জার্মানির অন্যতম ‘‘ডেয়ার স্পিগেল’’ সাপ্তাহিকে খবরটা প্রকাশিত হয় শনিবার: জার্মান সরকার নাকি ইউরোজোন থেকে গ্রিসের সম্ভাব্য বিদায় ‘‘ম্যানেজ করা যাবে’’ বলে মনে করেন৷ তবে এটা দৃশ্যত কাম্য নয়৷
বিজ্ঞাপন
পত্রিকাটি সূচনায় শুধু জানিয়েছিল, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল নাকি এখন বিশ্বাস করেন যে, গ্রিস যদি ইউরোজোন এলাকা থেকে বিদায় নেয়, তাহলে ইউরো এলাকার তা সামলে নেওয়ার ক্ষমতা আছে৷
পত্রিকার রিপোর্টে ছিল, চ্যান্সেলর ও তাঁর অর্থমন্ত্রী ভোলফগাং শয়েবলে, উভয়েই বিশ্বাস করেন যে, ২০১২ সালে ইউরো এলাকার সংকট যখন চরমে, সে'যাবৎ ইউরোজোনে যে সব সংস্কার সাধিত হয়েছে, তা-তে গ্রিসের ইউরোজোন ত্যাগ সামাল দেওয়া সম্ভব৷
গ্রিসে অভিবাসীদের চরম দুর্দশা
আর্থিক মন্দার কারণে সামগ্রিকভাবে গ্রিসের অবস্থা অত্যন্ত কাহিল৷ এই কাহিল দশার ভুক্তভোগী হচ্ছেন সেদেশে অবস্থানরত বৈধ, অবৈধ অভিবাসীরা৷ অনেকে বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছেন ভিক্ষাবৃত্তি, জীবন কাটাচ্ছেন রাস্তায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ভয় এবং ঘৃণা
‘ভয়ের সভ্যতায় স্বাগতম’ - অভিবাসীদের জন্য গ্রিস ক্রমশ ভয়ের রাজ্যে রূপ নিচ্ছে৷ তাদের নিত্যদিনের জীবন এখন সহিংসতা, বৈষম্য আর দারিদ্র্যের বিস্বাদে ভরা৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কিছুই বাকি নেই
কাগজপত্র ছাড়া দুই অভিবাসীকে একটু আগেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ অবৈধ অভিবাসী হিসেবে আটক এই দুই ব্যক্তি তাকিয়ে আছেন নিয়তির দিকে৷ গ্রিসে বসবাসকারী এরকম অসংখ্য অবৈধ ব্যক্তিকে প্রতিদিন গ্রেপ্তার করছে পুলিশ৷ গ্রেপ্তারের পর এদেরকে বাসে করে আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়৷ প্রতিদিন অবৈধ অভিবাসী ভর্তি ১০-১৫টি বাস আটক কেন্দ্রে পৌঁছায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বাক্সের মধ্যে জীবনযাপন
অর্থনৈতিক মন্দা গ্রিসের বাসিন্দাদের অত্যন্ত শক্তভাবে আঘাত করেছে৷ এর ফলে অনেকে হয়েছেন গৃহহীন, বাস করছেন রাস্তায়৷ ২০০৯ সালের তুলনায় বর্তমানে সেদেশের রাস্তায় বসবাসকারী গৃহহীনের সংখ্যা বেড়েছে ২৫ শতাংশ৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ভয়ের মধ্যে বসবাস
আনা টাসাভি একজন সিরীয় শরণার্থী৷ কোন কাগজপত্র ছাড়া অবৈধভাবে এথেন্সে বাস করেন তিনি৷ তিনি দিনের বেশিরভাগ সময় বন্ধুর বাড়িতে তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকেন৷ তার মধ্যে সবসময় আতঙ্ক কাজ করে, এই বুঝি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবেন কিংবা ডানপন্থী গুণ্ডাদের আক্রমণের শিকার হবেন৷ নিজের দেশে ফেরাটাও তার জন্য অনেক বিপজ্জনক৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বহিরাগত
একজন অভিবাসী নারী এবং তার শিশু এথেন্সের আটক কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন৷ অবৈধ হিসেবে আটক হওয়ায় কয়েকমাস কারাভোগ করতে হয়েছে তাদের৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বৈশ্বিক অর্থনীতি
গ্রিসে আর্থিক মন্দার কারণে সেদেশের সরকার এবং বিশ্বায়নে তাদের ভূমিকার উপর গভীর অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ব্যাপক ভিড়
এথেন্সের পররাষ্ট্র দপ্তরের সামনে প্রতিদিন ভিড় করেন অসংখ্য অভিবাসী৷ উদ্দেশ্য গ্রিসে বসবাসের একটি বৈধ কাগজ বের করার চেষ্টা করা৷ খুব ভোর থেকে গভীর রাত অবধি অপেক্ষা করেন তারা, কিন্তু এদের মধ্য থেকে খুব কম লোকই সেদেশে ছয়মাস বৈধভাবে বসবাসের কাগজ পান৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কোন ভবিষ্যত নেই?
