ইউরোপে নিরামিষ রান্নার কদর বাড়ছে৷ সেইসঙ্গে বিশেষ রেস্তোরাঁও খোলা হচ্ছে৷ বার্লিনে এমনই এক রেস্তোরাঁ মিশেলিন স্টার খেতাব পেয়েছে৷ প্রধান রাঁধুনি নিজে আমিষ খেলেও সযত্নে নিরামিষ রান্না করেন৷
বিজ্ঞাপন
টকটকে লাল বিট, নিরামিষ নুডলস ও মচমচে জলপাইয়ের টুকরো৷ সেঁকা পেঁয়াজ, সজিনা ও কালো তিল৷ স্টেফান হেনচেল এই সব নিরামিষ রান্নার সৃষ্টিকর্তা৷ ১০ বছর ধরে তিনি বার্লিনের ‘কুকিজ ক্রিম’ রেস্তোরাঁর প্রধান রাঁধুনি৷ সম্প্রতি সেটি একটি মিশেলিন স্টার খেতাব পেয়েছে৷ স্টেফান বলেন, ‘‘আমাদের জন্য সেটা ছিল দারুণ এক অনুভূতি, কারণ আমরা সেটা আশা করিনি৷ ১০ বছর ধরে সেই লক্ষ্যে কাজ করিনি, যেমন ছিলাম সেরকমই আছি৷ আমরা খাঁটি থাকার চেষ্টা করি৷ ভালোবাসা ও উচ্চ মানের মালমশলা দিয়ে রান্না করি৷ সেটা যে স্বীকৃতি পাচ্ছে, সেটা শুধু আমি নয়, আমার গোটা টিমের জন্য বড় পুরস্কার৷’’
বার্লিনের রেস্তোরাঁয় নিরামিষ খাবার
02:25
ছ'জনের এক টিম নিয়ে স্টেফান হেনচেল তাঁর নিরামিষ পদগুলি রান্না করেন৷ তবে তিনি মাংসের বিকল্প হিসেবে প্রচলিত উপকরণ ব্যবহার করেন না৷ শাক-সবজি, জড়িবুটি ও লেটুস পাতা দিয়েই তিনি সৃজনশীল কাজে মেতে ওঠেন৷ স্টেফান নিজে কিন্তু মাংস খান৷ স্টেফান বলেন, ‘‘শুধু শাক-সবজি রান্না করলে আমার কোনো ক্ষতি হয় না৷ কারণ নিরামিষ রান্নাও একই রকম বৈচিত্র্যপূর্ণ বলে আমি মনে করি৷ কত রকমের যে উপকরণ রয়েছে! নানা রঙের জড়িবুটি, নানা রং ও মাপের বিট৷ অনেক কিছু করা সম্ভব৷’’
রেস্তোরাঁর ছাদে ব্যস্ততার পরিবেশ৷ স্টেফান স্যাক্সনি রাজ্যে বড় হয়েছেন৷ তবে রাঁধুনি হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যে৷ ২০০১ সালে বার্লিনে গিয়ে তিনি ‘ফাসিল’ নামের দুই তারকাখচিত রেস্তোরাঁয় উচ্চ মানের রান্না শিখেছেন৷ ২০০৭ সাল থেকে তিনি ‘কুকিস ক্রিম’ রেস্তোরাঁর প্রধান রাঁধুনি৷ স্টেফান বলেন, ‘‘কাহিল হয়ে পড়লে বা মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে নতুন করে শুরু করার এটা খুব ভালো জায়গা৷ আমার টিমের সদস্যদের বলি, গ্রীষ্মে খাবার সময় নীচে টেবিলে বসে থেকো না, ছাদে চলে যাও৷ সূর্যের আলো ও তাজা বাতাস পাবে৷’’
নিরামিষ রান্না কিন্তু আমিষ রান্নার তুলনায় অনেক বেশি পরিশ্রমসাপেক্ষ৷ কারণ প্রত্যেক শাকসবজি বেশ কয়েকবার আলাদা করে রান্না করতে হয়, যাতে শেষে সুন্দর গন্ধ ও স্বাদ পাওয়া যায়৷ স্টেফান হেনচেল ভবিষ্যতে হয়তো দ্বিতীয় মিশেলিন স্টারও পেতে পারেন৷
কিয়র্স্টিন শুমান/এসবি
ভয়ংকর কিছু খাবার
বিশ্বময় ভালো খাবারের তো কোনো অভাব নেই! তবুও মানুষের শখ মেটে না৷ দেশদেশান্তের বিষাক্ত সমস্ত খাবারের দিকেই তাদের টান৷ বিশেষজ্ঞেরা বলেন, অনেকে মনে করেন, বিষাক্ত জিনিস খাওয়ার মধ্যে একধরনের রোমাঞ্চ আছে৷
ছবি: Imago/Bluegreen Pictures
লম্বাহাত অক্টোপাস
কোরিয়াতে এ ধরনের বিষাক্ত অক্টোপাসের নাম সান-নাকজি৷ সাধারণত রান্না না করেই এ ধরনের অক্টোপাস কোরিয়ায় খেতে দেওয়া হয়৷ সেটাই ডেলিকেসি৷ তবে শরীর থেকে পা’গুলো আলাদা করে দেওয়া হয়৷ শরীরেই থাকে বিষ, যা খাওয়া যায় না৷ কিন্তু পা’গুলো আলাদা করে সিসেম তেল দিয়ে মাখিয়ে সার্ভ করা হলেও পা’গুলো নড়তে থাকে৷ অতিথিদের বলে দেওয়া হয়, সাবধানে খেতে৷ যে কোনো সময় গলায় লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷
