জার্মানির রাজধানী বার্লিনের এক সুপারমার্কেটে সোমবার সন্ধ্যায় বাজার করতে গিয়েছিলেন ২৮ বছর বয়সি এক নারী৷ সেই সময় আরেক নারী জোর করে তাঁর বোরকা খুলে ফেলেন এবং তাঁর উদ্দেশ্যে বর্ণবাদী মন্তব্য করেন৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার এসব তথ্য জানায় পুলিশ৷ হামলাকারী নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এখন তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে৷
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, যে নারীর উপর হামলা হয়েছে, তিনি তুরস্কের নাগরিক৷ জোর করে বোরকা খোলার সময় তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছেন৷ আর যে নারী হামলা চালিয়েছেন, তিনি আজারবাইজান থেকে এসেছেন৷ অবশ্য প্রাথমিকভাবে তাঁর জাতীয়তা জানা যায়নি৷
উল্লেখ্য, জার্মানিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর পুরো মুখ ঢাকা বোরকা পরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷ এছাড়া বাভারিয়াসহ কয়েকটি রাজ্যে নির্দিষ্ট কিছু প্রকাশ্য স্থানে বোরকা পরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷
ইউরোপের বেশ কিছু দেশে বোরকা ও নেকাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ কিছু কিছু দেশে আবার পুরো মুখ ঢাকা বোরকা নিষিদ্ধ করা নিয়ে চলছে আলাপ-আলোচনা৷ প্রশ্ন উঠেছে, ধর্মীয় স্বাধীনতা না থাকায় এসব অঞ্চলে কি জঙ্গি তৎপরতা বাড়ছে?
ছবি: CLAUDE PARIS/AP/dapd
ফ্রান্স
ফ্রান্স ইউরোপের প্রথম দেশ, যেখানে বোরকা আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়৷ ফ্রান্সে ৫০ লাখ মুসলমানের বাস৷ ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল এই আইন কার্যকর হয়৷ বোরকা বা নেকাব পড়লে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে আইনে৷
ছবি: Getty Images
বেলজিয়াম
২০১১ সালের জুলাইয়ে বেলজিয়ামেও নেকাব নিষিদ্ধ হয়৷ অর্থাৎ কোনো নারী তার পুরো মুখ কাপড়ে ঢেকে রাখতে পারবে না৷
ছবি: AP
নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসে ২০১৫ সালে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়৷ বিশেষ করে জনসমক্ষে, অর্থাৎ স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদির মতো জায়গায বোরকা ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷
ছবি: AP
স্পেন
পুরো স্পেনে নয়, বার্সেলোনা শহর কর্তৃপক্ষ সেখানে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্রিটেন
ব্রিটেনে প্রচুর মুসলিমের বাস, তাই সেখানে কোনো ইসলামি পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা নেই৷ তবে স্কুলগুলোতে নির্দিষ্ট পোশাক পরতে হয়৷ ২০০৭ সালে বেশ কয়েকটি মামলার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ ঠিক করে, স্কুলে কেউ বোরকা বা নেকাব পরতে পারবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
সুইজারল্যান্ড
২০১৩ সালে সুইজারল্যান্ডের ইটালীয় ভাষাভাষীদের এলাকা টিসিনোতে বোরকা নিষিদ্ধের ওপর ভোট হয়৷ নিষিদ্ধ করার পক্ষে পড়ে ৬৫ শতাংশ ভোট৷ এরপর ২৬টি শহরে বোরকা নিষিদ্ধ হয়৷ চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে লুগানো, লোকারনো, মাগাদিনোসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বোরকা নিষিদ্ধ হয়৷ কেউ জনসমক্ষে বোরকা পড়লে ৯ হাজার ২০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে তাঁর৷
ছবি: imago/Geisser
ইটালি
ইটালির বেশ কয়েকটি শহরে নেকাব নিষিদ্ধ৷ উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নোভারা কর্তৃপক্ষ সেখানে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷ ৭০-এর দশকেই মুখ ঢেকে রাখা সব ধরনের ইসলামিক পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইটালি৷
ছবি: picture alliance/dpa/Rolf Haid
অস্ট্রিয়া
দেশটির ক্ষমতাসীন জোট সরকার প্রকাশ্য স্থানে পুরো মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে একমত হয়েছে৷ স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতে নিকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে একমত হয়েছে সরকারের শরিক দলগুলোও৷ এছাড়া যাঁরা সরকারি চাকরি করেন, তাঁদের মাথায় স্কার্ফ, হিজাব কিংবা অন্যান্য ধর্মীয় প্রতীক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বিবেচনা করছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
জার্মানি
জার্মানির রক্ষণশীল রাজনীতিকদের মধ্যে বোরকা নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে৷ সিডিইউ দলের একাধিক রাজনীতিক স্কুল, সরকারি অফিস, আদালতকক্ষ ও গাড়ি চালানোর সময় বোরকা ও গোটা মুখ ঢাকা নিকাব পরা নিষিদ্ধ করতে চান৷ সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় তিন-চতুর্থাংশ জার্মানও প্রকাশ্যে বোরকাধারী মহিলাদের দেখতে নারাজ৷ এমনকি সম্প্রতি চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও পুরো মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার পক্ষ তাঁর সায় দিয়েছেন৷
এদিকে, ২০১৭ সালের প্রথম ছয় মাসে জার্মানিতে মুসলিমদের উপর ১৮টি সহিংস আক্রমণের ঘটনা ঘটে বলে সংসদে জানানো হয়েছিল৷
এছাড়া একই বছরের প্রথম ছয় মাসে ৩৯২টি ইসলামবিদ্বেষ প্রণোদিত ঘটনা ঘটেছিল বলেও জানানো হয়৷ ইন্টারনেটে মুসলিমদের অথবা মুসলিম শরণার্থীদের বিরুদ্ধে প্ররোচনা – তথাকথিত ‘হেট স্পিচ' – হুমকি বা শাসানিমূলক বার্তা, রাজপথে হিজাব পরিহিত মহিলা অথবা মুসলিম পুরুষদের উপর আক্রমণ, এছাড়া মুসলিমদের বাড়ি অথবা সম্পত্তির ক্ষতিসাধন কিংবা দেয়ালে নাৎসি স্লোগান লেখা ইত্যাদি ইসলামবিদ্বেষী অপরাধমূলক কার্যকলাপের মধ্যে পড়ে৷