''অক্সিজেন চাইছি। ওরা দিচ্ছে না। বাবা, আমি আর শ্বাস নিতে পারছি না।'' এটাই ছিল হায়দরাবাদের করোনা আক্রান্ত ৩৪ বছরের যুবকের শেষ ভিডিও বার্তা।
বিজ্ঞাপন
পরপর দশটা বেসরকারি হাসপাতাল তাঁকে ভর্তি করেনি। শেষ পর্যন্ত হায়দরাবাদ চেষ্ট হাসপাতালে তিনি ভর্তি হতে পেরেছিলেন। কিন্তু সেখানে বারবার কাকুতি-মিনতি করেও সাহায্য পেলেন না। অক্সিজেন জুটলো না তাঁর। শেষ পর্যন্ত শ্বাস নিতে না পারার ভিডিও পাঠালেন বাবাকে। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা গেলেন ওই যুবক।
ভিডিওতে ওই যুবক বলেছেন, ''তিন ঘণ্টা ধরে আমি অক্সিজেন চাইছি। কিন্তু কেউ শুনছে না। মনে হচ্ছে আমার হৃদযন্ত্র থেমে যাবে। বিদায় ড্যাডি। সকলকে বিদায়।'' এর কিছুক্ষণের মধ্যে সত্যিই তাঁর হৃদযন্ত্র থেমে যায়।
সামাজিক মাধ্যমে ওই ভিডিও এখন ভাইরাল হয়েছে। লোকে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলছেন, করোনাকালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাঁদের কী বিপদের মুখে পড়তে হয়েছে।
করোনা ভাইরাসে মৃত ব্যক্তিদের যেভাবে সৎকার করা হয়
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলছে৷ কিন্তু কীভাবে মৃত ব্যক্তিদের সৎকার করা হয় জানেন কি? বিস্তারিত জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
মুম্বইয়ের চিত্র
করোনা ভাইরাসে মৃত ব্যক্তির কফিনবন্দি লাশ নামানো হচ্ছে কবরে৷ দূরে দাঁড়িয়ে দেখছেন যাজক ও আত্মীয়রা৷ কিন্তু যারা কবরে কফিন নামাচ্ছেন, তাদের একজনের তার পরনে প্রতিরক্ষা পোশাক অর্থাৎ পিপিই নেই৷ আছে কেবল মাস্ক৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
মেক্সিকো সিটি
মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটির উপকণ্ঠে সান এফরেন কবরস্থানে সেখানকার কর্মীরা প্রতিরক্ষা পোশাক পরে এজনকে সমাহিত করছেন৷
ছবি: Reuters/H. Romero
নীরবে নিভৃতে
মুম্বইয়ে করোনায় মৃত এক ব্যক্তির কফিন এভাবে নির্জন এলাকা দিয়ে নিচ্ছে যাচ্ছে গুটি কয়েক মানুষ৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব
মেক্সিকো সিটির উপকণ্ঠে সান ইসিদ্রো কবরস্থানে করোনায় মৃত এক নারীর কফিনের সঙ্গে যাচ্ছেন চার থেকে পাঁচ জন আত্মীয় ও বন্ধু৷
ছবি: Reuters/H. Romero
স্বজনহীন
মেক্সিকো সিটির একটি কবরস্থানে সৎকার কর্মীরা করোনায় মৃত এক নারীর কফিন সরাচ্ছেন৷ সঙ্গে নেই আর কেউ৷
ছবি: Reuters/C. Jasso
কফিনের চাহিদা
পেরুর রাজধানী লিমায় একটি ট্রাকে কফিন ভর্তি করছে এক ব্যক্তি৷
লিমায় একটি কবরস্থানে করোনায় মৃত ব্যক্তিকে কবর দেয়ার পর মাটি ছুঁড়ে দিচ্ছেন স্বজনরা৷
ছবি: Reuters/S. Castaneda
11 ছবি1 | 11
কিছুদিন আগে অ্যামেরিকায় পুলিশ যখন কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যা করেছিল, তখন তাঁর শেষ কথা ছিল, ''আমি শ্বাস নিতে পারছি না।'' তবে সেটা ছিল বর্ণবাদী পুলিশের অত্যাচারের মুখে পড়া ফ্লয়েডের শেষ কথা, যা নিয়ে গোটা বিশ্বে বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। তার সঙ্গে হায়দরাবাদের যুবকের শেষ কথার কোনো তুলনা চলে না। কারণ এখানে বর্ণবাদ নেই।
হায়দরাবাদে ছিল চিকিৎসায় অবহেলা। যার জন্য ওই যুবককে বলতে হয়েছে, তিনি শ্বাস নিতে পারছেন না। ওই যুবকের শেষকৃত্য করে ফেরার পর ছেলের ওই ভিডিও দেখেন তাঁর বাবা। তিনি জানিয়েছেন, ''আমার ছেলে সাহায্য চেয়েছিল। কিন্তু কেউ সাহায্য করেনি। আমার ছেলের ক্ষেত্রে যা হয়েছে, তা যে কোনও লোকের ক্ষেত্রে হতে পারে। কেন আমার ছেলেকে অক্সিজেন দেওয়া হলো না? ওই ভিডিও দেখার পর আমি বিপর্যস্ত। ভেঙে পড়েছি।''
এর মধ্যে একটি বেসরকারি হাসপাতাল তাঁর ছেলের লালারস পরীক্ষার জন্য দিয়েছিল। তাঁদের রিপোর্ট এসেছে, ওই যুবকের করোনা হয়েছিল।
মাস্ক, গ্লাভস, পিপিইর বর্জ্য যেখানে-সেখানে
ব্যবহারের পর স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীগুলো মানুষ ফেলছেন রাস্তাঘাটে, বাড়ির আশেপাশে৷ পিপিই পড়ে থাকছে যেখানে-সেখানে৷ ঢাকা বিভিন্ন জায়গার এমন কিছু চিত্র দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/S. Hossain
হাসপাতালের বর্জ্য