‘এমনিতেই এথেন্সে বসবাস অত্যন্ত কঠিন, আর একজন অভিবাসী হিসেবে অসম্ভব৷ আমি এখানে এসেছিলাম একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায়, কিন্তু এখানে কোন ভবিষ্যতই নেই’, ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন এক অভিবাসী৷ নিজের নাম প্রকাশে আগ্রহী নন তিনি৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কঠিন বাস্তবতা
ইউরোপে আগমনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গ্রিসে আসেন আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ৷ কিন্তু এরপর তারা এক জটিলতা থেকে অন্য জটিলতার মুখোমুখি হন৷ গ্রিসের বাস্তবতা এখন বড় কঠিন৷
ছবি: DW/ A. Stahl
গ্রিক ট্রাজেডি
এথেন্সের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে এরকম গ্রাফিটির সংখ্যা অনেক৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব গ্রাফিটি গ্রিসের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে স্থানীয়দের মনোভাব ফুটিয়ে তোলে৷
ছবি: DW/ A. Stahl
যাওয়ার কোন জায়গা নেই
গ্রিসে বসবাসরত অভিবাসীরা ক্রমশ কঠিন থেকে কঠিনতর বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছেন৷ তাদের জন্য কোন চাকুরি নেই, ভবিষ্যত অন্ধকার৷ অনেক অভিবাসী শেষমেষ বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি আর জীবন কাটান রাস্তায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
11 ছবি1 | 11
সেই সব সংস্কারের মধ্যে আছে ৫০০ বিলিয়ন ইউরো পুঁজির ইউরোপিয়ান স্টেবিলিটি মেকানিজম বা ইএসএম, বিপদগ্রস্ত ইউরো দেশগুলি যে তহবিল থেকে ঋণ পেতে পারে৷ ‘‘স্পিগেল''-এর রিপোর্ট বলছে, ইএসএম থাকার ফলে আয়ারল্যান্ড কিংবা পর্তুগালের মতো দেশ, যারা গ্রিসের মতোই সংকটকালীন সাহায্য পেয়েছে, তারা সহজে ইউরো এলাকা পরিত্যাগ করবে না৷
গ্রিসে নির্বাচন
ওদিকে গ্রিসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অচলাবস্থার পর আগামী ২৫শে জানুয়ারি নতুন সংসদীয় নির্বাচন ডাকা হয়েছে, যে নির্বাচনে মুখ্য সাফল্যের সম্ভাবনা উগ্র বামপন্থি সিরিজা দলের, যাদের তরুণ নেতা আলেক্সিস সিপ্রাস ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন যে, জিতলে পরে তিনি একাধিক আর্থিক সংস্কার প্রত্যাহার করবেন এবং গ্রিসের সরকারি ঋণের একাংশ বাতিল করার চেষ্টা করবেন৷
জার্মান এবং অপরাপর ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমের মতে বার্লিন থেকে পরোক্ষভাবে গ্রিসের হবু নেতার উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ কিন্তু তার একটা ফল হয়েছে এই যে, সোমবার ইউরো-র বিনিময়মূল্য গত ন'বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়: ১ ডলার ১৮ সেন্ট৷ ওদিকে গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইয়র্গস পাপান্দ্রেউ যে নির্বাচনের তিন সপ্তাহ আগে একটা নতুন দল গঠন করে ফেললেন, এ সবই কিন্তু গ্রিসকে ইউরোজোনে রাখার পরিকল্পনা বা প্রচেষ্টার অঙ্গ বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে৷
গাব্রিয়েলের ব্যাখ্যা
এবার জার্মানির উপ-চ্যান্সেলর, অর্থনীতি মন্ত্রী এবং সামাজিক গণতন্ত্রী দলের নেতা জিগমার গাব্রিয়েল স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ‘‘জার্মান সরকার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সেই সঙ্গে গ্রিক সরকারের লক্ষ্য হলো গ্রিসকে ইউরোজোনে রাখা৷ এছাড়া কোনো পরিকল্পনা নেই কিংবা ছিল না৷'' অপরদিকে ‘‘আমাদের ব্ল্যাকমেল করা চলবে না'' এবং ‘‘আমরা প্রত্যাশা করি যে, গ্রিক সরকার, যে-ই তার নেতা হন না কেন, ইইউ-এর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিগুলি মেনে চলবে৷'' হ্যানোভার আলগেমাইনে সাইটুং পত্রিকার সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন গাব্রিয়েল৷
