অতিরিক্ত ওজন ও ডায়াবেটিস আজকের প্রজন্মের জন্য একটা বড় সমস্যা৷ কিন্তু এর জন্য কি খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারাই দায়ী? নাকি সেই সমস্যা কেউ উত্তরাধিকারসূত্রে জিনের মাধ্যমেও পেতে পারে? জার্মান বিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন৷
বিজ্ঞাপন
ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী জীবনযাত্রা, না জিন?
04:36
এটা একটা মহামারির মতো৷ গোটা বিশ্বে প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন টাইপ ২ ডায়াবেটিসে ভুগছে৷ এই প্রবণতা দ্রুত বেড়ে চলেছে৷ অতিরিক্ত ওজন ও অনিয়মিত জীবনযাত্রা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ তবে বিজ্ঞানীদের অনুমান, এর পেছনে অন্য কারণও কাজ করছে৷
মিউনিখ শহরে হেল্মহলৎস সেন্টারে গবেষকরা সেই রহস্য সমাধানের চেষ্টা করছেন৷ তার জন্য এমন এক পরীক্ষা চালাতে হবে, যার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি তাঁদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে৷ এমন পরীক্ষার জন্য ইঁদুর সবচেয়ে উপযুক্ত প্রাণী৷ তাদের মেটাবলিজম অনেকটা মানুষের মতোই কাজ করে৷
মোটা ও রোগা ইঁদুর ঠিক মানুষের মতোই রোগে ভোগে৷ এমনকি তাদের ডায়াবেটিসও হয়৷ কিছু মোনোভুলার যমজের মতো এই ইঁদুরদের শরীরে একই জিন রয়েছে৷ অর্থাৎ তাদের মধ্যে পার্থক্য থাকলে তার কারণ জেনেটিক হতে পারে না৷
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর ৬টি খাবার
সারা বিশ্বেই ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিনদিন বেড়ে চলেছে৷ বিশেষ করে ডায়াবেটিস টাইপ ২-এ আক্রান্ত হচ্ছেন ছোট, বড় অনেকেই৷ খাওয়া-দাওয়া ও কিছু নিয়ম মেনে চললেই এই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpaP. Pleul
ডায়াবেটিস শুধু বুড়োদেরই হয়না
আগে শোনা যেতো ডায়াবেটিস নাকি বংশগত এবং শুধু বুড়োদের অসুখ৷ জার্মান সেন্টার ফর ডায়াবেটিস রিসার্চ – ডিজেডডি-র এক সমীক্ষার ফলাফলে জানা গেছে, জার্মানিতে আনুমানিক ৬ মিলিয়ন ডায়াবেটিস টাইপ ২ রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগীর বয়সই ৪০-এর নীচে৷ এই রোগে শিশু, কিশোর, তরুণ সকলেই আক্রান্ত হচ্ছে৷ এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার এবং ফাস্টফুড৷
ফাস্টফুড?
প্যাটিস, বার্গার বা পিৎসার মতো ফাস্টফুডে লুকিয়ে থাকে অনেক চিনি যা সেভাবে বোঝা যায়না৷ আর এসব ফাস্টফুড খাওয়ার কারণে অনেকেরই শিশু বয়সেই থাকে অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা৷ তাই তৈরি খাবার বা ফাস্টফুড থেকে একেবারেই দূরে থাকুন, ছোট, বড় সবাই৷
ছবি: Fotolia/Gennadiy Poznyakov
মিষ্টি বা চিনিকে না বলুন
জার্মান ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান নিউট্রিশন-এর প্রধান ডা. হান্স গেয়র্গ ইয়োস্ট বলেন, ‘‘চিনি অন্যান্য শর্করা জাতীয় খাবারের চেয়ে মোটা করে বা ওজন বাড়ায় অনেক বেশি৷ কারণ ডায়াবেটিস রোগীদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি৷ তাই ডায়াবেটিস রোগীরা লোভনীয় সব মিষ্টি খাবার থেকে দূরে থাকুন৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Kaiser
সাদা চাল, আটা বা আলু নয় !
