জার্মানির রাজধানী বার্লিন যেমন একদিকে এক শশব্যস্ত মহানগরী, অন্যদিকে সেই শহরেই আবার এমন সব আবাসিক এলাকা আছে, যেখানে এলে মনে হবে যেন ছুটি কাটাতে এসেছেন৷
বিজ্ঞাপন
‘শিল্পীদের গ্রাম’ যেভাবে গড়ে উঠেছে মহানগরীতে
04:21
বার্লিনের রুমেল্সবুর্গার বুখট বা বে-র কাছে ‘আর্টিস্টস ভিলেজ', শিল্পীদের গ্রাম৷ বাড়িগুলো জলের ধারেই, সব বাড়ি থেকে হ্রদের জল দেখা যায়৷ কিন্তু এই শান্তিপূর্ণ এলাকাটির অতীত খুব শান্তিপ্রিয় নয়৷ ১১৩ বছর ধরে এখানে একটি জেলখানা ছিল৷ ১৯৯০ সালে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ আজ তা কারো বোঝার উপায় নেই!
স্থপতি মার্কুস মাটিয়াসের বাড়ির পাঁচটি তলা মিলিয়ে বসবাসের এলাকা হল ২৪০ বর্গমিটার৷ মধ্যমণি হল একটি লফট বা ছাদের তলায় জিনিসপত্র রাখার ঘর৷ মার্কুস বলেন, ‘‘এই বাড়িটির বিশেষত্ব হল তিনতলার এই লফট, যার উচ্চতা হল সাড়ে পাঁচ মিটার৷ এখান থেকে লেকের দৃশ্য দেখা যায়৷ ঘরটাও বিরাট, এখানে সময় কাটাতে ভালো লাগে; টেলিভিশন দেখতে বা শুধু বসে বসে বাইরের দৃশ্যটা উপভোগ করতে৷''
লফট-টা গোটা পরিবারের প্রিয়৷ এখানেই সকলে মিলে বসা হয়, পার্টি করা হয়৷ মাঝের দেওয়ালটির একটি রহস্য আছে: তিন মিটার উঁচু পাল্লাগুলোর পিছনে বাড়ির ‘বার'-টি লুকনো আছে৷ মার্কুস ও তাঁর স্ত্রী দু'জনেই স্থপতি; দু'জনে মিলে বাড়ির ভেতরটা সাজিয়েছেন ২০০৬ সালে৷
যে সব বাড়ি তৈরিতে ৫০০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে!
কখনো টাকা ফুরিয়েছে, কোথাও বা আগ্রহ ফুরিয়েছে – বাড়ি তৈরি শেষ হতে হতে কেন শতাব্দীর পর শতাব্দী পার হয়ে যায়, তার অনেক কারণ থাকতে পারে৷ মস্কোর ক্রেমলিন বা জার্মানির উল্ম শহরের ক্যাথিড্রাল জানে সে কথা৷
ছবি: picture alliance/Arco Images
উল্ম ক্যাথিড্রাল, জার্মানি
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু গির্জার চুড়া এই উল্ম ক্যাথিড্রালেই৷ গির্জাটি তৈরি হয়েছিল শুধুমাত্র স্থানীয় বাসিন্দাদের বদান্যতায়, তাই বুঝি ৫০০ বছরের বেশি সময় লেগেছে কাজ শেষ করতে৷ দ্য মাদার অফ ক্রাউডফান্ডিং প্রকল্পটির ক্রনিক অর্থাভাব ছিল, তাই জার্মানির সবচেয়ে বড় প্রটেস্টান্ট চার্চটির নির্মাণকার্য শেষ হয় ১৯৮০ সালে৷
ছবি: picture alliance/robertharding/M. Lange
মালবর্ক ক্যাসল, পোল্যান্ড
ইউরোপের সবচেয়ে বড় ইটের বাড়ি হলো এই মালবর্ক দুর্গ; তৈরি করতে ৭০০ বছরের বেশি সময় লেগে গেছে শুধু নকশা বদলানোর জন্যেই নয়, যুদ্ধ আর লুটতরাজের দরুণও বটে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যখন শেষ হতে চলেছে, তখন মালবর্ক দুর্গের অর্ধেকের বেশি ধ্বংস হয়ে যায়৷ আজ এটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ও পোল্যান্ডের একটি মুখ্য টুরিস্ট অ্যাট্রাকশন৷
ছবি: picture alliance/robertharding/C. Kober
স্ট্রাসবুর্গ ক্যাথিড্রাল, ফ্রান্স
