গ্রীষ্মে বার্লিন রূপ নেয় বিশাল, খোলা আকাশের নীচে পার্টির একটি স্থান হিসেবে৷ বার্লিনবাসী সাধারণত যা ঘরের মধ্যে করতে ভালোবাসেন, গ্রীষ্মে সেসব করেন ঘরের বাইরে, জানাচ্ছেন ডয়চে ভেলের লিয়া ম্যাকডোনেল৷
বিজ্ঞাপন
গ্রীষ্মের প্রথম প্রখর সূর্যোদয়কে বার্লিনবাসী মনে করেন সবুজ সংকেত৷ এই সংকেত পেয়ে তাঁরা নিজেদের যাবতীয় ব্যক্তিগত বিষয়াদি খোলা আকাশের নীচে নিয়ে যান৷ এই সবের মধ্যে তাঁদের শোবার ঘরও পরে৷
ফলে শোবার ঘরের কাজ বলে আমরা যা মনে করি, মানে যৌন মিলন, সেটাও বার্লিনবাসী সারেন প্রকাশ্যে খোলা আকাশের নীচে৷ এই ধারা নাকি ক্রমশ বাড়ছে৷ আর এই কাজে স্থান বিবেচনার ক্ষেত্রে তাঁদের কোনো বাছবিচার নেই৷ পার্ক, রাস্তা, পার্কিং-এর জায়গা, নদীর পাড়, বাগান, এমনকি বাড়ির ছাদ – যেখানে সম্ভব সেখানেই শুয়ে পড়ছেন তাঁরা৷
বার্লিনের আনন্দমেলায় বাংলাদেশ
জার্মানির বার্লিনে গত ১৮ বছর ধরে আয়োজন করা হচ্ছে ‘কার্নেভাল অফ কালচারস’৷ এই আনন্দেমেলায় বিশ্বের আরো অনেক দেশের সঙ্গে অংশ নেন প্রবাসী বাঙালিরাও৷ বার্লিনে বসবাসরত বিভিন্ন দেশের মানুষের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয় কার্নেভালে৷
ছবি: Elton Hubner
অবাধ স্বাধীনতা
গত ১৮ বছর ধরে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে আয়োজন করা হচ্ছে ‘কার্নেভাল অফ কালচারস’৷ এই উৎসবের প্যারেডে স্বাধীনভাবে অংশ নেন নানা সংস্কৃতির, নানা পেশার মানুষ৷ এবার আবহাওয়া ভালো ছিল৷ তাই রবিবার (১৯.০৫.১৩) বার্লিন কার্নেভালে হাজির হন সাত লাখ দর্শক, আনন্দমেলা চলেছে নয় ঘণ্টা ধরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রয়েৎসব্যার্গে উৎসব
কার্নেভাল প্যারেড এবার চার কিলোমিটারের মত পথ পাড়ি দিয়েছে৷ বার্লিনের ক্রয়েৎসব্যার্গ এলাকা থেকে এই প্যারেড গতি পায়৷ ক্রয়েৎসব্যার্গ বহুসাংস্কৃতিক পাড়া হিসেবে বিশেষ পরিচিত৷ এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের দাবি, ডোনার কাবাব আসলে তাদেরই আবিষ্কার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যে আনন্দমেলা সবার জন্য
ক্রয়েৎসব্যার্গ-এর বাসিন্দাদের মধ্যে তুর্কি বংশোদ্ভূতদের সংখ্যা বেশি৷ ফলে কার্নেভালে তাদের অংশগ্রহণও থাকে বেশি৷ কিন্তু তাই বলে বার্লিনের অন্য অঞ্চলের মানুষ এই প্যারেডে অংশ নেননা, এমনটা ভাবলে ভুল হবে৷ বরং বার্লিনে অবস্থানরত ১৮০টি দেশের প্রতিনিধিরাই হাজির হন এই আনন্দমেলায়৷ বার্লিনের ৪৬০,০০০ এর মতো বাসিন্দা বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাসপোর্টধারী৷
ছবি: Reuters
ব্যয়বহুল উৎসব
