পরিত্যক্ত ক্যাসিনো বা ব্যাংক ভবন মাল্টিমিডিয়া গ্যালারি হয়ে উঠলে কেমন হয়? সেই প্রদর্শনীর স্থায়িত্বও অনিশ্চিত হলে আরো রোম্যান্টিক হতে পারে৷ বার্লিনে ঠিক এমনই এক উদ্যোগ সবার নজর কাড়ছে৷
ফাইল ছবিছবি: picture-alliance/dpa/A. Heinl
বিজ্ঞাপন
বার্লিনের এই সাবেক ক্যাসিনো আজ নগরকেন্দ্রিক ও ভার্চুয়াল শিল্পের পরীক্ষাকেন্দ্র হয়ে উঠেছে৷ স্লট মেশিন ও ক্যাসিনো টেবিলের জায়গায় রং, ধ্বনি ও আলোর এফেক্টের গোলকধাঁধা শোভা পাচ্ছে৷ জার্মানির তিন স্ট্রিট আর্ট শিল্পীর ‘ডিকসন্স’ গোষ্ঠী এমন সাময়িক আর্বান আর্ট গ্যালারি আইডিয়া কার্যকর করছে৷ কিমো ফন রেকভস্কি তাদেরই একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই প্রদর্শনী যাতে কখনো শেষ না হয়, সেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ এই ‘নেভার এন্ডিং প্রোগ্রেস’ চালু রাখতে আমরা বার বার অগমেন্টেড রিয়ালিটি পরিবর্তন করে যাবো এবং মিউজিয়ামে নতুন জিনিস যোগ করবো৷’’
বার্লিনে এই প্রদর্শনীর নাম ‘গেম ওভার’, সংক্ষেপে ‘গো’৷ প্রায় ২,০০০ বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে ৮০ জন শিল্পীর স্ট্রিট আর্ট, প্রচলিত এবং পরীক্ষামূলক শিল্পসৃষ্টি শোভা পাচ্ছে৷ ফন রেকভস্কি আরো বলেন, ‘‘টুডি ও থ্রিডি শিল্পীদের মধ্যে সমন্বয় এবং এক অ্যাপের মাধ্যমে শিল্পের নতুন মাত্রা সৃষ্টি করাই ‘গো’ নামের প্রদর্শনীর কনসেপ্ট৷ অর্থাৎ আমাদের অ্যাপ নিয়ে গ্যালারিতে এলে অগমেন্টেড রিয়ালিটি প্রযুক্তির মাধ্যমে শিল্পকর্মগুলি জীবন্ত করে তোলা যায়৷’’
বার্লিনের ‘ড্রিংক অ্যান্ড ড্র’ সংঘের শিল্পী ইয়ুলিয়ান ডিকার্টের সৃষ্টিকর্ম প্রথম দর্শনে বোঝা যায় না৷ নীল অথবা লাল রংয়ের ছটায় ভিন্ন ছবি চোখে পড়বে৷ সেখানে পরিবেশ অ্যাক্টিভিস্ট গ্রেটা টুনবার্গ এবং প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে দেখা যায়৷ ডিকার্ট মনে করেন, ‘‘এটা সত্যি বেশ নজর কাড়ার মতো বার্তা, যা আলাদা করে ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই৷ প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতাকেন্দ্র ও কট্টরপন্থিরা পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী৷ যে তরুণ প্রজন্ম বর্তমানে পৃথিবীর ভবিষ্যতের জন্য সংগ্রাম করছে, তারাও চলমান প্রবণতার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারে এবং সেই কাজে সফল হতে পারে৷’’
ক্যাসিনোতে নজরকাড়া শিল্প প্রদর্শনী
03:17
This browser does not support the video element.
