1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজধানীতে কাকের উৎপাত

৫ অক্টোবর ২০১২

বার্লিন শহরে কাকেদের দৌরাত্ম্য বেড়ে চলেছে৷ তাদের মতিগতি বুঝে সমস্যার সমাধানের চেষ্টাও চলছে৷ বার্লিনে কাকে-মানুষে কবে যে সুখে ঘর করবে, তা বলা কঠিন৷

ছবি: AP

জার্মানির রাজধানী শহর বলে কথা, কোনো কিছুর অভাব থাকার কথা নয়৷ অভাব নেই কাকেরও৷ জোড়ায় জোড়ায় অথবা দলবদ্ধভাবে দেখা যায় দাঁড় কাক, পাতি কাক৷ রাস্তাঘাট বা আবর্জনার স্তূপ থেকে ঠুকরে ঠুকরে খাবার সংগ্রহ করে৷ সন্ধ্যা হলে ঝাঁক বেঁধে উড়ে যায়৷

এমনিতে নিরীহ হলেও তাদের মধ্যে কয়েক জন আবার বেশ বদমেজাজি বলেও পরিচিত৷ বিরক্ত হলে মানুষের উপর হামলা করে৷ ফলে বার্লিনের কাকেদের কীর্তিকলাপ নিয়ে চর্চার শেষ নেই৷ ট্যাবলয়েড সংবাদপত্রে দেখা যায় শিরোনাম ‘রাজধানীবাসীর উপর কাকের হামলা'৷ ইউটিউবে রয়েছে বার্লিনের কাক সংক্রান্ত অনেক ভিডিও৷ এ যেন অ্যালফ্রেড হিচকক'এর ‘দ্য বার্ডস' চলচ্চিত্রের টানটান উত্তেজনার কাহিনি৷ যে কোনো পথচারীদের প্রশ্ন করুন৷ হয় কাক সংক্রান্ত নিজের কোনো বিশেষ অভিজ্ঞতার কথা শুনবেন৷ অথবা তিনি নির্ঘাত কাউকে চেনেন, যার মুখে তিনি এমন কোনো গল্প শুনেছেন৷

খাদ্যের খোঁজে শহরে ছুটছে কাকেরাছবি: dapd

শনিবার সন্ধ্যায় আলেক্সান্ডারপ্লাৎস চত্বর৷ জমজমাট পরিবেশ৷ পথচারী ও পর্যটকদের ভিড়৷ তাদের মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল এক ঝাঁক কাক৷

এমন দৃশ্য কে না চেনে৷ কোথায় এমন ঝাঁক ঝাঁক কাক দেখা যায়, সে কথা তো বলছেনই, সেইসঙ্গে একজন বললেন, ‘‘আরে প্রেনৎসলাউয়ার ব্যার্গ পাড়ায় এই তো কাকের ঠোকর খেলেন এক লোক৷ সেখানে তো শুনেছি মানুষকে সাবধান করে বোর্ড টাঙানো হয়েছে৷'' আরেকজন বললেন, ‘‘এই তো সে দিন আমার এক সহকর্মী বললেন, তাঁর স্ত্রীর উপর কাক হামলা করেছে৷ সেখানে হয়তো কাকের বাসা ছিল৷''

এই শেষ কথাটা কিন্তু ভুল নয়৷ লোকজন একটু বাড়িয়ে বলে বটে৷ ৬ মাস আগের ঘটনাকে টাটকা বলে চালাবার চেষ্টা করে৷ পক্ষী বিশেষজ্ঞ ইয়েন্স শারন জানালেন, গ্রীষ্মের প্রথম পর্যায়ে কাক সংক্রান্ত অনেক ঘটনার কথা শোনা যায়৷ তখন কাক শিশুরা প্রায়ই বাসা থেকে বেরিয়ে ওড়ার চেষ্টা করে, তারপর মুখ থুবড়ে পড়ে যায়৷ সহৃদয় নাগরিকরা ভালো মনে তাদের সাহায্যে এগিয়ে এলেই মুশকিল৷ কাক বাবা বা কাক মা তখন বিপদের গন্ধ পেয়ে তাদের উপর হামলা করে৷ ভাবে, তাদের মতলব নিশ্চয় ভালো নয়৷ মানুষের স্পর্শ তারা মোটেই পছন্দ করে না৷

