শহুরে জীবনযাত্রায় ‘স্পেস' বা জায়গার অভাব পদে পদে টের পাওয়া যায়৷ বার্লিনের এক রেস্তোরাঁ এক অভিনব উপায়ে লেটুস চাষ শুরু করেছে৷ গ্রাহকদের সামনেই শোভা পাচ্ছে লেটুসের ক্ষেত৷
বিজ্ঞাপন
‘গুড ব্যাংক' রেস্তোরাঁর লেটুস বেশ তাজা ও স্বাস্থ্যকর৷ বার্লিনের এই রেস্তোরাঁতে গেলে মনে হবে কল্পবিজ্ঞান ছায়াছবির সেট৷ কারণ এই লেটুস পাতা চাষ হচ্ছে রেস্তোরাঁর ভিতরের দেওয়ালে৷ রেস্তোরাঁর প্রতিনিধি এমা পাউলিন বলেন, ‘‘অনেক সিটি-ফার্মিং, ভার্টিকাল ফার্মিং প্রকল্প রয়েছে৷ কিন্তু সাধারণ মানুষ হিসেবে তার নাগাল পাওয়া কার্যত অসম্ভব৷ ফলে এই প্রদ্ধতি দেখার অভিজ্ঞতা অনেকেরই নেই৷ গুড ব্যাংকে আমরা সেটাই সম্ভব করতে চেয়েছি৷ এখানে যে ভার্টিকাল-ফার্মিং মডিউল রয়েছে, তা আমাদের শাকসবজির চাহিদার একটা বড় অংশ পূরণ করে৷ একেবারে গ্রাহকদের চোখের সামনে৷''
রেস্তোরাঁর মধ্যে কীভাবে হচ্ছে চাষবাস?
02:23
এখনো পর্যন্ত তিন ধরনের সবজি চাষ চলছে৷ বার্লিনের ‘ইনফার্ম' নামের স্টার্টআপ কোম্পানি তা যোগান দিয়েছে৷ তথাকথিত ‘হাইড্রোপোনিক সিস্টেম' গাছে পানি, অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগান দেয়৷ বিশেষ এক এলইডি আলো সূর্যের আলোর বিকল্প হিসেবে কাজ করে৷ তাই লেটুস পাতার অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে, সাধারণ খেতে যেমনটা সম্ভব হয় না৷
লেটুস তোলা হলে নতুন গাছ বসানো হয়৷ শহরের অব্যবহৃত জায়গা ‘ভার্টিকাল ফার্মিং'-এর ফলে কাজে লাগছে৷ খাবারের বাকি উপকরণ অবশ্য আগের মতোই কিনতে হচ্ছে৷ মাসচারেক আগে ‘গুড ব্যাংক' চালু হয়েছে৷ ক্রেতাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া শোনা যাচ্ছে৷ কেউ বলছেন, ‘‘ভাবা যায় না, যে এখানেই চাষ হচ্ছে৷ হয়তো লোক দেখানোই আসল কথা৷'' অনেকের আবার এ বিষয়ে কোনো ধারণা নেই৷ কেউ মনে করেন, ‘‘ব্রান্ডেনবুর্গ থেকে লেটুস এসে সেটা জেনেও একইরকম ভালো লাগতো৷ একইরকম তাজা হতো৷ দেয়ালে গজানোর দরকরার ছিল না৷''
এই পদ্ধতি কতটা সফল হয়, ভবিষ্যতই তা বিচার করতে পারবে৷
বিরগিট ভলস্কে/এসবি
কমলা বেগমের জৈব খামার
রাসায়নিক সার ও কীটনাশকে বাড়ে ফসলের উৎপাদন৷ কিন্তু এতে জমির যেমন দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়, বাড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিও৷ ফলে বিশ্বজুড়েই গড়ে উঠছে জৈবকৃষি আন্দোলন৷ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত ফসলের চাহিদা বাড়ছে বাংলাদেশেও৷
ছবি: DW/M. Rahman
সার উৎপাদনে কেঁচো!
