ইসরাইলের সমালোচনা করে জার্মানির রাজধানি বার্লিনে বিক্ষোভ করেছেন অনেক মানুষ৷ এ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন ইহুদিরাও৷
বিজ্ঞাপন
এ সময় তাঁরা ফিলিস্তিনের জনগনের প্রতি তাঁদের সমর্থন জানান এবং ইসরাইলের সমালোচনা করা মানেই ‘ইহুদি বিদ্বেষ' নয় বলে জানান৷
ফিলিস্তিনের সমর্থনে যখন বার্লিনে বিক্ষোভ চলছিল তখন একই সময়ে ইসরাইলের সমর্থনেও জার্মানির রাজধানীটিতে বিক্ষোভ করেছেন কয়েকশ মানুষ৷
শনিবার বার্ষিক আল-কুদস দিবস বা জেরুসালেম দিবসে অনুষ্ঠিত এ প্রতিবাদ সমাবেশে ইসরাইলের সমালোচনা করে জড়ো হন প্রায় দুই হাজার বিক্ষোভকারী৷ এ সময় তাঁদের হাতে ''ইসরাইল শিশু হত্যাকারী'', ''গাজাকে মুক্ত কর'' ইত্যাদি স্লোগানসম্বলিত ফেস্টুন দেখা গেছে৷ বিক্ষোভকারীরা ''ইসরাইলের সমালোচনা মানেই ইহুদি বিদ্বেষ নয়'' এ ধরনের স্লোগানও দিয়েছেন৷
যৌক্তিক সমালোচনা না ইহুদি বিদ্বেষ?
আল-কুদস দিবসের এ সমাবেশটি ইসরাইলের কোন কর্মকান্ডের যৌক্তিক সমালোচনা করলে সেটি ইহুদি বিদ্বেষ হয় কিনা সে আলোচনাও সামনে এনেছে৷ তবে জার্মান ইহুদি বিদ্বেষ কমিশনার ফেলিক্স ক্লাইন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''২০১৯ সালে এসে ‘ইহুদি বিদ্বেষী' স্লোগান শোনার বিষয়টি আসলে অপ্রত্যাশিত৷'' গত সপ্তাহে ইহুদিদেরকে জনসম্মুখে কিপ্পা না পরার পরামর্শ দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি৷
এদিকে বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে যৌক্তিক সমালোচনা কোনভাবেই ইহুদি বিদ্বেষ হতে পারে না৷ সমাবেশটিতে অংশ নেয়া বার্লিনের বাসিন্দা অ্যামেরিকান ইহুদি টম (ছদ্মনাম) বলেন, ''জার্মানিতে ইসরাইলের সমালোচনার বিষয়টি স্পর্শকাতর৷''
তিনি বলেন ''এই সমাবেশে অংশ নিয়ে আমি ফিলিস্তিনিদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে চাই, আমি দেখাতে চাই ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের বিষয়টি ইহুদি বিদ্বেষের সাথে সম্পৃক্ত নয়৷''
সমাবেশে অংশ নেয়া নারী লাইলা এইচ (ছদ্মনাম) বলেন, ‘‘ইসরাইলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টিকে বৈধতা দিতে ইহুদি বিদ্বেষ ধারণাটিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷''
এদিকে আল-কুদস দিবসে এই সমাবেশের প্রতিবাদে পাল্টা সমাবেশ করেছে নারিবাদী, এলজিবিটিসহ অন্যান্য পেশার প্রায় ছয়শ মানুষ৷ সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা এ সময় ইরানবিরোধী স্লোগান দেয়া সহ হিজবুল্লাহ ও হামাসের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷ পাশাপাশি, জার্মানিতে ইহুদি বিদ্বেষের ঘটনার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তাঁরা৷ মারিয়ানে নামে সমাবেশে এক অংশগ্রহনকারী জানান যে তিনি ‘ইহুদি বিদ্বেষের' বিষয়টির প্রতি নিন্দা জানাতে সমাবেশে এসেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ইহুদিরা একটি বিশেষ জাতি কেননা ঈশ্বর তাঁদের ইসরাইলের এ ভূমিটি দিয়েছেন৷ যদিও বিষয়টি সবসময় যৌক্তিক মনে হয় না, কিন্তু এটি বাইবেলে লেখা আছে৷''
ইসরায়েল: দেশটি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
ফিলিস্তিনের সঙ্গে এবং সেই কারণে বলতে গেলে প্রায় গোটা মুসলিম বিশ্বের সঙ্গেই ইসরায়েল নামের রাষ্ট্রটির বৈরিতা৷ তবে ইহুদি অধ্যুষিত এ দেশ সম্পর্কে এই তথ্যগুলো কি জানেন? জানলে সত্যিই অবাক হবেন৷
রাষ্ট্র ভাষা কয়টি?
