1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বারবার প্রশ্নবিদ্ধ সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন!

সমীর কুমার দে ঢাকা
১২ মার্চ ২০২৪

সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এবারও নির্বাচন ঘিরে মারামারি হয়েছে। আগের বছরও নির্বাচন ঘিরে মারামারির ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ভবন
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে প্রতিবছরই সংঘাতের ঘটনা ঘটছেছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan

এবার মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছেন একজন সম্পাদক প্রার্থীসহ ছয় জন। পুলিশ তাদের রিমান্ডেও নিয়েছে। কেন এই পরিস্থিতি? মাত্র আট হাজার আইনজীবীর এই নির্বাচন কেন সুষ্ঠু করা যাচ্ছে না?

সংকট কোথায়? জানতে চাইলে সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না ডয়চে ভেলেকে বলেন, "পেশাজীবীদের এই সংগঠনগুলো আগে জাতির বিবেক হিসেবে কাজ করত। এখন তারা দলীয় লেজুড়বৃত্তি করে। আগে বারের সভাপতি বা সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করার জন্য একজন জাতীয় পর্যায়ের নেতারও কয়েকদিন আগে থেকে সময় নিতে হতো। সেখানে এখন বারের নেতারাই ছোট একজন নেতার পেছনে ঘুরেন। দল যেভাবে চায় বার সেভাবে পরিচালিত হচ্ছে। দলীয় ইচ্ছায় এখন বারের ইচ্ছায় পরিণত হয়েছে। নিজেদের কোন স্বকীয়তা নেই। আইনজীবীরা আগেও রাজনীতি করতেন, এখনও করেন। কিন্তু বার সব সময় রাজনীতির উর্ধ্বে থেকেছে।”

প্রধান বিচারপতি বা এটর্নি জেনারেলের দপ্তর কী কোন ভূমিকা রাখতে পারে? জানতে চাইলে জনাব পান্না বলেন, "এটর্নি জেনারেলের দপ্তর কী ভূমিকা রাখবে। একজন সহকারি এটর্নি জেনারেল নিয়োগের বা বাদ দেওয়ার ক্ষমতা কী তাদের আছে। এটা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দেয়। আমার বন্ধু প্রয়াত মাহবুবে আলম যখন এটর্নি জেনারেল ছিলেন তিনি আমাকে বলেছিলেন, তাদের কোনো মতামত নেওয়া হয় না। অথচ জানতে চাইলে তাকে বলতে হয়, আমার মতামতেই এটা হয়েছে। আমি একবার এটা নিয়ে রিট করার কথা তাকে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি নিষেধ করেছিলেন। কারণ আমি রিট করলে তার উপর চাপ বাড়বে। এই যখন পরিস্থিতি তাহলে কী আশা করেন। পচনের শেষ পর্যায়ে গিয়ে হয়ত এক সময় পরিবর্তন হবে। আর প্রধান বিচারপতি নিয়ে আমি কোন মন্তব্য করব না।”

আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ঠিকঠাকই হয়েছে। তবে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। ভোট গণনা রাতে না দিনে করা হবে এ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পাদক দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হট্টগোলের এক পর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। মারধরের ঘটনায় বহিরাগতরা অংশ নেন। পরে পুলিশ এসে ব্যালট পেপার ভর্তি পাঁচটি ট্রাংক নিজেদের হেফাজতে নেয়।

শেষ পর্যন্ত নির্বচনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল) ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। সম্পাদক হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের (সাদা প্যানেল) প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হক। সমিতির পরিচালনা পর্ষদের ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি এবং তিনটি সদস্য পদে নীল প্যানেলের জয় হয়েছে। আর সাদা প্যানেল পেয়েছে সহ-সভাপতির দুটি, সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, সহ-সম্পাদকের দুটি, এবং কার্যনির্বাহী সদস্যের চারটিসহ ১০টি পদ।

সব আসামিকেই আমরা গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি: হারুন অর রশীদ

This browser does not support the audio element.

