কিছু অনিয়ম আর ত্রুটি জার্মানির নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে৷ প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচন কর্মকর্তাদের দক্ষতা নিয়েও৷ সরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হবে ১৪ অক্টোবর৷ ফলাফল ঘোষণার পর প্রশ্নগুলো আরো বড় হয়ে উঠতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
ব্যালট না থাকার বিড়ম্বনা
২৬ সেপ্টেম্বর অদ্ভুত এক দৃশ্য দেখা যায় বার্লিনের বেশ কিছু ভোট কেন্দ্রে৷ অনেক ভোটারকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা৷ ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে দেখা দিয়েছিল এমন বিপত্তি৷
ব্যালট গেল ভুল ঠিকানায়
কোনো কোনো ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পেপারের অভাবে ভোটারদের সমস্যায় পড়তে হলেও বার্লিনের কয়েকটি জেলার কিছু ভোটকেন্দ্রে ছিল একেবারে উল্টো চিত্র৷ সেখানে ছিল অনেক অতিরিক্ত ব্যালট৷ নির্বাচন কর্মকর্তাদের ভুলে এক জেলার ব্যালট চলে গিয়েছিল আরেক জেলার বেশ কিছু ভোট কেন্দ্রে৷
অপ্রস্তুত ভোটকেন্দ্র
জাতীয় সংসদ, স্থানীয় পরিষদ এবং বার্লিনের প্রধান আবাসন কোম্পানিগুলোকে নিয়ে গণভোট- একসঙ্গে আসলে তিন তিনটি ভোট হয়েছে গত ২৬ সেপ্টেম্বর৷ তিন ধরনের ব্যালট পেপার নিয়ে ভোটাররা বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন- তা তাই অনুমিতই ছিল৷ ভোটারদের সহযোগিতায় বাড়তি উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশনাও দিয়েছিল বার্লিনের নির্বাচন কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু ভোটের দিনে অনেক কেন্দ্রই ছিল একেবারে অপ্রস্তুত৷ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য অনেক জায়গায় জরুরি ভিত্তিতে অতিরিক্ত বুথও খুলতে হয়েছে৷ ব্যালটের ঘাটতি পূরণ করতে অন্য কেন্দ্রের সহায়তাও নিতে হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে৷
ভোটে জিতে ইতিহাসের পাতায় দুই ট্র্র্যান্সজেন্ডার নারী
মাঝে মাঝে দু-একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা উঠে এলেও জার্মান সমাজ যে এখনো অনেক মানবিক, সব মানুষের জন্যই যথেষ্ট উদার তা আবার বোঝা গেল টেসা গানসারার এবং নাইকে স্লাভিকের জয়ে৷ ছবিঘরে বিজয়ী দুই ট্র্যান্সজেন্ডার নারীর গল্প...
জার্মানিতে সমকামী এবং অন্যদের অধিকার
জার্মানিতে সমকামিতা আইনি স্বীকৃতি পায় ১৯৬৯ সালে৷ সে বছরই সমকামিতাকে ‘অপরাধ’ বিবেচনা না করার পক্ষে রায় দেয় আদালত৷ এখন জার্মানিতে সম লিঙ্গের মানুষদের বিয়েও আইনসিদ্ধ৷ ২০১৭ সালে আদালত সম লিঙ্গের কাউকে জীবনসঙ্গী করতে আগ্রহীদের এ অধিকার দেয়৷
ছবি: imago images/S. Zeitz
উদারতায় ভাটা?
