২০১১ সালের তুলনায় বার্লিনে সালাফিস্ট সন্ত্রাসীদের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ হয়েছে৷ এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে জার্মানির গোয়েন্দা সংস্থা বিএফভি৷ তাদের বরাত দিয়ে রিপোর্ট করেছে বার্লিনভিত্তিক সংবাদপত্র ‘ডেয়ার টাগেসশ্পিগেল’৷
বিজ্ঞাপন
বিএফভি বলছে, বর্তমানে বার্লিনে প্রায় সাড়ে নয়শ' সালাফিস্ট সন্ত্রাসী রয়েছে৷ এই ব্যক্তিদের বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, কারণ, এরা যে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে৷ ২০১১ সালে এমন সালাফিস্ট ছিল ৪২০ জন৷ সাড়ে নয়শ' সালাফিস্ট সন্ত্রাসীর মধ্যে অর্ধেকই জার্মান নাগরিক৷ এদের মধ্যে মাত্র এক তৃতীয়াংশের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে৷ আর বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে রাশিয়ার নাগরিক৷ এদের মধ্যে ৯০ শতাংশের বয়স গড়ে ৩৪ বছর৷ নারীদের গড় বয়স ৩৩ বছর৷
জার্মানিতে আলোচিত যত ‘জঙ্গিবিরোধী’ মামলা
এ পর্যন্ত বেশ কিছু উগ্র ইসলামপন্থি বা জঙ্গিদের হামলা এবং হামলার চেষ্টা হয়েছে জার্মানিতে৷ কয়েকদিন আগে সর্বোচ্চ শাস্তিও হয়েছে এক ব্যক্তির৷ ছবিঘরে থাকছে জার্মানিতে আলোচিত কিছু ‘জঙ্গিবিরোধী’ মামলার কথা৷
ছবি: AP
বন শহরে বোমা বিস্ফোরণের ব্যর্থ চেষ্টা
২০১২ সালে বন শহরের কেন্দ্রীয় রেল স্টেশনে তোলা ছবি এটি৷ ছবির ওই নীল ব্যাগে বোমা ছিল৷ এক ডানপন্থি রাজনীতিবিদকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ বোমা রাখা হয়েছিল বলে পুলিশের সন্দেহ৷ হত্যাচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সম্প্রতি এক ব্যাক্তির আজীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে ড্যুসেলডর্ফের আদালত৷ বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড হয়েছে আরো তিনজনের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরের বাস স্টপে হামলা
জার্মানিতে প্রথম ‘উগ্র ইসলামপন্থির’ হামলাটি হয়েছিল ২০১১ সালের মার্চে৷ সেবার ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরের বাস স্টপে দুই মার্কিনিকে গুলি করে হত্যা করেছিল আরিদ উকা নামের এক ব্যক্তি৷ নিহত দুই মার্কিন নাগরিকের কয়েক দিনের মধ্যেই আফগানিস্তানে যাওয়ার কথা৷ জানা যায়, আফগানিস্তানে সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে গুলি করে দু’জন নিরপরাধ মার্কিনিকে হত্যা করে আরিদ৷ কসভোতে জন্ম নেওয়া আরিদেরও আজীবন কারাদণ্ড হয়েছে৷
ছবি: AP
সাওয়ারল্যান্ড সেল
‘সাওয়ারল্যান্ড সেল’ হচ্ছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে গড়ে ওঠা ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক জিহাদ ইউনিয়ন বা আইপিইউ-এর জার্মান শাখা৷ ১০ বছর আগে এই সংগঠনের হয়েই যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক স্থাপনাগুলোতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল চার জার্মান এবং এক তুর্কি বংশোদ্ভূত তরুণ৷ ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে পাঁচজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়৷ ২০১০ সালে প্রত্যেকের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড হয়েছে৷
ছবি: AP
নকল পুলিশ