যেভাবে পরিস্থিতির সূত্রপাত

ভোটগ্রহণ শেষে অধিকাংশ প্রার্থী পরের দিন ভোট গণনার অনুরোধ করেন। কিন্তু সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী রাতেই ভোট গণনা করতে বলেন। এক পর্যায়ে তিনি বেশ কিছু বহিরাগতকে ডেকে আনেন। বহিরাগতদের অধিকাংশ যুবলীগের নেতা ও কর্মী। নাহিদ সুলতানা যুথীর স্বামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। যুবলীগ কর্মীরাই হট্টগোল শুরু করেন। এক পর্যায়ে অন্য প্রার্থীরা চলে গেলে যুথীকে সম্পাদক বিজয়ী ঘোষণা করতে বাধ্য করা হয় নির্বাচন পরিচালনা সাব কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবুল খায়েরকে। তবে সভাপতি, সহসভাপতিসহ অন্য ১৩ পদের কোনটিরই ফল ঘোষণা করেনি সাব কমিটি।

জানতে চাইলে বারের নবনির্বাচিত সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ভোট গ্রহণ শেষে ব্যালট পেপারগুলো সর্টিংয়ের সময়ও ধারণা পাওয়া যায়, সভাপতি বা সম্পাদক করা হচ্ছেন। সর্টিং শেষে আমরা পরের দিন গণনার কথা বলেছিলাম। কিন্তু সম্পাদক পদে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও একটি প্যানেলের প্রার্থী হট্টগোল শুরু করেন। তখনই এই ঘটনার সূত্রপাত। তারা তো সাব কমিটিকে দিয়ে জোর করেই রেজাল্ট ঘোষণা করায়। পরে সবার উপস্থিতিতে যখন গণনা হয় তখন সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়।”

বারবার কেন বারের নির্বাচনে এই পরিস্থিতি হচ্ছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এবার আমরা চেয়েছিলাম, নির্বাচনটা সুষ্ঠু করতে। সব ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছিল। ভোটও ঠিকঠাক হয়েছে। গণনাও ঠিকঠাক হয়েছে। মধ্যে গণনার সময় নিয়ে কিছু মানুষ এটা বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছেন। এখন আমরা সরকার সমর্থিত হওয়ায় সব দায় আমাদের উপর পড়ে। অথচ আমরা চেষ্টা করেছি, নির্বাচনটা যেন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হয়।”

মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার ৬ জন রিমান্ডে

নির্বাচনে ভোট গণনা নিয়ে হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনায় নির্বাচন সাব কমিটির কো-অপ্ট সদস্য সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুর রহমান সিদ্দিকী সাইফ শুক্রবার রাতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে নাহিদ সুলতানা যুথীকে। আর দুই সম্বর আসামী বিএনপি-জামায়াতপন্থি নীল প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। মামলায় এজাহারভুক্ত অন্য ১৮ জন আসামি হলেন অ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন ওরফে মাসুদ, অ্যাডভোকেট শাকিলা রৌশন, অ্যাডভোকেট কাজী বশির আহম্মেদ, ব্যারিস্টার উসমান, অ্যাডভোকেট আরিফ, অ্যাডভোকেট সুমন, অ্যাডভোকেট তুষার, রবিউল, ব্যারিস্টার চৌধুরী মৌসুমী ফাতেমা কবিতা, সাইদুর রহমান জুয়েল, অলিউর, যুবলীগ নেতা জয়দেব নন্দী, মাইন উদ্দিন রানা, মশিউর রহমান সুমন, কামাল হোসেন, আসলাম রাইয়ান, অ্যাডভোকেট তরিকুল ও অ্যাডভোকেট সোহাগ। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৩০ থেকে ৪০ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে ব্যারিস্টার কাজলসহ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্যরা হলেন, কাজী বশির আহমেদ, তুষার, তরিকুল, এনামুল হক সুমন ও উসমান চৌধুরী। গ্রেপ্তার সবাই এজাহারভুক্ত আসামী। গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে কাজলকে চার দিনের এবং অন্য পাঁচ জনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ‘এক নম্বর আসামির নির্দেশে এবং প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির নিচ তলার শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে অস্ত্র হাতে ঢুকে বাদীসহ নির্বাচন সাব-কমিটির অন্য সদস্যদের গালিগালাজ করেন আসামিরা। দুই আসামি লোহার রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশে মাথায় আঘাত করতে গেলে বাদী বাধা দেন। এতে তার বাম কানের উপরে মাথার অংশে মারাত্মক জখম হন। অন্য আসামিরা লাঠি ও চেয়ার দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর এবং লাথি দিয়ে বাদীর শরীরের জখম করেন। তার পরনের কাপড়ও ছিঁড়ে ফেলা হয়।'

