সরকার কৃষিতে ভরতুকি কমিয়ে দিচ্ছে এই অভিযোগ এনে বার্লিনের রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছেন জার্মান কৃষকেরা।
বিজ্ঞাপন
রোববার জার্মানির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কৃষকেরা এসে পৌঁছেছেন রাজধানী বার্লিনে। সরকার কৃষিখাতে ভরতুকি কমানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন কৃষকেরা। জার্মান সরকার অবশ্য জানিয়েছে, কৃষিতে প্রভূত পরিমাণ ভরতুকি দেওয়া হয়। এই আন্দোলনের পিছনে আছে অতি ডানপন্থি রাজনীতি।
চ্যান্সেলর ওলফ শলৎসের নেতৃত্বে জার্মানিতে এখন জোট সরকার চলছে। সম্প্রতি এই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কৃষি খাতে বেশ কিছু ভরতুকি কমানো হবে। কারণ, জার্মানিতে কৃষি ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ ভরতুকি দেওয়া হয় বলে সরকারের দাবি। এরই প্রতিবাদে রাস্তায় নামার হুমকি দেয় কৃষকেরা। তার জেরে কয়েকটি প্রস্তাব ফিরিয়ে নেয় সরকার। কিন্তু তাতেও খুশি হননি কৃষকেরা। বার্লিনে গিয়ে ঐতিহাসিক ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের সামনে থেকে বিক্ষোভ শুরু করার পরিকল্পনা করেন তারা। সেই মতোই রোববার বিকেলে বার্লিনে পৌঁছান কৃষকেরা।
নেকড়ের ‘অত্যাচারের’ বিরুদ্ধে জার্মান কৃষকদের প্রতিবাদ
নেকড়ে খেয়ে ফেলছে খামারের পশু৷ তাই নেকড়ে সংরক্ষণের সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন জার্মানির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক৷
ছবি: Swen Pförtner/dpa/picture alliance
নেকড়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
গত ১০ জুন জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের আউরিখ শহরে জড়ো হয় প্রায় তিন হাজার খামারি৷ তাদের দাবি, নেকড়ে সংরক্ষণের বিষয়ে সরকারের বিদ্যমান আইনের ফলে তাদের খামারের গবাদিপশুকে নেকড়ের মুখ থেকে রক্ষা কঠিন হয়ে পড়েছে৷
ছবি: Lars Penning/dpa/picture alliance
খামারিদের জীবিকা হুমকিতে
নেকড়ে খেয়ে ফেলছে খামারের পশু৷ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে খামারিদের ব্যবসা৷ কৃষকদের দাবি ‘‘নেকড়ের এই অত্যাচারের কারণে ব্যবসা করে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে৷’’
ছবি: Lars Penning/dpa/picture alliance
হাজার হাজার হামলা
সরকারের নেকড়ে সংরক্ষণ বিষয়ক দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, গত ২০ বছরে বিভিন্ন খামারে নেকড়ের হামলার সংখ্যা বাড়ছে৷ ২০২১ সালে মোট তিন হাজার পাঁচশটি হামলার ঘটনা ঘটেছে৷ আর এই সময়ে নেকড়ের হামলায় এক হাজার গবাদিপশু মারা গেছে৷
ছবি: Pablo Gianinazzi/Keystone/picture alliance
বিলুপ্তির পথে নেকড়ে
দুই জার্মানির একত্র হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় একশ বছর ধরে জার্মানিতে নেকড়ের সংখ্যা কমে আসছিল৷ এর পর গত কয়েক দশক ধরে সীমান্ত পার হয়ে পোল্যান্ড থেকে জার্মানিতে প্রবেশ করে কিছু নেকড়ে৷ জার্মান ফারমার্স এসোসিয়েশনের ধারণা, দেশে ২০২৩ সালে নেকড়ের সংখ্যা ২৭শ হতে পারে৷
ছবি: Bernd Thissen/dpa/picture alliance
নেকড়ে মুক্ত এলাকা ঘোষণার দাবি
কৃষক ও শিকারিরা জার্মানির উপকুলীয় অঞ্চলে নেকড়ে মুক্ত এলাকা তৈরির দাবি জানান৷ সেখানে গবাদি পশুর চারণক্ষেত্র তৈরির উদ্দেশ্য তাদের৷
ছবি: Dieter Moebus&Chromorange/picture alliance
নেকড়ে নিয়ে বিতর্ক
জার্মানিতে নেকড়ে নিয়ে দুই ধরনের আলোচনাই আছে৷ একদল তাদের নিরাপদে সুরক্ষিত রাখতে চায় অপরদিকে আরেকদল তাদের সরিয়ে দিতে চায়৷ আসলে নেকড়ে নিয়ে লেখা অনেক সাহিত্য কয়েক শতক ধরেই প্রাণীটির বিষয়ে জার্মানদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়েছে৷
ছবি: Imago/United Archives
6 ছবি1 | 6
শুক্রবারেই জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, এই আন্দোলনের পিছনে অতি ডানপন্থিদের হাত আছে। জার্মান অর্থমন্ত্রী কৃষকদের কাছে ফিরে যাওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু কৃষকেরা তাতে রাজি হননি।
এদিকে সাবেক শাসক দল সিডিইউ, সিএসইউ, অতি ডানপন্থি এএফডি এবং আরেকটি দক্ষিণপন্থি দল ফ্রি ভোটারস এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছে।
কৃষক আন্দোলনের জেরে বার্লিনের বেশ কয়েকটি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যার জেরে সোমবার সপ্তাহের প্রথম দিন যানজটের আশঙ্কা আছে বলে মনে করা হচ্ছে। পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের তরফেও আগাম সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
হামবুর্গেও যানজটের আশঙ্কা প্রকাশ করে বিবৃতি জারি করেছে প্রশাসন। কারণ সেখানেও কৃষকেরা শহরে এসে প্রতিবাদ দেখাতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।