বার্সেলোনা অনেক পর্যটকেরই স্বপ্ন৷ স্পেনের ক্যাটালোনিয়া রাজ্যের রাজধানীর নানা আকর্ষণের মধ্যে একটি হলো ‘লা রামব্লা' সড়ক৷ সঙ্গে রয়েছে অসাধারণ একটি বাজার৷
বিজ্ঞাপন
বার্সেলোনা শহরের ‘লা রামব্লা' সড়ক এক কিলোমিটারের চেয়ে একটু বেশি বড়৷ প্লাসা দে কাটালুনিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত এটি বিস্তৃত৷ পথের শেষে কলম্বাসের বিখ্যাত মূর্তি শোভা পাচ্ছে৷ গোটা সড়কটি পাঁচটি ভাগে বিভক্ত৷ প্রত্যেকটির নিজস্ব একটি করে নাম রয়েছে৷ তাই সড়কের স্প্যানিশ নামটিই বহুবচনে রাখা হয়েছে৷
জন্ম থেকেই বার্সেলোনা শহরে বসবাস করছেন খুয়ান বায়েন৷ তাঁর পছন্দের জায়গা ‘রামব্লা সান জুসেপ'৷ অনেক ফুলের দোকান থাকায় জায়গাটিকে আদর করে ‘রামব্লা দে লাস ফ্লোরেস'-ও বলা হয়৷ খুয়ান বলেন, ‘‘এই লা রামব্লা-ই হলো ক্যাটালোনিয়ার প্রথম জায়গা, যেখানে ফুল বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল৷ তাই আজও ছোট-ছোট স্টলগুলিতেও এই রীতি চালু আছে৷ তারা এখনো পুরনো আমলের ঐতিহ্য অটুট রেখেছে৷ এটা সত্যি সুন্দর৷''
এর নাম ‘লা রামব্লা'৷ এখানকার ক্যাফে-গুলি ইতিহাসের সাক্ষী৷ আজ সেখানে মূলত পর্যটকদেরই ভিড় দেখা যায়৷ সারা বছর ধরেই তাদের সমাগম ঘটে৷ ফলে পকেটমারদের পোয়াবারো৷ শিল্পীরাও পর্যটকদের আমোদ দিয়ে দু'পয়সা কামিয়ে নেন৷ কেউ বলেন, ‘‘সবুজ, খোলা, সুন্দর – কিন্তু চরম ব্যস্ততায় ভরা৷ ভালো লাগে৷'' এক বলেন, ‘‘কিছুটা প্যারিসের শঁজেলিজের কথা মনে পড়ে৷ খুবই খাঁটি পরিবেশ, বিশেষ করে ‘লা বোকেরিয়া' নামের পিছনের ছোট্ট বাজারটি৷ অসাধারণ৷''
‘ফন দে কানালেটেস' ফোয়ারা খুয়ান বায়েনের প্রিয় জায়গাগুলির অন্যতম৷ তিনি বলেন, ‘‘এই জল – সত্যি অসাধারণ৷ একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী যে এই ফোয়ারার পানি খাবে, সে চিরকালের জন্য বার্সেলোনায় থেকে যাবে৷'
অনেক পর্যটকই বার্সেলোনায় থেকে যেতে এবং ‘লা রামব্লা'-য় হেঁটে বেড়াতে আপত্তি করবেন না৷
ইউরোপের কিছু কঠিন ও মজার ট্রাফিক আইন
খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে হয় ইউরোপে৷ পথচারীর গায়ে কাঁদা বা পানি ছিটালে জরিমানা, বেশি জোরে বা বেশি আস্তে চালালে জরিমানা, এমনকি নিজের গাড়ি পরিষ্কার না করলেও রেহাই নেই৷ ছবিঘরে থাকছে এমনই কিছু ট্রাফিক আইনের কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Förster
পানি ছিটাবেন না
ইউরোপের রাস্তায়ও বৃষ্টি হলে একটু-আধটু পানি জমে৷ অনেক সময় জলাবদ্ধতাও সৃষ্টি হয়৷ তবে জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ সদা তৎপর৷ এমনকি কোনো চালক অসতর্কতাবশত কারো গায়ে পানি ছিটিয়ে দিলে, সঙ্গে সঙ্গেই আইন দাঁড়ায় ভুক্তভোগীর পাশে৷ ব্রিটেনে এ অপরাধে ১০০ পাউন্ড জরিমানা হয় চালকের৷ ‘ওভারটেক’ করে মাঝের লেন দখল করে চালাতে শুরু করলে আরো বিপদ৷ জরিমানার অঙ্কটা তখন ১ হাজার পাউন্ড বা ১,৪০০ ইউরো!
ছবি: imago/Petra Schneider
গাড়ি পরিষ্কার না করলেও জরিমানা!
