‘‘বার্লিনালে আসছে’’– বললেই অনেকে বুঝে নেন জার্মানিতে শুরু হতে চলেছে বিশাল এক চলচ্চিত্র উৎসব৷ বার্লিনালে মানে ভালুকও থাকবে সেখানে৷ ৭ই ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে উৎসব চলবে ১৭ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত৷ ১৯ জন পরিচালকের ছবি থাকবে প্রতিযোগিতায়৷ যিনি সেরা হবেন, তাঁর হাতেই উঠবে ভালুক৷ এখানে সেরার পুরস্কারই যে ‘গোল্ডেন বিয়ার’!

হ্যাঁ, তিনিও ‘প্রেসিডেন্ট’, তবে কোনো দেশের নয়, বিচারকদের নেতা তিনি৷ বার্লিনালের ৬৩তম আয়োজনে যে জুরি বোর্ড তারই প্রেসিডেন্ট ওয়ং কার-ওয়াই৷ নিজে পরিচালক৷ হংকং-এর নাগরিক ওয়ং-এর সর্বশেষ ছবি,‘ দ্য গ্র্যান্ডমাস্টার’ এবারের উৎসবেরও দেখানো হবে৷ তবে মূল প্রতিযোগিতায় থাকছে না সেটা৷

দু’বছর আগে তাঁকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল ইরান সরকার৷ শুধু কি তাই, বলা হয়েছিল ২০ বছরের মধ্যে দেশে কোনো কাজই করতে পারবেন না জাফর পানাহি৷ হাত বেঁধে ছেড়ে দেয়ার মতো অবস্থা আর কি! তা পানাহির মতো মানুষ কি কাজ ছাড়া থাকতে পারেন? ছবি নির্মাণের কাজ চলছেই৷ তাঁর নতুন ছবি ‘পার্দে’ বার্লিনালেতে নজর কাড়বেই৷

বার্লিনালে চলবে আর বার্লিনে তারার মেলা বসবে না তা কি হয়? হলিউড, বলিউড থেকে শুরু করে বলতে গেলে বিশ্বের মোটামুটি সব দেশ থেকেই চলচ্চিত্র তারকারা এ সময়টায় চলে আসেন জার্মানিতে৷ ম্যাট ডেমন, স্টিভেন সনডারব্যার্গরা তো থাকবেনই, আরো অনেকেই আসছেন লাল গালিচার সংবর্ধনা নিয়ে বার্লিনালের আকর্ষণ বাড়াতে৷

জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল আর বার্লিনালের ‘রাজা’ ডিটার কসলিক৷ ১০ বছর ধরে যিনি বিশ্বের এত বড় এক উৎসবের পরিচালক, যাঁর নেতৃত্বে বার্লিনের এ আয়োজন দিন দিন আরো আলো ছড়াচ্ছে, তাঁকে ‘বার্লিনালের রাজা’ বলা যেতেই পারে, কী বলেন? তা কসলিক যে সমালোচনার ঊর্ধে সেরকম মোটেই নয়৷ তারপরও সত্যি হলো, তাঁর হাত ধরে বার্লিনালে এগোচ্ছে৷

বার্লিনালের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে প্রায় নাম না জানা সব দেশের অখ্যাত পরিচালকদের ছবিও পায় দর্শক নন্দিত হওয়ার সুযোগ৷ এ নিয়মের ব্যতিক্রম হচ্ছে না এবারও৷ তাই থাকবে সুইজারল্যান্ডের পাসক্যাল মারসিয়ারের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি ছবি ‘নাইট ট্রেন টু লিসবন’ দেখার সুযোগ৷ দেশের তালিকাতেও থাকবে ‘বিশ্বায়নের যুগ’-কে তুলে ধরার প্রমাণ৷

আয়োজক দেশ জার্মানির প্রতিনিধিত্ব করবে যে ছবিগুলো তার মধ্যে সবার আগে বলতে হবে টোমাস আর্সলানের ‘গোল্ড’-এর কথা৷ অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া, বার্লিনে চলচ্চিত্র নিয়ে লেখাপড়া করে পরিচালনায় নামা পিয়া মারাইসের ‘লায়লা ফোরি’-র কথাও ভুললে চলবেনা৷ যৌথ প্রযোজনার এ ছবিটি দক্ষিণ আফ্রিকার এক একক মা-কে নিয়ে তৈরি৷

আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ফোরাম৷ ‘ফোরাম’ শুনলেই মনে হয় না কোনো বিশেষ ভাবনা নিয়ে কিছু মানুষ এক হয়েছে? হয়েছেও তাই৷ বার্লিনালেতে বাণিজ্যিক সাফল্যের লক্ষ্যকে সামনে রেখে তৈরি হয়নি এমন ছবিগুলোও দেখানো হবে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে৷ তাই সামাজিক প্রয়োজন, খেটে খাওয়া মানুষের বাঁচার লড়াইয়ের মতো বিষয়গুলোও উঠে আসবে রূপালি পর্দায়৷

ছবির নাম যদি হয় ‘এ পৃথিবী আমাদের নয়’, দেখতে মন চাইবে কিনা বলুন? ছবিটির পরিচালক ডেনমার্কের মাহদি ফ্লাইফেল৷ এটা অবশ্য পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি নয়, তথ্যচিত্র৷ আরবি এবং ইংরেজি – দুই ভাষাতেই তৈরি হয়েছে ছবিটি৷ দক্ষিণ লেবাননের এক শরণার্থীর দৈনন্দিন যুদ্ধ নিয়ে তৈরি এ তথ্যচিত্রের মতো এমন অনেক তথ্যচিত্রই থাকবে সাধারণ দর্শক সচরাচর যা দেখেন না৷

আদিবাসিদের নিয়ে ছবি দেখতে চান? বার্লিনালেতে সে সুযোগও থাকছে৷ ওশেনিয়া, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর অ্যামেরিকা এবং আর্কটিক অঞ্চলের ছবিগুলোর দিকে চোখ রাখলেই বুঝতে পারবেন বাকিটা৷