২০১৪ সালে ভুপার্টাল শহরে কমলা রঙের সিকিউরিটি ভেস্ট পরা একদল লোক রাস্তায় নেমে আসে৷ তাদের পোশাকে লেখা ছিল ‘শরিয়া পুলিশ’৷ লোকগুলো বিভিন্ন মানুষকে বার এবং ক্লাব বর্জন করে ইসলামি আইন মেনে চলার পরামর্শ দিতে থাকে৷ ওই লোকগুলোর নেতা হিসেবে কাজ করেছিলেন স্ভেন লাউ নামের এক সালাফিস্ট মুসলমান৷ পরে আইএস-এর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ তার বিরুদ্ধে মামলা এখন বিচারাধীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bildfunk/M. Becker
বড় বড় কথা বলা সেই আইএস জঙ্গি
২০১৩ সালের অক্টোবরে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস-এ যোগ দিতে ডিন্সলাকেনের সালাফিস্ট মুসলমান নিলস ডি. সিরিয়ায় যায়৷ এক বছর পর আবার ফিরে আসে জার্মানিতে৷ ফিরে এসে সিরিয়ায় সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে জানায় সগর্বে৷ তারপর গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ চার বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তার৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল
২০১৬ সালের জুলাই মাসে মামলার চূড়ান্ত শুনানির দিন হ্যারি এস. আদালতে বলে ‘‘সিরিয়ায় যাওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল৷’’ ব্রেমেনে খ্রিষ্টান থেকে মুসলমান হওয়া তরুণটি তার এক বছর আগেই সিরিয়ায় গিয়ে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর সঙ্গে তিন মাস কাটিয়ে এসেছে৷ সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দেয়ার অপরাধে তিন বছরের জেল হয়েছে তার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Marks
6 ছবি1 | 6
বার্লিনে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম জোরদার
২০১৬ সালে বার্লিনে ক্রিসমাস মার্কেটে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে জার্মান কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম জোরদার করেছে৷ এরমধ্যে অন্যতম হলো মৌলবাদের বিস্তার রোধ করা৷ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, গত বছর বার্লিনে মসজিদ অ্যাসোসিয়েশন ‘ফুসিলেট ৩৩' বন্ধ করে দেয়া৷ এই সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এদের সঙ্গে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস-এর যোগাযোগ রয়েছে৷ কর্তৃপক্ষের ধারণা, এই সংগঠনের দ্বারা পরিচালিত মসজিদগুলো মৌলবাদী ইসলামপন্থিদের বৈঠকের অন্যতম স্থান ছিল৷ ক্রিসমাস মার্কেটে হামলার সাথে জড়িত প্রধান সন্দেহভাজন আনিস আমরি এই সংগঠন পরিচালিত মসজিদে যাতায়াত করতো৷
জার্মান কর্তৃপক্ষ বলছে, এই সদস্যদের মধ্যে ৭০৫ জনকে জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে৷ বিএফভি বলছে, সালাফিস্ট আন্দোলনের সদস্য সংগ্রহের চেষ্টা এখন জনপথ ও মসজিদ ছেড়ে ইন্টারনেটের দিকে ঝুঁকেছে৷ সালাফিস্ট মতাদর্শ থেকে ইসলামপন্থি সন্ত্রাস জন্ম নেয় বলে কর্তৃপক্ষের ধারণা৷
বিএফভি জানিয়েছে যে, ইন্টারনেটে ছোট ছোট গোপনীয় গোষ্ঠীর মাধ্যমে নবাগতদের মৌলবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চলছে৷
নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে সালাফিস্ট আন্দোলন তরুণ মুসলিমদের জন্য ইসলামপন্থি সন্ত্রাসবাদে উত্তরণের পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করে৷ উত্তর ককেশাস থেকে আগত ইসলামপন্থিরা প্রধানত ব্রান্ডেনবুর্গ ও বার্লিনের মতো পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতেই আস্তানা গেড়েছে বলে বিএফভি জানিয়েছে৷