করোনার সংক্রমণ কমাতে আরো কড়া নিয়ম চালু হলো বার্লিনে। ১৫ কিলোমিটারের বেশি যাতায়াত করা যাবে না।
বিজ্ঞাপন
করোনা মহামারি রুখতে নতুন পদক্ষেপ বার্লিন প্রশাসনের। গোটা দেশেই একই নিয়ম জারি হতে পারে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ১৫ কিলোমিটারের বেশি যাতায়াত করতে পারবেন না নাগরিকরা। টানা এক সপ্তাহ দৈনিক করোনার সংখ্যা ২০০-র নীচে না নামা পর্যন্ত এই নিয়ম বহাল থাকবে। যদিও বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, এর ফলে কোনো লাভ হবে না।
বার্লিনে সাধারণত দুইটি লাইনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এক, শহরকে ঘিরে থাকা হাইওয়ে। এবং দুই, রিজিওনাল ট্রানজিট লাইন। এই দুইয়ের বাইরে এবার একটি করোনা লাইন তৈরি করা হলো। বার্লিন প্রশাসন জানিয়েছে, শহরের বাইরে ১৫ কিলোমিটারের বেশি যাতায়াত করা যাবে না। পরবর্তী ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত সকলকে এ নিয়ম মেনে চলতে হবে।
জার্মানিতে লকডাউনে নতুন যেসব বিধিনিষেধ
চলমান লকডাউনের মেয়াদ তিন সপ্তাহ বাড়িয়েছে জার্মানি। শুধু মেয়াদ বৃদ্ধি নয় নতুন করে আরোপ করা হয়েছে কিছু বিধিনিষেধ। কী সেগুলো, দেখে নিন ছবিঘরে।
ছবি: Michel Kappeler/REUTERS
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা
নতুন নিয়ম অনুযায়ী করোনা ভাইরাসের হটস্পটের বাসিন্দারা তাদের শহর থেকে যৌক্তিক কারণ ছাড়া ১৫ কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণ করতে পারবেন না। এর মধ্যে ডে ট্রিপ বা একদিনে কোথাও গিয়ে সেদিনই আবার ফেরার মতো দূরত্বেও যেতে পারবেন না। এক সপ্তাহের হিসাবে গড়ে প্রতি এক লাখ বাসিন্দার দুইশ’ জন করোনা আক্রান্ত, এমন জেলাকে হটস্পট হিসেবে ধরা হয়।
ছবি: Andreas Gora/imago images
সাক্ষাতে মানা
এতদিন জনসমাগমের ক্ষেত্রে দুই পরিবারের সর্বোচ্চ পাঁচজনের একসাথ হওয়ার অনুমতি ছিল৷ সেটি এখন কমিয়ে এক পরিবারের মাত্র একজনে নামিয়ে আনা হয়েছে৷ অর্থাৎ একই বাড়ির বাসিন্দা নন এমন ক্ষেত্রে মাত্র একজনের সঙ্গে দেখা বা মিলিত হওয়া যাবে। তবে সাথে নিজের পরিবারের বা বাসার একজন থাকতে পারবে৷
ছবি: Thomas Lohnes/Getty Images
দুইবার পরীক্ষা
হাই-রিস্ক বা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে কোনো ব্যক্তি জার্মানিতে এলে তাকে দুইবার করোনার পরীক্ষা করাতে হবে। প্রথমটির ফলাফল নেগেটিভ হলেও অন্তত পাঁচদিন কোয়ারান্টিন বাধ্যতামূলক।
ছবি: Antonio Calanni/AP Photo/picture alliance
অভিভাবকদের ছুটি
বাড়িতে শিশুদের দেখাশোনার জন্য কর্মজীবী বাবা-মা ১০ দিনের অতিরিক্ত ছুটি পাবেন। বাবা বা মা যদি একা হন তাহলে ছুটি হবে ২০ দিন।
ছবি: Imago Images/photothek
আগের নিয়ম
এর সঙ্গে আগের নিয়মগুলোতো থাকছেই। অর্থাৎ, জরুরি নয় এমন দোকান ও সেবা প্রতিষ্ঠান, ডে কেয়ার সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। জনসমক্ষে অ্যালকোহল পান করা যাবে না। চার্চ, সিনাগগ, মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রার্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে। কর্মীদের বাড়ি থেকে অফিস করার পরামর্শটি অবশ্য করোনার শুরু থেকেই দেয়া হয়েছে।
ছবি: Foerster/Eibner-Pressefoto/picture alliance
কতদিন থাকবে?
