বোমা-গুলি-আগ্নেয়াস্ত্র! বাংলায় রমরমিয়ে চলছে অপরাধীদের 'কুটির শিল্প'। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর ধরপাকড় হচ্ছে বটে। কিন্তু এতদিন পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি কেন?
বিজ্ঞাপন
পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতিকে ঘিরে সন্ত্রাস কোনো নতুন ব্যাপার নয়। যত্রতত্র বোমা মজুতের ফলে কতবার ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে! পুরুলিয়া মাদ্রাসা থেকে পিংলা বিস্ফোরণ, কালিয়াচক, ধূলাচক, খাগড়াগড়, নৈহাটি, এমনকি বর্ধমানের রসিকপুরের সেই ঘটনাটার কথা মনে পড়ে? রসিকপুরে হাঁড়িতে রাখা গোল বস্তুটিকে বল ভেবে খেলতে গিয়ে মৃত্যু হয় শিশুর। এক সময় এমন ঘটনার প্রতিবাদেই গান লিখেছিলেন কবীর সুমন- "বাহবা সাবাস বড়দের দল এই তো চাই / ছোটরা খেলবে আসুন আমরা বোমা বানাই।” যদিও কবীর সুমন এখন বোমা সন্ত্রাস গণহত্যা কোনো কিছু নিয়েই আর সরব হন না।
চলতি মাসে একের পর এক ঘটনায় এ নিয়ে ফের শোরগোল উঠেছে। সবচেয়ে বড় ঘটনা অবশ্যই রামপুরহাটের বগটুই গণহত্যা। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে উপপ্রধান খুনের পর পুড়িয়ে মারা হয়েছে ১০ জনকে। বীরভূমের গ্রামে ঘটনার দিন মুহুর্মুহু বোমা পড়েছে। তার ঠিক আগে পানিহাটি ও ঝালদায় দুই কাউন্সিলর আততায়ীর শিকার হন। পানিহাটির কাউন্সিলরকে গুলি করে মারার ভিডিও ভাইরাল হয়। তারপর রামপুরহাটের ঘটনা নিয়ে যখন উত্তাল রাজ্য, তখন মুখ্যমন্ত্রী ওই গ্রামে দাঁড়িয়ে পুলিশকে নির্দেশ দেন, অবিলম্বে বোমা-গুলি-আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে হবে।
রামচন্দ্র ডোম
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ-প্রশাসন। জেলায় জেলায় পুলিশি তল্লাশি গতি পেয়েছে। বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে পাওয়া যাচ্ছে বোমা-বারুদ-আগ্নেয়াস্ত্র। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে একটি বালতি থেকে শ'খানেক বোমা মেলে। বীরভূমের মাড়গ্রাম, লাভপুর, দুবরাজপুর, মল্লারপুর থেকে চারদিনে পাওয়া গিয়েছে ৪০০-র বেশি তাজা বোমা, ৩০ কেজির বেশি বোমার মশলা। মুর্শিদাবাদে গুলি, আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা উদ্ধার হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট ও বর্ধমানের খাগড়াগড় মোড় থেকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সব অভিযানের মধ্যেই আবার ঘটেছে দুর্ঘটনা। মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার
বাসন্তীতে একটি বাড়িতে জোরালো বিস্ফোরণ হয়। তাতে আহত একজনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি বারুইপুর, ক্যানিং থেকেও তাজা বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। এইসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধীরা বলছে, বাংলা রয়েছে বারুদের স্তূপের উপর।
নজরুল ইসলাম
যে বীরভূম জেলা এখন আলোচনার কেন্দ্রে, সেখানকার সিপিএম নেতা, প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "পুরোটাই নাটক। মুখ্যমন্ত্রী জানেন অস্ত্র না থাকলে তাঁরা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন না। রামপুরহাটের মতো বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তিনি বাধ্য হয়েছেন ব্যবস্থা নিতে। আসলে এটা আই-ওয়াশ।” একই সুরে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট চঞ্চল চট্টোপাধ্যায় বলেন, "বগটুই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গোটা বীরভূম উড়ে যেতে পারে। বীরভূমে যা বোমা মজুত আছে, তাতে যে কোনো দেশ উড়ে যেতে পারে। আমরা বারবার অভিযোগ করেছি, কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”
কেন পুলিশ কাজ করেনি? প্রাক্তন পুলিশকর্তা সন্ধি মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এই সমস্ত ঘটনা প্রমাণ করে, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখায় মতো অবস্থায় নেই এই রাজ্যের পুলিশ। স্থানীয় পুলিশ আধিকারিক তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তার কথা শুনছেন না। এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে যে এলাকার শাসক দলের নেতাদের হাতে পুলিশের ভালো-মন্দের ভার। এতে পুলিশের কাঠামোটাই প্রশ্নের মুখে পড়েছে।”
রামপুরহাটে নৃশংসতা : কার কী প্রতিক্রিয়া?
