাজে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন বলেই ক্ষুদ্রঋণের ধারণাটি আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত৷ আমি এ সম্মান বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্যে উৎসর্গ করলাম৷’’
ছবি: Getty Images
‘প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক’
এর আগে ২০০৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি মর্যাদাশীল সম্মাননা অর্জন করেন ইউনূস৷ ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক’ পান ড. ইউনূস৷ সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী এই সম্মাননা দেওয়া হয়৷
ছবি: AP
অন্য উচ্চতায় ইউনূস
বলাইবাহুল্য, ইউনূস হচ্ছেন প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশি, যিনি নোবেল পুরস্কার জয়ের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি মর্যাদাশীল সম্মাননা অর্জন করেছেন৷ গোটা বিশ্বে মাত্র সাতজন জীবদ্দশায় এই তিনটি সম্মাননা পেয়েছেন৷ এরা হচ্ছেন নরম্যান বারলগ, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, নেলসন ম্যান্ডেলা, এলি উইসেল, অং সান সু চি, মাদার টেরেসা এবং সর্বশেষ মুহাম্মদ ইউনূস৷
ছবি: AP
গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা
গরিব মানুষ বিশেষ করে নারীদের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার জন্য ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন মুহাম্মদ ইউনূস৷ আধুনিক ক্ষুদ্রঋণের জনক বলা হয় তাঁকে৷ গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্ষুদ্রঋণকে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন তিনি৷ ক্ষুদ্রঋণের এই ধারণা অধ্যাপক ইউনূসকে গোটা বিশ্বেই সম্মানজনক পরিচিতি এনে দিয়েছে৷
ছবি: AP
শান্তিতে নোবেল জয়
২০০৬ সালের যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয় করেন অধ্যাপক ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক৷ সেবছরের ডিসেম্বরে নরওয়ের রাজধানী অসলো’র টাউন হলে এই সম্মাননা গ্রহণ করেন অধ্যাপক ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিনিধি তসলিমা বেগম৷
ছবি: AP
রাজনীতির ইচ্ছা এবং বিড়ম্বনা
শান্তিতে নোবেল জয়ের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবেশের ঘোষণা দেন অধ্যাপক ইউনূস৷ তবে এই সিদ্ধান্ত থেকে দ্রুতই সরে আসেন তিনি৷ কিন্তু অনেকেই মনে করেন, রাজনীতিতে নামার এই বাসনার কারণে পরবর্তীতে অনেক রাজনীতিবিদের চক্ষুঃশূল হন তিনি৷
ছবি: AP
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ‘বিদায়’
শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূস সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ বেশ খানিকটা চাপের মধ্যে রয়েছেন৷ বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইউনূসকে অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক৷ এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়েছেন ইউনূস৷ এখন (১৮.০৪.১৩) পর্যন্ত ব্যাংকটিতে নতুন কোন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ সম্ভব হয়নি৷
ছবি: dapd
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ?
যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কখনো অধ্যাপক ইউনূসকে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে স্বীকার করেননি৷ তবে একথা বহুদিন ধরে চালু যে, অধ্যাপক ইউনূসের উপর কোন কারণে নাখোশ শেখ হাসিনা৷ যেকারণে চলতি সরকারের মেয়াদে নিজ দেশ বিভিন্ন ইস্যুতে চাপে আছেন মুহাম্মদ ইউনূস৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন জনসভায় আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে শুরু করেছেন ইতিমধ্যে৷ শুক্রবারও তিনি ঢাকায় এক জনসভায় সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ মুক্ত দেশ গড়তে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান৷ তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন সংবিধানের অধীনেই হবে৷ কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা দেয়া হবে না৷
১লা অক্টোবর থেকে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হওয়ার কথা৷ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ডয়চে ভেলেকে জানান, নির্বাচন যথা সময়েই হবে৷ আর আওয়ামী লীগ সেই নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত৷ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অনানুষ্ঠানিকভাকে প্রচারণার কাজ শুরু করে দিয়েছে৷ আনুষ্ঠানিক প্রচারণাও শুরু হবে৷ তাঁর কথা, দেশ এখন নির্বাচনমুখী হয়ে উঠছে৷
বিপরীতে ৮ই সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকার বাইরে জনসভা শুরু করছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া৷ ৫ই অক্টোবর পর্যন্ত তিনি নরসিংদি, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল – এই ছয়টি বিভাগে জনসভা করবেন৷ এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ না হলে ঢাকায় মহসমাবেশ করে কোরবানির ঈদের পর দাবি আদায়ে সর্বাত্মক আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে৷ খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবারও বলেন যে, কোনো অবস্থায়ই দলীয় সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে যাবেন না৷ আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে৷
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ ডয়চে ভেলেকে জানান, দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়৷ এছাড়া, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না৷ তাই সরকার নির্বাচনের জন্য যত দ্রুত নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার-ব্যবস্থা মেনে নেয়, ততই মঙ্গল৷