২০২৩ সালে এই ধরনের ঘটনা ৫০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটনা উঠে এসেছে ৭ অক্টোবরের হামলার পর৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির রিসার্চ অ্যান্ড ইনফর্মেশন অন অ্যান্টিসেমিটিজম বিভাগ (আরআইএএস)-এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে মোট এক হাজার ২৭০টি ইহুদিবিদ্বেষী ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে৷
এই সংখ্যা তার আগের বছরের তুলনায় ৫০শতাংশ বেশি এবং এমন বৃদ্ধি ২০১৫ সালের পর থেকে আর দেখা যায়নি৷
৭ অক্টোবরের হামলার পর ৬০ শতাংশেরও বেশি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে৷
যা বলছে আরআইএএসের পরিসংখ্যান
৭ অক্টোবরের পর থেকে ৭৮৩টি ইহুদিবিদ্বেষী ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে বার্লিনে, জানাচ্ছে এই প্রতিবেদন৷ প্রতি দিন গড়ে এমন ১০টি ঘটনা নথিভুক্ত হচ্ছে বলে জানায় সংস্থাটি৷
আরআইএএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সময়ের সাথে সাথে এই ঘটনায় সহিংসতার ছাপ স্পষ্ট হচ্ছে৷ সাথে, অনলাইনেও ছড়ানো হচ্ছে ইহুদিদের প্রতি ঘৃণা, বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য৷
২০২৪ সালেও এই প্রবণতার পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না৷ সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যেই ৭৯৩টি ইহুদিবিদ্বেষমুলক ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে৷
সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ জিউজ ইন জার্মানির প্রেসিডেন্ট ইয়োসেফ শুস্টার বলেন, ‘‘জার্মানিতে ইহুদিবিদ্বেষী ঘটনার বাড়বাড়ন্ত সব সময় সবাইকে মনে করাতে করাতে কিছুটা হতাশ লাগলেও, এটা করে যাওয়া জরুরি৷''
ইসরায়েলের সমালোচনা থেকে ইহুদিবিদ্বেষ
আরআইএএসের প্রতিবেদন বলছে, এই সব ইহুদিবিদ্বেষী, সহিংস ঘটনার মধ্যে একটা প্রবণতা লক্ষণীয়: সাধারণ ইহুদি জনগণকে ইসরায়েল রাষ্ট্রের রাজনীতির জন্য দায়ী করা, যা শুধু জার্মানিতেই ঘটছে, তা নয়৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরগুলিতে ফিলিস্তিন সমর্থকদের বিক্ষোভের প্রসঙ্গে ইউএসসি শোয়া ফাউন্ডেশনের রবার্ট উইলিয়ামস বলেন, ‘‘কোনো সরকারের পদক্ষেপের বিরোধিতা করার পেছনে সবসময়েই কোনো না কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ থাকে৷ কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তা ইহুদিবিদ্বেষী রূপ নেয়৷ দুর্ভাগ্যবশত, এখন এই ধরনের খুব বেশি ঘটনা উঠে আসছে৷''
জার্মানিতে ইহুদিদের ১৭০০ বছরের ইতিহাসের গল্প
জার্মানিতে ইহুদিদের ১৭০০ বছরের ইতিহাস দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Jüdisches Museum Berlin
প্রাচীন বাতি
প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন চতুর্থ শতকের এই অয়েল ল্যাম্প৷ইহুদিবাদের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতীকটি পাওয়া গিয়েছিল জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ট্রিয়ারে৷দেখে মনে হয় এটি হয়ত উত্তর আফ্রিকার শহর কার্থেজে তৈরি৷
ছবি: Rheinisches Landesmuseum Trier
কানের দুল
মধ্যযুগে জার্মানির রাইনলান্ড অঞ্চলের স্বর্ণকারদের বিশেষ সুখ্যাতি ছিল৷কিছু ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এই শিল্পে ইহুদি এবং খ্রিস্টান স্বর্ণকারদের দক্ষতার সাক্ষ্য দেয়৷ছবির এই কানের দুলটি ২০১১ সালে কোলন শহরে পাওয়া যায়৷
ছবি: MiQua. LVR-Jüdisches Museum Köln
মোজেস মেন্ডেলসনের চশমা
ইহুদি দার্শনিক মোজেস মেন্ডেলসনের ব্যবহার করা চশমা এটি৷১৮ শতকে তিনি জ্ঞানের জগতে আলো ছড়িয়েছিলেন, খ্রিস্টান এবং ইহুদিদের মাঝে এক সংলাপেও ভূমিকা রেখেছিলেন৷তার বন্ধু গঠোল্ড এফ্রাইম লেসিং ‘নাথান দ্য ওয়াইজ’ নাটকে মেন্ডেলসনের দর্শনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন৷
ছবি: Jüdisches Museum Berlin
হাইনরিশ হাইনের স্মৃতিচিহ্ন
লেখক হাইনরিশ হাইনের জন্ম ইহুদি পরিবারে৷ তবে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে খ্রিষ্টান হয়ে যান৷ধর্মান্তরিত হওয়া যে ভুল ছিল তা নিজেই পরে স্বীকার করেছেন৷একবার দুঃখ করে লিখেছিলেন, ‘‘ইহুদি এবং খ্রিষ্টানরা আমাকে সমানভাবে ঘৃণা করে৷ খ্রিষ্টান হওয়ার জন্য আমি অনুতপ্ত৷’’ ওই একটি সিদ্ধান্তের জন্য ইসরায়েলে এখনো হাইনরিশ হাইন এক বিতর্কিত নাম৷
ছবি: Heinrich Heine Institut in Düsseldorf
ইহুদি বীর সেনা
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে যে এক লাখ ইহুদি অংশ নিয়েছিলেন, নাবিক মাক্স হালার তাদের একজন৷১৯১৫ সালে স্বপ্রণোদিত হয়ে সাবমেরিন বহরে যোগ দেন৷সেখানে নাবিক হিসেবে অনন্য ভূমিকার জন্য ‘আয়রন ক্রস’ পুরস্কার দেয়া হয় তাকে৷ প্রথম যুদ্ধের পর ব্যবসা শুরু করেন হালার৷ নাৎসি বাহিনী ইহুদিদের বর্জন করলে নিজের দোকানের জানালায় বীরত্বের জন্য পাওয়া পুরস্কারগুলো সাজিয়ে রাখেন৷ফলে তার দোকানে নাজিদের হামলা হয়নি৷
ছবি: Jüdisches Museum Berlin
মপেড
পূর্ব জার্মানিতে এই মপেড পরিচিত ছিল সায়মন শলবে বা সায়মন সোয়ালো নামে৷ইহুদি পরিবারে জন্ম নেয়া সায়মন এ ধরনের বাহন তৈরির কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন ১৮৫৬ সালে৷নাৎসিরা এই কোম্পানি বাজেয়াপ্ত করায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হন সায়মন৷
ছবি: AKF Fahrzeugteile GmbH/Janos Bayer
ভার্চুয়াল প্রদর্শনী
‘শেয়ার্ড প্রোজেক্ট’-এর ওয়েবসাইটে শুরু হয়েছে ইহুদিদের এমন ৫৮টি প্রাচীন স্মৃতিচিহ্নের প্রদর্শনী৷ ২৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীতে প্রতি সপ্তাহে একটি করে নতুন সামগ্রী দেখানো হবে৷প্রত্নতাত্ত্বিক উদ্ভাবন, পেইন্টিং, স্টাম্বলিং ব্লক থেকে শুরু করে হলোকস্টের শিকার ইহুদিদের নানা রকমের স্মৃতিচিহ্নও থাকবে সেখানে৷