সাদা চালের পরিবর্তে লাল চাল খান৷ আর সাদা আটা বা ময়দার পরিবর্তে ব্রাউন আটা বা দানা ও বীজযুক্ত রুটি খাবেন৷ আর সাদা আলুর বদলে মিষ্টি আলু বেছে নেওয়া শ্রেয়৷ আঁশযুক্ত খাবার, বিভিন্ন দানা বা বিচি খাবেন৷ ডায়াবেটিস রোগীরা তিনবেলার খাবার পাঁচবেলা ভাগ করে খান, এবং সকালের নাস্তা যেন কখনও বাদ না যায়৷
ছবি: Tatyana Nyshko/Fotolia
কলা বা অন্যান্য ফল
কলাকে আমরা খুবই স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবেই চিনি যা সারা বছর পাওয়া যায় এবং কেনার সামর্থ্য প্রায় সবার নাগালের মধ্যেই৷ কলা এবং বিভিন্ন রকমের বাঙিফল ফলগুলোতে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি বা ফ্রুকটোজ যা শরীরে সুগারের মাত্রা বাড়ায়৷ পরিবর্তে ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারেন আপেল, নাশপাতি, ব্লুবেরি ইত্যাদি ফল৷
ছবি: DW/G. Fasthudinov
ফলের রস বা মিষ্টি পানীয়
এসবে থাকে প্রচুর পরিমাণে চিনি এবং ক্যালরি যা খুব তাড়াতাড়ি শরীরে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়৷ তরুণরা এসব পানীয় পছন্দ করলেও ডায়াবেটিসের কথা মাথায় রেখে এসব থেকে দূরে থাকুন৷
ছবি: picture alliance/landov/Amra
সব শাক-সবজি নয়!
যে খাবারের জিআই অর্থাৎ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যত বেশি, ডায়াবেটিস রোগীর জন্য তা ততটাই খারাপ৷ সাধারণত শাক সবজিতে আঁশের পরিমাণ বেশি বলে রক্তে মিশতে একটু বেশি সময় লাগে৷ তবে মিষ্টি কুমড়াতে জিআই অনেক বেশি ফলে এসব সবজি অন্য সবজির সাথে মিশিয়ে খাওয়া ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpaP. Pleul
7 ছবি1 | 7
গবেষকরা ৬ সপ্তাহ ধরে ইঁদুরদের হাই-ক্যালোরি খাদ্য দিচ্ছেন৷ মানুষের মতই এমন ত্রুটিপূর্ণ খাদ্য খেয়ে তারা মোটা হয়ে যাচ্ছে এবং ডায়াবেটিসের আগের পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে৷ অনুমান করা হচ্ছে, ইঁদুররা এই বৈশিষ্ট্য পরবর্তী প্রজন্মের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে৷
জিনের মাধ্যমে এমন হস্তান্তর একমাত্র ডিম্বাণু ও বীর্যের মাধ্যমে ঘটতে পারে৷ স্থূলকায় বাবা-মার অন্য সব প্রভাব এড়াতে কৃত্রিম প্রজননের জন্য বিজ্ঞানীরা তাদের ডিম্বাণু ও শুক্রাণু সংগ্রহ করছেন৷
২৪ ঘণ্টা পর ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন প্রক্রিয়ায় ডিম্বকোষের বিভাজন ঘটে গেছে৷ গবেষকরা ইঁদুরের ভ্রূণ সারোগেট মায়ের শরীরে প্রতিস্থাপন করছেন৷এই সারোগেট মায়েদের স্বাস্থ্য যথেষ্ট ভালো এবং তারা রোগা৷ তারা শুধু তাদের গর্ভে ইঁদুরশিশু ধারণ করে না, জন্মের পর শিশুদের দেখাশোনাও করে৷ ইঁদুর শিশুদের প্রতিপালনের কাজে তাদের মোটা বাবা-মায়েদের আর কোনো ভূমিকা থাকে না৷ এমনকি খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রেও তারা ভুল আদর্শ হয়ে উঠতে পারে না৷ এ বিষয়ে ইয়োহানেস বেকার্স বলেন, ‘‘বাবা-মার সঙ্গে সামাজিক স্তরে যোগাযোগের কারণে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের সম্ভাবনা যে নেই, সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারলাম৷ জরায়ু অথবা মায়ের দুধ পান করার প্রক্রিয়াও কোনো প্রভাব ফেলে না৷ পাকস্থলির ব্যাকটেরিয়াও এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে হস্তান্তর হয় না৷ অর্থাৎ এ সব থেকে বোঝা যাচ্ছে, যে পরবর্তী প্রজন্মে যে পরিবর্তন ঘটছে, তা ‘জার্ম ট্র্যাক সেল'-এর তথ্যের উপর নির্ভর করে৷''
গবেষকরা এই ইঁদুর শিশুদের বিকাশের উপর কড়া নজর রাখছেন এবং রোগা বাবা-মায়েদের সন্তানদের সঙ্গে তাদের তুলনা করছেন৷ সব শিশুদেরই একই খাবার দেওয়া হচ্ছে৷
এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, যে এই ইঁদুরদের জিনগতভাবে প্রায় একই কাঠামো রয়েছে৷ একই পরিবেশে তারা বড় হয়েছে৷ একমাত্র তফাত হলো, তাদের আসল বাবা-মায়েরা হয় মোটা অথবা রোগা৷ অথচ এই বিষয়টিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷মোটা ইঁদুরদের বংশধররা রোগা ইঁদুরদের বংশধরদের তুলনায় অনেক দ্রুত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলো৷ অর্থাৎ নিশ্চয় বংশানুক্রমেই তারা এই প্রবণতা পেয়েছে৷ কিন্তু বাবা-মায়েরা ভুল খাবার খেয়ে এমন সমস্যা সৃষ্টি করেছে৷ বাবা এবং মা ডায়াবেটিস ও অতিরিক্ত ওজনের প্রবণতা তাদের সন্তানদের শরীরে হস্তান্তর করেছে৷ ত্রুটিপূর্ণ খাদ্য জিনের রেগুলেশন পরিবর্তন করে পরবর্তী প্রজন্মের শরীরে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে৷ অতএব ডায়াবেটিসের দ্রুত প্রসারের কারণ বোঝা যায়৷
এফা শুলটেস/এসবি
ডায়েবেটিস থেকে সাবধান!