জানেন ইসরায়েলের রাষ্ট্রভাষা ক’টি? দু’টি৷ আধুনিক হিব্রু ভাষা এবং আরবি৷ হিব্রু ভাষার কথা তো সবাই শুনেছেন, কিন্তু ‘আধুনিক হিব্রু’ বলতে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে তা হয়ত অনেকেই বুঝতে পারবেন না৷ এই ভাষাটি গত ১৯ শতকের শেষভাগ পর্যন্তও বিকশিত হয়েছে৷ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আধুনিক হিব্রুর শেকড় প্রাচীন হিব্রু হলেও এখন এ ভাষায় ইংরেজি, স্লাভিচ, আরবি এবং জার্মানসহ অনেকগুলো বিদেশি ভাষার প্রভাব রয়েছে৷
ছবি: Fotolia/Ivan Montero
ইসরায়েলের আয়তন কত?
ছোট্ট দেশ৷ কিন্তু কত ছোট? ইসরায়েলের আয়তনই বা কত? কাজির গরু নাকি গোয়ালে থাকে না, গাছে থাকে৷ ইসরায়েলের ক্ষেত্রে কথাটা একটু অন্যভাবে বলা যায়৷ ইসরায়েলের ভূমি চুক্তিতে থাকে না, বাস্তবে থাকে৷ ১৯৪৯ সালে ইসরায়েল, লেবানন, জর্ডান ও সিরিয়ার মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল সেই চু্ক্তি অনুযায়ী দেশটির আয়তন হওয়ার কথা ২০ হাজার ৭৭০ বর্গ কিলোমিটার৷ কিন্তু ইসরায়েলের আয়তন এখন ২৭ হাজার ৭৯৯ বর্গ কিলোমিটার৷
ইসরায়েলের ‘সবাই’ সেনাসদস্য
ইসরায়েল একমাত্র দেশ যেখানে প্রাপ্ত বয়স্ক সব নাগরিকের জন্যই সেনা প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক৷ সুতরাং দেশটিতে যতজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক সেনাসদস্যও এক অর্থে ততজন৷ সেনাপ্রশিক্ষণও স্বল্পমেয়াদি হয় না৷ সব প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেকে ৩ বছরের এবং মেয়েকে অন্তত ২ বছরের প্রশিক্ষণ নিতে হয়৷
ছবি: dapd
ইসরায়েলিও ফিলিস্তিনের সমর্থক?
ইহুদিদের একটি ধর্মীয় সংগঠন জিওনিজম মতবাদ এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে৷ সংগঠনটির নাম, ‘নেতুরেই কার্টা’ বা ‘নগর রক্ষক’৷ ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই সংগঠনটি ‘ফিলিস্তিনের সমর্থক’ হিসেবে পরিচিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আইনস্টাইন প্রেসিডেন্ট হননি
নোবেল বিজয়ী জার্মান পদার্থ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিনিধন বন্ধ করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন৷ ইসরায়েল তাঁর কথা শুধু কৃতজ্ঞচিত্তে মনেই রাখেনি, তাঁকে সম্মানও জানাতে চেয়েছিল প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দিয়ে৷ ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন আইনস্টাইন৷
ছবি: Imago/United Archives International
ঈশ্বরের কাছে চিঠি
ইসরায়েলের মানুষ সত্যি সত্যিই ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রচুর চিঠি লিখে৷ প্রতি বছর জেরুসালেমের ডাক বিভাগ এমন অন্তত হাজার খানেক চিঠি পায় যেখানে প্রাপকের জায়গায় লেখা থাকে ‘ঈশ্বর’!
ছবি: Fotolia/V. Kudryashov
জেরুসালেম যা যা সয়েছে
ইতিহাস বলছে, প্যালেস্টাইনের রাজধানী জেরুসালেমে এ পর্যন্ত ২৩ বার ভয়াবহ আগুন লেগেছে আর বহিঃশক্তির আক্রমণের শিকার হয়েছে ৫২ বার৷ জেরুসলেম দখল এবং পুনরুদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে ৪৪ বার৷
ছবি: DW/S. Legesse
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ নোট
ইসরায়েলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে বিশেষ মুদ্রা৷ ‘ব্রেইল’-এর মতো বর্ণের সহায়তায় কাগুজে নোটগুলোতে লেখা থাকে বলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কেনাকাটা বা মুদ্রা বিনিময়ে কোনো অসুবিধা হয় না৷ সারা বিশ্বে ইসরায়েল ছাড়া ক্যানাডা, মেক্সিকো, ভারত আর রাশিয়াতেও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য এই বিষেষ ব্যবস্থা রয়েছে৷