জার্মানির বার্লিনে বড়দিনের এক বাজারে হামলার এক বছর হচ্ছে আজ৷ ট্রাক নিয়ে চালানো ঐ হামলায় ১২ জন নিহত হয়েছিলেন, আহত হন ৭০ জন৷ একবছর পর মানুষের মনে আজও প্রশ্ন, এই হামলা কি ঠেকানো যেত?
বিজ্ঞাপন
এছাড়া হামলার পর নিহতদের পরিবারকে তথ্য দিতে দেরি করা, তাঁদের কাছে হুমকিসহ ময়নাতদন্তের বিল পাঠানো, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের তাঁদের সঙ্গে দেখা না করা ইত্যাদি বিষয়ও আলোচিত হচ্ছে৷
বার্লিনের ব্রাইটশাইডপ্লাৎসের ক্রিসমাস মার্কেটে ট্রাক নিয়ে হামলা করেছিলেন আশ্রয় আবেদন ব্যর্থ হওয়া টিউনিশিয়ার নাগরিক আনিস আমরি৷ ঐ হামলার পর নিহত কয়েকজনের পরিবারকে তাঁদের স্বজন হারানোর সংবাদ দিতে তিনদিন পর্যন্ত লেগেছিল৷ অথচ চেহারার উপর ভিত্তি করে পরিবারের সদস্যদের অন্তত আগাম সতর্কতা দেয়া যেত বলে মনে করেন কুর্ট বেক৷ হামলার পর সরকার তাঁকে হামলা পরবর্তী অবস্থা কীভাবে সামাল দেয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নিয়োগ করেছিল৷ গত সপ্তাহে তিনি তাঁর প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, হামলাপরবর্তী অবস্থা সামাল দেয়ার জন্য ‘প্রস্তুত ছিল না’ জার্মানি৷ এক্ষেত্রে নিহতদের পরিবারের কাছে ময়নাতদন্তের বিল পাঠানোর কথা উল্লেখ করেন তিনি৷ এমনকি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিল দিতে দেরি হলে জরিমানা করার হুমকিও দেয়া হয়েছিল বলে জানান বেক৷ ‘‘আমি এ সব বিশ্বাস করতে চাইনি৷ কিন্তু আমার হাতে এমন চিঠি ছিল,’’ বলেন তিনি৷
বার্লিন হামলা: বিশেষ কয়েকটি তথ্য
বার্লিনে ক্রিসমাস মার্কেটে ট্রাক হামলার ঘটনার তদন্ত করছে কর্তৃপক্ষ৷ এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে তারা৷ ছবিঘরে থাকছে ঘটনা সংক্রান্ত কিছু তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
ঘটনা যেখানে
ব্রাইটশাইড প্লাৎস, কাইজার ভিলহেল্ম মেমোরিয়াল গির্জার সামনের চত্বর, যা পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় ও সুপরিচিত স্থান৷ এর উত্তর পূর্ব দিকে বার্লিনের চিড়িয়াখানা ও তার সংলগ্ন রেল স্টেশন৷ আর দক্ষিণে কেনাকাটার জন্য বিখ্যাত কুয়রফ্যুয়র্স্টেনডাম বা কুডাম স্ট্রিট৷
ছবি: Google Earth
নিস-এ যা হয়েছিল
এই ছবিটি জুলাইয়ে নিস হামলার কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে ৮৬ জন মানুষ নিহত হয়েছিল৷ ফ্রান্সের সেই শহরেও ভিড়ের মধ্যে দিয়ে ট্রাক চালিয়ে দেয়া হয়েছিল৷ বার্লিনের এই ঘটনায় ফ্রান্সের ক্রিসমাস মার্কেটে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
যাঁরা হামলার শিকার
পুলিশ এ পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে৷ আহত অন্তত ৫০ জনের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে৷ বার্লিনের মেয়র মিশেল ম্যুলার নির্দেশ দেন আহতদের যাতে তৎক্ষণাত ইউনিভার্সিটি হসপিটাল চ্যারিটিতে নিয়ে যাওয়া হয়৷
ছবি: Reuters/P. Kopczynski
বার্লিন পুলিশ
ঘটনার পর পরই ব্রাইটশাইড প্লাৎস-এর আশেপাশের সড়ক বন্ধ করে দেয় পুলিশ৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পুলিশ বার্লিনের জনগণের ঘটনাস্থলে না আসার এবং গুজবে কান না দেয়ার অনুরোধ জানান৷ কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে +৪৯৩০৫৪০২৩১১১ – এই নম্বরে ফোন করার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
সন্দেহভাজন
পুলিশ সন্দেহভাজন একজনকে আটকের খবরটি নিশ্চিত করেছে৷ ট্রাকে একজনের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে৷ তবে হামলাকারীর সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানায়নি পুলিশ৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