দেশজুড়ে যখন রাসায়নিক সার ও জিনগতভাবে পরিবর্তন করা বীজ ছড়িয়ে পড়ছে, তখন স্রোতের উলটো দিকে যাচ্ছেন মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের কিষানি কমলা বেগম৷ নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন জৈব খামার৷ কমলা বেগম কেঁচোকে ব্যবহার করেন জৈবসার উৎপাদনে৷ ইংরেজীতে এই পদ্ধতিতে উৎপন্ন সারকে বলা হয় ‘ভার্মি কম্পোস্ট’৷ এই পদ্ধতিতে গাছের পাতা, খড়, গোবর, লতাপাতা, পচনশীল আবর্জনা খেয়ে কেঁচো মল ত্যাগ করে৷ সেই মল থেকেই তৈরি হয় কেঁচো সার৷
ছবি: DW/M. Rahman
ফলমূল, সবজি থেকে সার
বাড়ি বাড়ি ঘুরে সবজি, ফলমূলের উচ্ছিষ্ট জোগাড় করেন কমলা৷ সব একসাথে মিশিয়ে জমানো হয় একটি পাত্রে৷ একসময় সেই সবজি-ফলমূল পঁচে তৈরি হয় জৈব কম্পোস্ট৷ এসব উপাদানে প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান থাকে বলে তা জমির জন্য ক্ষতিকর হয় না৷
ছবি: DW/M. Rahman
খোপ সার
স্থানীয়ভাবে ‘খোপ সার’ বলে পরিচিত হলেও দেশের অন্যান্য জায়গায় সাধারণভাবে এই সারকে গোবর সার হিসেবেই চেনেন কৃষকরা৷ গরুর গোবর, হাঁস-মুরগি ও ছাগলের বিষ্ঠা দিয়ে তৈরি হয় এই সার৷ জমির উর্বরতা বাড়াতে বিশেষ খ্যাতি আছে এই সারের৷
ছবি: DW/M. Rahman
জৈব বীজ
যেসব বীজ প্রাকৃতিক উপায়ে গাছ থেকেই সংগ্রহ করা হয়, সেগুলোকে বলা হয় জৈব বীজ৷ তবে এখন বিভিন্ন উপায়ে জিনগতভাবে পরিবর্তন করে বীজ ছাড়া হয় বাজারে৷ এসব বীজ থেকে জন্মানো গাছ আগাছাপ্রতিরোধী এবং বিভিন্ন রোগ থেকে ফসলকে দূরে রাখে৷ কিন্তু এই বীজে উৎপাদিত ফসল স্বাস্থ্য এবং জমির জন্য ক্ষতিকর বলে উঠে এসেছে বিভিন্ন গবেষণায়৷ কমলা বেগম সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে বীজ সংগ্রহ করে ফসল ফলান৷
ছবি: DW/M. Rahman
জৈব ক্ষেত
শুধু সার ও বীজ থাকলেই হবে না৷ এর সঠিক প্রয়োগও জানতে হবে৷ কমলা বেগম জৈব সারের প্রয়োগ যাতে ঠিকমতো হয়, তা-ও নিশ্চিত করেন৷ শুধু জৈব সার ব্যবহার করে প্রায় দুই একর জমিতে গড়ে তুলেছেন আখ খেত৷ এছাড়াও ঢেঁড়শ, লাউসহ নানা ধরনের সবজির চাষ করেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Rahman
কীটনাশকেও বিষ নেই
রাসায়ানিক কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া গেলেও, তাতে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও থেকেই যায়৷ ফলে কমলা বেগমের মতো অনেকেই ঝুঁকছেন জৈব কীটনাশকের দিকে৷ বিভিন্ন রকম গাছের পাতা, ছাল এবং বুনো ফল দিয়ে তৈরি হয় এই কীটনাশক৷ এই কীটনাশক ব্যবহার করে বেশ ফলও পাচ্ছেন সিঙ্গাইরের কৃষকরা৷
ছবি: DW/M. Rahman
ফেরোমোন ফাঁদ
ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে কৃষক এখন নিজেই তৈরি করতে পারছেন ফেরোমোন ফাঁদ৷ এই পদ্ধতিতে একটি কৌটায় ফেরোমোন নামের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়৷ এর গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পোকামাকড় এসে পড়ে কৌটার মধ্যে৷ জৈব পদ্ধতি না হলেও এতে ক্ষতি হয় একেবারেই কম৷ পুরো ক্ষেতে রাসায়নিক ছড়িয়ে না দিয়ে মাঝেমধ্যে শুধু ফেরোমোনের কৌটা পালটে দিলেই সম্ভব হয় পোকা দমন৷ এই পদ্ধতি এখন বাংলাদেশের কৃষকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