গিতা কুর্দপুর তার মান্ডালা শিল্পশৈলির মাধ্যমে এক ধরনের বিশ্রাম কক্ষ সৃষ্টি করেছেন৷ তার মধ্যে একটি কেন্দ্রবিন্দুকে ভিত্তি করে একাধিক নক্সা ছড়িয়ে রয়েছে৷ নিজের কাজ সম্পর্কে গিতা বলেন, ‘‘শিল্পের মাধ্যমে আমি মানুষকে ভাবনাচিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করতে চাই, নিজেকে খুঁজে পাবার পথে সাহায্য করতে চাই৷ আমার ‘দ্য সার্কল অফ লাইফ' সৃষ্টিকর্মে সেই প্রচেষ্টার প্রতিফলন দেখছি৷ অনেক অসাধারণ দর্শক এখানে এসে শান্তি পেয়েছেন এবং নিজেকে কার্যত হারিয়ে ফেলছেন৷’’
২০১৭ সালেই ‘ডিকসন্স' গোষ্ঠী বার্লিনে এমন এক স্ট্রিটআর্ট প্রদর্শনী করে নজর কেড়েছিল৷ অন্যান্য শিল্পীদের সঙ্গে ব্যাংকের এক পরিত্যক্ত শাখায় সেই প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছিল৷ মাস দুইয়েক পর সে সব ধ্বংস করা হয়েছিল৷ কিমো ফন রেকভস্কি বলেন, ‘‘সে বারের মতো এবারও যে চিরকাল একটি ভবনে থাকতে পারবো না, এমন ভাবনার পেছনেও কিছুটা রোম্যান্টিকতা লুকিয়ে রয়েছে৷ চলে গেলে কী আর করা যাবে! অন্য কোথাও আত্মপ্রকাশ করবো৷ হয়ত ভার্চুয়াল জগত, সুপারওয়ার্ল্ড জগতে ভার্চুয়াল গ্যালারি নিয়ে বার বার হাজির হবো৷’’
তবে সাবেক ক্যাসিনো ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু হতে আরো অনেক সময় লাগবে৷
টোওডোরা মাভ্রোপুলুস/এসবি
ইরানের পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো শিল্প
বার্লিনের একটি প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ইরানের প্রাচীন শিল্পের নানা নিদর্শন। ছবিঘরে ইরানের শিল্প ইতিহাসের এক ঝলক।
ছবি: The Sarikhani Collection / C. Bruce
দীর্ঘ ইতিহাস
বার্লিনের জেমস সিমন গ্যালেরিতে 'ইরান, ফাইভ মিলেনিয়া অফ আর্ট অ্যান্ড কালচার' শিরোনামের এই প্রদর্শনীতে প্রাচীন সময় থেকে আধুনিক ও বর্তমান ইরানের শিল্পচর্চার ইতিহাসের নানা দিক দেখানো হচ্ছে।
ছবি: Staatliche Museen zu Berlin / David von Becker
ক্লোরিট পুতুল
ইরানে আট হাজার বছর আগে নানা জনপদ গড়ে উঠতে শুরু করে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়া ও সিন্ধু সভ্যতার সাথে আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে শিল্পভিত্তিক আদান-প্রদানও দেখা যায়। এলাম নামে ইরানের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের যাত্রা শুরু হয় খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দ থেকেই। সেই সময়ের একটি ক্লোরিট পুতুল রয়েছে এই প্রদর্শনীতে।
ছবি: J. Bodkin/The Sarikhani Collection
চিত্রিত সোনার পাত্র
খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় ও দ্বিতীয় সহস্রাব্দ থেকেই ক্যাসপিয়ান সাগর ও জাগ্রোস পর্বতমালায় মানুষের বসতি লক্ষ্য করা যায়। তৎকালীন ক্ষমতাধর রাজ্যের দৃষ্টিতে পাহাড়ের মানুষ মাত্রেই ছিল অশিক্ষিত ও বর্বর। কিন্তু সেই অঞ্চলের মানুষ গর্ব করতেন তাদের শিল্প নিয়ে। ছবিতে একটি চিত্রিত সোনার পাত্র দেখা যাচ্ছে, যা পাওয়া গেছে সেই পাহাড়ি অঞ্চলে।
ছবি: The Sarikhani Collection
দেবীর মূর্তি