বার্লিনে এই উৎসবের পেছনে খরচও হয় অনেক টাকা৷ এতকাল প্যারেডের আয়োজকরা গাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে, জেনারেটর, বর্ণিল পোশাক আর রিহার্সাল রুমের খরচ জুগিয়েছেন৷ এখন, অনেকেই এই আনন্দমেলায় সরকারের বাজেট বরাদ্দ চাইছেন৷ কেননা তাদের মতে, এই উৎসব বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে মিলন ঘটাতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্যামেরার চোখে দেখা
এ বছর অনেকে বিশেষ পোশাক পরে কার্নেভাল দেখতে এসেছেন৷ এবং ছবি তোলার জন্য তাদের পর্যাপ্ত সময়ও ছিল৷ সামগ্রিকভাবে এই আনন্দেমেলা চার কিলোমিটারের মত পথ অতিক্রম করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বার্লিনে সাম্বা
আনন্দেমেলার অন্যতম আকর্ষণ ব্রাজিল৷ দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নৃত্যগোষ্ঠী এই উৎসবে অংশ নেন৷ ফলে অনেকটা রিও ডি জানেরোর কার্নেভাল প্যারেডের স্বাদ পায় বার্লিনবাসী৷ আর বার্লিনের অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা পরিবেশে এই ছবির মতো পোশাক কার্নেভাল ছাড়া তেমন একটা দেখা যায় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কার্নেভাল পরখ করছে বার্লিন
১৯৯৬ সালে প্রথম কার্নেভাল উদযাপন করে বার্লিন৷ সেসময় উদ্দেশ্য ছিল, ক্যাথলিকদের ঐতিহ্যবাহী কার্নেভাল উদযাপন করা, যা জার্মানির রাইনল্যান্ড অঞ্চলে বহু আগে থেকেই হয়ে আসছিল৷ আয়োজকরা সেই উৎসবের একটি সংস্করণ বার্লিনে আনতে চেয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভিন্ন ধারার সূচনা
তবে বার্লিনের কার্নেভাল জার্মানিতে এক ভিন্ন ধারার সূচনা করেছে৷ সুনির্দিষ্ট কোন জাতি নয়, বরং বহুসংস্কৃতির এক মিলনমেলায় পরিনত হয়েছে এই কার্নেভাল৷ অনেকটা ব্রিটেনের নটিং হিল কার্নেভালের মতো৷ ১৯৬০ সাল থেকে সেখানে বহুসংস্কৃতির মধ্যে সম্প্রতি এবং সহনশীলতার উদাহরণ হিসেবে উদযাপন করা হচ্ছে এমন উৎসব৷
ছবি: Getty Images
ক্ষুদে বার্লিনালেরাও থাকছে উৎসবে
বার্লিনের শিশুকিশোররাই বা বাদ থাকবেন কেন? বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের মধ্যকার সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায় তারাও৷ এবছর তাই ক্রয়েৎসব্যার্গ-এর কার্নেভালে হাজির হয় দেড় হাজারের মতো শিশু৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাঙালির অংশগ্রহণ
বার্লিনের কার্নেভালে গত এক দশক ধরে অংশ নিচ্ছেন বাঙালিরা৷ ইতোমধ্যে তাদের বর্ণিল অংশগ্রহণ বিশেষ নজর কড়েছে কার্নেভাল কর্তৃপক্ষের৷ আনন্দমেলায় বাঙালির সংস্কৃতির উপস্থাপন পুরস্কারও জয় করেছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Elton Hubner
দেখা হবে আগামী বছর!