প্রসঙ্গত, ঋণ সংকটে গ্রিসের ‘‘বেইলআউট'' বা ত্রাণের জন্য সর্বসাকুল্যে ২৪০ বিলিয়ন ইউরো প্রদান করা হয়েছে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল, এই ‘‘ট্রোইকা'' বা ত্রয়ীর পক্ষ থেকে৷ ইউরোপের বৃহত্তম অর্থানীতি হিসেবে জার্মানি অবশ্যই এই ‘‘বেইলআউটে'' একটা বড় ভূমিকা রেখেছে৷
প্রাচীন গ্রিসের সবচেয়ে বড় সমাধির সন্ধান লাভ
গ্রিসের উত্তরাঞ্চলের অ্যাম্ফিপোলিস শহরে সম্প্রতি একটি সমাধির সন্ধান পাওয়া গেছে৷ মহাবীর হিসেবে পরিচিত ‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট’-এর সময়কার এই সমাধিটি যে কার, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল দেখা দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নারীমূর্তি
খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ থেকে ৩২৫ সময়কালের এই সমাধির দ্বিতীয় প্রবেশপথে দুটি নারীমূর্তি পাওয়া গেছে৷ লম্বা ঢিলেঢালা পোশাক পরিহিত কোঁকড়ানো চুলের এই মূর্তি দুটি যেন সমাধির পাহারাদার হিসেবে স্থাপন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
প্রায় অক্ষত
দুটি মূর্তির মধ্যে একটির মুখ পাওয়া যায়নি৷ তবে বাকি সব অক্ষত রয়েছে বলে জানা গেছে৷ গ্রিসের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘‘একটি মূর্তির বাম হাত আর অন্যটির উত্তোলন করা ডান হাত যেন বলে দিচ্ছে যে, সমাধিতে প্রবেশ করা যাবে না৷’’
ছবি: picture alliance/AP Photo
ডানা ও মুন্ডুহীন স্ফিংক্স
খননকাজের সময় প্রত্নতত্ত্ববিদরা সমাধির মূল প্রবেশপথে ডানা ও মুন্ডুহীন এই ‘স্ফিংক্স’ জোড়ার সন্ধান পান৷ তবে তাদের ডানা ও মাথার কিছু ভাঙা অংশ অন্য জায়গায় পাওয়া গেছে৷ মূল সমাধিতে ঢোকার আগে ১৩টি সিঁড়ি আছে৷ সব মিলিয়ে সমাধির উচ্চতা প্রায় ৪৫৭ মিটার৷ ‘স্ফিংক্স’ হলো পাথরের বিশালাকার মূর্তি, যার দেহটি সিংহের এবং মাথা মানুষের মতো৷ মিশরে এমন বহু মূর্তি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্বেল পাথরের সিংহ মূর্তি
প্রায় পাঁচ মিটার উঁচু মার্বেল বা মর্মর পাথর দিয়ে তৈরি সিংহের এই মূর্তিটি আবিষ্কৃত সমাধির একেবারে উপরে ছিল বলে ধারণা করা হয়৷ তবে প্রায় একশত বছর আগে, ১৯১২ সালে, স্থানীয় এক নদী থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মূর্তিটি উদ্ধার করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জটিল প্রক্রিয়া
সমাধির খননকাজ শুরু হয় ২০১২ সালে৷ এখনও চলছে৷ প্রধান প্রত্নতত্ত্ববিদ জানিয়েছেন, তাঁরা যেন একেকজন সার্জনের মতো কাজ করছেন৷ অর্থাৎ খুব সতর্কতার সঙ্গে খননকাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/dpa
সুন্দর কারুকাজ
সমাধির প্রধান কক্ষের পাশের ছোট্ট একটি কক্ষের অংশ এটি৷ কারুকাজগুলো যেন যাঁর সমাধি তাঁর সম্পত্তি ও বিশাল ক্ষমতার চিহ্ন বহন করছে৷ আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট-এর স্ত্রী ও সন্তানকে অ্যাম্ফিপোলিসে হত্যা করা হয়৷ তাই এই সমাধিটি তাঁদের হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
অনেক আশা
এটি অ্যাম্ফিপোলিস শহরের যেখানে খননকাজ চলছে, সেখানকার ছবি৷ সমাধিটি ‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট’-এর পরিবারের সদস্য ছাড়াও তাঁর শাসনামলের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তারও হতে পারে৷ অবশ্য খননকাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পরই সব জানা যাবে৷ তবে সমাধিটি যারই হোক না কেন, গ্রিস সরকার ইতিমধ্যে একে ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ’ বলে আখ্যায়িত করেছে৷