নানা সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে বার্লিনের গৃহহীন মানুষের সংখ্যা কমিয়ে আনতে এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে প্রথমবারের মত গৃহহীনদের শুমারি হয়েছে৷ আর তাতেই বেরিয়ে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য৷ সেখানে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা দুই হাজারেরও কম৷
বিজ্ঞাপন
এর আগে নানা পরিসংখ্যানে বার্লিনে ছয় হাজার থেকে ১০ হাজার গৃহহীন মানুষ আছে বলে জানানো হয়েছিল৷
জানুয়ারির শেষ দিকে চালানো এই জরিপে বার্লিনে এক হাজার ৯৭৬ জন গৃহহীন মানুষ পাওয়া গেছে৷ শুক্রবার ওই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়৷
তাদের মধ্যে ৯৪২ জন ‘উইন্টার এইড ফ্যাসিলিটিস’ এর জন্য নাম নিবন্ধন করেছেন৷ এছাড়া পাবলিক স্পেসের জন্য নিবন্ধন করেছেন ৮০৭ জন, বিভিন্ন স্টেশনে বসবাস করেন ১৫৪ জন, হাসপাতালের রেসকিউ সেন্টারে আছেন ১৫ জন এবং থানায় আছেন ১২ জন৷
গৃহহীন এসব মানুষদের গড় বয়স ৩০ থেকে ৪৯ এবং তাদের ৮৪ শতাংশ পুরুষ৷
‘নাইট অব সলিডারিটি’ ব্যানারে প্রায় ২৬০০ স্বেচ্ছাসেবক তিন থেকে পাঁচজনের দলে ভাগ হয়ে গৃহহীনদেরএই শুমারি করে৷ ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি এই দুইদিন শুমারির কাজ চলে৷
শুমারিতে ধারণার চাইতে কম গৃহহীন মানুষ পাওয়া নিশ্চিতভাবে পরিস্থিতির উন্নতির কথা বলছে৷ নিউ ইয়র্ক ও প্যারিসের পদ্ধতি অনুসরণ করে বার্লিনে এই শুমারি করা হয়৷
গত বছর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জার্মানিতে গৃহহীনদের সংখ্যা বাড়ছে৷ ওই প্রতিবেদনে দেশজুড়ে ২০১৮ সালে প্রায় ছয় লাখ ৭৮ হাজার মানুষের থাকার ঠিকঠাক জায়গা ছিল না বলে উল্লেখ করা হয়৷ তাদের মধ্যে প্রায় ৪১ লাখ মানুষ রাস্তায় থাকে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলো তাদের নাগরিকদের চাকরি খুঁজতে যেকোনো সদস্য রাষ্ট্রে যাওয়ার অনুমতি দেয়৷ কিন্তু তাদের অনেকে জার্মানিতে সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের অংশ হতে পারেননি৷
এসএনএল/কেএম (ডিপিএ, ইপিডি)
২০১৭ সালের ছবিঘরটি দেখুন...