কমপক্ষে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নিয়মগুলো বহাল থাকবে। ২৫ জানুয়ারি রাজ্য ও ফেডারেল সরকার বসে পরবর্তী করনীয় নির্ধারণ করবেন। সরকারের আশা, নতুন কড়াকড়িতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। সাত দিনে প্রতি এক লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে গড়ে ৫০ জন বা তার কম আক্রান্ত হলে সেটিকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া হবে।
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
প্রকোপ বাড়ছে
মঙ্গলবার র্পযন্ত ২৪ ঘণ্টায় জার্মানিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৯০০ জন। মারা গেছেন ৯৪৪ জন। বড়দিনের ছুটির শেষ হওয়ায় এই সংখ্যা এখন আরো বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গত সাতদিনই গড়ে এক লাখ জনগোষ্ঠীর বিপরীতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৯ জন, যা প্রত্যাশিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।
ছবি: Ina Fassbender/AFP/Getty Images
ম্যার্কেলর কথা
সাংবাদিক সম্মেলনে নতুন বিধিনিষেধ ঘোষণা করে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জনগণকে এবার বিশেষভাবে সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। ভ্যাকসিন নিয়ে তিনি বলেন, প্রথম তিন মাসে দেশটিতে অগ্রাধিকারপ্রাপ্তরা টিকা পাবেন। এরপর থেকে বাকিদের টিকা দেয়া সম্ভব হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বাদ দিয়ে জার্মানি একা টিকা নিশ্চিত করলে সেটি কাজে আসবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ছবি: Michel Kappeler/REUTERS
8 ছবি1 | 8
জার্মানিতে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখে ২০০ হয়ে গেলেই সতর্কবার্তা জারি করা হয়। টানা সাত দিন এমন পরিস্থিতি চললে, পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। বুধবার বার্লিনে আক্রান্তের গড় সংখ্যা ছিল ১৯৯ দশমিক নয়। তারপরেই বার্লিনের প্রাদেশিক সরকার নতুন নিয়ম বলবৎ করে। জার্মানির অন্য শহরগুলিতেও একই নিয়ম বলবৎ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে দেখে নেওয়া হবে, সেখানে দৈনিক আক্রান্ত ২০০-র বেশি কি না।
ডিসেম্বরেই জার্মানিতে নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে সেটিকে মৃদু লকডাউন বলা হয়েছিল। ১০ জানুয়ারি কড়াকড়ি শুরু হয়। কারণ, আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে। কিন্তু তাতেও বার্লিনে বিশেষ লাভ হয়নি। ফলে বাধ্য হয়েই নতুন নিয়ম বলবৎ করতে হয়েছে।
কিন্তু এতেও কি বিশেষ সুবিধা হবে? অনেকরই বক্তব্য, এর ফলে বিশেষ লাভ হবে না। লকডাউনের কড়াকড়ির মধ্যেও বহু মানুষ বাইরে বের হচ্ছেন। দোকানে যাচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে এক জায়গায় অনেক লোক জমা হতেই পারে।
কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, এলাকা চিহ্নিত করে কিলোমিটার বেঁধে দিলে কাজ হতো বেশি। বস্তুত, নতুন নিয়মে ছাড় পাবেন স্বাস্থ্যকর্মী এবং জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। বাড়িতে বসে যাঁদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়, তাঁরাও ছাড় পাবেন বলে বার্লিন প্রশাসন জানিয়েছে।