হামলাকারীর আচরণ বুঝতে ভুল করায় এবং আমলাতান্ত্রিক ব্যর্থতার কারণে ২০১৬ সালে বার্লিনে ক্রিসমাস মার্কেটে হামলা ঠেকানো যায়নি বলে মনে করছে একটি সংসদীয় কমিটি৷
বিজ্ঞাপন
বার্লিন রাজ্য সংসদের একটি বিশেষ কমিটি ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ক্রিসমাস মার্কেটে হামলার বিষয়ে সোমবার একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷
জার্মানির রাজধানীর ব্রাইটসাইটপ্লাৎস মার্কেটে সেই হামলা এখন অবধি জার্মানিতে উগ্র ইসলামপন্থিদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে বড় ঘটনা৷ আনিস আমরি নামের হামলাকারী একটি ট্রাক নিয়ে ক্রিসমাস মার্কেটে ঢুকে পড়লে ১২ ব্যক্তি নিহত হন৷ পালানোর চেষ্টাকালে ইটালি পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সেই হামলাকারী৷
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাস টুরে ইমামরা
ফরাসি ভাষাভাষী বিভিন্ন দেশের কয়েকজন ইমাম সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাঁদের অবস্থান জানাতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সফর করছেন৷ রবিবার তাঁরা বার্লিনে ছিলেন৷
ছবি: DW/J. Chase
বাসে করে সফরে
ফরাসি ভাষাভাষী বিভিন্ন দেশের কয়েকজন ইমাম সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাঁদের অবস্থান জানাতে বাসে করে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হওয়া শহরগুলোতে যাচ্ছেন৷ সপ্তাহব্যাপী এই সফরের দ্বিতীয় গন্তব্যস্থল হিসেবে রবিবার বার্লিনে এসেছিলেন তাঁরা৷ জার্মানি ছাড়াও ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে যাবেন তাঁরা৷
ছবি: DW/J. Chase
নিহতদের প্রতি সম্মাননা
গত ডিসেম্বরে বার্লিনের ব্রাইটশিডপ্লাটৎস চত্বরে বড়দিনের বাজারে ইসলামি জঙ্গি আনিস আমরি একটি বড় ট্রাক নিয়ে হামলা চালালে ১২ জন নিহত হন৷ বার্লিনে আগত বিদেশি ইমামরা রবিবার সেই স্থল পরিদর্শনে যান৷ সেখানে তাঁরা নিহতদের স্মরণে স্থাপিত স্মারকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান৷ বার্লিনের মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েকজন সদস্য সেই সময় উপস্থিত ছিলেন৷
ছবি: DW/J. Chase
মুসলিমরা শান্তির পক্ষে
বার্লিন রাজ্যের ‘সিটিজেনস পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিজম’ বিষয়ক সেক্রেটারি সওজান শেবলি ইমামদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত এই মুসলিম নারীও রবিবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷ তিনি বলেন, মুসলিমরা যে শান্তি ও সহাবস্থানের পক্ষে, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই বক্তব্যের পক্ষে শক্তিশালী বার্তা দেয়া যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যৌথ উদ্যোগ
ইমামদের নিয়ে এই বাস সফরের উদ্যোক্তা হলেন ফ্রান্সের প্যারিসের উপকণ্ঠে অবস্থিত দোঁসি-র ইমাম হাসেন শালগুমি (ছবি) ও ইহুদি ফরাসি লেখক মারেক হাল্টার৷
ছবি: imago/PanoramiC
মুসলমানদের সমালোচনা
ইসলামি জঙ্গিদের একের পর এক হামলার পরও ইউরোপের মুসলমান সম্প্রদায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বড় আকারের প্রতিবাদ না করায় মুসলিমরা সমালোচিত হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
উপস্থিতি সন্তোষজনক ছিল না
ছবিটি বার্লিনে ইমামদের অনুষ্ঠানের৷ সেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের যতজন উপস্থিত ছিলেন তার চেয়ে বেশি ছিলেন গণমাধ্যমের কর্মীরা৷ তবে এই অনুষ্ঠানের প্রচার খুব একটা না হওয়ায় উপস্থিতি কম ছিল বলে দাবি করেছেন কয়েকজন৷
ছবি: DW/J. Chase
হুমকির মুখে ইমাম ও তাঁর পরিবার
ফ্রান্সের ইমামদের সংগঠন ‘মুসলিমস ইমাম’-এর সহ সভাপতি হোচিনে দ্রুইচে (মাঝে) সাংবাদিকদের বলেন, উদারপন্থি দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়েছিল৷ তিনি বলেন, বার্লিনের অনুষ্ঠানে যে ইমামরা উপস্থিত হয়েছেন তাঁদের অনেককে হয়ত চাকরি হারাতে হতে পারে৷ ‘‘অধিকাংশ মুসলমানই আমাদের বক্তব্য মানে না’’, ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷
ছবি: DW/J. Chase
7 ছবি1 | 7
টিউনিশিয়ার নাগরিক ২৪ বছর বছর বয়সি আমরি ছোটখাট মাদক কারবারি ছিল এবং জার্মানিতে তার আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হয়েছিল৷ বার্লিনে হামলার আগে থেকেই পুলিশ তার কথা জানতো এবং নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ তার গতিবিধির দিকে নজর রেখেছিল৷
সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনে ১,২০০-র বেশি নথি এবং ৯২ স্বাক্ষীর বক্তব্য ব্যবহার করা হয়েছে৷ আমরির এই হামলার আগে নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ডে মারাত্মক ভুল ছিল বলে তদন্ত কমিটি মনে করছে, লিখেছে বার্লিনের টাগেসস্পিগেল পত্রিকা৷
‘‘এসব ভুল আর ব্যর্থতার কারণে হামলাটি সম্ভব হয়েছে এবং প্রকারান্তরে সহজতর হয়েছে,'' জানাচ্ছে তদন্ত প্রতিবেদন৷
কর্তৃপক্ষের ভুলগুলোর মধ্যে কর্মীস্বল্পতা, শহরের বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে অপর্যাপ্ত তথ্য বিনিময় এবং আমরির আচরণ সম্পর্কে ভুল মূল্যায়ন রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে তদন্ত কমিটি৷
নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ মনে করেছিল মাদক বিক্রি করা একজন ব্যক্তি একইসঙ্গে নিজেকে সালাফিস্ট গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগ দিয়ে মৌলবাদী করে তুলতে পারে না৷
প্রতিবেদনে আমলাতান্ত্রিক ব্যর্থতার ওপরও জোর দেয়া হয়েছে৷ অনুসন্ধানকারীরা জানতে পেরেছেন যে, তথ্য বিনিময়েরক্ষেত্রে বিচার দপ্তর এবং নিরাপত্তা দপ্তর ঠিকভাবে সমন্বয় করেনি৷