বাভেরিয়ায় সিএসইউ দল আবার তাদের স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত: রাজ্য বিধানসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা৷ মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপি দলের ভরাডুবি৷ আগামী সপ্তাহান্তের নির্বাচনের পর চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের এফডিপি-কে প্রয়োজন পড়বে৷
বিজ্ঞাপন
বাভেরিয়ার ব্যাপার-স্যাপারই আলাদা, সে কথা জার্মানির সবাই জানে৷ রবিবার বাভেরিয়ার রাজ্য নির্বাচনে হলও তাই: খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী সিএসইউ দল শুধু জিতলই না, জিতল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে, ক্ষমতাসীন থাকাকালীন যেটা জার্মানিতে অন্য কোনো দলের পক্ষে – এবং অন্য কোনো প্রদেশে – প্রায় অসম্ভব৷ জার্মানরা এটাকেই বলে ‘বায়ারিশে ফ্যারহেল্টনিসে' বা ‘বাভেরিয়ার বিশেষত্ব'৷
জার্মানির নির্বাচনি পোস্টার
জার্মানির সংসদীয় নির্বাচনের প্রচারাভিযান চালাতে রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে বড় বড় পোস্টার লাগানো হয়েছে৷ পোস্টারের কথা এবং মোটিভ পেশাদারি বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো সঠিকভাবে তুলে ধরেছে, যাকে শিল্প বলা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পোস্টারে প্রতিদ্বন্দ্বীদের লড়াই
জার্মানির সংসদীয় নির্বাচনের প্রচারাভিযান চালাতে রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে বড় বড় পোস্টার লাগানো হয়েছে৷ পোস্টারের কথা এবং মোটিভ পেশাদারি বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো খুবই সঠিকভাবে তুলে ধরেছে৷ সত্যিকার অর্থেই যাকে শিল্প বলা যায়৷ তবে জার্মানির নির্বাচনি পোস্টার কিন্তু সবসময় এরকম ছিলোনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পোস্টার শিল্পের পুনরুজ্জীবন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ ১৯৪০-এর দশকের শেষে ভালো কাগজ এবং ছাপার রং পাওয়া যেতোনা৷ সে সময় সীমিত সংখ্যক পোস্টার ছাপা হয়েছিলো, যা দেখতে প্রায় একই রকম ছিলো৷ ১৯৪৯ সালে সিডিইউ-এর নির্বাচনি পোস্টারে লেখা ছিলো, ‘‘বিভাজন নয়৷’’ স্লোগানটি ছিলো জার্মানির সমসাময়িক রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রতিফলন৷
ছবি: CC BY-SA/Plakat- und Film-Archiv der CDU
রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবমূর্তি
১৯৪৯ সালে জার্মানির সংসদীয় নির্বাচনে পোস্টার তৈরির ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আবার প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়৷ যুদ্ধের পর নিজেদের ভাবমূর্তি নতুন করে তুলে ধরাই ছিল মূল বিষয়৷ দেশের পুনর্গঠনের বিষয়টিই তখন স্থান পেয়েছিল নির্বাচনি পোস্টারে৷
ছবি: picture-alliance/Bildarchiv
পোস্টারে রাজনীতিকদের ছবি
১৯৬০-এর দশকের পর নির্বাচনি কর্মীরা লে-আউটের ওপর বেশ গুরুত্ব আরোপ করে৷ আর সেজন্যই রাজনীতিকদের ছবি পোস্টারে জায়গা করে নেয়, যা আজও পোস্টারের ডিজাইনে দেখা যায়৷ সে যুগে ছবি তোলা ব্যয়সাপেক্ষ থাকায় পোস্টারের ছবিগুলো হাতে আঁকা হতো৷ ছবিটিতে ১৯৬৫ সালে জার্মানির চ্যান্সেলর লুডভিশ এয়ারহার্ডকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: CC BY-SA/Plakat- und Film-Archiv der CDU
