মিয়ানমার সেনাপ্রধানের অফিস বুধবার এক ফেসবুক পোস্টে ১০ জন রোহিঙ্গা হত্যার কথা স্বীকার করেছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো এর আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করে বলছে, বার্মিজ সেনারা নামমাত্র অপরাধ স্বীকার করেছে৷
বিজ্ঞাপন
ফর্টিফাই রাইটস, অ্যামনেস্টি ইন্টারনাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এমন বক্তব্য দিয়েছে৷
ফর্টিফাই রাইটসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ম্যাথs স্মিথ দাবি করেছেন, মিয়ানমার সেনারা যে ঘটনাটির কথা স্বীকার করেছে, উত্তর রাখাইন জুড়ে তেমন অসংখ্য ঘটনার তথ্যপ্রমাণ আছে তাদের কাছে৷
এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ‘‘এমন অসংখ্য তথ্যপ্রমাণ আছে যে, মিয়ানমারের সেনারা রোহিঙ্গাদের হত্যা ও ধর্ষণ চালিয়েছে এবং তাদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছে৷’’
বিদ্রোহ দমনের কৌশল – হত্যা, ধর্ষণ, আগুন
01:01
জাতিসংঘ কর্তৃক নিয়োজিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশনকে মিয়ানমারে প্রবেশ করে বিষয়গুলো তদন্তের সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷
এর আগে বুধবার দেশটির সেনাপ্রধানের অফিস কর্তৃক প্রকাশিত এক ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, গ্রামবাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর কতিপয় সদস্য মিলে ইনদিন গ্রামে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার ঘটনাটি ঘটিয়েছে৷
তবে মৃতদের ‘বাঙালি জঙ্গি' বলে অভিহিত করে তারা৷
‘‘ইনদিন গ্রামের কয়েকজন গ্রামবাসী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য স্বীকার করেছে যে, তারা ১০ জন বাঙালি জঙ্গিকে হত্যা করেছে৷''
রোহিঙ্গাদের বাঙালি জঙ্গি বলায় আবারো সমালোচনায় পড়ে তারা৷ যুগ যুগ ধরে রোহিঙ্গারা দেশটিতে বাস করে এলেও তাঁরা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী' বলে চালিয়ে দিচ্ছে মিয়ানমার৷
ফেসবুক পোস্টে আরো বলা হয়,নিহত রোহিঙ্গাদের প্রথমে আটক ও পরে হত্যা করা হয়৷
গত ২ সেপ্টেম্বর এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে৷ পরে এই গণকবরটি খুঁজে পাওয়ার পর এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে গত মাসে তদন্ত শুরু করে মিয়ানমার৷ সেই তদন্তের প্রেক্ষিতেই এ তথ্য জানানো হলো সেনাপ্রধানের ফেসবুক পোস্টে৷
গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন' বলে আখ্যা দিয়েছে৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে৷
রোহিঙ্গাদের মুখচ্ছবি
ভয়াবহ সব অভিজ্ঞতার মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া, পেছনের টান আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা- এই সব নিয়ে একরাশ হতাশা আর বেদনা স্পষ্ট প্রতিটি রোহিঙ্গার চোখেমুখে৷ সম্প্রতি রয়টার্সের ক্যামেরায় ধরা পড়া এমন কিছু অবয়ব নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/D. Sagoli
অশ্রু
মাত্র একদিন আগেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে পালিয়ে এসেছেন ৩০ বছর বয়সি আমিনা খাতুন৷ বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর প্রথম রাত কেটেছে কক্সবাজারের শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রের পাশের সড়কে৷ সাথে ছিল তারই মতো নতুন আসা আরও হাজার হাজার মানুষ৷ সামনের দিনগুলোর কথা ভেবেই হয়তো এই অশ্রুসজল চোখ!
ছবি: Reuters/D. Sagoli
শিশুদের চাহনি
ছবি তোলা হচ্ছে দেখলেই গ্রামের ছেলেমেয়েরা দৌড়ে আসে- এই দৃশ্য খুবই পরিচিত৷ কিন্তু শিশুদের চোখেও এত অবিশ্বাস আর হতাশা বোধহয় পরিচিত নয়৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
জীবন যুদ্ধ
সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ৭০ এর বেশি বয়সি এই নারী মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছেন কিছুক্ষণ আগেই৷ জীবনের এই শেষ দিনগুলোতেও জীবন বাঁচাতে এমন যুদ্ধ করতে হবে কখনও হয়ত ভাবেননি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
অসহায়ত্ব
এই শরণার্থী শিশুর অপেক্ষা একটু ওষুধের জন্য৷ সারা মুখে নানা ক্ষত আর তার ওপর মাছির আনাগোনাতেই বোঝা যাচ্ছে, একটু ওষুধ কতখানি দরকার তার৷
ছবি: Reuters/D. Sagolij
নিরুপায়
বৃষ্টি মাথায় ত্রাণকেন্দ্রের সামনে অপেক্ষা৷ আর তো কোন উপায় নেই!
ছবি: Reuters/C. McNaughton
আশ্রয়ের অপেক্ষা
মাত্রই বাংলাদেশে এসেছেন৷ শুরুতে জায়গা হয়েছে এক স্কুল ঘরে৷কিন্তু সেখানে তো আর থাকা যাবে না৷থাকতে হবে আশ্রয়কেন্দ্রে৷নতুন সেই ঠিকানার অপেক্ষাতেই এখন তারা৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
ত্রাণের আশা
কক্সবাজারের বালুখালি শরণার্থী শিবিরে আর সবার মতোই একটু ত্রাণের আশায় কোলের সন্তানকে নিয়ে অপেক্ষায় এই নারী৷
ছবি: REUTERS
চৌদ্দ দিন পর
সালেহা বেগম নামের এই মা এতটুকুন শিশুকে নিয়ে ১৪ দিন ধরে জঙ্গল পথে হেঁটেছেন৷ তারপর পেরেছেন সীমান্ত পাড়ি দিতে৷ এখন অপেক্ষা একটু আশ্রয়ের৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
বিশ্রাম
টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপ পর্যন্ত নৌকায় গাদাগাদি করে এসে কোনমতে পৌঁছেছে সবাই৷ নতুন আশ্রয়ে যাবার আগে তাই একটু বিশ্রাম৷
ছবি: Reuters/D. Sagolij
দায়িত্বের ভার
টেকনাফে পৌঁছেই ছুটতে হচ্ছে ত্রাণের আশায়৷ নিজেই এক শিশু, তার ওপর কোলে, পাশে আরও ভাই-বোন থাকায় দায়িত্ব যেন বেড়ে গেছে৷
ছবি: Reuters/D. Sagolij
প্রতিক্রিয়া
এত মানুষের টানাহ্যাঁচড়ার মধ্যেই দাঁড়াতে হয় ত্রাণের লাইনে৷ ধাক্কাধাক্কি সহ্য করে আর কতক্ষণ৷ তাল সামলাতে না পেরে তাই চোখ ফেটে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
অনিশ্চয়তা
আদরের ধন নাতিকে কোলে নিয়ে এই নারী বসে আছেন ত্রাণের আশায়৷ কিন্তু একটু ত্রাণই তো সব নয়৷ নাতির ভবিষ্যত কী, সেই ভাবনাতেই খানিকটা উদাস হয়ে পড়েছেন তিনি৷