মহামারি ও যুদ্ধের দামামার মাঝে জার্মানিতে ইউরোপের সবচেয়ে বড় ইলেকট্রিক গাড়ির কারখানা খুললো টেসলা কোম্পানি৷ কর্মসংস্থান ও শিল্পোন্নয়নের ধ্বজা সত্ত্বেও পরিবেশের ক্ষতি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করছে এই প্রকল্প৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির রাজধানী বার্লিনের নতুন বিমানবন্দর তৈরি করতে প্রায় ১৪ বছর সময় লেগেছিল৷ লাল ফিতের ফাঁস ও দক্ষতার অভাবের সেই অপবাদ ঘুঁচিয়ে মাত্র দুই বছরের মধ্যে বার্লিনের কাছেই কারখানা গড়ে তুললো ইলন মাস্কের ইলেকট্রিক গাড়ি কোম্পানি টেসলা৷ ইউরোপে কোম্পানির সবচেয়ে বড় ‘গিগাফ্যাক্টরি’ নির্মাণের এই সাফল্য জার্মানির অনুন্নত পূর্বাঞ্চলে আরও বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
শিল্পপতি হিসেবে ইলন মাস্কের খামখেয়ালিপনা ও বিতর্কিত আচরণ কারো অজানা নয়৷ সম্প্রতি তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনকে সরাসরি লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে টুইট করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন৷ বড় ঝুঁকি নিতেও পিছপা হন না মানুষটি৷ তাই বার্লিনের কাছে জার্মানির ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যে গ্র্যুনহাইডে এলাকায় টেসলা গাড়ির কারখানা গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি এমনকি সরকারি ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষা না করেই জমির উপর কারখানা নির্মাণের কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন৷
ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্য সরকারও আইনি সীমার মধ্যে তাঁর যথেষ্ট সহায়তা করেছিল৷ সেই অভিনব সহযোগিতার ফলে রেকর্ড দুই বছরের মধ্যে কারখানা গড়ে ৩০টি টেসলা গাড়ি উৎপাদন করে দেখালো ইলন মাস্কের কোম্পানি৷ আরও আট মাস আগে উৎপাদন শুরুর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেও অবশ্য বাস্তবে তা সম্ভব হয় নি৷ যাই হোক মঙ্গলবার যথেষ্ট আড়ম্বরের সঙ্গে সেই ‘মেড ইন জার্মানি’ গাড়িগুলি মালিক ও তাঁদের পরিবারের হাতে তুলে দিলেন স্বয়ং মাস্ক৷ জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ও ভাইস চ্যান্সেলর রোব্যার্ট হাবেকের উপস্থিতিতে নেচে-গেয়ে, মস্করা করে তিনি কারখানার উদ্বোধন অনুষ্ঠান মাতিয়ে রাখলেন৷ জার্মান ভাষায় লেখা এক টুইট বার্তায় তিনি জার্মানিকে তিনি ধন্যবাদ জানান৷
চ্যান্সেলর শলৎস জার্মানির পূর্বাঞ্চলে এমন বিশাল বিনিয়োগের সাফল্যে গভীর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন৷ তিনি এই কারখানাকে গাড়ি শিল্পের ভবিষ্যৎ দিশা হিসেবে তুলে ধরেন৷ বিশেষ করে প্রায় ১২,০০০ মানুষের কর্মসংস্থানের প্রেক্ষিতে ফেডারেল ও রাজ্য সরকার অত্যন্ত সন্তুষ্ট৷ এখনো পর্যন্ত প্রায় ৩,৫০০ কর্মী কারখানায় কাজ শুরু করেছেন৷ পূর্ণ ক্ষমতা অর্জিত হলে বছরে পাঁচ লাখ টেসলা গাড়ি উৎপাদিত হবার কথা৷ ২০২৫ সালের মধ্যে সেটা সম্ভব হবে বলে জেপি মর্গান কোম্পানি পূর্বাভাস দিচ্ছে৷
জার্মানিতে টেসলা কোম্পানির এই প্রকল্পকে ঘিরে বিতর্কও কম নেই৷ বিশেষ করে পরিবেশের উপর কারখানার দীর্ঘমেয়াদী কুপ্রভাব নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলে আসছে৷ গাড়ি ও ব্যাটারি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় বিশাল পরিমাণ পানির সরবরাহের ফলে ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যের শুষ্ক পরিবেশের উপর আরও চাপ বাড়বে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন৷ ফলে ভবিষ্যতধর্মী ব্যাটারিচালিত এই গাড়ির জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির প্রয়োজন না হলেও সেটি নির্মাণের সময়ে পরিবেশের ক্ষতি নিয়ে বিতর্ক দূর হচ্ছে না৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এপি)
গত জুনের ছবিঘরটি দেখুন...