সোমবার রাত থেকে অগ্নিগর্ভ বীরভূমের রামপুরহাট৷ বাতাসে এখনও পোড়া লাশের গন্ধ৷ অভিযোগ, বগটুই গ্রামে পর পর বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে৷ বিচারপতি থেকে পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবী, কে কী প্রতিক্রিয়া জানালেন এই ঘটনায়?
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কলকাতা হাইকোর্টের বক্তব্য
রামপুরহাটের বগটুইয়ের ঘটনাকে ‘খুব শকিং’ বলে মন্তব্য করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব৷ তার কথায়, ‘‘এটি একটি মারাত্মক অপরাধ৷ দোষীদের কাউকে ছাড়া হবে না৷’’ বগটুইয়ের ঘটনার সঙ্গে গোধরা-কাণ্ডের তুলনা করলেন এক আইনজীবী। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট৷
ছবি: DW/P. Tewari
কংগ্রেসের মামলা
রামপুরহাট কাণ্ডে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছে কংগ্রেস৷ বীরভূমে মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে ৩৫৫ ধারা প্রয়োগ করার সময় এসে যাচ্ছে৷আমি এই কথাটা রাষ্ট্রপতির কাছে জানাবো৷’’
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
বাধার মুখে বামফ্রন্টের বিচার দাবি
বুধবার বাম প্রতিনিধিদলকে নিয়ে বীরভূমের রামপুরহাটে ঢুকতে গেলে বাধা দেয়া হয় পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে৷ প্রতিবাদে অবস্থানে বসেছিলেন প্রবীণ বাম নেতা৷ তিনি বলেন, ‘‘গণহত্যায় যুক্তদের বিচার হওয়া উচিত জনগণের দরবারে৷’’
ছবি: UNI
‘জামাই মারা গিয়েছে’
বগটুইয়ে পুলিশের বাধায় পড়ে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম৷ বেসরকারি সংবাদপত্রের প্রতিনিধিকে তিনি জানান, ‘‘নানুরে আমার বন্ধুর ছেলে এখানকার জামাই হয়ে এসেছে৷ দু’মাস আগে ওদের বিয়ে হয়েছে৷ আমাকে এখানে আটকানো হচ্ছে, কিন্তু এই ঘটনায় আমার জামাই মারা গিয়েছে, সেই ঘরটা দেখতে চাই৷’’
ছবি: Satyajit Shaw/DW
‘‘কাশ্মীরের মতো ঘটনা’’
রামপুরহাটের ঘটনায় পুলিশ মন্ত্রীরও দায়িত্বে থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করে মঙ্গলবার থেকেই সরব বিজেপি৷ বুধবার বকটুইয়ে যান বিজেপি বিধায়করা৷বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ পশ্চিমবঙ্গের এক বেসরকারি চ্যানেলকে বলেন, ‘‘কাশ্মীরের মতো ঘটনা এটি৷ পুলিশ হতে দিয়েছে বলেই এমন ঘটনা ঘটলো৷ কেন জনপ্রতিনিধি খুন হওয়া সত্ত্বেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়নি?’’