তবে অতি সম্প্রতি জার্মানিতে এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে উগ্রতা বাড়ছে৷
পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে জার্মানিতে এলজিবিটি+-দের বিরুদ্ধে হেটক্রাইম, অর্থাৎ ঘৃণাসূচক অপরাধ শতকরা ৩৮ ভাগ বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/J. Brady
ভোটারদের ‘সবুজ সংকেত’
তবে বাভারিয়া এবং নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়ার ভোটাররা সব মানুষের অধিকারের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল৷ তাই বাভারিয়া থেকে টেজা গানসারার আর নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া থেকে নাইকে স্লাভিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন৷ দুজনই গ্রিন পার্টির সদস্য৷ জার্মানিতে এই প্রথম কোনো ট্র্যান্সজেন্ডার নারী সংসদ সদস্য হলেন৷ এর আগে ক্রিস্টিয়ান শেঙ্ক নামের একজন বুন্ডেসটাগের সদস্য হলেও সংসদের মেয়াদ শেষেই নিজেকে তিনি পুরুষ ‘ঘোষণা’ করেন৷
‘এটা ট্র্যান্সজেন্ডারদের জয়’
রোববারের নির্বাচনে গ্রিন পার্টি তৃতীয় সফল দল হিসেবে উঠে আসে৷ ২০১৭ সালে যারা মাত্র ৮.৯ ভাগ ভোট পেয়েছিল সেই দল কিনা এবার পেয়েছে ১৪.৯ ভাগ ভোট৷ দলের এবং নিজের সাফল্যে গানসারার খুব খুশি৷ রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘এটা সবুজদের জন্য এবং ট্র্যান্সজেন্ডারদের অধিকার আন্দোলনের জন্য বড় এক ঐতিহাসিক জয়৷’ ৪৪ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ ভোটযুদ্ধে আগেও জিতেছেন৷ ২০১৩ সালে বাভারিয়ার আঞ্চলিক সংসদের সদস্য হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: JOHN MACDOUGALL/AFP
স্লাভিকের প্রতিক্রিয়া
নির্বাচনে জেতার আনন্দ ইন্সটাগ্রামে স্লাভিক প্রকাশ করেছেন এভাবে, ‘‘এ তো রীতিমতো পাগলামো! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না৷ তবে সত্যি কথা হলো, এক ঐতিহাসিক জয়ের মাধ্যমে আমি পরবর্তী বুন্ডেসটাগের সদস্য হতে চলেছি৷’’
ছবি: Dwi Anoraganingrum/Geisler/picture alliance
5 ছবি1 | 5
‘আপোষের' ভোট
তিন ধরনের ভোটের ‘ব্যালট-জটিলতা' এড়াতে কিছু ভোট কেন্দ্রে শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট দেয়ার শর্তে ভোটারকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়৷ অনেক ক্ষেত্রে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতদের ভোট দিতে দেয়ার নিয়ম থাকলেও তাদের ফিরিয়ে দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে৷
ম্যারাথনের বাধা
ভোটের দিনে আন্তর্জাতিক ম্যারাথন আয়োজনের অনুমতি দিয়ে আগেই সমালোচনার মুখে পড়েছিল বার্লিনের নগর ও নির্বাচন কর্তৃপক্ষ৷ পরে সমালোচনা আরো তীব্র হয়েছে৷ যেসব কেন্দ্রে ব্যালট পেপারের সংকট দেখা দিয়েছিল সেসব কেন্দ্রে জরুরি ভিত্তিতে ব্যালট পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েও অনেক ক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া যায়নি৷ ম্যারাথনের রুট এড়িয়ে যেতে যেতে দেরি হয়ে যাওয়ায় কোনো কোনো ভোট কেন্দ্রের বেশ কিছু ভোটারকে ভোট না দিয়েই ফিরে যেতে হয়৷
জার্মান নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর দলগুলোর প্রতিক্রিয়া