হাজার হাজার বছর আগেই পারস্যের প্রযুক্তি বাকি দুনিয়াকে চমকে দিয়েছিল। মাটির নীচ থেকে পানি সরবরাহ করার প্রযুক্তি হোক, বা কোমল হাতে মূর্তি গড়া, সব ক্ষেত্রেই পারস্যের অভিনবত্ব চোখে পড়ার মতো। ছবিতে দ্বিতীয় শতাব্দীর একটি দেবীর মূর্তি, যেখানে স্পষ্ট উচ্চমানের কারিগরি ও বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে আদান-প্রদানের প্রভাব।
ছবি: Staatliche Museen zu Berlin, Museum für Islamische Kunst / J. Kramer
শিকারের দৃশ্য
ষষ্ঠ ও সপ্তম শতাব্দীতে এই অঞ্চলের ক্ষমতায় আসে সাসানিদ বংশ। বর্তমান চীন, ভারত, আরব অঞ্চল, উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত ছিল এই বংশের রাজত্ব। শিল্পকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোশকতা দেওয়া হয় এই সময়ে। ছবিতে সেই সময়ের এক রাজার শিকারে যাবার দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ছবি: Staatliche Museen zu Berlin, Museum für Islamische Kunst / Ch. Krug
নবম শতাব্দীর 'নীল কোরান'
সাসানিদ গোষ্ঠীকে যুদ্ধে পরাজিত করে এক আরব গোষ্ঠী, যারপর থেকে এই অঞ্চলে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠিত হয়। স্থানীয় জোরোস্ট্রিয়ান ধর্মের স্থান নিতে শুরু করে ইসলাম ধর্ম। আরবি হরফের গুরুত্ব সেই সময় কতখানি ছিল, তা বোঝা যায় নীলরঙা পবিত্র কোরানের উদাহরণ থেকে।
ছবি: The Sarikhani Collection / C. Bruce
বিখ্যাত কবি রুমির কবিতা
ফার্সি ও আরবি হরফের মেলবন্ধন নবম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে গড়ে ওঠে। রাজধানী বুখারাকে কেন্দ্র করে বেড়ে ওঠে চিত্র, কলা ও স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন। পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে হেরাত হয়ে ওঠে এই অঞ্চলের রাজধানী। কবি রুমি এই সময়েই খ্যাতিলাভ করেন তার বিখ্যাত 'মাথনাভি' বা অর্থবহ কবিতার মাধ্যমে।
ছবি: The Sarikhani Collection
বিশ্বের কেন্দ্রের ছবি
ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে পারস্যের ক্ষমতায় আসেন সাফাভিদ বংশের রাজারা। রাজধানী ইসফাহানের বিভিন্ন মসজিদ, প্রাসাদ, বাগান ও দোকান গড়ে ওঠে বিখ্যাত নকশ-এ-জাঁহা স্কোয়ারে। নকশ-এ-জাঁহা শব্দের অর্থ 'গোটা বিশ্বের ছবি'। এই স্কয়ারটি বর্তমানে জাতিসংঘের বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত।
ছবি: The Sarikhani Collection / C. Bruce
ইউরোপীয় প্রভাব
এই প্রদর্শনীর আয়োজকদের মতে, ইরান ছিল এশিয়া ও ইউরোপের মাঝে সংযোগের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। ১৬৭৩ সালের এই ছবিটি সেই সংযোগের প্রতিকৃতি। একদিকে ফার্সি আদবকায়দার প্রভাব, অন্যদিকে ইউরোপিয়ান চলাফেরা ও কেতাদুরস্ত পোশাকের ছাপ, এই দুই মিলেই ইরানের শিল্পের বেড়ে ওঠা।
ছবি: The Sarikhani Collection / C. Bruce
বর্তমান ইরানের জন্ম
১৭৩৬ সালে সাফাভিদ রাজত্বের পতনের পর থেকে শিয়া আদর্শে গড়ে ওঠা বর্তমান ইরানের সূত্রপাত। ৪ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে ২০ মার্চ পর্যন্ত৷