মামলায় আরও বলা হয়, ‘বাদীর সঙ্গে থাকা ব্যারিস্টার জাকারিয়া হাবিবকে মারধর করেন আসামিরা। লাঠির আঘাতে জাকারিয়ার ডান হাতের আঙুল ভেঙে যায়। টানাটানিতে তার পরনের কাপড় ছিঁড়ে যায়। আসামিরা তার মোবাইল ফোন নিয়ে যান। তারা অ্যাডভোকেট রিনা বেগমকে চড়-থাপ্পর ও হুমকি দেন। গলা চেপে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন। অজ্ঞাত অন্য আসামিরা অডিটোরিয়ামের ভেতরে ভাঙচুর ও অরাজকতা সৃষ্টি করেন। এর ফলে নির্বাচনি দায়িত্বরত সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। নির্বাচনী কার্যক্রম ভুন্ডুল হয়ে যায়।' এজাহারে বলা হয়, ‘নির্বাচন সাব-কমিটির প্রধান অ্যাডভোকেট আবুল খায়েরকে অস্ত্রের মুখে ভোট গণনা ছাড়াই সম্পাদক হিসেবে নিজেকে নির্বাচিত ঘোষণা করতে বাধ্য করেন এক নম্বর আসামি। নির্বাচন সাব-কমিটির সদস্যরা জীবন বাঁচাতে ভোট গণনার কাজ না করেই চলে যেতে বাধ্য হন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে ঘটনার সবকিছু ধারণ করা আছে।'

দলীয় ইচ্ছায় এখন বারের ইচ্ছায় পরিণত হয়েছে: জেড আই খান পান্না

This browser does not support the audio element.

তদন্ত কতদূর? প্রধান আসামী কোথায়?

শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের হওয়ার পর তদন্তের জন্য ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা মামলাটির তদন্ত বুঝে পেয়েছি। রিমান্ডে থাকা আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা গোলমালের কথা স্বীকার করেছেন। গুরুত্বের সঙ্গে আমরা বিষয়টি দেখছি।”

প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশ কোন উদ্যোগ নিয়েছে কিনা? জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, "শুধু প্রধান আসামি নয়, সব আসামিকেই আমরা গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। তাদের গ্রেপ্তারে বেশ কয়েকটি অভিযান চালানো হয়েছে। ডিবির একাধিক টিম আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”

মামলার এক নম্বর আসামী নাহিদ সুলতানা যুথীর মোবাইল ফোন নম্বরটি চালু আছে। তবে কয়েকবার ফোন করার পরও তিনি রিসিভ করেননি।

জানতে চাইলে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সারা দেশটা যেভাবে চলছে, এখানের নির্বাচনও সেভাবে হয়েছে। একজন সম্পাদক প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে তারপর ফলাফল গণনা শুরু হয়। এটা সারা বিশ্বে কোথাও দেখা যাবে না। ফ্যাসিস্ট সরকার সুপ্রিম কোর্ট বারকেও ছাড়েনি।”

পুরোটা সরকারের সাজানো হলে সভাপতি পদে আপনাদের প্রার্থী জিতল কীভাবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এটাও সাজানো। সভাপতি পদে যিনি জিতেছেন তিনি তো নিজেই বলেছেন, এই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। তিনি পুনরায় ভোট গ্রহণের কথা বলেছেন। আসলে তারা নিজেরা গোলমাল করে বারের তিনবারের নির্বাচিত সম্পাদককে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে। ”

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুক্রবারের সহিংসতার ঘটনার পরে আইন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে মো. জাকির হোসেন, কাজী বশির আহমেদ ও শামা আক্তার এই তিন সহকারী এটর্নি জেনারেলকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর রুনা নাহিদ আক্তারের সই করা প্রজ্ঞাপনে  এ কথা জানানো হলেও তাদের অব্যাহতির কারণ উল্লেখ করা হয়নি।

প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয় বুধ ও বৃহস্পতিবার। ৭ হাজার ৮৮৩ জন আইনজীবীর মধ্যে ৫ হাজার ৩১৯ আইনজীবী ভোট দেন। পরে শনিবার ভোট গণনা করে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