কাকেদের জনসংখ্যা, গতিবিধি ও আচরণ সম্পর্কে বার্লিনে রীতিমতো গবেষণা করা হয়৷ যেমন সবে দুই দশক আগে রাজধানীতে পাতি কাকের আগমন ঘটেছে৷ এই মুহূর্তে ৫ থেকে ৬ হাজার পাতি কাক দম্পতি শহরে রয়েছে বলে অনুমান করা হয়৷ তাদের মধ্যে যারা মানুষের খুব কাছাকাছি থাকে, তারাই নাকি বেশ বদমেজাজি হয়ে ওঠে৷ মানুষের মতিগতি তারা সবসময়ে বুঝে উঠতে পারে না৷ কেউ তাদের খাওয়াতে গেলে অনেক সময় হাত থেকেই খাবার ছিনিয়ে নিতে চায় তারা৷ মানুষ পাল্টা তেড়ে আসে না বলে সাহসও কম নয় তাদের৷

বার্লিন স্টেশনের উপর শয়ে শয়ে কাকছবি: picture-alliance/dpa

তাহলে কি কাকের জোর-জবরদস্তি মেনে নিতে হবে বার্লিনের মানুষকে? তারাই শহরের উপর নিজেদের জোর খাটাবে? প্রাণী বিশেষজ্ঞ গুন্টরাম মায়ার মনে করেন, বার্লিনের কাকেরা আসলে মোটেই অভিশাপ নয়, বরং শহরের জন্য আশীর্বাদ৷ ফাস্ট ফুডের ছোটো দোকান, আবর্জনা ফেলার খোলা জায়গা, পার্কে পিকনিকের প্রবণতার কারণে বার্লিনে কাকেদের খাবারের অভাব হয় না৷ খাবারের টুকরো এ সব জায়গায় পড়ে থাকে৷ অন্যদিকে শহরের উপকণ্ঠে তাদের বাসা বাঁধার উপযুক্ত জায়গা কমে চলেছে৷ ফলে তারা তো খাবার আর বাসার সন্ধানে শহরে আসবেই৷ দলে দলে আসবে৷ তার উপর হেমন্তে পূর্ব ইউরোপ থেকে চলে আসে হাজার হাজার দাঁড় কাক৷

এক কালে চাষবাসের কাজে কাক পরোক্ষভাবে সাহায্য করতো৷ পোকামাকড় থেকে শুরু করে শস্যের জন্য ক্ষতিকর নানা জীবজন্তু খেয়ে ফেলতো তারা৷ এখন আর চাষবাস তেমন হয় না৷ ফলে শহরেই খাবার খুঁজতে হয় তাদের৷

মুশকিল হলো, কাকেরা শহরে জাঁকিয়ে বসলে মানুষের বিরক্তির কারণ রয়েছে৷ প্রায়ই তারা গাড়ির উপর বাদাম, মরা ইঁদুর – এসব ফেলে যায়৷ তাদের ঠোঁটের আঘাতে গাড়ির রঙ নষ্ট হয়৷ বছর দুয়েক আগে কাকেরা শহরের প্রধান স্টেশনের ছাদে ছিদ্র করে দিয়েছিল৷ তখন বৃষ্টির জল যাত্রীদের মাথায় পড়তে শুরু করে৷ তাদের এমন আরও গৌরবের কীর্তির কাহিনি রয়েছে৷

বিরক্ত হয়ে কাকেদের বাসা ভেঙে শহর থেকে দূর করার উপায় নেই৷ পশু সুরক্ষা আইনে তা অপরাধ হিসেবে দেখা হয়৷ তবে কাকেদের দুর্বলতা খতিয়ে দেখে তাদের আসা বন্ধ করতে অনেক ফন্দি কাজে লাগানো হয় বটে৷ বার্লিনে কাকে-মানুষে কবে যে সুখে ঘর করবে, তা বলা কঠিন৷

প্রতিবেদন: ল্যুডিয়া হেলার/এসবি

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