মহাকবি ইওহান ভল্ফগাং ফন গ্যোটে ছিলেন স্ট্রাসবুর্গ ক্যাথিড্রালের একজন ভক্ত৷ তিনি যখন স্ট্রাসবুর্গে পড়াশুনো করছেন, অষ্টাদশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে, তখন ১৪২ মিটার উঁচু স্ট্রাসবুর্গ ক্যাথিড্রাল ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু গির্জে৷ তবু নির্মাণকার্য চলে আরো ১০০ বছর ধরে৷ শেষমেষ ১৯৭০ সালে দক্ষিণের চুড়োটি অসমাপ্ত রেখেই কাজ বন্ধ হয়৷
ছবি: picture alliance/Eibner-Pressefoto
মস্কোর ক্রেমলিন
রাশিয়ায় ক্ষমতার প্রতীকই হলো এই ক্রেমলিন,তার লাল ইট আর সোনালি গম্বুজ৷ অথচ এই ক্রেমলিন তৈরির কাজ শেষ হতে ৮০০ বছরের বেশি সময় লেগে গেছে৷ ষোড়শ আর সপ্তদশ শতাব্দীতে জার ও তাঁর পরিবারবর্গ এখানেই থাকতেন৷ পরে সোভিয়েত আমলে এটাই ছিল সরকারের আসন৷ আজ এর অনেকটাই মিউজিয়াম – আর গোটা কমপ্লেক্সটাই ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট৷
ছবি: picture alliance/ZB/J. Kalaene
ভাভেল, পোল্যান্ড
পোল্যান্ডের ক্রাকাও শহরের ভাভেল কমপ্লেক্সটিতে কাজ চলেছে গত এক হাজার বছরের বেশি সময় ধরে! পোল্যান্ডের নৃপতিরা এখানে থাকতেন৷ প্রতি শতাব্দীতে নতুন নতুন ভবন যোগ হয়েছে ভাভেলে – এমনকি গত শতাব্দীতেও৷ কাজেই ভাভেল-এর কাহিনি আজও সমাপ্ত হয়নি এবং কোনোদিনই সমাপ্ত হবে না বলে ধরে নেওয়া যায়৷
ছবি: picture alliance/Arco Images
5 ছবি1 | 5
মার্কুস বাড়ির অন্য তলাগুলোও দেখালেন, ‘‘এই তলাটায় আমাদের শোবার ঘর, সেই সঙ্গে স্নানের ঘর৷ আইডিয়াটা ছিল, দরজাগুলো খোলা থাকলে পাল্লাগুলো এমনভাবে দেওয়ালের সঙ্গে মিশে যাবে যে, সেগুলো দেখাই যাবে না৷ ফলে সব কিছু খুব খোলামেলা লাগবে৷''
দেওয়ালের ছবিগুলো দিয়ে একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে৷ মারকুস জানালেন, ‘‘এটা হল বাড়ির দোতলা৷ এই তলায় আমাদের মেয়ের ঘর৷ আমরা এই তলায় একটা গেস্টরুমও রাখতে চেয়েছিলাম৷ এই তলায় বেশ কয়েকটা ছোট ছোট ঘর আছে; আইডিয়াটা ছিল, করিডরটা এমনভাবে তৈরি করা হবে, যাতে সব ক'টি দরজা ক্যাবিনেটের দরজার মতো হবে, মনে হবে, যেন একটি ক্যাবিনেট, মানে আলমারির মধ্যে বসে আছি৷ অথচ দরজাগুলো খুললেই নানা ঘর, এছাড়া অতিথিদের জন্য টয়লেট৷''
পুরো বাড়িতে দরজাগুলি এমনভাবে তৈরি, যাতে খোলামেলা পরিবেশ অক্ষুণ্ণ থাকে৷ কিচেনের স্লাইডিং দরজাটা একাধারে দেওয়াল ও ব্ল্যাকবোর্ড৷ মারকুস বললেন, ‘‘গোড়া থেকেই আমাদের প্রচেষ্টা ছিল, ঘরগুলো খোলামেলা রাখার৷ বাড়িতে ঢোকার পরেই বড় করিডর, সেখান থেকে কিচেন৷ কিন্তু আমরা আরো চেয়েছিলাম যে, কিচেনটার দরজা বন্ধ করা সম্ভব হবে; সেজন্যই বড় স্লাইডিং ডোর-টা লাগানো হয়েছে, যাতে কিচেনটা পুরোপুরি আলাদা করে দেওয়া যায়৷''
কিচেন থেকে বেরোলে সামনে ৭৫ বর্গমিটার আয়তনের একটি বাগান, যেখান থেকে এককালীন ‘জেলখানা'-টিকে দেখা যায়৷ মারকুস জানালেন, ‘‘প্রথম যখন এখানে আসি, তখন এখানে শুধু বালি ফেলা ছিল... জেলখানা ছাড়া আর কিছু ছিল না৷ আমরা এখানে আসার বছর দু'য়েক বাদে জেলখানার জায়গায় এই সব ফ্ল্যাটবাড়ি বানানো হয়৷ সেই সব ফ্ল্যাটে এখন লোক থাকে৷''
মহাকাশের বাড়ির কথা
মহাকাশে বসবাসের জন্য পৃথিবীর তিনজন বিজ্ঞানী ২০০০ সালের ২ নভেম্বর ‘ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন’ বা আইএসএস-এ পৌঁছেছিলেন৷ ছবিঘরে থাকছে আইএসএস নিয়ে কিছু তথ্য৷