হামবুর্গে নিরাশ্রয়দের জন্য ‘কনটেইনার গ্রাম’
জার্মানির শহরগুলিতে একদিকে নিরাশ্রয় মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে তাদের মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলেছে – বিশেষ করে শীতকালে৷ মাল পরিবহণের ইস্পাত কনটেইনারে বাসা বানানো তার মধ্যে একটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Wendt
অবশেষে নিজের একটা ঘর
বিছানা, আলমারি, টেবিল – আনা নামের মহিলাটির সাত বর্গমিটার পরিধির কনটেইনার বাসাতে সব কিছু ধরে গেছে৷ ঘরটাকে সুন্দর করে সাজিয়েছেন আনা৷ তাঁর মতো আরো ন’জন মহিলা হামবুর্গের এই ‘কনটেইনার গ্রামের’ বাসিন্দা; এরা সবাই এর আগে বেশ কয়েক বছর ধরে রাস্তাতেই দিন কাটিয়েছেন৷ ক্যারিটাস ত্রাণ সংস্থা হামবুর্গ পলিটেকনিকের সঙ্গে মিলে ‘কনটেইনার গ্রাম’ প্রকল্পটি চালু করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Wendt
পলিটেকনিকের ক্যাম্পাসে সবাই নিরাপদ
হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত বিজ্ঞান মহাবিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ক্যারিটাসের কনটেইনারগুলি বসানো হয়েছে৷ বিশেষ করে নিরাশ্রয় মহিলাদের জন্য এই নিরাপত্তার মূল্য অসীম; এর আগে এরা রাস্তায় বারংবার সহিংসতা ও যৌন হামলার সম্মুখীন হয়েছেন৷ হামবুর্গের নিরাশ্রয় মানুষদের অধিকাংশ পুরুষ হলেও, নিরাশ্রয় মহিলাদের সংখ্যাও প্রায় দু’হাজার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Wendt
সকালে একসঙ্গে প্রাতরাশ
একজন সোশ্যাল ওয়ার্কার ও সোশ্যাল ওয়ার্ক স্নাতক পাঠক্রমের পড়ুয়ারা সারা সপ্তাহ ধরে ‘কনটেইনার গ্রামের’ মহিলাদের সঙ্গে থাকেন৷ পড়ুয়ারা সরকারি কার্যালয়ে যাবার সময়েও মহিলাদের সঙ্গে থাকেন; লক্ষ্য হল, তাদের জন্য স্থায়ী বাসার বন্দোবস্ত করা৷ হামবুর্গে যেভাবে বাড়িভাড়া বাড়ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে কাজটা খুব সোজা নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Wendt
যারা শুধু নিরাশ্রয় নয়, নিরুপায়
মহিলারা এই ‘কনটেইনার গ্রামে’ থাকেন গড়ে তিন বছর করে, বলে জানালেন ক্যারিটাস সংস্থার আন্ড্রেয়া নিওপেক, যিনি কলেজে লেকচারার হিসেবেও কাজ করে থাকেন৷ ‘‘যে সব মহিলা অন্য কোথাও জায়গা পাননি, কিংবা সেখান থেকে তাদের বার করে দেওয়া হয়েছে, তাদেরই আমরা সর্বাগ্রে নিই,’’ বলেছেন নিওপেক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Wendt
ট্রান্সজেন্ডার
৩৪ বছর বয়সি ট্রান্সজেন্ডার মহিলা রোজেন বহু বছর আগে বুলগেরিয়া থেকে জার্মানিতে এসেছিলেন রোজগারের আশায়৷ পরে অসুখের কারণে তিনি নিরাশ্রয় হয়ে পড়েন – ওদিকে ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে তাঁর বাসা পাওয়া বিশেষভাবে শক্ত৷ আবার নিরাশ্রয় মহিলাদের জন্য আশ্রয়েও তাঁর স্থান হয় না; ‘‘সেখানে প্রশ্ন ওঠে, তিনি ঠিক কতোটা মহিলা,’’ জানালেন নিওপেক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Wendt
নতুন জীবন
‘‘আমি এখানে নিরাপদ বোধ করি,’’ বললেন স্লোভাকিয়া থেকে আসা ট্রান্সজেন্ডার মহিলা সারা৷ জীবনে অনেক দুঃখ সয়েছেন সারা; শিশুবয়সে দুর্ঘটনার পর তাঁর একটা পা কাটা যায়; ১৫ বছর বয়স থেকে তাঁকে দেহব্যবসায়ে নামতে হয়৷ বহু বছর ধরে ফুটপাথে শোয়ার পর ‘‘আজ আমার একটা নিজের বিছানা আছে,’’ গর্ব করে বললেন সারা৷
ছবি: picture alliance/dpa/G. Wendt
জিনিসপত্র রাখার জায়গা
‘কনটেইনার গ্রামের’ অন্যান্য মহিলাদের মতো স্লোভাকিয়া থেকে আসা ইওলানা-ও কোনো সামাজিক ভাতা পান না৷ প্রকল্পটির লক্ষ্যই ছিল এভাবে অসুখ-বিসুখ, মাদকাসক্তি, গণিকাবৃত্তি বা সঠিক ভিসা না থাকার কারণে যে সব মহিলারা সরকারি সাহায্য পান না, তাদের সহায়তা করা৷