পোস্টারের কারুকার্য
কিছুদিন পরই পোস্টারকে আরো আকর্ষণীয় করতে নানা কৌশল বেরিয়ে পড়ে৷ একটি বড় পোস্টারে ছোট কাগজ কেটে বা অন্য কিছু লাগিয়ে প্রার্থীদের বার্তাসহ ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়৷ এসপিডি-র একটি পোস্টারে ভিলি ব্রান্ট-কে ভোট দেওয়ার জন্য লেখা হয়েছে ‘‘সকলের জন্য সমৃদ্ধি৷’’ আর সিডিইউ-এর পোস্টারে ছিলো, ‘‘এয়ারহার্ড-এর অর্থনৈতিক নীতির দৌলতে৷’’
ছবি: picture-alliance/Bildarchiv
পোস্টার সময়ের দলিল
ছবির নির্বাচনি পোস্টারটি বারবার তখনকার সুন্দর সময়ের কথাই মনে করিয়ে দেয় আর সে জন্যই তা সংগ্রহেও রাখা হয়৷ ১৯৬৫ সালে এসপিডি-র আর্কাইভ করা একটি পোস্টার ব্যবহার করে তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে কটাক্ষ করে৷ ‘‘এসপিডির ভুলে জার্মানির সর্বনাশ হতে পারতো, চাই লুডভিশ এয়ারহার্ড এবং সিডিইউ৷’’ এয়ারহার্ড ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৬ পর্যন্ত জার্মানির দ্বিতীয় চ্যান্সেলর ছিলেন৷
ছবি: CC-BY-SA 3.0 DE
নির্বাচনি প্রচারণায় নারীমুখ
৭০-এর দশকে জার্মানির নির্বাচনি প্রচারণার পোস্টারে প্রথমবার নারী মুখের ছবি দেখা যায়৷ ১৯৭৬ সালের নির্বাচনে সিডিইউ নিজেদের নারীদের স্বার্থরক্ষার দূত হিসেবে তুলে ধরে৷ অথচ মহিলাদের সমানাধিকার বিষয়ক সংস্কার সাধন করেছিল এসপিডি ও এফডিপি দলের জোট সরকার৷
ছবি: CC BY-SA/Plakat- und Film-Archiv der CDU
সবুজ ডিজাইন
১৯৮৩ সালের নির্বাচনি প্রচারণায় সবুজ দল পুরোনো অনেক কিছুই বাদ দিয়ে নতুন করে করেছে৷ পোস্টারে ডিজাইনেও তাদের সৃষ্টিশীল কারুকার্যের ধারণা প্রকাশ পেয়েছে৷ ছবিতে সবুজ দলের পোস্টারে সূর্যমুখী ফুল দেখা যাচ্ছে, যা আজও সবুজ দলের প্রতীক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিদ্রূপাত্মক বার্তা
সবুজ দল এখনো পোস্টারে এমন কিছু নকশা বা ডিজাইন করে যা সবসময় দেখা যায়না৷ ২০১৩ সালের নির্বাচনি প্রচারণায়ও সবুজ দলের পোস্টারে ব্যঙ্গ করে লেখা হয়েছে, যার নকশাটি করছে একটি নতুন ডিজাইন এজেন্সি৷ সাদা কালো বড় অক্ষরে লেখা মোটিভগুলো গাঢ় সবুজ রং দিয়ে খানিকটা ঢেকে ফেলা হয়েছে বর্তমান জোট সরকার সদস্যদের নেতিবাচক পোজের ছবি দিয়ে৷
ছবি: Die Grünen
পুরোপুরি বিপরীত
আইডিয়াটা নতুন নয়, ২০০২ সালের নির্বাচনী পোস্টারেই সাদা কালো উজ্জ্বল রং-এর নীতি৷ পোস্টারের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর ধ্বংসস্তূপ সরাতে সাহায্য করে মহিলারা৷ পোস্টারে নীল আর হলুদ রং-এর বার্তা ছিলো ‘‘ আমরা আগে এর চেয়েও কঠিন সংকটের সমাধান করেছি’’৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিয়ম ভঙ্গ
২০১৩ সালের জার্মান সংসদীয় নির্বাচনি পোস্টারেও বিশাল প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রকাশ ঘটেছে৷ কোন নিয়ম থাকবে আর কোনটাই বা ভাঙা হবে, এ নিয়েও গ্রাফিক ডিজাইন এজেন্সিগুলোর অনেক মাথা ঘামাতে হয়েছে৷ যেমন বাম দল পোস্টারে কোনো ছবি ছাড়াই ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে৷ যা পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন পোস্টারে ছবি থাকতোনা৷
