বাবার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন মেগান মার্কেল৷ ব্রিটেনের ট্যাবলয়েড ‘মেইল অন সানডে' তা হাতে পেয়ে প্রকাশ করে দেয়৷
বিজ্ঞাপন
পত্রিকাটির এই কাজের তীব্র সমালোচনা করেছেন৷ বিষয়টি গড়াচ্ছে আদালতেও৷
মেগান, দ্য ডাচেস অব সাসেক্স, এবং তাঁর স্বামী প্রিন্স হ্যারি মঙ্গলবার জানিয়েছেন যে, মেইল অন সানডে পত্রিকার প্রকাশকের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তাঁরা৷ কারণ, পত্রিকাটি বাবাকে লেখা মেগানের একটি ব্যক্তিগত চিঠি প্রকাশ করেছে৷
চলতি বছরের শুরুর দিকে ট্যাবলয়েডটি মেগানের হাতে লেখা একটি চিঠি প্রকাশ করে, যেটি তিনি তাঁর বাবা টমাস মার্কেলকে পাঠিয়েছিলেন৷ চিঠিতে তিনি বাবার সঙ্গে তাঁর ভেঙে পড়া সম্পর্ক এবং ট্যাবলয়েড গণমাধ্যমের সঙ্গে বাবার যোগাযোগের কারণে সৃষ্ট মনোবেদনার কথা জানান৷ মেয়ের লেখা সেই চিঠিটিও মেইল অন সানডেকে দিয়েছেন টমাস মার্কেল৷
হ্যারি দম্পতি তাঁদের পক্ষে মামলা লড়ার জন্য সিলিংস আইনজীবীদের নিয়োগ দিয়েছেন৷ তাঁরা ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডটির বিরুদ্ধে ‘‘ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার, মেধাসত্ব আইন ভঙ্গ এবং তথ্য সুরক্ষা অ্যাক্ট ২০১৮'' অবমাননার অভিযোগ এনেছেন৷
এদিকে, নিজের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছেন হ্যারি৷ সেখানে তিনি পত্রিকাটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন৷ তিনি লিখেছেন যে, বারংবার চেষ্টার পরও পত্রিকাটিতে মেগান এবং তাঁর বাবার মধ্যকার তিক্ত সম্পর্ক নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লেখালেখি থামানো যায়নি৷ পত্রিকাটি মেগানের ব্যক্তিগত চিঠি প্রকাশ করায় তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডটি ‘ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংসাত্মক মানসিকতা' নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেছে উল্লেখ করে এর কুফলের উদাহরণ হিসেবে নিজের মায়ের কথা লিখেছেন প্রিন্স হ্যারি৷
‘‘আমি দেখেছি যে, আমি ভালোবাসি এমন একজনকে এমনভাবে পণ্যে পরিণত করা হয়েছিল যে, তাদের আর প্রকৃত মানুষ হিসেবে দেখা বা বিবেচনা করা হতো না৷ আমি আমার মা-কে হারিয়েছি এবং এখন একই শক্তিশালী শক্তি আমার স্ত্রীকেও ভুক্তভোগী বানাতে চাচ্ছে,'' লিখেছেন হ্যারি৷
হ্যারির মা প্রিন্সেস ডায়না ১৯৯৭ সালে প্যারিসে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান৷ তাঁকে সেই সময় পাপারাৎসিরা তাড়া করছিল৷
অ্যালিস্টার ওয়েলস/এআই
হ্যারি-মেগানের প্রেম উপাখ্যান
ব্রিটেনের প্রিন্স হ্যারি এবং ডাচেস অব সাসেক্স মেগান মার্কেলের কোল আলো করে এসেছে ফুটফুটে এক ছেলে সন্তান৷ এই ছবিঘরে থাকছে এই দম্পতির প্রেম কাহিনী৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/F. Arrizabalaga
পরিচয়-প্রণয়-পরিণয়
বন্ধুদের মাধ্যমে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে পরিচয় হয় মার্কিন টিভি অভিনেত্রী মেগান মার্কেলের৷ ব্রিটিশ সিংহাসনের বর্তমান ষষ্ঠ দাবিদার প্রিন্স হ্যারি৷ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে মেগান জানান তাঁদের পরিচয়, প্রণয়ে রূপ নিয়েছে, ১০ মাস পর তা পরিণত হয় পরিণয়ে৷২০১৯ সালের ৬ মে৷ তবে নিজেদের প্রথম সন্তানের নাম এখনো ঠিক করেননি মেগান-হ্যারি৷