তদন্ত চলছে
পুলিশের বিশেষ বাহিনী ব্রাইটশাইড প্লাৎস ঘিরে রেখেছে৷ এছাড়া বানহফ চিড়িয়াখানার আশপাশে পুলিশ টহল দিচ্ছে৷ বার্লিনের অপরাধ বিষয়ক পুলিশ এবং অ্যাটর্নি জেনারেল ঘটনার তদন্ত করছে৷
ছবি: Reuters/P. Kopczynski
প্রতিক্রিয়া
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ম্যার্কেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বার্লিনের মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক জানিয়েছেন তিনি শোকাহত৷ বার্লিন ও পুরো জার্মানির জন্য এটা একটা কালো সন্ধ্যা৷
ছবি: REUTERS/P. Kopczynski
7 ছবি1 | 7
গত মার্চে বার্লিন হামলায় নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তৎকালীন জার্মান প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক৷ কিন্তু জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল দেখা না করায় অসন্তুষ্ট ছিলেন নিহতদের পরিবার৷ সম্প্রতি ‘ডেয়ার স্পিগেল' পত্রিকায় তাঁরা যৌথভাবে ম্যার্কেলের উদ্দেশে একটি চিঠিও লেখেন৷ এতে তাঁদের সঙ্গে দেখা না করার মাধ্যমে ম্যার্কেল তাঁর দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছেন না বলে অভিযোগ করা হয়৷ এরপর অবশ্য সোমবার তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছেন ম্যার্কেল৷ যদিও ম্যার্কেলের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, পত্রিকায় চিঠি প্রকাশের আগেই নিহতদের পরিবারের সঙ্গে ম্যার্কেলের বৈঠকের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল৷ কিন্তু ম্যার্কেল কেন আগেই নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেননি ? কুর্ট বেকের কাছে এর উত্তর জানতে চেয়েছিল ডয়চে ভেলে৷ বেক বলেন, ম্যার্কেল তাঁকে জানিয়েছেন যে, প্রেসিডেন্ট যেহেতু দেখা করেছেন তাই তিনি আর সেটা করেননি৷ ‘‘ম্যার্কেল ভালো বিশ্বাসেই এটা বলেছেন৷ তবে তিনি অবস্থা ভালোভাবে বিচার করতে পারেননি,'' বলেন তিনি৷
ম্যার্কেল নিজে তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনা স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, ‘‘এটা আমার কাছে পরিষ্কার যে, তাঁদের কষ্ট, তাঁদের জীবনের এই সম্পূর্ণ পরিবর্তন কখনো ঠিক হবার নয়৷ তবুও আমরা সমবেদনা জানাতে পারি৷ আর যে বিষয়গুলোর উন্নতি হওয়া আবশ্যক সেগুলো করতে পারি৷''
ইউরোপ জুড়ে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা
ব্রাসেলসে একাধিক সন্ত্রাসী হামলার পর ইউরোপ জুড়ে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা৷ বিশেষ করে বিমানবন্দর, ট্রেন স্টেশন, সীমান্ত এবং বিভিন্ন শহরের রাস্তায় পুলিশের বাড়তি উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Golovkin
‘যুদ্ধে ইউরোপ’
ফরাসি প্রধানমন্ত্রী তো বলেই দিলেন, ইউরোপ এখন ‘যুদ্ধে আছে’৷ ব্রাসেলসের ঘটনার পর ইউরোপীয় নেতারা জরুরি নিরাপত্তা বৈঠক করেছেন এবং সর্বত্র নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি বাড়িয়েছেন৷ তাদের সঙ্গে রয়েছেন বোমা বিশেষজ্ঞ, প্রশিক্ষিত কুকুর এবং সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
সব বড় বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে
লন্ডন, প্রাগ, অ্যামস্টারডাম, ভিয়েনাসহ ইউরোপের সব বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ লন্ডনের প্রধান বিমানবন্দর, হিথ্রোতে, পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে৷ পাশাপাশি, লন্ডনসহ বিভিন্ন শহরেও বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Rain
ডাচ পুলিশের সতর্ক অবস্থান
