দক্ষিণ জার্মানির বাভেরিয়ার একটি অঞ্চল থেকে প্রচুর বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে পুলিশ৷ উদ্ধার হয়েছে হাতে তৈরি বোমাও৷ এখনো পর্যন্ত একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
তাহলে কি বড়সড় কোনো নাশকতার ছক কষা হচ্ছিল বাভেরিয়ায়? প্রশ্ন ভাসছে গোটা জার্মানি জুড়েই৷ কারণ, সেখানকার একটি হোমলেস শেলটার থেকে বেশ কিছু হাতে বানানো বোমা এবং প্রচুর বোমা তৈরির রসদ উদ্ধার করেছে পুলিশ৷ সোমবার একটি হোমলেস শেলটারের বেসমেন্ট থেকে এসব উদ্ধার করে পুলিশ৷ প্রাথমিকভাবে ৪ জন জার্মান নাগরিককে আটক করা হলেও পরে ৩ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়৷ গ্রেফতার করা হয় ৩৫ বছরের এক ব্যক্তিকে৷ অভিযোগ, তিনিই ওই বিস্ফোরকগুলির মালিক৷
জার্মানিতে যেসব সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা হয়েছিল
গত আঠারো মাসে বেশ কয়েকবার জার্মানিতে সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা করা হয়েছে, যার অধিকাংশই অবশ্য পুলিশ আগেভাগে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়৷ আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস-এর অন্যতম টার্গেট এখন ইউরোপের এই দেশটি৷
ছবি: Reuters/M. Rehle
লাইপসিশ, অক্টোবর ২০১৬
লাইপসিসের পুলিশ দু’দিন ধরে তল্লাশি চালানোর পর ২২ বছর বয়সে সিরীয় শরণার্থী জাবের আল-বাকেরকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়৷ চেমনিৎসে তার অ্যাপার্টমেন্টে বিস্ফোরক এবং বোমা তৈরিত সরঞ্জাম পাওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ সন্দেহ করা হয় যে, বার্লিন বিমানবন্দরে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করছিল সে৷ গ্রেপ্তারের দুই দিন পর অবশ্য কারাগারে আত্মহত্যা করে এই সিরীয় শরণার্থী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Willnow
আন্সবাখ, জুলাই ২০১৬
গত জুলাই মাসে জার্মানিতে দু’টি হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস৷ দু’টি হামলাই শরণার্থীরা ঘটিয়েছিল৷ এর মধ্যে বাভারিয়ার আন্সবাখ শহরে একটি মিউজিক ফেস্টিভ্যালের প্রবেশ মুখে এক সিরীয় শরণার্থী বিস্ফোরণ ঘটালে ১৫ ব্যক্তি আহত হন৷ হামলায় হামলাকারী অবশ্য নিজেও প্রাণ হারায়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/D. Karmann
ভ্যুয়র্ত্সবুর্গ, জুলাই ২০১৬
১৭ বছর বয়সি এক শরণার্থী ভ্যুয়র্ত্সবুর্গে একটি ট্রেনের মধ্যে কুড়াল ও ছুরি নিয়ে যাত্রীদের উপর হামলা চালায়৷ এতে হংকং থেকে আসা এক পর্যটক পরিবারের চার সদস্য এবং অন্য একজন আহত হন৷ পুলিশ হামলাকারীকে গুলি করে হত্যা করে৷ পুলিশ জানায়, হামলাকারী তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর সদস্য না হলেও এই জঙ্গি গোষ্ঠীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে হামলা চালিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Hildenbrand
ড্যুসেলডর্ফ, মে ২০১৬
ইসলামিক স্টেট-এর তিন সন্দেহভাজন সদস্যকে নর্থ রাইনওয়েস্টফেলিয়া, ব্রান্ডেনবুর্গ এবং বাডেন ভ্যুর্টেনবের্গ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ কর্তৃপক্ষ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দু’জন ড্যুসেলডর্ফের শহরতলীতে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করেছিল৷ অপরজন এবং ফ্রান্সে গ্রেপ্তারকৃত চতুর্থ জিহাদি বন্দুক ও বিস্ফোরক নিয়ে পথচারীদের হামলার পরিকল্পনা করছিল বলে খবর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hitij
এসেন, এপ্রিল ২০১৬
এসেনে একটি শিখ মন্দিরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ বিস্ফোরণে তিন ব্যক্তি আহতও হন৷ সিসিটিভি ফুটেজ প্রচারের পর ১৬ বছর বয়সি এক সন্দেহভাজন নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে৷ আর অন্য তরুণ সন্দেহভাজনকে বাড়ি থেকে আটক করে স্পেশাল পুলিশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kusch
হানোফার, ফেব্রুয়ারি ২০১৬
১৬ বছর বয়সি জার্মান-মরোক্কান তরুণী সোফিয়া এস. হানোফার ট্রেন স্টেশনে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত করে৷ ধারণা করা হয়, ইসলামিক স্টেট-এর সদস্যরা তাকে এই হামলায় প্ররোচিত করেছিল৷
ছবি: Polizei
বার্লিন, ফেব্রুয়ারি ২০১৬
বার্লিনে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে ইসলামিক স্টেট-এর সন্দেহভাজন তিন আলজেরীয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ বার্লিনের প্রসিকিউটরের দপ্তরের তথ্য আনুযায়ী, রাজধানীতে হামলা করার জন্য তাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত ছিল কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
ওবারউরসেল, এপ্রিল ২০১৫
এশবর্ন-ফ্রাংকফুর্ট সিটি লুপ বাইক রেস বাতিল করে পুলিশ, কেননা তারা সন্দেহ করছিল যে সেই রেসে ইসলামিক স্টেট হামলা চালাতে পারে৷ হামলা পরিকল্পনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৩৫ বছর বয়সি এক তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান এবং তাঁর ৩৪ বছর বয়সি স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে৷ বাইক রুটের কাছে তাদের বাড়ি থেকে বোমা তৈরির উপকরণও উদ্ধার করে পুলিশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
8 ছবি1 | 8
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার৷ ওই দিন পুলিশ খবর পায় বাভেরিয়ার শোয়াইনফুর্ট অঞ্চলের একটি হোমলেস শেলটারের বেসমেন্টে প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরক মজুত করা আছে৷ খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ৷ ওই বাড়িটির এবং আশপাশের বাড়িগুলির সকলকে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলা হয়, কারণ, কোনো কারণে বিস্ফোরণ হলে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকতো৷ এরপর বেসমেন্টে গিয়ে পুলিশ উদ্ধার করে বেশ কিছু হাতে তৈরি বোমা, ১ কিলোগ্রাম হাতে তৈরি বিস্ফোরক এবং ৩০ লিটার বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক, যার মধ্যে ট্রায়াকটোন ট্রাইপারঅক্সাইডও ছিল৷ এই রাসয়নিকটিই ব্যবহার করা হয়েছিল প্যারিস হামলার সময়৷ পুলিশের সন্দেহ, ওই বাড়িটিতে বসেও একই ধরনের কোনো হামলার ছক কষা হচ্ছিল৷
এত বিস্ফোরক দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয় মানুষ৷ বিস্ফোরক উদ্ধারের পর তাঁদের আবার নিজেদের বাড়িতে চলে যেতে বলে পুলিশ৷ পার্শ্ববর্তী একটি মাঠে ফাটিয়ে দেওয়া হয় বোমাগুলি৷ বিস্ফোরক তৈরির মশলাও নষ্ট করে দেওয়া হয়৷