আমস্টারডামের কাছে ক্যোকেনহফ-এ টিউলিপ ফুলের মেলা৷ আবার বার্লিন শহরের মাঝখানে ছাদের ওপরও ফুলবাগান করা যেতে পারে - যার যেমন আরকি!
বিজ্ঞাপন
নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামের কাছে ক্যোকেনহফ-এ যেরকম টিউলিপ ফুলের মেলা বসে, সেরকম বোধহয় দুনিয়ার আর কোথাও বসে না৷ পার্কটি খোলা হয় ইস্টারের কিছু আগে, তখন দর্শকরা আসেন নানা রংয়ের টিউলিপ ফুলের বন্যা দেখতে৷ অনেকে আবার নিজের বাগান সাজাবার আইডিয়া পান৷ বসন্তে কী ধরনের বাগান করা যায়, তা জানতে হলে বার্লিনের রয়াল গার্ডেন অ্যাকাডেমির গাব্রিয়েলা পাপে-র কাছেও যাওয়া যায়৷ তিনি হলেন জার্মানির এক নামকরা বাগান বিশেষজ্ঞ৷ গাব্রিয়েলা বলেন, ‘‘বসন্তে বাগানে ফুল ফোটা চাই, বলে আমার ধারণা৷ স্নোড্রপ শেষ হবার পরই শুরু হয়ে যায় ড্যাফোডিলের মরশুম, তারপর আসে টিউলিপ আর ক্রকাস৷ এ সব থেকে বোঝা যায়, ঋতু কীভাবে বদলাচ্ছে৷''
২০০৮ সালে গাব্রিয়েলা পাপে তাঁর রয়াল গার্ডেন অ্যাকাডেমির দ্বারোদ্ঘাটন করেন৷ এখানে গার্ডেনিং সম্পর্কে স্পেশাল কোর্স করা যায় – আবার নিজের বাগানের জন্য ফুলের গাছ বা বাহারি গাছও কেনা যায়৷ কমপাউন্ডের ভেতরেই একটি কাফে, একটি রেস্টুরেন্ট, বেশ কয়েকটি গ্রিনহাউস আর একটা দোকান আছে৷
বিগত কয়েক বছরে ‘আর্বান গার্ডেনিং', মানে শহরের মধ্যে, এমনকি ছাদে বা বারান্দায় বাগান করার প্রবণতা বেড়েছে৷ স্টেফান ফাউলস্ট্রো থাকেন বার্লিনের মাঝখানে – কিন্তু তিনি তাঁর ছাদের ওপরেই বাগান করে বসে আছেন! গার্ডেনিং হল তাঁর হবি৷ স্টেফান বলেন, ‘‘গার্ডেনিং করছি, মানে শীত গিয়ে গরম পড়ছে; আবার বাইরে বেরোনো যাবে, সব কিছু সবুজ হয়ে উঠবে, গরম পড়বে৷ তখন আমাদের এই ছাদটা যেন একটা বাড়তি ঘরের মতো হয়ে দাঁড়াবে৷''
বাড়ির সামনের বাগানই হোক আর ছাদের বাগান হোক, তা নতুন করে সাজাতে হলে গাব্রিয়েলা পাপে-র সাহায্য নেওয়া যেতে পারে৷ তিনি হলেন ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্ট বা উদ্যান স্থপতি; বাগানের নকশা করা তাঁর কাজ৷''
শেষে হয়ত দেখা গেল, বাগানের খোলনলচে পালটে গেছে!
