বার্লিন নগররাজ্যে পাস হওয়া নতুন আইন অনুযায়ী, কারো চামড়ার রঙ, লিঙ্গ কিংবা অন্য কোনো কারণে পুলিশসহ কোনো কর্তৃপক্ষ বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারবে না৷ মনে করা হচ্ছে, নগর পরিচালন পদ্ধতিতে যে বর্ণবাদ রয়েছে এ আইনে তা বন্ধ হবে৷
বিজ্ঞাপন
আইনটিতে বিশেষভাবে বলা হয়েছে, পুলিশ ও পাবলিক স্কুলসহ নগর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে যে কোনো সেবাদান কর্তৃপক্ষ যেন কেউ কোত্থেকে এসেছেন, চামড়ার রঙ কী, লিঙ্গ, ধর্ম, শারীরিক ও মানসিক বৈকল্য, চিন্তাচেতনা, বয়স ও যৌন আকর্ষণ- এসব বিবেচনায় না আনেন৷
এছাড়া বলা হয়েছে, কেউ জার্মান ভাষা কতটা পারেন, কোনো অসুস্থতায় ভুগছেন কিনা, তাদের আয়, শিক্ষা ও পেশার পরিচয় দিয়েও যেন বৈষম্যের শিকার না হন৷ আর যদি কেউ এসব বৈষম্যের শিকার হন তাহলে তারা ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে পারবেন৷ কর্তৃপক্ষও সেখানে তাদের যুক্তি তুলে ধরার সুযোগ পাবেন৷
আইনটি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই কাজ হচ্ছিল৷ তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে কালোদের প্রতি পুলিশের বৈষম্যমূলক আচরণ নিয়ে জার্মানিসহ সারাবিশ্বে ঘটনাটি নিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভের মাঝে বার্লিন এই আইনটি পাস করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে৷
কেন পাস করা হলো আইনটি?
পুরো জার্মানিতে ২০০৬ সাল থেকেই জেনারেল ইকুয়াল ট্রিটমেন্ট অ্যাক্ট (এজিজি) চালু রয়েছে৷ এই আইনেও সবার প্রতি সমতা বিধানের কথা বলা আছে৷ তবে নগররাজ্য বার্লিনের আইনটি এর চেয়েও একধাপ এগিয়ে৷
রাষ্ট্রীয় আইনটি মূলত ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ যেন কোনো বৈষম্যের শিকার না হন সেজন্য করা৷ সরকারি পর্যায়ে এর এখতিয়ার নেই৷ অর্থাৎ, সরকারি আইন যেখানে কার্যকর, সেখানে এই আইন চলবে না৷ গত বছর ফেডারেল অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন এজেন্সি প্রকাশিত একটি গাইডে এমনভাবেই এর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছিল৷
তবে এজেন্সি সেই গাইডে এ-ও লিখেছে, সংবিধানের মৌলিক আইনগুলো দ্বারা নাগরিকরা যেন রাষ্ট্র কর্তৃক বৈষম্যর শিকার না হন, সেই সুরক্ষা দেয়া আছে৷
তবে মধ্যবামপন্থি সামাজিক গণতন্ত্রী দল ও বামপন্থি সবুজ দল নিয়ে গড়া বার্লিনের জোট সরকার মনে করে, আগের আইনগুলোতে ফাঁক রয়েছে এবং নতুন পাস হওয়া আইনটি সেটি পূরণ করবে৷
বর্ণবাদ রোখার সাত উপায়
কিছু মানুষের কাজই বিভেদ সৃষ্টি করা, বিদ্বেষ ছড়ানো৷ বর্ণ, ধর্ম, জাতপাত, সংখ্যা, ভাষা বা সংস্কৃতির ভিত্তিতে বর্ণবাদ ছড়ানোর এসব প্রয়াস রুখে দেয়া খুব জরুরি৷ কীভাবে তা সম্ভব? দেখুন সাতটি উপায়...