ইলন মাস্ক সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য
টেসলা, স্পেসএক্স, পেপ্যাল, বোরিং কোম্পানি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেছেন ইলন মাস্ক৷ বর্তমানে তিনি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী৷
১৯৭১ সালের ২৮ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়াতে ইলন মাস্কের জন্ম৷ বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর হাইস্কুল শেষে মা আর ভাই-বোনকে নিয়ে ক্যানাডায় চলে যান মাস্ক৷ সেখানে অন্টারিও’র একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও পরে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা আর অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Guerrero
শেষ করেননি শিক্ষাজীবন
স্নাতকোত্তর শেষে পিএইচডি’র জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পান৷ কিন্তু অর্থ উপার্জনের নেশায় পিএচইডি অধরা থেকে যায়৷ বর্তমানে উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্বের তরুণদের আইকন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP/J. Raoux
প্রতিভাধর
মাত্র দশ বছর বয়সে কমোডর ভিআইসি-২০ কম্পিউটার ব্যবহার করতে গিয়ে কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ জন্মায়৷ শেখেন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং৷ ১২ বছর বয়সে বেসিক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে ব্লাস্টার নামে একটি ভিডিও গেম তৈরি করে ৫০০ ডলারে পিসি অ্যান্ড অফিস টেকনোলজি ম্যাগাজিনের কাছে বিক্রি করে দেন৷
ছবি: Ringo H.W. Chiu/AP Photo/picture alliance
জিপ-টু
উদ্যোক্তা হিসেবে ভাইকে সাথে নিয়ে তিনি জিপ-টু নামে একটি সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন৷ ১৯৯৫ সালে এর পথচলা শুরু হলেও সফল হতে সময় লেগেছিল৷ সেসময় অ্যাপার্টমেন্টে থাকার খরচ না থাকায় অফিসেই ঘুমাতেন৷ ১৯৯৯ সালে কমপ্যাক কোম্পানির কাছে ২২ মিলিয়ন ডলারে জিপ-টু বিক্রি করেন তিনি৷
ছবি: Patrick Pleul/dpa/picture alliance
পেপ্যাল
পেপ্যাল নামের টাকা লেনদেনের একটি ডিজিটাল সার্ভিস চালু করে তিনি সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যান৷ ১৯৯৯ সালে তিনি এক্স.কম নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যা পরে পেপ্যালের সাথে একত্রিত হয়৷ ২০০২ সালে ই-বে’র কাছে পেপ্যাল ১.৫ বিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে দেন৷ এই বিক্রি থেকে তার লাভ থাকে ১৬৫ মিলিয়ন ডলার৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/P. Sakuma
স্পেস এক্সের মঙ্গল অভিযান
রকেট নির্মাণপ্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স৷ গত ফেব্রুয়ারিতে স্পেসএক্সের তৈরি রকেট ফ্যালকন হেভির সফল উৎক্ষেপণের পর তুমুল আলোচিত হন মাস্ক৷ স্পেসএক্স থেকে ফ্যালকন ১ নামের রকেটটি উৎক্ষেপণ করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছিলেন কিন্তু হাল ছাড়েননি৷ ২০৫০ সালের মধ্যে মঙ্গলে একটি পরিপূর্ণ শহর স্থাপনের পরিকল্পনা মাস্কের৷
ছবি: Gene Blevins/REUTERS
টেসলা
২০০৩ সালে যখন এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এর সাথে ছিলেন না মাস্ক৷ পরবর্তীতে ২০০৪ সালে ইলন মাস্ক বোর্ড অফ ডিরেক্টরসে যোগ দিলে কোম্পানিতে আমূল পরিবর্তন আসে৷ বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি র প্রধান নির্বাহী এবং পণ্য প্রকৌশলী তিনি৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/Tesla Motors
দ্য বোরিং কোম্পানি
২০১২ সালে এই হাইপারলুপ প্রযুক্তির দৈনন্দিন ব্যবহারে সর্বপ্রথম আগ্রহ দেখান ইলন মাস্ক৷ হাইপারলুপ-এর জন্য সুরঙ্গ খুঁড়তে তিনি ‘দ্য বোরিং কোম্পানি’ নামক একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ সম্প্রতি ঘণ্টায় এক হাজার কিলোমিটার গতিবেগে চলা হাইপারলুপের প্রথম পরীক্ষা সফল হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/R. Beck
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেস এক্স৷ স্পেস-এক্স-এর সবচেয়ে আধুনিক ফ্যালকন রকেটের মাধ্যমে ২০১৮ সালের মে মাসে বঙ্গবন্ধু-১ টেলিকম স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP/R. Huber/O. Sentinel
নিউরালিঙ্ক
২০১৬ সালে মাস্কের প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানিটি সম্প্রতি একটি ব্রেইন-মেশিন ইন্টারফেস প্রকাশ করেছে, যা মানুষের মস্তিষ্কের সাথে কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন যুক্ত করবে৷
ছবি: Patrick Pleul/dpa/picture alliance
বেতন
কোম্পানির সিইও হিসেবে বছরে বেতন নেন মাত্র এক ডলার৷ নিজের অংশীদারিত্ব থাকা বিভিন্ন কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশসহ আরো কিছু সুবিধা পান মাস্ক, যার বেশিরভাগই আসে টেসলা থেকে৷ বছরে ১ ডলার বেতন নেয়াটা আসলে সিলিকন ভ্যালির একটা ট্রেন্ড৷
বিতর্কের জন্ম দিতে ভালোবাসেন মাস্ক৷ টুইটারে নানা বিতর্কিত টুইট করেন৷ নিজের প্রতিষ্ঠানের সহযোগীদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন নানা সময়৷ একবার কমেডিয়ান জো রোগান-এর সঙ্গে অংশ নেওয়া এক পডকাস্টে সরাসরি সম্প্রচারের সময় গাঁজা সেবন করেছিলেন৷