রোববারের জার্মান নির্বাচনে শীর্ষ দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দল৷ আর ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ফল করেছে সিডিইউ/সিএসইউ৷ বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল প্রকাশের পর দলগুলোর সমর্থক ও নেতাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: Maja Hitij/Getty Images
এসপিডির আনন্দ
রোববার জার্মানির সময় সন্ধ্যা ছয়টায় বুথ ফেরত সমীক্ষা প্রকাশের পর সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডির সমর্থকদের আনন্দ উল্লাস করতে দেখা গেছে৷ কারণ গতবারের চেয়ে এবার তাদের ভোট বেড়েছে প্রায় সাড়ে চার শতাংশ৷ তবে তখনও এসপিডি শীর্ষ দল হতে যাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত ছিল না৷ সোমবার সকাল হওয়ার আগেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়৷ সাময়িক সরকারি ফল অনুযায়ী ২৫.৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে তারা, যা সিডিইউ/সিএসইউ দলের চেয়ে প্রায় দুই শতাংশ বেশি৷
ছবি: Maja Hitij/Getty Images
শলৎস চ্যান্সেলর হতে চান
এসপিডির চ্যান্সেলর প্রার্থী ওলাফ শলৎস দলের ফলাফলে খুশি৷ তিনি নিশ্চিত যে তারই চ্যান্সেলর হওয়া উচিত৷ তিনি বলেন, অনেক ভোটারই এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তারা ‘সরকারে পরিবর্তন’ চান৷
ছবি: Lisa Leutner/AP/picture alliance
সিডিইউতে শোক
ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ফল করেছে সিডিইউ/সিএসইউ৷ সাময়িক সরকারি ফলে দেখা যাচ্ছে দলটি এবার মাত্র ২৪.১ শতাংশ ভোট পেয়েছে৷ গতবারের চেয়ে প্রায় নয় শতাংশ কম৷
ছবি: Ina Fassbender/AFP/Getty Images
হার মানতে নারাজ লাশেট
এমন ফলের পর সিডিইউ/সিএসইউর চ্যান্সেলর প্রার্থী লাশেট বলেছেন, ‘‘ইউনিয়নকে ভোট দেয়া মানে বাম নেতৃত্ব গঠিত কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেয়া৷ সে কারণে আমরা সিডিইউ/সিএসইউর নেতৃত্বে সরকার গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাব৷’’
ছবি: Fabrizio Bensch/REUTERS
সবুজ দলের রেকর্ড ফল
ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো ফল করেছে এবার পরিবেশবাদী সবুজ দল৷ সাময়িক সরকারি ফল বলছে তারা এবার ১৪.৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে৷ ফলে তাদের ছাড়া জোট সরকার গঠন এবার প্রায় অসম্ভব৷
ছবি: Kay Nietfeld/dpa/picture alliance
এফডিপি কিছুটা ভালো করেছে
গতবারের চেয়ে এবার প্রায় এক শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছে ব্যবসাবান্ধব মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপি দল৷ এবার তাদের ভোট প্রাপ্তির হার ১১.৫ শতাংশ৷ ফলে তারা কিছুটা খুশি৷ সবুজ দলের মতোই নতুন জোট সরকারে তাদের প্রয়োজন হতে পারে৷
ছবি: Sebastian Kahnert/dpa/picture alliance
বাম দলে হতাশা
সাময়িক সরকারি ফল বলছে এবার মাত্র ৪.৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে বাম দল৷ দলের প্রধান সুজানে হেনিশ-ভেলজো বলছেন, ‘‘আমরা অবশ্যই বাজেভাবে হেরেছি৷’’
ছবি: Cathrin Mueller/REUTERS
এএফডিও কিছুটা হতাশ
