মডেল বিমান উড়তে আমরা অনেকেই দেখেছি৷ কিন্তু ড্রোন ওড়ানোর প্রতিযোগিতা? বার্লিনে হবি পাইলটরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাটি থেকেই আকাশে তাদের খুদে বিমান ওড়াচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
মডেল বিমানের তুলনায় অনেক বেশি চটপটে ও দ্রুত – এগুলিকে রেসিং ড্রোন বা কোয়াডকপ্টার বলা হয়৷ আজকাল অনেকেই এই নিয়ে মেতে উঠেছে৷ বার্লিনেও অনেক হবি-পাইলট পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামেন৷ কোয়াডকপ্টার পাইলট আডাম পুশনি বললেন, ‘‘এটা একটা রেসিং কোয়াডকপ্টার৷ রেসিং-এর জন্য বিশেষভাবে তৈরি হয়েছে৷ অত্যন্ত দ্রুত এবং মজবুত – বিশেষ করে বার বার ওড়ালে৷ কোয়াডকপ্টারের ৪টি মোটর রয়েছে৷ তাই এই নাম৷ মাঝে রয়েছে এক স্টারবোর্ড, যা সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে৷ সবসময়ে দুটি ক্যামেরা থাকে৷ একটি ভিডিও তোলে, অন্যটি সব দৃশ্য সরাসরি এই চশমায় সম্প্রচার করে৷ কোনদিকে উড়ছি, তা দেখতে পাই৷''
পাইলট ক্যামেরার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উড়ালের উপর নজর রাখেন৷ একে ‘ফার্স্ট পার্সন ভিউ' বা এফপিভি বলা হয়৷ ভিডিও-চশমার মাধ্যমে পাইলট দেখতে পান, কপ্টার কী ছবি তুলছে৷ মনে হয়, তিনি নিজেই যেন সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে উড়ে চলেছেন৷ এই ধরনের নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক অনুশীলনের প্রয়োজন৷ হবি পাইলট মার্সেল স্পার বলেন, ‘‘ঠিক মনে হয়, নিজেই যেন কপ্টারের ভিতরে রয়েছি৷ ক্যামেরা ও ভিডিও-চশমার মাধ্যমে প্রথম যে দুটি উড়ালের চেষ্টা করেছিলাম, সে সময়ে সব কিছু এতই বাস্তব মনে হয়েছিল, যে একবার ঘোরানোর সময় সিট ছেড়ে পড়েই গিয়েছিলাম৷ মনে হচ্ছিল, ঠিক যেন মাঠের উপর এক পাখি ওড়াচ্ছি৷''
বার্লিনে প্রথম ‘ড্রোন মাস্টার্স' প্রতিযোগিতার সময় কপ্টার পাইলট-রা দর্শকদের সামনে এই খেলার আকর্ষণ তুলে ধরেছিলেন৷
আপনার-আমার ড্রোন
ড্রোন-কে অনেকে কোটি কোটি ডলার মূল্যের যুদ্ধদানব বলে থাকে৷ তবে বহুদিন ধরে বেসামরিক কাজেও চালক-বিহীন বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে৷ সাধারণ ইলেকট্রনিক দোকানে ৩০০ ইউরোর কমেও এমন ড্রোন কিনতে পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সস্তার ড্রোন
চারটি প্রপেলার, দুটি ক্যামেরা, ব্যাটারিচালিত এই ড্রোনের নাম ‘কোয়াড্রোকপ্টার’৷ প্যারিসের এক কোম্পানি এটি বাজারে এনেছে৷ স্মার্টফোন-কেই রিমোট হিসেবে ব্যবহার করে এই ড্রোন ওড়ানো যায়৷ ক্যামেরায় তোলা ছবিও ফোনের পর্দায় দেখা যায়৷ অতএব বে-আইনি হলেও প্রতিবেশীর জানালায় উঁকি মারা সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডালে-ডালে, পাতায়-পাতায়
ড্রেসডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ড্রোন দিয়ে গাছের চূড়া পর্যবেক্ষণ করেন৷ গাছের থ্রিডি মডেলও তৈরি করেন৷ রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রীও এই কর্মকাণ্ড দেখতে নিজে এসেছিলেন৷ অর্থাৎ, এখনো এই পদ্ধতি বেশ বিরল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘আসল’ ড্রোন
আসলে কিন্তু বিশেষ এক জাতের পুরুষ মাছিকেই ‘ড্রোন’ বলা হতো৷ বিশাল চোখ ও হুল ফোটানোর ক্ষমতা রয়েছে সেই মাছির৷ ‘ভোঁ-ভোঁ’ করা থেকেই ‘ড্রোন’ শব্দটি এসেছে৷
ছবি: picture-alliance/Wildlife
মায়ের বিকল্প ড্রোন
মা নেই? ড্রোন তো আছে! মিউনিখ ও বোলোনিয়ার বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রজাতির সুরক্ষার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন৷ অনাথ পক্ষীশিশুদের বাঁচাতে ড্রোনই হয়ে উঠছে মা-পাখি৷
ছবি: picture alliance/augenklick
দমকল ড্রোন
জার্মানিতে কয়েক বছর ধরেই দমকল ড্রোন ব্যবহার করছে৷ তারা বিশেষ ইনফ্রারেড ক্যামেরা নিয়ে আকাশ থেকে নিখোঁজ মানুষের খোঁজ করে৷ বিপজ্জনক এলাকায় গিয়েও ছবি তুলতে পারে এই যন্ত্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিরাপদ দূরত্ব
এক সার কারখানায় আগুন লেগে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল৷ এমনকি বিশেষজ্ঞরাও বিপদের আশঙ্কায় দুই দিন ধারে-কাছে ঘেঁষতে পারেন নি৷ ড্রোন থেকেই প্রাথমিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তেজস্ক্রিয় বিকিরণ