ছবি: Getty Images/E. Mulholland
কোটি কোটি ভক্তের আগ্রহের কেন্দ্রে
২০১৮ সালের ১৯ মে বিয়ে হওয়ার আগে থেকেই গণমাধ্যমের আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিলেন প্রিন্স হ্যারি আর মেগান মার্কেল৷ মেগানের পারিবারিক অতীতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ রাজকীয় বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো গসপেল কয়ারের মতো কিছু আফ্রিকান-অ্যামেরিকান সাংস্কৃতিক আচারও অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ মেগানের বন্ধু হিসেবে বেশ কয়েকজন সেলিব্রিটিও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷
ছবি: Reuters
সদা হাস্যোজ্জ্বল যুগল
প্রিন্স হ্যারি ও মেগানের প্রথম যুগল ছবি প্রকাশ পায় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে৷ ক্যানাডার টরেন্টোতে এক হুইলচেয়ার টেনিস প্রতিযোগিতায় হাত ধরে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল দুজনকে৷ যুদ্ধাহত সৈনিকদের জন্য আয়োজিত ইনভিকটাস গেম চালু করেছেন প্রিন্স হ্যারিই৷
ছবি: picture-alliance/empics/N. Denette
হ্যারির শৈশব
প্রিন্স চার্লস ও প্রিন্সেস ডায়ানার ছোট ছেলে প্রিন্স হ্যারি অব ওয়েলস জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৪ সালে৷ শৈশবই তাঁকে প্রত্যক্ষ করতে হয় বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ ও মা প্রিন্সেস ডায়ানার দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু৷ ১৯৯৫ সালের এই ছবিতে পুরো পরিবারকে দেখা যাচ্ছে এক সঙ্গে৷ চার্লস-ডায়ানার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর বড় ভাই প্রিন্স উইলিয়াম৷
ছবি: Johny Eggitt/AFP/Getty Images
ডায়ানার মৃত্যুশোক
১৯৯৭ সালে প্যারিসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু হয়৷ প্রিন্স হ্যারির বয়স তখন মাত্র ১২ বছর, উইলিয়ামের ১৫৷ মা ডায়ানার মরদেহ বহনকারী কফিন ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবে থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় দুই ভাইকে দেখা যাচ্ছে মাথা নীচু করে থাকতে৷ মায়ের মৃত্যু ছিল প্রিন্স হ্যারির জীবনে বড় ধরনের আঘাত৷
ছবি: Adam Butler/AFP/Getty Images
হ্যারির সংগ্রাম
জীবনভর কী পরিমাণ সংগ্রাম করতে হয়েছে, তা জনসমক্ষেই বলেছেন প্রিন্স হ্যারি৷ মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে এক প্রচারণার সময় ডেইলি টেলিগ্রাফকে তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন সময় প্রায় ভেঙে পড়েছি৷’’ তিনি বলেন, ‘‘সব ধরনের আবেগ ২০ বছর ধরে নিজের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখায় শুধু আমার ব্যক্তিগত জীবনেই প্রভাব পড়েনি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমার কাজও৷’’
ছবি: Thomas Coex/AFP/Getty Images
‘প্লেবয়’ যুবরাজ
আবেগী এই যুবরাজ মায়ের মতোই যে-কোনো মানুষকে সহজে কাছে টানার গুণ পেয়েছেন৷ সাথে পেয়েছেন দুষ্টুমিও৷ বিভিন্ন সময়ে হ্যারিকে আকর্ষণীয় সব নারীর সঙ্গে দেখা যেতো৷ বিভিন্ন সময়ে তাঁকে ‘প্লেবয়’ আখ্যাও দিয়েছে অনেক সংবাদমাধ্যম৷ একবার নিউজউইককে তিনি বলেছিলেন, তিনি রাজপরিবার থেকে ‘বের হয়ে’ যেতে চান৷
ছবি: Chris Jackson/Getty Images
সেনাদলে যোগদান