ছবি: IANS
রাজ্যপালের চিঠি
রামপুরহাটের ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়৷ চিঠিতে তিনি লেখেন, রাজভবনে চুপ করে বসে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়৷ তিনি এই ঘটনার পর নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারেন না৷ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মন্তব্য উদ্ধৃত করে রাজ্যপাল লেখেন ‘‘পশ্চিমবঙ্গে শাসকের আইন আছে, আইনের শাসন নেই৷’’
ছবি: Prabakhar/DW
কবিতা উৎসবে সুবোধ
কবি ও অধ্যাপক সুবোধ সরকারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বেসরকারি সংবাদমাধ্যম যোগাযোগ করেছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি তো এখন কবিতা উৎসবে৷বিষয়টা আমি জানিও না৷ বলতে পারবো না৷ রামপুরহাটে কোথায়? কখন ঘটলো?আমাকে বিষয়টা দেখতে হবে৷’’
ছবি: DW/P. Samanta
নীরব কবীর সুমন
ওই বেসরকারি চ্যানেল যোগাযোগ করেছিল সংগীতশিল্পী কবীর সুমনের সঙ্গে৷ তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন,‘‘মার্জনা করবেন৷ আমি কোনো ব্যাপারে কোনো মত দেবো না৷ আপনার মঙ্গল হোক৷’’
ছবি: privat
শুভাপ্রসন্নের নিন্দা, মমতা-স্তুতি ও সন্দেহ
ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের দিকে আঙুল উঠেছে৷ রামপুরহাট প্রসঙ্গে চিত্রকর শুভাপ্রসন্ন বললেন, ‘‘এটা একটা ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা৷ মানুষের মৃত্যু কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়৷ তবে এটা কতটা সৌভাগ্য যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে অনেক কিছু ভালো হচ্ছে৷ নানারকমভাবে বিরোধীরা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে৷’’ (ওপরে যোগেনের সঙ্গে শুভাপ্রসন্ন)
ছবি: DW
টলিউডে ‘তাদের’ কৌশল
রামপুরহাট নিয়ে কিছু বলার নেই- টলিউড তারকা দেব এমনটাই জানিয়েছেন বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকে৷ মেদিনীপুর বিধায়ক তথা টলিউডের অভিনেত্রী জুন মালিয়া ফোনে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘শুটিংয়ে ব্যস্ত৷ কথা বললে ফ্লোরে বকা দেবে৷’’ টলিউড অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক জানান, তিনি শটের মধ্যে রয়েছেন, পরে কথা বলবেন৷ ভূতের ভবিষ্যৎ সিনেমার পরিচালক অনীক দত্তর বক্তব্য, ‘‘বুদ্ধিজীবী শব্দটি খারাপ শব্দ৷ গালিগালাজের সমান এই বাংলায়৷’’
ছবি: Creative Commons
মমতার কথা
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রামপুরহাটের বগটুইয়ের ঘটনায় দোষীরা শাস্তি পাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন৷ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত হবে বলেও দাবি তার৷ বৃহস্পতিবার তিনি রামপুরহাট যাবেন৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আবার জ্ঞানবন্ত..
আনিস হত্যাকাণ্ডের মতো রামপুরহাটকাণ্ডের তদন্তভারও দেয়া হয়েছে আইপিএস জ্ঞানবন্ত সিংকে৷ তার নেতৃত্বে ‘সিট’ গঠন করেছে রাজ্য সরকার৷ জ্ঞানবন্তের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি নেত্রী, আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল৷ রিজওয়ানুর রহমান হত্যার ঘটনায় জ্ঞানবন্তের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে আনিস হত্যার পর রামপুরহাটকাণ্ডের তদন্তভারও জ্ঞানবন্তকে দেয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
12 ছবি1 | 12
রামপুরহাট গণহত্যার পর রাজ্যের প্রধান বিরোধী বিজেপিকে প্রতিবাদে বেশ তৎপর দেখাচ্ছে রাজ্যপালের কাছে দরবার থেকে মিছিল, সবেতেই বামেদের টেক্কা দিয়েছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহার বক্তব্য, "বীরভূমে আমরা বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে আছি। পাড়ায়-পাড়ায়, ঘরে-ঘরে মজুত বোমা পাওয়া যাচ্ছে। যাদের বাড়ি থেকে বোমা পাওয়া যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ পদক্ষেপ করছে না। যেহেতু এ সব তৃণমূলের হার্মাদ আর লেঠেল বাহিনীর বোমা।”
শাসক দল অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগ খারিজ করেছে। তাদের পাল্টা বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশের তৎপরতায় বোমা, গুলি উদ্ধার হচ্ছে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে কার্যকরী ভূমিকা নিচ্ছে প্রশাসন। বিরোধীরাই মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছে, ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছে। বীরভূমের তৃণমূল জেলা সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়নের বার্তা নিয়ে চলেছেন। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, অসামাজিক লোক খুঁজে বার করে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার। এ রকম মুখ্যমন্ত্রী কোথায় আছেন, যিনি বলেন কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা? তিনি বলেছেন, তাই পুলিশ পদক্ষেপ নিচ্ছে।”
ভয়, উত্তেজনার রামপুরহাট
চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে ছাই। হাওয়াই চটি। থমথমে গ্রামে সকলে সন্ত্রস্ত। পুড়ে যাওয়া মৃতদেহ চিহ্নিত পর্যন্ত করা যাচ্ছে না। ঘটনাস্থলে ডিডাব্লিউ-র ক্যামেরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বগটুই গ্রামের অন্দরে
পোড়া বাড়ি থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। দমকলকর্মীরা এখনো বাড়ির ভিতর ঢুকে ঢুকে আগুন নেভানোর কাজ করছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাস্তায় তাজা বোমা
গ্রামের রাস্তায় এখনো পড়ে আছে তাজা বোমা। পুলিশ গিয়ে কিছু বোমা উদ্ধার করেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ভয়াবহতার আরেক নাম
বাড়ির সামনে পড়ে আছে কলসি। জুতো, চটি। বাড়ির ভিতর আগুনে তছনছ হয়ে গেছে। পোড়া দেহগুলি শনাক্ত পর্যন্ত করা যাচ্ছে না। এতই খারাপ অবস্থা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শিশুদের মৃত্যু
স্থানীয় মানুষ ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরেই গ্রামে উত্তেজনা চলছিল। তার জেরে গ্রামের পুরুষরা আগেই পালিয়েছিল। যাদের পুড়ে মৃত্যু হয়েছে, তার অধিকাংশই নারী ও শিশু। প্রশাসন অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
নিহত ভাদু শেখ
স্থানীয় তৃণমূল নেতা ভাদু শেখের ছবি। গন্ডগোলের সূত্রপাত তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করেই। চায়ের দোকানে তার মাথা লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়া হয়। তার মৃত্যুর পরেই গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ঘটনাস্থলে ফিরহাদ হাকিম
মঙ্গলবারই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ভাদু শেখের বাড়িতে কথা বলছেন তিনি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সিপিএমের প্রতিনিধি দল
সিপিএমের প্রতিনিধি দল সকালে ঢুকেছে গ্রামে। দলের সদ্য নিযুক্ত রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, প্রবীণ নেতা বিমান বসু ঘটনাস্থলে যাবেন। সেলিম মঙ্গলবার অভিযোগ করেছিলেন, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সবকিছু ধামাচাপা দিতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। এদিন গ্রামে ঢুকে সেলিম বলেন, পুলিশ সিন্ডিকেটের টাকায় চলছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিজেপির প্রতিনিধি দল
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং রাজ্য নেতৃত্বের দল এদিন রামপুরহাটে যাবে। তারাও এলাকা ঘুরে দেখবে। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবিষয়ে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে। কেন্দ্রীয় মহিলা কমিশন এবং শিশু সুরক্ষা কমিশন রাজ্যকে কড়া ভাষায় চিঠি দিয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাজ্য প্রশাসনের যুক্তি
তৃণমূল কর্মী খুন এবং আগুন লাগার বিষয়টি সম্পর্কযুক্ত কি না, তা নিয়ে এখনো স্পষ্ট বার্তা দেয়নি রাজ্য প্রশাসন। মৃতের সংখ্যা নিয়েও একেকজন একেক কথা বলছেন। দমকলকর্মীরা বলেছিলেন মৃতের সংখ্যা ১০। স্থানীয় পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন মৃতের সংখ্যা সাত। রাজ্য পুলিশের ডিজি জানিয়েছেন মৃতের সংখ্যা আট। গ্রামবাসীদের অভিযোগ মৃতের সংখ্যা আরো বেশি। পুলিশের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
থমথমে পরিস্থিতি
সব মিলিয়ে থমথমে পরিস্থিতি রামপুরহাটের গ্রামে। সাংবাদিকদেরও বিশ্বাস করতে পারছেন না গ্রামের মানুষ। সন্ধের পর কাউকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
10 ছবি1 | 10
এমন রাজনৈতিক চাপানউতোর পশ্চিমবঙ্গে সব বিষয়েই হয়। কিন্তু সমস্যাটা ঠিক কোথায়? জেলায় জেলায় কীভাবে চলছে বারুদের কারখানা? একেবারে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে দেখছেন সাবেক আইপিএস আধিকারিক নজরুল ইসলাম। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "প্রশাসন জানে যে শাসক দলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর হাতে অস্ত্র রয়েছে। রামপুরহাটে সেটা এমন ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে যে তাতে শাসকই অস্বস্তিতে পড়েছে। অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। ফলে বাকি যে অস্ত্র শাসকের মদদপুষ্ট সমাজবিরোধীদের হাতে রয়েছে, সেগুলি উদ্ধারে তৎপর হয়েছে পুলিশ। শাসকদলের আশঙ্কা, যদি এই অস্ত্র ব্যবহারের ফলে তাদের আরও ক্ষতির মুখে পড়তে হয়!”
এক্ষেত্রে পুলিশি ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন রাজ্যের সাবেক পুলিশ কর্তা নজরুল ইসলাম। তার বক্তব্য, "মুখ্যমন্ত্রীকে এ ধরনের নির্দেশ দিতে হবে কেন? বেআইনি অস্ত্র থাকলে তাকে গ্রেফতার করে সাজা দিতে হবে। পুলিশ এতদিন তা করেনি কেন? আসলে পুলিশকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। রামপুরহাটের ঘটনায় তাই আইসি, এসডিপিও-র ভূমিকা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে।”