নিয়ম অনুযায়ী এসব বর্জ্য জীবাণুমুক্ত করে তারপর সুরক্ষা ব্যাগে ভরে রাখার কথা৷ কিন্তু ফেলে রাখা হয়েছে হাসপাতালের চত্বরে৷ ছবিটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে তোলা৷
ছবি: DW/S. Hossain
খোলা জায়গায় ব্যবহৃত মাস্ক
অনেক অসচেতন ব্যক্তি ব্যবহৃত মাস্ক ও গ্লাভস যেখানে-সেখানে ফেলে আরেক ঝুঁকি তৈরি করছেন৷ এই ছবিটি তোলা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে৷
ছবি: DW/S. Hossain
ময়লা-আবর্জনায় গ্লাভস
ব্যবহারের পর পরিত্যক্ত জিনিসপত্রের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে গ্লাভস৷
ছবি: DW/S. Hossain
ঝুলছে বাড়ির ফটকে
শুধু রাস্তা বা ফুটপাত নয়, ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভসের আধিক্য দেখা গেছে পয়ঃনিষ্কাশন খাল, দুই বাড়ির মাঝখানের খালি জায়গা, রাস্তার পাশের খালি জমি, বাড়ির গেটসহ বিভিন্ন স্থানে৷ এই ছবিটি মোহাম্মদপুরের একটি বাড়ির ফটকের৷
ছবি: DW/S. Hossain
আবর্জনায় সুরক্ষা সামগ্রী
ব্যবহৃত মাস্ক-গ্লাভস-পিপিই অন্যান্য আবর্জনার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার৷ ধানমন্ডিতে একটি ফুটপাতের পাশ থেকে এই ছবিটি তোলা৷
ছবি: DW/S. Hossain
ঘরের আঙিনায়
ব্যবহৃত মাস্ক-গ্লাভস-পিপিই অনেকে বাসাবাড়ির সামনেই ফেলছেন৷ এই ছবিটি তোলা মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্প থেকে৷
ছবি: DW/S. Hossain
সবুজেও হানা
ঢাকার একটি রাস্তার সড়ক বিভাজকের সৌন্দর্যবর্ধক প্রকল্পে গ্লাভসটি পড়ে আছে৷
ছবি: DW/S. Hossain
হাসপাতালের বাইরে
হাসপাতালগুলোর বাইরে রোগী বা তাদের স্বজনরা ইচ্ছেমতো সুরক্ষা সামগ্রীগুলো ফেলছেন৷ সেগুলো ঠিকমতো পরিষ্কারও করা হচ্ছে না৷ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে থেকে এই ছবিটি তোলা৷
ছবি: DW/S. Hossain
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকি
প্লাস্টিকের তৈরি এসব সুরক্ষা সামগ্রী পরিবেশের যেমন ক্ষতি করছে তেমনি ভাইরাস সংক্রমণেও সহযোগী হতে পারে৷ মোহাম্মদপুরের কলেজগেটে একটি চায়ের দোকানের সামনে পড়ে আছে একজোড়া গ্লাভস৷
ছবি: DW/S. Hossain
ফুটপাতে পিপিই
ধানমন্ডির ২৭ নম্বরে একটি রাস্তার পাশে অন্য আবর্জনার সঙ্গে পড়ে আছে পিপিই৷
ছবি: DW/S. Hossain
সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগ
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম মঙ্গলবার বলেছেন, গৃহস্থালির সঙ্গে সংক্রামক বর্জ্য মেশালে সিটি কর্পোরেশন ময়লা সংগ্রহ করবে না৷ সংক্রামক বর্জ্য পৃথকভাবে রাখার জন্য ডিএনসিসি বাসাবাড়িতে তিন লাখ ব্যাগ বিতরণ করবে বলেও জানান তিনি৷
ছবি: DW/S. Hossain
11 ছবি1 | 11
করোনাকালে রোগী ভর্তি ও চিকিৎসা নিয়ে বিভিন্ন শহর থেকে একের পর এক অভিযোগ আসছে। কিছুদিন আগেও কলকাতায় পুলিশ সারা রাত ধরে চেষ্টা করে একজন রোগীকে কোনও হাসপাতালে ভর্তি করতে পারেনি। পরের দিন দুপুরে তাঁরা একটি নার্সিংহোমে রোগীকে ভর্তি করতে পারে। দিল্লিতে চিত্তরঞ্জন পার্কে হৃদরোগে আক্রান্ত একজন বয়ষ্ক মানুষকে হাসপাতাল ভর্তি করেনি। তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। দিল্লিতে সরকারি হাসপাতালে জায়গা থাকা সত্ত্বেও রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তারপর সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে সরকারকে।
ভারতে এখন করোনার প্রকোপ আরও বেড়েছে। একদল বিশেষজ্ঞ হায়দরাবাদে ১৪ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করতে বলেছেন রাজ্য সরকারকে। গুয়াহাটিতে ১৪ দিনের লকডাউন শুরু হয়েছে। প্রতি রোববার লকডাউন থাকবে বেঙ্গালুরুতে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ১৯ হাজার ৯৫৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দিল্লিতে প্রায় তিন হাজার জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে দিল্লিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮৩ হাজার ছুঁয়েছে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুরোভাগে থাকা এক চিকিৎসকেরও মৃত্যু হয়েছে দিল্লিতে। রাজধানীতে কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪১৭। মানে এই ৪১৭টি এলাকায় করোনার প্রকোপ খুব বেশি। সেখানে কাউকে ঢুকতে ও বেরতে দেওয়া হচ্ছে না।