কার্নেভালের নিজস্ব সংস্করণকে কার্যত ভালোবেসে ফেলেছে বার্লিনবাসী৷ তাই ২০১৪ সালে আরো ভালোভাবে এই উৎসব আয়োজনে আগ্রহী তারা৷ আগামী বছর এই উৎসবের আয়োজন করা হবে ৮ জুন৷
ছবি: Reuters
11 ছবি1 | 11
এ বছর অবশ্য বার্লিনে গ্রীষ্ম একটু দেরিতে শুরু হয়েছে৷ ব্যাপক বৃষ্টিপাত এবং হঠাৎ ঠান্ডার জন্য এই পরিস্থিতি৷ তাসত্ত্বেও খোলা আকাশের নীচে যৌনাচার শুরু হয়ে গেছে পুরোদমে৷ বিষয়টি এত তীব্র আকার ধারন করছে যে শহর কর্তৃপক্ষও উদ্বিগ্ন৷
জার্মান পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনযায়ী, ২০১২ সালে মুক্ত পরিবেশে সঙ্গমে অংশ নেওয়া ২৩৯ ব্যক্তিকে জরিমানা করেছে পুলিশ৷ গড়ে তাঁদের দেড়শো ইউরো করে জরিমানা করা হয়েছে৷ আগের তিন বছরের তুলনায় জরিমানার এই হার প্রায় দ্বিগুন৷
বার্লিনের সবচেয়ে বড়, বিখ্যাত বাগানটি হচ্ছে ‘টিয়ারগার্টেন' এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘ট্রেপটাওয়ার পার্ক'৷ মুক্ত পরিবেশে শারীরিক মিলনের জন্য এই দু'টি জায়গাই বার্লিনবাসীর সবচেয়ে পছন্দ৷ টিয়ারগার্টেনের একটি অংশে মিলনে আগ্রহীদের ভিড় এত বেশি যে সেখানে পুলিশ বিশেষ নজরদারি ব্যবস্থা চালুতে বাধ্য হয়েছে৷
তবে বার্লিনের সব বাসিন্দাই যে এমনটা চান, তা কিন্তু নয়৷ সাধারণভাবে তাঁরা অত্যন্ত উদার হলেও অনেকে খোলা আকাশের নীচে এরকম সঙ্গম রোধ বা অন্ততপক্ষে নিয়ন্ত্রণের পক্ষে৷ জার্মান আইনে অবশ্য পাবলিক প্লেসে নগ্ন হতে কোনো বাধা নেই৷ আরো বিভ্রান্তিকর ব্যাপার হচ্ছে, খোলা আকাশের নীচে যৌন মিলনেও আইন অনুযায়ী বাধা নেই – শুধু অন্তত একটি টাওয়েল ব্যবহার করে নিজেদের ঢেকে রাখতে হবে৷
রাজধানীতে নগ্ন সংস্কৃতি
গভীর রাতে খোলা পরিবেশে উন্মত্ত যৌন মিলন, যার দর্শক শুধু কাঠবিড়ালিরা – এমন হলেও না হয় মানা যেত৷ কিন্তু প্রকাশ্যে দিনেরবেলা এরকম মিলন দৃশ্য বোধহয় শোভনীয় নয়৷ বিশেষ করে যাঁরা যৌনতার বিষয়াদি দরজার আড়ালে, চার দেয়ালের মধ্যে রাখতে পছন্দ করি, তাঁদের জন্য বিব্রতকরও৷
‘পাখির চোখ’এ বার্লিন
‘পাখির চোখ’এ দেখুন জার্মানির রাজধানী বার্লিন৷
ছবি: DW/T. Eastley
আকাশ থেকে বার্লিন
বার্লিনের বিখ্যাত টিভি টাওয়ার৷ ছবিটি পাশের পার্ক ইন হোটেল থেকে তোলা৷ ৩৬৮ মিটার উঁচু এই টিভি টাওয়ারের নীচের দিকটা লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন ব্যস্ত মহানগরীর ছবি৷ এই টাওয়ারের ২০৮ মিটার উচ্চতায় রয়েছে একটি ‘ঘুরন্ত রেস্তোরাঁ’৷
ছবি: DW/T. Eastley
এক জায়গা থেকে সব
পার্ক ইন হোটেল থেকে বার্লিনের বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় স্থান দেখা যায়৷ যেমন এই ছবিতে ডানপাশে দেখা যাচ্ছে বার্লিন ক্যাথিড্রাল, বামে সেন্ট হেডভিশ ক্যাথিড্রাল৷