২০০৫ সালে প্রিন্স হ্যারির একটি ছবি প্রকাশ হয়, সেখানে দেখা যায়, এক কস্টিউম পার্টিতে নাৎসিদের প্রতীক স্বস্তিকা পড়ে আছেন৷ এ নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়৷ একই বছর রাজপরিবারের অন্য এনেক সদস্যের মতো ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন প্রিন্স হ্যারি৷ ১০ বছর সেনাবাহিনীতে ছিলেন হ্যারি৷ পরে অবশ্য তিনি বলেন, এর মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষের দৃষ্টিআগ্রহের কেন্দ্র থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা৷
ছবি: John Stillwell/AFP/Getty Images
জনপ্রিয় যুবরাজ
সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায় দু’বার আফগানিস্তানে ছিলেন হ্যারি৷ এরপর থেকে শুধু ব্রিটেনেই নয়, পুরো বিশ্বজুড়েই রাজপরিবারের সবচেয়ে জনপ্রিয় সদস্যে পরিণত হন হ্যারি৷ মায়ের মতোই নিজের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি৷ বড় ভাই উইলিয়াম ও তাঁর স্ত্রী কেটের সঙ্গে মিলে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ক্যাম্পেইন এরই অংশ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Wigglesworth
মেগান মার্কেল
২০১৭ সালের অক্টোবরে যখন বিঊিন্ন গণমাধ্যমে মেগানের নাম আসতে শুরু করে, তখন দেশের মানুষের তাঁর সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণাই ছিল না৷ ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসে জন্ম নেয়া মেগান জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘স্যুটস’-এ এক আইনজীবীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন৷ বিভিন্ন গণমাধ্যমে মেগানকে নিয়ে প্রচারিত সংবাদে ‘প্রচ্ছন্ন জাতিবিদ্বেষ’ এবং ‘বর্ণবাদ’ উসকে দেয়া হয়েছে বলেও সেসময় প্রতিবাদ জানানো হয় হ্যারির কার্যালয় থেকে৷
ছবি: picture-alliance/empics/D. Lawson
দ্বিতীয় বিয়ে
মেগানের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ গণমাধ্যমের সমালোচনার অন্যতম ছিল তাঁর প্রথম বিয়ে৷ ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্র প্রযোজক ট্রেভর এনগেলসনের স্ত্রী ছিলেন মেগান৷ সেসময় নিজের একটি লাইফস্টাইল ব্লগও চালাতেন মেগান৷ তবে হ্যারির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক জানাজানি হওয়ার পর তিনি সেটি বন্ধ করে দেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Invision/J. Strauss
লোকহিতকর কাজ
প্রিন্স হ্যারির মতোই মেগানও বিভিন্ন সেবা কার্যক্রমে জড়িয়েছেন৷ উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিশুদের সহায়তায় ক্যানাডিয়ান চ্যারিটি সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ভিশন ক্যানাডা’র দূত হিসেবে কাজ করছেন তিনি৷ জাতিসংঘের সঙ্গে নারীর অধিকার নিয়েও কাজ করছেন মেগান৷
ছবি: picture-alliance/SOLO Syndication/M. Large
রানির আশীর্বাদ
হ্যারি-মেগানের বিয়ের ঘোষণার পর বাকিংহাম প্যালেস থেকে জানানো হয়, ‘‘রানি ও ডিউক অব এডিনবরা খুবই আনন্দিত এবং এই যুগলের সুখ ও শান্তি কামনা করেছেন৷’’ সিংহাসনের ভবিষ্যৎ দাবিদার রাজপরিবারের সব সদস্যের মতোই হ্যারি-মেগানের বিয়েতেই প্রয়োজন ছিল রানির অনুমোদনের৷ তবে এই বিয়েতে রানির আশীর্বাদ রাজপরিবারের চিন্তাভাবনায় বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়৷