ছবি: John Macdougall/AFP/Getty Images
বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা নয়
গত কয়েক দশক নির্বাচনি পোস্টারে পেশাদারি ছাপ এসেছে৷ যে কোনো দলের লোগো এবং কর্পোরেট ডিজাইনগুলোর জন্য খুবই স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে৷ বেশিরভাগ দলই এ ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব মোটিভটাই রাখতে চায়৷ যেমন: রাজনীতিকরা হাসি মুখে জনসাধারণ, ছাত্রছাত্রী, বয়স্ক মানুষ বা মেশিনের সামনে কারখানার শ্রমিকের সাথে কথা বলছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
12 ছবি1 | 12
২০০৮ সালে একবার সিএসইউ দল পা ফসকে তাদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় এবং মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপি-কে সঙ্গে নিয়ে জোট সরকার গঠন করতে বাধ্য হয়৷ এবার সে বালাই আবার চুকল৷ চুকল বলে চুকল! মাত্র তিন শতাংশ ভোট নিয়ে এফডিপি এবার বাভেরিয়ার বিধানসভা থেকেই বিদায় হল৷ সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দুই শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছে বটে, কিন্তু তাও দৃশ্যত সবুজদের অনেক ভোটার এসপিডি-কে ভোট দেওয়ার ফলে – যেমন বহু এফডিপি ভোটার সিএসইউ-কে ভোট দিয়েছেন৷ যাই হোক, সবুজদের হাঁড়ির হালের মানে তাদের নিয়ে এসপিডি-র জোট সরকার গঠনের স্বপ্নেরও এখানেই সলিলসমাধি৷
ভোট দিয়ে যা, আয় ভোটার আয়
সবচেয়ে মজার কথা: এবার কি পরিমাণ ভোটার ভোট দিতে যাবেন অথবা যাবেন না, তাই নিয়েই সব রাজনীতিক, ভাষ্যকারদের আশঙ্কা ছিল৷ কিন্তু দেখা গেল, ভোট দিতে গেছেন ৬৫ শতাংশ ভোটার, ২০০৮ সালের তুলনায় মোট সাত শতাংশ বেশি৷ ফলে উল্টে এখন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে: আগামী সপ্তাহান্তে সংসদীয় নির্বাচনে কি হবে – কেননা সিএসইউ-র বাভেরিয়ার গদি নিশ্চিত হবার পর এবার বার্লিনে যাতে ম্যার্কেলের শাসন কায়েম হয়, সে জন্য সিএসইউ-কে দ্বিতীয়বার উঁচু ভোটে জিততে হবে, যে জন্য ভোটারদের আবার পোলিং বুথে যেতে হবে, ইত্যাদি৷
আগামী সপ্তাহান্তে বাভেরিয়ার ভোটাররা আরো একটি নতুনত্ব দেখবেন: সদ্যসৃষ্ট ‘আল্টারনাটিভে ফ্যুর ডয়েচলান্ড' বা এএফডি দল বাভেরিয়ার রাজ্য নির্বাচনে অংশ না নিলেও, সংসদীয় নির্বাচনে উপস্থিত থাকছে৷ কাজেই বাভেরিয়ার ভোটাররা ইউরো-বিরোধী এই নতুন দলটিকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন৷
সংসদীয় নির্বাচনের মাত্র এক সপ্তাহ আগে এফডিপি-কে বাভেরিয়ার বিধানসভা থেকে বিদায় নিতে হল৷ কাজেই বুন্ডেসটাগ নির্বাচনে এফডিপি-র একমাত্র আশা হল ভোটারদের সহানুভূতি, বলছেন পর্যবেক্ষকরা৷ জার্মান নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রথম ভোটটি কোনো একক প্রার্থীকে এবং দ্বিতীয় ভোটটি কোনো দলকে দেওয়া যায়৷ বাভেরিয়ায় সিএসইউ দলের প্রার্থীদের সরাসরি ভোটে জেতার সম্ভাবনা এতো বেশি যে, সিডিইউ-সিএসইউ শিবিরের অনেক ভোটারই হয়তো তাদের দ্বিতীয় ভোটটি এফডিপি-কে দিয়ে সেই পন্থায় কেন্দ্রে ম্যার্কেলের জোট সহযোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইবেন৷