নেদারল্যান্ডসের অ্যামস্টারডাম বিমানবন্দরে নিরাপত্তা দিচ্ছে ডাচ মিলিটারি পুলিশ৷ ব্রাসেলস বিমানবন্দরে হামলার পরপরই সেখানকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়৷ ব্রাসেলসে মঙ্গলবার একাধিক বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন নিহত এবং প্রায় দুই শত মানুষ আহত হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/epa/E. Elzinga
ব্রিটেনে সতর্কতা
লন্ডনের বিমানবন্দরে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/J. Mansfield
ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে বাড়তি পুলিশ
জার্মান কর্তৃপক্ষও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা বাড়িয়েছে৷ বিশেষ করে বিমানবন্দর, ট্রেন স্টেশন আর বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবুর্গ সীমান্তে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে৷ তবে পুলিশের সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি চোখে পড়েছে জার্মানির সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে৷ শহরটির ট্রেন স্টেশনেও পুলিশ অবস্থান নিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Stache
রেল যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ
বেলজিয়ামে হামলার পর জার্মানির জাতীয় ট্রেন ব্যবস্থা, ডয়চে বান, ব্রাসেলসের সঙ্গে তাদের উচ্চগতির ট্রেন সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়৷ ব্রাসেলসের বদলে জার্মানির সীমান্তের শহর আখেনে ট্রেনগুলো থামানো হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. A. Gekiere
প্যারিসে আবারো উচ্চ সতর্কর্তা
প্যারিসে গত নভেম্বর সন্ত্রাসী হামলায় অনেকে প্রাণ হারান৷ মঙ্গলবার ব্রাসেলসে হামলার পরপরই তাই সেখানকার নিরাপত্তা আরো বাড়ানো হয়৷ প্যারিসের মূল বিমানবন্দর এবং সংশ্লিষ্ট ট্রেন স্টেশন দু’টিতে নিরাপত্তা বাহিনীর পুরো দল নিয়োগ করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/epa/E. Laurent
রাশিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুর্নমূল্যায়ন
রাশিয়ার যোগাযোগমন্ত্রী মাক্সিম সকোলভ জানিয়েছেন, ব্রাসেলসের ঘটনার পর সেদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও পুর্নমূল্যায়ন করা হবে৷ যদিও রাশিয়া আগে থেকেই বেশ সতর্ক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Golovkin
8 ছবি1 | 8
হতাহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কমপক্ষে ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন ইউরো দেয়া হয়েছে বলে বিচার মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে৷
মার্কেট বন্ধ থাকবে
হতাহতদের প্রতি সম্মান জানাতে ব্রাইটশাইডপ্লাৎসের ক্রিসমাস মার্কেট আজ মঙ্গলবার সারাদিব বন্ধ থাকবে৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার স্থানীয় গির্জায় নিহতদের স্মরণে আয়োজিত এক প্রার্থনায় অংশ নেন৷ এরপর নিহতদের নাম লেখা একটি ফলক উন্মোচন করা হয়৷ এছাড়া হামলার সময় রাত আটটা দুই মিনিটে ১২ মিনিট ধরে গির্জা ঘণ্টা বাজানো হবে৷
Berlin Christmas market attack: one year on
03:41
আমরি পুলিশের নজরে ছিল?
হামলাকারী আনিস আমরি ২০১৫ সালে ইটালি থেকে জার্মানিতে এসেছিলেন৷ এরপর বিভিন্ন নামে তিনি বিভিন্ন জায়গায় নিবন্ধন করেন৷ এই বিষয়টি ধরতে না পারায় এতদিন পুলিশের সমালোচনা করা হয়েছে৷ তবে ভেল্ট আম সনটাগ পত্রিকা রবিবার জানিয়েছে, জার্মানির গোয়েন্দারা নাকি আমরিকে কঠোর নজরের মধ্যে রেখেছিলেন৷ তাঁর মাধ্যমে অন্যদের ধরার জন্য আমরিকে মুক্ত অবস্থায় রাখা হয়েছিল বলে মনে করছে পত্রিকাটি৷ বার্লিন হামলার চারদিন পর আমরিকে গুলি করে হত্যা করে ইটালির পুলিশ৷