ছবি: Imago Images/PhotoAlto/F. Cirou
বাকস্বাধীনতার ‘হামলা’ পরিহার
ব্যক্তি থেকে পরিবার, পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্র- এভাবে ছোট থেকে খুব বড় পরিসরে বিভিন্ন রূপে থাকে বর্ণবাদ৷ মুখের কথায়ও তা ব্যাপকভাবে ছড়াতে পারে৷ ক্যানাডার অ্যালবার্টা সিভিল লিবার্টিজ রিসার্চ সেন্টার বলছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে ‘ব্যক্তিগত মতামত’ হিসেবে যা কিছু বলা বা লেখার মাধ্যমেও তা ব্যাপক হারে ছড়ায়৷ তাই ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদির নামে পক্ষপাত বা ঘৃণা প্রকাশ পরিহার করুন৷
ছবি: AP
উদারতায় শ্রেষ্ঠত্ব, অহঙ্কারে নয়
উদারতায় শ্রেষ্ঠত্ব, অহঙ্কারে নয়৷ ধর্ম, জাতপাত, গায়ের রং, উচ্চতা, ভাষা, আঞ্চলিকতা ইত্যাদি দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করাও বর্ণবাদের নামান্তর৷ যে সমাজ বা রাষ্ট্রে এসব প্রবণতা যত কম, সেই সমাজ বা রাষ্ট্র তত বেশি বর্ণবাদমুক্ত৷
ছবি: Colourbox
অসহিষ্ণুতা ও উগ্রতা বর্জন
কারো মত বা কাজ পছন্দ না হলে তাকে শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাত করার প্রবণতা প্রায় সব সমাজেই দেখা যায়৷ এমন অসহিষ্ণু এবং বিদ্বেষপূর্ণ আচরণে বর্ণবাদ বিস্তৃতি পায়৷ গালাগাল, হুমকি, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা ইত্যাদিও এমন আচরণের অন্তর্ভুক্ত৷
ছবি: Imago/Indiapicture
ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়ান
যে কোনো স্থানে নির্দিষ্ট ব্যক্ত , শ্রেণি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার, অশ্লীলতা কিংবা কুৎসা ছড়ানোর অপপ্রয়াস না রুখলে অপশক্তির সক্রিয়তা বাড়ে৷ ফলে ঘৃণার সঙ্গে সঙ্গে নানা পর্যায়ে বর্ণবাদও বাড়ে৷ মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন প্রতিটি মানুষের উচিত এসব ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়ানো৷
ছবি: Imago/E. Biba
রুখে দিন সাইবার দুনিয়ার বর্ণবাদ
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা শাস্ত্র বিষয়ক তথ্যের উৎস সায়েন্সডাইরেক্ট ডটকম দশ বছরের এক গবেষণা শেষে বলেছে, ইন্টারনেটের প্রসারের ফলে সাইবার দুনিয়ায় বর্ণবাদী তৎপরতা ব্য্যাপকহারে বেড়েছে৷ ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীগতভাবে চালানো হচ্ছে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরণের বর্ণবাদী প্রচার৷ যে কোনো সমাজে বর্ণবাদ রুখতে সাইবার দুনিয়ায় মানবিকতার প্রসার জরুরি৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/J. Tack
প্রমান রাখুন, কর্তৃপক্ষকে জানান
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানহানিকর যে কোনো বক্তব্যের প্রমাণ রেখে দেয়া উচিত৷ অনেক সময় সম্মান এবং নিরাপত্তার স্বার্থে সাইবার অপরাধ দমন বিভাগকে প্রমাণসহ বিষয়টি জানানো জরুরি হয়ে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/MAXAPP/R. Brunel
সংঘাত নয় সমর্থন চান
সব দেশের সব মানুষের সুখে শান্তিতে থাকার অধিকার আছে৷ কারো বর্ণবাদী আচরণে শান্তি বিঘ্নিত হলেও সংঘাতে না যাওয়া ভালো৷ সংঘাতে অনেক সময় সমস্যা বাড়ে৷ তাছাড়া সংখ্যা বা শক্তিতে পিছিয়ে থাকাদেরই বেশি টার্গেট করে বর্ণবাদীরা৷ সেক্ষেত্রে প্রতিকার বা আত্মরক্ষার জন্য ‘প্রতিবেশীদের’ সমর্থন বা সহযোগিতা চান৷
ছবি: picture-alliance/E.Topcu
7 ছবি1 | 7
জাতিগত পরিচয়কে বড় করে দেখা
তবে আইনটি পাস করা সহজ ছিল না৷ কেন্দ্র থেকে বাধা এসেছিল৷ বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট জেহোফার পুলিশ ইউনিয়নের যুক্তিকে সমর্থন দিয়ে বলেছিলেন, এই আইন কর্তৃপক্ষের ওপর শুধু শুধু বাড়তি চাপ তৈরি করবে৷
‘‘আমাদের পুলিশের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং তাদেরকে একটা সাধারণ সন্দেহের মধ্যে ঠেলে দেয়া ঠিক হবে না,'' গেল সপ্তাহে দৈনিক স্পিগেলকে বলেন জেহোফার৷
তবে বার্লিন রাজ্যের ন্যায়মন্ত্রী ও সবুজ দলের নেতা ডির্ক ব্যেহরেন্ডট অন্য একটি সংবাদ মাধ্যমে আইনটির সমর্থনে বলেন, ‘‘এখানে পুলিশ বর্ণ বা লিঙ্গ পরিচয়ের ওপর ভর করে যে পক্ষপাতমূলক আচরণ করে, তার ওপর দৃষ্টিপাত করা হয়েছে৷’’
তার মতে, বেশিরভাগ পুলিশ এমন আচরণ করেন না৷ তাদের জন্য আসলে কিছুই বদলায়নি৷
গত মার্চে জার্মানিতে বৈষম্যবিরোধী আরো পদক্ষেপ নেবার জন্য কাউন্সিল অফ ইউরোপ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছিল৷