বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে৷ আর সারা বিশ্বে মারা গেছে ৩৮৬ জন৷ এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় সর্বোচ্চ ১৬৩ জন মারা গেছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবশেষ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এই তথ্য৷
বিজ্ঞাপন
২০০৩ সাল থেকে শুরু করে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত পাওয়া তথ্য ঐ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে৷ এই সময়ের মধ্যে বিশ্বের ১৬টি দেশের ৬৫০ জন বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়৷
উল্লেখ্য, বার্ড ফ্লু পাখিদের একধরনের জ্বর৷ তবে সেটা হাঁস-মুরগির মাধ্যমে মানবদেহেও প্রবেশ করতে পারে৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঐ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে মোট সাতজন বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে ২০১৩ সালে আক্রান্ত হওয়া এক শিশু মারা যায়৷ সমকাল পত্রিকার খবর অনুযায়ী, গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি ১ বছর ১১ মাস বয়সি এক শিশু বার্ড ফ্লু নামে পরিচিত ইনফ্লুয়েঞ্জা এ (এইচ৫এন১) আক্রান্ত হয়ে মারা যায়৷ সরকারি প্রতিষ্ঠান রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) তাদের ওয়েবসাইটে এই খবরটি প্রকাশ করে৷
বার্ড ফ্লু সম্পর্কে কিছু তথ্য
বার্ড ফ্লু মুরগির রোগ হলেও সেটা মানুষের দেহেও প্রবেশ করতে পারে৷ বার্ড ফ্লুর নানা তথ্য নিয়ে সাজানো হয়েছে এই ছবিঘর৷
ছবি: Reuters
বার্ড ফ্লু কী?
বার্ড ফ্লু পাখিদের একধরনের জ্বর৷ কিন্তু এই জ্বরটির জন্য দায়ী এক ধরনের ভাইরাস, যার নাম এইচ৫এন১৷ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হাঁস-মুরগি থেকে ভাইরাসটি মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে৷ ছবিতে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে এইচ৫এন১ ভাইরাসকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: AP
বার্ড ফ্লু যেভাবে ছড়ায়
এইচ৫এন১ ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো বন্য পাখি, সামুদ্রিক বা শীতের অতিথি পাখির মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে পারে৷ যেমন অতিথি পাখি কোনো পুকুরের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় মলত্যাগ করলে সেই পুকুরে নামা হাঁস ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে৷ সেই হাঁস থেকে ডিম বা মাংসের মাধ্যমে ভাইরাসটা ঢুকে যেতে পারে মানবদেহে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
মহামারির আশঙ্কা
অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞদের মনে শঙ্কা জেগেছে যে, এইচ৫এন১ ভাইরাসের কারণে হয়ত বহু লোকের প্রাণ যেতে পারে৷ যেমনটা এর আগে অন্তত তিনবার হয়েছে৷ ১৯১৮-১৯ সালে এইচ১এন১-র কারণে চার কোটি, ১৯৫৭-৫৮ সালে এইচ২এন২-র কারণে ২০ লাখ এবং ১৯৬৮-৬৯ সালে এইচ৩এন২-র কারণে সাত লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছে গোটা বিশ্বে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press
বর্তমান অবস্থা
আশার কথা, বার্ড ফ্লু এখনো ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেনি৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, ২০০৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫০ জন মানুষ বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছে৷ এর মধ্যে মারা গেছে ৩৮৬ জন৷ অবশ্য বিশেষজ্ঞরা সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করে রেখেছেন৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশে একজনের মৃত্যু
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সাতজন বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছে৷ এর মধ্যে একজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে গত বছর৷ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ঐ শিশুটি তার বাড়ির মুরগি থেকে বার্ড ফ্লু ভাইরাসটি পেয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মুরগি নিধন
বাংলাদেশে মুরগির দেহে বার্ড ফ্লু প্রথম ধরা পরে ২০০৭ সালে৷ তখন সারা দেশে মুরগির খামার ছিল প্রায় দেড় লাখ৷ পরবর্তীতে বার্ড ফ্লু আতঙ্কে গণহারে মুরগি নিধন শুরু হওয়ায় খামারের সংখ্যা অনেক কমে যায়৷ এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন অনেক পোল্ট্রি ব্যবসায়ী৷
ছবি: Reuters
6 ছবি1 | 6
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ঐ শিশুটিকে প্রথমে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ পরে তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতাল এবং তারও পরে একটি বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে স্থানান্তর করা হলে, সেখানে তার মৃত্যু হয়৷ আইইডিসিআর-এর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিশুটির প্রচলিত ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি৷ এ কারণে তার গলা ও নাক থেকে নমুনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনে' (সিডিসি) পাঠানো হয়৷ সিডিসিই শিশুটি বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে৷
পরবর্তীতে কুমিল্লায় শিশুটির বাড়ির মুরগির খামারের সঙ্গে শিশুটির বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার যোগসূত্র পায় আইইডিসিআর৷