ছবি: imago/StockTrek Images
বিষাক্ত ব্যাঙের ছাতা
সারা পৃথিবীতেই ব্যাঙের ছাতা খাওয়ার চল আছে৷ কিন্তু সব ধরনের ছাতা খাওয়া যায় না৷ অনেক ব্যাঙের ছাতাই হয় বিষাক্ত৷ ‘আমানিতা ফ্যালোয়ডেস’ তেমনই একপ্রকার ছত্রাক৷ কেউ কেউ যাকে ‘মৃত্যু ছত্রাক’ও বলেন৷ ঠিকমতো রান্না না করে এই ছত্রাক খেলে মৃত্যুও হতে পারে৷ কিডনি এবং লিভার নষ্ট করে দেয় এই ছত্রাক৷
ছবি: Picture alliance/dpa/K. D. Gabbert
বিষাক্ত ব্যাঙ
নামিবিয়ার ‘বুলফ্রগ’ খাওয়ার নির্দিষ্ট সময় আছে৷ বলা হয়, তৃতীয় বৃষ্টির আগে একে মারা ঠিক নয়৷ তাহলে ব্যাঙের শরীরে বিষ থেকে যাবে৷ তৃতীয় বৃষ্টির দিনে নাকি এই ব্যাঙ সবচেয়ে বেশি ডাকতে থাকে৷ এরপর কাঠের উনুনে সেই ব্যাঙ রান্না করাই রেওয়াজ৷ এই রীতি ঠিকমতো পালন না করলে কিডনি নষ্ট হওয়ার সমূহ আশঙ্কা৷
ছবি: Imago/blickwinkel
বিষ ফল
এলডার বেরি দেখতে দারুণ৷ গন্ধও চমৎকার৷ এ ধরনের বেরি বা আঙুর দিয়ে সিরাপ তৈরি হয়৷ পাই বা কেকের সিজনিং, জ্যাম, চাটনি এমনকী, লিকারও তৈরি হয় এই ফল দিয়ে৷ কিন্তু ভালো করে রান্না করতে না পারলে বিপদ৷ এই ফলের মধ্যে থাকে বিষ৷ না পাকা অবস্থায় এই ফল খেলে মৃত্যু অবধারিত৷ আর পাকা ফলও ঠিকভাবে রান্না করে খেতে হয়৷ এল্ডার বেরির পাতা এবং ডালে থাকে সায়ানাইড বিষ৷ কোনোভাবে তা পেটে চলে গেলে মৃত্যু অবধারিত৷
ছবি: picture-alliance/chromorange/M. Rädlein
মাছ হইতে সাবধান
জাপানের অন্যতম দামি মাছ ফুগু৷ এ মাছের লিভার, পাকস্থলী এবং ওভারিতে থাকে নিউরোটক্সিন৷ বৈজ্ঞানিক ভাষায় এর নাম টেট্রোডটক্সিন৷ সকলে এই মাছ রান্না করতে পারেন না৷ এর জন্য দরকার আলাদা লাইসেন্স৷ কয়েক বছর আগে লাইসেন্সহীন রাঁধুনিদের হাতে এই মাছ খেয়ে মৃত্যু হয়েছিল বহু মানুষের৷ তারপর থেকেই এই নিয়ম চালু হয়েছে৷ বলা হয়, ফুগু খেয়ে মৃত্যু নাকি অসম্ভব যন্ত্রণাদায়ক৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Tsuno
বিষাক্ত আলু
ফুগুর মতো না হলেও, আলুর ছত্রাক খেয়েও মৃত্যর ঘটনা ঘটেছে৷ কোনো কোনো প্রজাতির আলু কাঁচা থাকার সময় তার মধ্যে এক ধরনের বিষ থাকে৷ আলুর রং তখন থাকে সবুজ৷ এই বিষের নাম সোলানাইন৷ সেই বিষ বেশি পেটে চলে গেলে মাথা ধরে, বমি হতে পারে৷ কখনো কখনো মানুষ কোমাতেও চলে যান৷ মৃত্যুও ঘটে৷
ছবি: Imago/blickwinkel
গেঁজিয়ে যাওয়া হাঙর
এটি বহু পুরনো ভাইকিং খাবার৷ আইসল্যান্ডে এটি জাতীয় খাবারের মর্যাদা পেয়েছে৷ পচে যাওয়া গ্রিনল্যান্ডের শার্ক৷ এ ধরনের হাঙর ধরার পর বালির নীচে পুঁতে দেওয়া হয়৷ ফলে হাঙরের দেহ খানিক পচে যায়, খানিক শুকিয়ে যায়৷ এভাবে ১২ সপ্তাহ রাখার পর হাঙরের শরীর থেকে সমস্ত তরল বেরিয়ে যায়৷ পচে যাওয়া সেই হাঙর তখন শুকোতে দেওয়া হয়৷ খাওয়া হয় আরো কয়েকমাস পর৷
ছবি: Imago/Nature Picture Library
কামরাঙাতেও বিষ?
কামরাঙা সকলেই খান৷ পেকে গেলে টকমিষ্টি৷ কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এরমধ্যে এক ধরনের অজানা নিউরোটক্সিন থাকে৷ স্বাভাবিক কিডনির যা কোনো ক্ষতি করে না৷ কিন্তু কারও কিডনি খারাপ হলে সেই বিষ কিডনির আরো ক্ষতি করতে পারে৷ খাওয়ার সময় তা বোঝাও সম্ভব না৷