রুমানিয়ার রাস্তায় ভুলেও কখনো নোংরা গাড়ি নিয়ে নামবেন না৷ আপনার গাড়ি শহরের সৌন্দর্য হানির কারণ হলে কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ আপনাকে ছাড়বে না৷ এমনকি শুধু নাম্বারপ্লেট, হেডলাইট বা পেছনের লাইট পরিষ্কার না করলেও গুনতে হবে মোটা অঙ্কের জরিমানা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Imaginechina
বেশি ধীরে চালালেও মুশকিল
সুইজারল্যান্ডে কখনো কখনো একটু বেশি আস্তে গাড়ি চালালেও সমস্যা৷ বিশেষ করে তিন লেনের রাস্তার একেবারে বাঁ দিকের লেন দিয়ে কেউ নিজের খুশিমতো শামূকের গতিতে গাড়ি চালাবে, তা হবে না৷ এমন ক্ষেত্রে কোনো গাড়ির গতিবেগ যাতে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার (৬২ মাইল)-এর কম না হয়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে৷ আগামী ২০১৬ সাল থেকে দেশে এমনই একটি আইন কার্যকর করবে সুইস সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বরফ হইতে সাবধান
শীতে গাড়ির দিকে বিশেষ নজর দিতে হয়৷ নভেম্বর থেকে এপ্রিল – এই পাঁচমাস আইসল্যান্ডে রাস্তায় রাস্তায় বরফের কথা মাথায় রাখতেই হয়, লাগাতে হয় বিশেষ চাকা৷ অস্ট্রিয়া, এস্টোনিয়া, ফিনল্যান্ড এবং জার্মানিতে শীতের সময় এমন চাকা ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক নয়, তবে নিজের স্বার্থেই বেশির ভাগ মানুষ শীত এলে চাকা বদলে নেন৷ আসলে বরফ পড়লে ওই ধরনের চাকা ছাড়া গাড়ি চালানো কখনো কখনো অসম্ভব হয়ে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Heimken
পার্কিং
ফিনল্যান্ডে রাস্তাঘাট নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়৷ কখন কোন রাস্তা পরিষ্কার করা হবে, তা নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় কিংবা ইন্টারনেটে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, এমনকি অনেকক্ষেত্রে এসএমএস-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়৷ গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোথাও রেখে দেবেন সে উপায়ও নেই৷ কতক্ষণের মধ্যে সরাতে হবে তা প্রথমে জানানো হয় এসএমএস-এ, তারপরও না সরালে নগর কর্তৃপক্ষই সরিয়ে দেবে! তবে আপনার গাড়ি সরানোর খরচটা কিন্তু আপনার!
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Wennström
দিনেও জ্বালাতে হবে আলো
সুইডেন, নরওয়ে আর ডেনমার্কে গাড়ি চালানো শেখানোর সময়ই বলে দেয়া হয়, ‘যখনই আঁধার নামবে, তখনই আলো জ্বালাতে হবে৷’ তার মানে, দিনের বেলায় মেঘ করলে, কিংবা শীতের কুয়াশাঢাকা আকাশের নীচেও গাড়ির লাইট জ্বালানোটা বাধ্যতামূলক৷ ২০১১ সাল থেকে সব ইইউভুক্ত দেশেই গাড়িতে ‘ডে-টাইম রানিং লাইট’ রাখার আইন কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ ‘ডে-টাইম রানিং লাইট’ এমন এক বাতি, যা গাড়ির চাকা ঘুরলেই টুক করে জ্বলে ওঠে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Heimken
চশমা একটা কেন?
চোখে সমস্যা আছে? স্পেনে গাড়ি চালাতে যান, ড্রাইভিং লাইসেন্সেই তা লিখে দেয়া হবে৷ আর একবার লিখে দিলে সবসময় আপনাকে দু-দু’টো চশমা সঙ্গে রাখতে হবে৷ একটা চোখে, অন্যটা গাড়ির ড্যাশবোর্ডে৷ চশমা না পরার কোনো অজুহাত দেখানোর পথ বন্ধ করতেই এই ব্যবস্থা৷ ‘চশমাটা বাসায় রেখে চলে এসেছি’ বললেও মাফ নেই৷ জরিমানা গুনতেই হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সময় আর জায়গা অনুযায়ী গতি
জার্মানির অটোবান, অর্থাৎ হাইওয়েতে গাড়ির নির্দিষ্ট কোনো গতিসীমা নেই৷ তবে যেভাবে খুশি চালানোর উপায়ও নেই৷ গাড়ি চালাতে হয় জায়গা এবং সময় বুঝে৷ সে অনুযায়ী নির্ধারিত গতিসীমা লেখা থাকে রাস্তার পাশে৷ লোকালয়েও স্থান এবং সময়টাই গুরুত্বপূর্ণ৷ স্কুলের সামনে নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রম করলে জরিমানা তো হবেই, বাড়তি শাস্তি হিসেবে ‘পেনাল্টি পয়েন্ট’-ও যোগ হবে আপনার রেকর্ডে৷