জাপানে ফুকুশিমা পরমাণু দুর্ঘটনার পরেও পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল৷ কোনো ঝুঁকি নিতে হয়নি৷ সেই ছবি থেকে ক্ষয়ক্ষতির সার্বিক চিত্র উঠে এসেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভারতে তৈরি প্রোটোটাইপ
ভারতেও ড্রোন নিয়ে গবেষণা চলছে৷ ব্যাঙ্গালোরের কাছে অনেক এয়ারোস্পেস সংস্থা মিনি-ড্রোন নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে৷ সন্ত্রাসবাদী বা বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় এই ড্রোন আকাশ থেকে এলাকার ছবি তুলতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কোটি কোটি টাকার সহায়তা
জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রোন প্রযুক্তির উন্নতির কাজ চলছে৷ যেমন ইলমেনাউ-এর গবেষকরা এমন এক কোয়াড্রোকপ্টার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন, যা মোবাইল টাওয়ার মেরামত করতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাগরতলে ড্রোন
‘ডিপ ড্রোন ৮০০০’ নামের এই যন্ত্র উড়তে পারে না বটে, কিন্তু তাতে কী এসে যায়! সংজ্ঞা অনুযায়ী ড্রোন মানব-বিহীন হলেই চলবে৷ অর্থাৎ ড্রোন ডুবুরিও হতে পারে৷ মার্কিন নৌ-বাহিনীর তৈরি এই ড্রোন ২,৫০০ মিটার গভীরে গিয়ে ডুবোজাহাজ উদ্ধারে সাহায্য করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রতিবাদ অব্যাহত
বেসামরিক ব্যবহার বাড়লেও মানুষের মূল নজর সামরিক ড্রোনের দিকে৷ সমালোচকদের চোখে এই সব ড্রোন গোয়েন্দাগিরি ও ধ্বংসের কাজেই ব্যস্ত৷ অবৈধ পথে মানুষ খুন করাও এদের কাজ৷ এই কর্মসূচির প্রতিবাদে জার্মান সংসদের সামনে বিক্ষোভ দেখা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
11 ছবি1 | 11
ড্রোনের সামরিক ব্যবহার
ড্রোন যে শুধু ছবি তোলার কাজে ব্যবহার হয়, এমন নয়৷ বরং যুদ্ধক্ষেত্রে কিংবা নজরদারিতে এর ব্যবহার আরো ভয়াবহ৷ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ ড্রোন ব্যবহার করছে যুদ্ধের কাজে, জঙ্গি দমনে৷ তবে এতে বেসামরকি প্রাণহানিও ঘটছে৷
ছবি: Thomas Coex/AFP/Getty Images
মেক্সিকো-অ্যামেরিকা সীমান্তে ড্রোন
ছবির এই ড্রোনটি তৈরি করেছে এলবিট সিস্টেমস লিমেটেড৷ মেক্সিকো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে টহলের কাজে মনুষ্যবিহীন এই ড্রোন ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: Elbit Systems Ltd. via Getty Images
ইসরায়েলের ড্রোন
‘স্কাইলার্ক’ ড্রোন হাতে ইসরায়েলি এক সেনা৷ মূলত ফিলিস্তিনের উপর নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হয় এগুলো৷ গাজায় ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলার সময় ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে৷
ছবি: Jack Guez/AFP/Getty Images
আকাশ পানে তাকিয়ে থাকা
গাজার আকাশে ওড়া ইসরায়েলের ড্রোনের দিকে তাকিয়ে আছে এক ফিলিস্তিনি শিশু৷ জুলাই এবং আগস্টে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় প্রাণ হারিয়েছে দুই হাজারের বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক৷ অন্যদিকে ইসরায়েলের ৬৩ সেনা এবং চার বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে৷
ছবি: Thomas Coex/AFP/Getty Images
আধুনিকতম ‘ড্রোন’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি নতুন ধরনের ড্রোন তৈরির চেষ্টা করছে যেটি পৃথিবীর যে কোনো স্থানে এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে হামলা চালাতে সক্ষম হবে৷ সোমবার এই যানের এক পরীক্ষামূলক ফ্লাইট অবশ্য ব্যর্থ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/DARPA
জঙ্গি নিধনে ড্রোন
আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে ড্রোন ব্যবহার করে জঙ্গি নিধনে ভূমিকা রাখছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে এ সব হামলায় বেসামরিক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে৷ পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ ইমরান খান ড্রোন হামলার বিপক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বেসামরিক ব্যবহার
সামরিক ব্যবহার ছাড়াও ছবি কিংবা ভিডিও করা থেকে শুরু করে বর্তমানে ডাক যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও ড্রোন ব্যবহার শুরু হয়েছে৷ নাগরিকদের কাছে সরকারি চিঠি-পত্র পাঠাতে ড্রোন ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