ছবি: DW/T. Eastley
রূপান্তর
সময় পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বার্লিনে পুরনো ভবনের পাশে গড়ে উঠেছে নতুন ভবন, ইটের বদলে এসেছে কাচের দালান, বাদামি ও ধূসর রঙ এর বদলে এসেছে রঙিনের সমাহার৷
ছবি: DW/T. Eastley
বার্লিনের টাউনহল
ছবিতে লাল রংয়ের যে ভবনটা দেখা যাচ্ছে সেটা বার্লিনের বিখ্যাত টাউন হল৷ ১৮৬১ থেকে ১৮৬৯ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া এই ভবনের পাশেই দেখতে পাচ্ছেন হাল আমলের সব বিল্ডিং৷
ছবি: DW/T. Eastley
লাল এর সমাহার
বার্লিনের নয়ক্যোলন এলাকায় অনেক অভিবাসীর বাস৷ লাল ছাদের এই ভবনগুলোতে তারা থাকেন৷ দূরে দেখা যাচ্ছে নীল রং এর ‘ওটু আরেনা’৷ আইস হকি, বাস্কেটবল, হ্যান্ডবল আয়োজনের পাশাপাশি সেখানে কনসার্ট হয়ে থাকে৷
ছবি: DW/T. Eastley
হারিয়ে গেলে সমস্যা নেই
বার্লিনে ঘুরতে ঘুরতে আপনি যদি হারিয়ে যান চিন্তা নেই৷ যে কোনো স্থান থেকে দেখা পাবেন উঁচু টিভি টাওয়ারের৷ সেটা ধরে এগিয়ে যেতে পারেন সামনে৷
ছবি: DW/T. Eastley
6 ছবি1 | 6
তবে বার্লিনে কিন্তু নগ্নতাবাদ, জার্মান ভাষায় যাকে বলে ‘ফ্রাইকর্পারকুলট্যুর' নতুন নয়৷ ১৯২০ সালের দিকে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে সেখানে নগ্ন দেহের প্রদর্শনী শুরু হয়৷ আর নগ্নতা বিষয়ক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয় বার্লিনে, ১৯২৯ সালে৷
২০১৩ সাল, মানে চলতি বছর খোলা আকাশের নীচে সঙ্গম প্রতিরোধে বেশ সক্রিয় পুলিশ৷ সামাজিক ন্যায়বিচারের স্বার্থে এটা করছে তারা৷ কিন্তু প্রতিরোধ সহজ নয়৷ সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার পথে কিংবা গাড়ি থামিয়ে হঠাৎ হয়ত কোনো জুটি কোথাও শুরু করে দিল সঙ্গম৷ ফলে দ্রুত তাঁদের ঠেকানো কঠিন৷ তবে এই চর্চা বাড়ায় শহরের খানিকটা লাভও হচ্ছে৷ প্রকাশ্যে সঙ্গমরতদের ধরতে পারলেই আর্থিক জরিমানা করছে পুলিশ৷ এভাবে অনেক টাকা আয় হচ্ছে৷
অবশ্য জরিমানার ক্ষেত্রে নিয়ম খানিকটা শিথিল করেছে কর্তৃপক্ষ৷ বেকাররা এক্ষেত্রে ছাড় পাবে৷ রাস্তাঘাটে সঙ্গমরত অবস্থায় ধরা পড়লে তাঁদের জরিমানা ৩৪ ইউরো৷
বার্লিনবাসী এবং সস্তায় বার্লিন ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য আমার কিছু পরামর্শ রয়েছে৷ আপনাদের উচিত হবে গ্রীষ্মে ঠিকঠাক পোশাক পরে রাস্তায় বের হওয়া৷ তাতে করে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানগুলো রোদে পোড়া থেকে রক্ষা পাবে৷ সুস্থ জীবনের জন্য এটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