ছবি: Reuters/NASA
খালি চোখে দেখা যায়
চাঁদ যেমন, তেমনি আইএসএস-কেও পৃথিবী থেকে মাঝেমধ্যে খালি চোখে দেখা যায়৷ পৃথিবী থেকে এর উচ্চতা ৩৩০ থেকে ৪৩৫ কিলোমিটারের মধ্যে ওঠানামা করে৷ এটা সেকেন্ডে পাঁচ মাইল বেগে চলে৷ ফলে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে এর সময় লাগে দেড় ঘণ্টা৷ ছবিতে যে আটটি সোলার অ্যারে দেখতে পাচ্ছেন সেগুলো দিয়েই সেখানকার বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো হয়৷ একসঙ্গে মোট ছয়জন নভচারী থাকতে পারেন সেখানে৷
ছবি: Reuters/NASA
প্রথম অধিবাসী
মাঝের জন মার্কিন উইলিয়াম শেফার্ড আর তাঁর দুপাশে দুই রাশিয়ান ইউরি গিডজেঙ্কো (বামে) ও সের্গেই ক্রিকালভ৷ এই তিনজনই আইএসএস এর প্রথম বাসিন্দা৷ ২০০০ সালের ২ নভেম্বের তাঁরা আইএসএস-এ পৌঁছান৷ ছিলেন ১৩৬ দিন৷
ছবি: NASA
সাড়ে পাঁচ মাস
নভচারীরা সাধারণত গড়ে সাড়ে পাঁচমাস করে থাকেন মহাকাশের এই বাড়িতে৷ তবে নাসার নভচারী স্কট কেলি (ছবিতে যাঁকে দেখছেন) ও রাশিয়ার মিখাইল করনিয়েনকো আইএসএস-এ থাকবেন প্রায় এক বছর৷
ছবি: Scott Kelly/NASA
মাল্টিন্যাশনাল
ক্যানাডার ক্রিস হ্যাডফিল্ড আইএসএস-এ গিটার বাজাচ্ছেন৷ গত ১৫ বছরে ২০০-র বেশি নভচারী এই বাড়ির বাসিন্দা হয়েছেন৷ এর মধ্যে ১৪১ জন মার্কিন নাগরিক, ৪৪ জন রাশিয়ার, জাপান ও ক্যানাডার সাতজন, ইটালির পাঁচজন, জাপান ও ফ্রান্সের তিন জন, আর ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, ডেনমার্ক, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, স্পেন, কাজাখস্থান ও মালয়েশিয়ার একজন করে নাগরিক রয়েছেন৷
ছবি: Reuters/NASA
শাটল বাস
মার্কিন স্পেস শাটল অ্যাটলান্টিসকে আইএসএস-এ ডক করতে দেখছেন৷ অবশ্য অ্যাটলান্টিস এখন আর নেই৷ তার জায়গায় আছে রাশিয়ার সুয়্যজ যান৷ এ ধরণের স্পেস শাটলে করেই নভচারীরা আইএসএস-এ পৌঁছান৷ অধিবাসীদের খাবার থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও যায় এসব যানে করে৷
ছবি: Getty Images/NASA
স্পেসওয়াক
শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নভচারীরা প্রায় ১৮০টি স্পেসওয়াক সম্পন্ন করেছেন৷
ছবি: Reuters/NASA
রোবটিক হাত
আইএসএস-এর কয়েকটি রোবটিক হাত রয়েছে৷ ছবিতে যেটা দেখছেন সেটার নাম ‘ক্যানাডার্ম২’৷ পুরো মেললে হাতটার দৈর্ঘ্য হয় ৫৭.৭ ফুট৷ এই হাত প্রায় ১০০ টন ওজন সমপরিমাণ জিনিসপত্র তুলতে পারে৷
ছবি: Reuters/NASA
টুইটার তারকা নভচারী
আইএসএস-এ জার্মানির তিন নভচারীর একজন আলেক্সান্ডার গেয়ার্স্ট৷ আইএসএস থেকে তিনি ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর পৃথিবীতে ফিরে আসেন৷ মহাকাশ থেকে একের পর এক টুইট করে রীতিমত সাড়া ফেলেছিলেন তিনি৷ ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে জার্মানির জয় থেকে শুরু করে মালালা ইউসুফজাইয়ের নোবেল জয় পর্যন্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট নিয়ে মহাকাশ থেকে টুইট করেছিলেন গেয়ার্স্ট৷