চিরকালের সেরা সব বাগানের ছবি
লন্ডনের রয়াল অ্যাকাডেমির একটি প্রদর্শনীতে দেখানো হচ্ছে ১৮৭০ থেকে ১৯২০, এই ৫০ বছরে চিত্রকলায় বাগানের রূপ কিভাবে বদলেছে৷
ছবি: Portland Art Museum, Portland, Oregon
বাগানে মহিলা
ফরাসি ‘ইম্প্রেশনিস্ট’ চিত্রকরদের মধ্যে সবচেয়ে নামকরা সম্ভবত ক্লদ মোনে৷ ১৮৬৭ সালে তিনি আঁকেন তাঁর এক আত্মীয়ার ছবি, সে আমলের লম্বা ড্রেস পরা, প্যারাসল হাতে রোদঝলমল বাগানে হেঁটে বেড়াচ্ছেন৷ পরে জিভের্নিতে তাঁর নিজের হাতে গড়া বাগানের ছবি এঁকে মোনে বিশ্বখ্যাত হন৷
ছবি: The State Hermitage Museum. Photography: Vladimir Terebenin
পার্ক থেকে প্রেরণা
আউগুস্ত রেনোয়া যে আমলে আঁকছিলেন, তখন প্যারিসে পাবলিক পার্ক নিয়ে খুব ধুম চলেছে৷ রাজকীয় পার্কগুলোতে আপামর জনতাকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে; সাধারণ নাগরিকরাও বাড়ির সামনে ছোট ছোট বাগান করছেন৷ প্যারিসের এই সব পার্ক আর বাগান থেকেই রেনোয়া তাঁর ছবি আঁকার প্রেরণা পেতেন৷ ১৮৭৩ সালে তিনি আঁকেন তাঁর বন্ধু ক্লদ মোনের ছবি৷ মোনে তখন আর্জঁতুই-য়ে তাঁর নিজের বাগানে ইজেল বসিয়ে, ক্যানভাস পেতে ছবি আঁকছেন৷
ছবি: Wadsworth Atheneum Museum of Art, Hartford, CT
মস্কো থেকে বাভারিয়া
ভাসিলি কান্ডিনস্কিকে বিমূর্ত চিত্রকলার জনক বলে মনে করা হয়৷ ১৯০৯ সালে তাঁর সঙ্গিনী গাব্রিয়েল ম্যুন্টার বাভারিয়া রাজ্যের মুর্নাউ শহরের কাছে স্টাফেলজে হ্রদের ধারে একটি বাড়ি কেনেন৷ কান্ডিনস্কির জন্ম মস্কোয়, তাই প্রতিবেশীরা বাড়িটির নাম দিয়েছিলেন রাশিয়ান হাউস৷ দু’জনেই তাদের নিজের তৈরি বাগানটাকে ভালোবাসতেন৷ কান্ডিনস্কির ছবিতে একাধিকবার এই বাগান দেখতে পাওয়া যাবে, যেমন ১৯১০ সালে আঁকা এই ছবিটিতে৷
ছবি: Merzbacher Kunststiftung
স্পেনের তরল সূর্য
স্পেনের তরল সূর্য স্পেনের চিত্রকর ইওয়াকিন সোরোল্লাকে ‘আলোর ছবি-আঁকিয়ে’ বলে মনে করা হয়৷ তিনি টিফানি ল্যাম্প খ্যাত মার্কিন ডিজাইনার লুইস কম্ফর্ট টিফানির এই ছবিটি আঁকেন ১৯১১ সালে৷ দেখলে মনে হবে, টিফানি স্পেনের একটি ফুলে ভরা বাগানে বসে খানিকটা রেস্ট নিচ্ছেন৷
ছবি: Courtesy of The Hispanic Society of America, New York
বাগানে পা ছড়িয়ে...
পিয়ের বনার প্যারিসের দৈনন্দিন জীবনের ছবি আঁকতেন উজ্জ্বল সব রঙে৷ যেমন এই তরুণী মহিলাটি, যিনি বাগানে তাঁর আরাম কেদারার ওপর পা ছড়িয়ে বসে বিশ্রাম করছেন৷ পাশে টেবিলে সব প্রয়োজনীয় বস্তু৷ বনার ছবিটি আঁকেন ১৯১৪৷
ছবি: Nasjonalmuseet for kunst, arkitektur og design/The National Museum of Art, Architecture and Design/(c) ADAGP, Paris and DACS, London 2015
শিল্পীর বাগান
ক্লদ মোনের ‘জলপদ্ম’ পর্যায়ের ছবিগুলি আঁকা হয় ১৯১৪-১৫ সালে৷ এগুলি সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে আইকনিক ছবিগুলির পর্যায়ে পড়ে৷ জিভের্নি-তে তাঁর নিজের বাগানেও জলপদ্ম লাগিয়েছিলেন মোনে৷ ১৯২৬ সালে মৃত্যুর স্বল্প আগে বলেছিলেন, আমার বাগানই হল আমার সবচেয়ে বড় শিল্পকর্ম৷