গতবার তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট (১২.৬ শতাংশ) পেয়েছিল অভিবাসনবিরোধী এই দলটি৷ এবার ১০.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে পঞ্চম হয়েছে তারা৷ দলের উপনেতা বেয়াট্রিক্স ফন স্টর্শের (মাঝে) মুখের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছে এই ফলে তারা কিছুটা হতাশ৷ তবে দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা টিনো ক্রুপালা (ডানে) এই ফলকে ‘সলিড’ বলছেন৷ সঙ্গে এটাও যোগ করেছেন, ‘‘অবশ্যই হার ব্যথাও দেয়৷’’
ছবি: Ronny Hartmann/AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
‘এত ভুল এবং এত অবহেলা আগে দেখিনি'
নির্বাচনে ঢালাও কারচুপি হয়েছে- এমন অভিযোগ ওঠেনি৷ তা সত্ত্বেও বার্লিনের ফ্রি ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ক্রিস্টিয়ান পেস্তালোৎসা বলেন, ‘‘সেদিন (ভোটের দিন) আমিও আর দশজনের মতো বেশ আতঙ্কিত এবং বিস্মিত হয়েছিলাম৷ কারণ, আগে কোনো নির্বাচনে এই পরিমাণ ভুল বা অবহেলা দেখা যায়নি... অন্তত আমি তো কখনো দেখেছি বলে মনে করতে পারছি না৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘ব্যাপারটা খুব মারাত্মক, কারণ, এটা (নির্বাচন) আমাদের জন্য পেশাদার রাজনীতিকে প্রভাবিত করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায়৷ তাই এমন ভুল আর কখনো হবে না- এ দাবি তোলার অধিকার আমাদের আছে৷'' বার্লিনের নির্বাচনে এত ভুলের ছড়াছড়িকে ‘বিপর্যয়' হিসেবেও উল্লেখ করেছেন তিনি৷
জার্মানিতে ব্যালট বাক্স থেকে সরকার গঠনের দীর্ঘ প্রক্রিয়া
জনগণের ইচ্ছার ন্যায্য প্রতিফলন ঘটাতে গিয়ে জার্মানির নির্বাচন প্রক্রিয়া বেশ জটিল হয়ে উঠেছে৷ অনেক নাগরিকেরও সব খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে ধারণা নেই৷ এমনই কিছু বৈশিষ্ট্যের দিকে নজর দেওয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Kalker
নেই আলাদা ভোটার তালিকা
জার্মানিতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী সব মানুষকেই পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে নাম নিবন্ধন করতে হয়৷ তাই সেই তালিকা থেকে শুধু জার্মান নাগরিকদের বেছে নিয়ে ডাকযোগে ভোট দেবার আমন্ত্রণ পাঠানো হয়৷ জাতীয় পরিচয়পত্র ও সেই আমন্ত্রণপত্র নিয়ে নির্ধারিত ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে গেলেই ভোট দেওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Güttler
ডাকযোগে ভোট দেবার সুযোগ
ভোটার হিসেবে আমন্ত্রণপত্র পেলে সশরীরে ভোট না দিলেও চলবে৷ কোনো কারণ না দেখিয়ে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে আগেভাগেই ভোট দেওয়া সম্ভব৷ যে সব জার্মান নাগরিক বিদেশে থাকেন, তারাও জার্মানিতে তাদের সর্বশেষ বাসস্থানের পৌরসভার মাধ্যমে পোস্টাল ব্যালট সংগ্রহ করতে পারেন৷
ছবি: Jens Krick/Flashpic/picture alliance
নাগরিকদের দুটি করে ভোট
জার্মানির সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা দুটি করে ভোট দেবার সুযোগ পান৷ প্রথমটি নির্বাচনি কেন্দ্রে সরাসরি প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য, দ্বিতীয়টি পছন্দের কোনো দলের জন্য৷ প্রার্থী ও দল ভিন্ন হলেও চলবে৷ দ্বিতীয় তালিকায় দলীয় সমর্থনের অনুপাতের ভিত্তিতে সংসদে অর্ধেক আসনে প্রার্থী স্থির করা হয়৷
