1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২২তম বার্ষিকী

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী৬ ডিসেম্বর ২০১৪

হিন্দু দেবতা রামচন্দ্রের জন্মস্থান, রাম মন্দির, নাকি মোগল সম্রাট বাবর শাহ-র আমলে নির্মিত একটি মসজিদ? বিষয়টি নিয়ে ১৮৫৩ সাল থেকে হিন্দু-মুসলমান বিরোধ চলেছে, যা চরমে ওঠে ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর তারিখে৷

Bildergalerie 20 Jahre nach dem Herabreißen der Babri-Moschee
ছবি: Getty Images/AFP/D .E. Curran

রামায়ণ-খ্যাত অযোধ্যা শহর ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের ফৈজাবাদ জেলায় অবস্থিত৷ তারই কাছে রামকোট পর্বত৷ ১৫২৭ সালে সেখানে বাবর শাহের আদেশে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়, যে কারণে মসজিদটির নাম জনমুখে বাবরি মসজিদ৷ আবার এ-ও শোনা যায়, গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের আগে এই মসজিদ ‘মসজিদ-ই-জন্মস্থান' বলেও পরিচিত ছিল৷

মসজিদ ধ্বংসের পাঁচ ঘণ্টা আগে হিন্দু যুবকরা মসজিদের উপর উঠে পড়েছবি: AFP/Getty Images

আওয়াধ অঞ্চলের বাবর-নিযুক্ত প্রশাসক ছিলেন মির বকশি৷ তিনি একটি প্রাচীনতর রাম মন্দির বিনষ্ট করে তার জায়গায় মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে কথিত আছে৷ ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংস হবার পর মসজিদের ধ্বংসাবশেষে যে সব শিলালিপি আবিষ্কৃত হয়, তা থেকে সংশ্লিষ্ট বিচারকরা সিদ্ধান্ত করেন যে, মসজিদের নীচে একটি হিন্দু মন্দির ছিল৷

আবার ‘জৈন সমতা বাহিনী'-র মতে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাবরি মসজিদের নীচে যে মন্দিরটির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে, সেটি ষষ্ঠ শতাব্দীর একটি জৈন মন্দির৷ মুসলমান দৃষ্টিকোণ থেকে মসজিদের নীচে মন্দির থাকার কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই৷ ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির মাত্র দু'বছর পরেই – অর্থাৎ ১৯৪৯ সালের ২৩শে ডিসেম্বর – বেআইনিভাবে বাবরি মসজিদের অভ্যন্তরে রাম-সীতার মূর্তি স্থাপন করা হয়৷ তখন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী গোবিন্দ বল্লভ পন্থ-কে চিঠি লিখে হিন্দু দেব-দেবীদের মূর্তি অপসারণ করার নির্দেশ দেন, কেননা ‘‘ওখানে একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা হচ্ছে''৷ সবচেয়ে বড় কথা, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস), বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এবং অন্যান্য হিন্দু সংগঠন আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া-র যে সব বিবরণের উপর নির্ভর করে তাদের দাবি পেশ করে থাকে, মুসলিম দৃষ্টিকোণ থেকে সেই সব রিপোর্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত৷

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরবর্তী অবস্থাছবি: AFP/Getty Images

বাবরি মসজিদ নিয়ে সংঘাত ঘটেছে বার বার৷ অথচ ফৈজাবাদ জেলার ১৯০৫ সালের গ্যাজেটিয়ার অনুযায়ী ১৮৫৫ সাল অবধি নাকি হিন্দু এবং মুসলমান, দুই সম্প্রদায়ই সংশ্লিষ্ট ভবনটিতে প্রার্থনা ও পুজা করেছে৷ কিন্তু সিপাহী বিদ্রোহের পর মসজিদের সামনেটা ঘিরে দেওয়া হয় এবং হিন্দুরা বহিরাঙ্গণের একটি ‘চবুতরা'-র উপর তাদের পুজাপাঠ করতে থাকে৷ ১৮৮৩ সালে হিন্দুরা ঐ চবুতরার উপর একটি মন্দির নির্মাণের প্রচেষ্টা করলে পর, জেলা প্রশাসন তা নিষিদ্ধ করেন৷ ১৯৩৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মসজিদের চারপাশের প্রাচীর ও একটি গম্বুজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু ব্রিটিশ সরকার তা পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা করেন৷

ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার আগে বাবরি মসজিদছবি: AP

১৯৪৯ সালের ২২শে ডিসেম্বর মধ্যরাতে পুলিশ গার্ডরা নিদ্রিত থাকা অবস্থায় মসজিদে রাম-সীতার মূর্তি ঢুকিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ কিন্তু যে আন্দোলনে শেষমেষ বাবরি মসজিদ ধ্বংস হবে, তা শুরু হয় ১৯৮৪ সালে, যখন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মসজিদের তালা খুলে দেওয়ার দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে৷ ১৯৮৫ সালে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সরকার ঠিক সেই নির্দেশই দেন৷ ১৯৮৯ সালের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের আগে ভিএইচপি বিতর্কিত স্থলটিতে (মন্দিরের) ‘শিলান্যাস'-এর অনুমতি পায়৷ ভারতীয় জনতা পার্টির প্রবীণ নেতা লাল কৃষ্ণ আদভানি ভারতের দক্ষিণতম প্রান্ত থেকে তাঁর দশ হাজার কিলোমিটার দূরত্বের ‘রথযাত্রা' শুরু করেন৷

১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর এল কে আদভানি, মুরলি মনোহর যোশি, বিনয় কাটিয়ার ইত্যাদি নেতারা পুজা প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে একটি প্রতীকী ‘কার সেবা' করেন৷ সেদিন দুপুরে এক কিশোর ‘কার সেবক' একটি গম্বুজে চড়ে – যার পরেই মসজিদের বাইরের কর্ডন ভেঙে ফেলা হয়৷ অতঃপর বাবরি মসজিদ বিনাশের পথে আর কোনো বাধাই থাকে না৷

ভারতে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের কণ্টকিত ইতিহাসে আর একটি কলঙ্কিত অধ্যায় যুক্ত হয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