1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বার্লিন প্রাচীরকে ঘিরে অন্যরকম উদ্যোগ

২ নভেম্বর ২০১৮

দুই জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের ২৯ বছর পর রাজধানী বার্লিনের কুখ্যাত প্রাচীরের চিহ্ন প্রায় নেই বললেই চলে৷ এক শিল্পী নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ইতিহাসের সেই অধ্যায়কে অমর করে তুলেছেন৷

ছবি: DW

বার্লিন শহরে প্রাচীরের সামান্য কিছু অংশ এখনো প্রকাশ্যে দেখা যায়৷ মাটির উপর পাথর বসিয়ে দুই জার্মানির এই সীমান্ত চিহ্নিত করা হয়েছে৷ ‘বার্লিন প্রাচীর’ নামের শৌধে এখনো সেই ভয়াবহ সীমান্তের স্মৃতি ধরে রাখা হয়েছে৷ এক বিদেশি পর্যটক বলেন, ‘‘এমন ঐতিহাসিক বিষয় তুলে ধরলে ভালো হয়৷ প্রাচীরের অংশ দেখতে পেলে ভালো লাগতো৷ তার ঐতিহাসিক গুরুত্বের প্রেক্ষিতে এর আরও কদর করা উচিত৷’’

২০১২ সালে ‘প্রাচীর প্যানোরামা’ উদ্বোধন করার সময় ঠিক এমন ভাবনারই প্রতিফলন ঘটেছিল৷ সেখানে মানুষ বিভক্ত শহরের জীবনযাত্রার স্বাদ পেতে পারেন৷ ১৯৮০-র দশকের বার্লিনের পরিবেশ অনুভব করতে পারেন৷ নভেম্বর মাসের এক ধূসর কাল্পনিক দিনে পশ্চিম বার্লিন থেকে প্রাচীরে উঁকি দিয়ে পূবের দিকে তাকাতে পারেন৷ মানানসই সংগীত ও সে সময়ের মানুষের কণ্ঠ সেই অভিজ্ঞতাকে আরও বাস্তব করে তোলে৷ দর্শকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘‘এখনো গায়ে কাঁটা দিচ্ছে৷ এমনটা কল্পনা করাও কঠিন৷ টেলিভিশনে এমন সব ছবি দেখে থাকলেও এখানে মনে হচ্ছে সবকিছু সরাসরি অনুভব করতে পারছি৷ বলতেই হয়, অসাধারণ অভিজ্ঞতা৷’’

ইরানি বংশোদ্ভূত শিল্পী ইয়াদেগার আসিসি প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে এই প্যানোরামা ছবি সৃষ্টি করেছেন৷ আসিসি বলেন, ‘‘আমরা বার্লিন প্রাচীর থেকে পাঁচ মিটার দূরে রয়েছি এবং পশ্চিম থেকে পূবের দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি৷ দেখছি যে প্রাচীরের পাশে যারা থাকেন, তাঁরা বাকি সব মানুষেরই মতো৷ অর্থাৎ তাঁরা সে বিষয়ে আদৌ সচেতনই নন৷’’

বার্লিন প্রাচীরকে ঘিরে অন্যরকম উদ্যোগ

04:48

This browser does not support the video element.

ইয়াদেগার আসিসি তাঁর সৃষ্টিকর্মে প্রাচীরের ছায়ায় জীবনযাত্রা তুলে ধরেছেন৷ নির্ভুল তথ্যের তুলনায় নিপুণভাবে সেই পরিবেশ তুলে ধরা তাঁর জন্য বেশি জরুরি ছিল৷ ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবেই তিনি এমন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষমতা রাখেন৷ কারণ আসিসি নিজে বেশ কয়েক বছর পূর্ব বার্লিনে বসবাস করেছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানে যা কিছু দেখছেন, তার প্রায় সব অভিজ্ঞতাই আমার হয়েছে৷ তথ্য সংগ্রহ করতে হয় নি, সবকিছু মাথায়ই ছিল৷’’

ইয়াদেগার আসিসি ভিয়েনায় জন্মগ্রহণ করেন এবং পূর্ব জার্মানিতে বড় হয়েছেন৷ ১৯৭৮ সালে সে দেশের কর্তৃপক্ষ তাঁকে বহিষ্কার করে পশ্চিম বার্লিনে পাঠিয়ে দেয়৷ তারপরেও তিনি সীমান্তের কাছেই থাকতেন৷ সিমেন্টের সেই প্রাচীর তাঁর দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছিল৷ কম্পিউটারের পর্দায় তিনি তাঁর সে সময়কার জগত নতুন করে সৃষ্টি করছেন৷ হাতে আঁকা ছবি ও নিজের তোলা অসংখ্য ফটো সেই কাজে সহায়ক হচ্ছে৷ ইয়াদেগার আসিসি বলেন, ‘‘সেই যুগ তুলে ধরা মোটেই সহজ কাজ ছিল না৷ সে সময়কার জীবনযাত্রার নানা উপকরণ খুঁজে বার করে সেই যুগকে জীবন্ত করে তুলতে হয়েছে৷ ভগ্নপ্রায় দেওয়াল থেকে শুরু করে চুইংগাম বিক্রির যন্ত্র কাজে লাগানো হয়েছে৷ সবকিছুর মধ্যে সামঞ্জস্য রাখাই ছিল জরুরি৷’’

১৫ মিটার উঁচু ও ৬০ মিটার চওড়া গোলাকার ছবি দেখার জন্য আলাদা করে প্রাচীরের মতো ঘর ও টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে৷ ২০টি বিশাল আকারের ছবি প্রিন্ট করে জোড়া লাগানো হয়েছে৷ এর জন্য শ্রম ও অনেক অর্থ ব্যয় করা হয়েছে৷ ইয়াদেগার আসিসি বলেন, ‘‘প্যানোরামার সমস্যা হলো, সেটির আকার বিশাল৷ ফলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ের প্রশ্ন ওঠে৷ একজন শিল্পীর পক্ষে সেই কাজ সম্ভব কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়৷’’

‘প্রাচীর' নামের প্যানোরামার মাধ্যমে তিনি এই প্রথম ইতিহাসের এক অধ্যায় নিয়ে কাজ করলেন৷ একই সঙ্গে দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি ও সূক্ষ্ম নিষ্ঠুরতা কীভাবে বিভক্ত এই শহরের বাস্তবতা ছিল, বিশাল এই চিত্র তা দেখিয়ে দিচ্ছে৷ আসিসি বলেন, ‘‘মানুষ এখান থেকে বেরিয়ে বলবেন, আমি বার্লিন প্রাচীরের প্রান্তে দাঁড়িয়েছিলাম৷ সেই স্মৃতি অনেক বেশি বাস্তব হবে৷ হয়তো তাঁদের মনে আরও কিছু ভাবনা আসবে এবং তাঁরা নিজেদের প্রশ্ন করবেন, আমি কীভাবে এমন অবস্থায় নিজেকে মানিয়ে নিতে পারতাম? অথবা বাসায় ফিরে উপলব্ধি হবে, আমি তো সত্যি আমার জীবন, পেশা, ব্যক্তিগত জীবন ইত্যাদির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছি৷ আমার মনে হয়, অনেক প্রশ্ন উঠতে পারে, কিছু জবাবও পাওয়া যায়৷’’

যাঁদের বিভক্ত বার্লিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে, এই প্যানোরামা তাঁদের স্মৃতি উসকে দেয়৷ পর্যটকরা প্রাচীর বরাবর জীবনযাত্রা সম্পর্কে একটা ধারণা পান৷

বেটিনা বুশ/এসবি

২০১৫ সালের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