ছবি: C. Ohde/blickwinkel/McPHOTO/picture alliance
‘বোনাস’ ভোটের জটিল হিসেব
ভোটারদের দেওয়া প্রথম ভোটের ভিত্তিতে ২৯৯ জন স্থানীয় প্রার্থীর সরাসরি এবং দ্বিতীয় ভোটের ভিত্তিতে বাকি ২৯৯ জনের দলীয় মনোনয়ন অনুযায়ী সংসদে আসন পাওয়ার কথা৷ কিন্তু বাস্তবে সংসদে সদস্যসংখ্যা ৫৯৮ ছাপিয়ে যায়৷ কোনো দল যদি শতকরা হিসেবে দ্বিতীয় ভোটের তুলনায় বেশি মাত্রায় প্রথম ভোট পায়, তখন জটিল এক নিয়মের ভিত্তিতে সেই দল সংসদে কিছু বাড়তি আসন লাভ করে৷ তখন ‘ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে বাকি দলগুলিকেও বেশি আসন দিতে হয়৷
সব দল সংসদে স্থান পায় না
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জার্মানির গণতন্ত্রের দুর্বলতা কাটাতে সংবিধান প্রণেতারা অপেক্ষাকৃত ছোট দলগুলির ক্ষমতা সঙ্কুচিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ দ্বিতীয় ভোটের কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ না পেলে কোনো দল সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগে স্থান পায় না৷ তবে নির্বাচনি কেন্দ্রে কমপক্ষে তিনটি আসন পেলেও সংসদীয় দলের মর্যাদা পাওয়া সম্ভব৷
ছবি: Tim Brakemeier/dpa/picture alliance
ভোটগ্রহণের দিন রোববার
জার্মানিতে ভোটগ্রহণের জন্য সাধারণত রোববারের দিনটিকেই বেছে নেওয়া হয়৷ নাগরিকেরা ছুটির দিনে নির্বিঘ্নে ভোট দেবার সুযোগ পান৷ সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে ভোটগ্রহণ শেষ হলে গণনা শুরু হয়৷ শিল্পোন্নত দেশ হয়েও জার্মানি নিরাপত্তার খাতিরে এখনো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করে না৷ কাগজের ব্যালট গণনার পর দ্রুত ফলাফল জানতে অবশ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J.Stratenschulte
ভোটের ফল প্রকাশের পর জনগণ ‘ক্ষমতাহীন’
নির্বাচনি প্রচারের শেষে ভোট দেবার সময় পর্যন্ত ভোটাররা পছন্দের প্রার্থী ও দলকে বেছে নিতে পারেন৷ তবে জার্মানিতে সাধারণত জোট সরকার ক্ষমতা গড়ে৷ নির্বাচনের পর আসনসংখ্যার বিচারে সবচেয়ে শক্তিশালী দল জোট গড়ার উদ্যোগ শুরু করে৷ সাধারণত প্রাথমিক আলাপ-আলোচনার পর নির্দিষ্ট শরিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ দলীয় কর্মসূচি নিয়ে দরকষাকষির পর জোট সরকারের ন্যূনতম সাধারণ কর্মসূচি স্থির হয়৷
বার্লিনে মোট ভোট কেন্দ্র ২২৪৫টি৷ এর মধ্যে ১০০-র মতো ভোট কেন্দ্রে অনিয়ম বা ত্রুটি-বিচ্যুতির খবর পাওয়া গেছে৷ সুষ্ঠুভাবে ভোট পরিচালনায় ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে নির্বাচনের তিনদিন পর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বার্লিন নির্বাচন কর্তৃপক্ষের প্রধান পেত্রা মিশায়েলিস৷
মেয়রের স্বীকারোক্তি
বার্লিনের বিদায়ী মেয়র মিশায়েল ম্যুলার মনে করেন, যে পরিমাণ অনিয়ম হয়েছে তা নির্বাচনের ফলাফল বদলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট নয়৷ তবে এটা যে কোনো সান্ত্বনা হতে পারে না তা স্বীকার করেছেন তিনি, ‘‘এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, আমাদের অনুমান ভুল হয়েছে, আমাদের পরিকল্পনাতেও ভুল ছিল৷''