গত ৩৫ বছরে ‘টাইপ টু’ ডায়েবেটিস রোগী চারগুণ বেড়েছে৷ বর্তমানে সারা বিশ্বে ‘টাইপ টু’ ডায়েবেটিস রোগীর সংখ্যা ৪৪ কোটি ২০ লক্ষ৷ জেনে নিন এ রোগ থেকে দূরে থাকার কিছু উপায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Rumpenhorst
হালকা খাবার
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ডায়েবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ার মূল কারণ, অতিরিক্ত ওজন৷ ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও ওজন কমাতে রাতে হালকা খাবার খাওয়া উচিত৷ রাতে ফুল প্লেট ভাত, পাস্তা বা নুডল খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ জার্মান পুষ্টি গবেষণা কেন্দ্রের৷ কারণ রাতে শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে তা রক্তে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়৷
ছবি: picture-alliance/ZB
স্যাকারিন নয়!
ডায়েবেটিস রোগীদের অনেকেই চিনির বিকল্প হিসেবে স্যাকারিন খান৷ তবে রক্তে চিনির মাত্রা কমে গেলে অনেকেই যখন মিষ্টি খাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন, তখন কিন্তু স্যাকারিন তা দমন করতে পারে না৷ আসল চিনিই কেবল সেক্ষেত্রে উপকারী৷ এ কথা জানিয়েছে সুইজারল্যান্ডের ল্যুজানে বিশ্ববিদ্যালয়৷
ছবি: Imago/teutopress
নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করানো
যদি কেউ হঠাৎ করে সকালে চোখে ঝাপসা এবং বিকেলে স্পষ্ট দেখেন, তার খুব তাড়াতাড়ি চোখের ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত, কারণ, এটা ডায়েবেটিস শুরু হওয়ার প্রথম লক্ষণ হতে পারে৷ চিনির মাত্রার ওঠা-নামার কারণে চোখের মণিতে পানি জমে তা চোখের রক্তের ধমনীর ক্ষতি করতে পারে৷ এ কথা জানিয়েছে, জার্মানির অপথ্যালমলোজিক্যাল সোসাইটি৷
ছবি: Colourbox/Monkey Business Images
সাইকেল চালান, ডায়েবেটিসকে দূরে রাখুন
ডেনমার্কের একটি বিশ্ববিদ্যলয়ের ৫২,০০০ জন মানুষকে নিয়ে করা এক সমীক্ষার ফলাফল থেকে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে যারা সাইকেল চালান, তাদের ডায়বেটিস ‘টাইপ টু’-র ঝুঁকি অনেক কম৷
ছবি: picture alliance / dpa
শিশুকে বুকের দুধ পান করান
শিশুকে বুকের দুধ পান করালে তা মা ও শিশু দু’জনের জন্যই উপকারী৷যে মা শিশুকে তার দুধ পান করান, পরবর্তী দশ বছর তার ডায়েবেটিস ‘টাইপ টু’ হওয়ার ঝুঁকি শতকরা ৪০ ভাগ কমে যায়৷ এই তথ্য জানাচ্ছে, জার্মানির মিউনিখ শহরের হেল্মহল্জ সেন্টারের একটি গবেষণা৷