বার্সেলোনায় তীব্র গরমে শীতল আশ্রয় হিট শেল্টার
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জুনে শহরটির তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছিল৷ বার্সেলোনার বাসিন্দাদের কাছে এই তাপমাত্রা অসহনীয়৷
তাপমাত্রা প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ জুনে বার্সেলোনায় গরম অতীতের রেকর্ড ভেঙেছিল৷ পর্যটক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে সেই তাপমাত্রা অসহনীয় ছিল৷ কিন্তু শহর কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে কী করতে পারে?
মেরি কাস্ত্রো ল্য প্রসপেরিটাট-এর একটি ক্যাফেতে কাজ করেন৷ বার্সেলোনার শ্রমজীবীদের জেলা এটি৷ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্যাফেটি শহরের একটি হিট শেল্টার৷ স্থানীয়রা এখানে এসে বিনা খরচায় বিশ্রাম নিতে পারেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা বিশেষ করে তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যারা ছুটি কাটাতে কোথাও যেতে পারেন না৷ এখানে তারা শীতল ছোঁয়া পেতে পারেন৷''
শহর কর্তৃপক্ষ মিউজিয়াম, লাইব্রেরি, ক্যাফে এবং পার্কে ৪০০ হিট শেল্টার তৈরি করেছে৷ অধিকাংশ মানুষই দশ মিনিটের মধ্যে এরকম শেল্টারে পৌঁছাতে পারবেন৷ যে কেউ এই মিউজিয়ামের এন্ট্রেস হলে পানি পানের পাশাপাশি শীতল পরিবেশে অবস্থান করতে পারবেন৷ ইরমা ভেনটাইয়ল প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছেন৷ ইউরোপে উচ্চ তাপমাত্রায় মৃত্যু ঝুঁকি থাকা শহরগুলোর অন্যতম বার্সেলোনা৷
বার্সেলোনা শহর প্রশাসনের ইরমা ভেনটাইয়ল বলেন, ‘‘পূর্বসতর্কতা হিসেবে নেটওয়ার্কটি গড়ে তোলা হয়েছে৷ শেল্টারগুলো সম্পর্কে মানুষের জানাটা গুরুত্বপূর্ণ৷ এগুলোর অস্তিত্ব তাদের জানা দরকার৷''
ল্য প্রসপেরিটাট-এর মতো নিম্নআয়ের মানুষদের জেলার ভবনগুলো মোটাদাগে ইনস্যুলেটেড নয়৷ মেরির ক্যাফেতে অনেকেই গ্রীষ্মে গরম নিয়ে ভোগান্তির গল্প করেন৷ অ্যল হোসে ফ্লর শীতল হতে এসেছেন৷
তিনি বলেন, ‘‘ঘরগুলো বাজেভাবে ইন্স্যুলেট করা এবং নীতিমালা অনুযায়ী দেয়ালে এয়ার কন্ডিশনার স্থাপনের সুযোগ নেই৷ এটা একটা বিপর্যয়৷''
এক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, নিম্নবিত্তদের জেলাগুলোতে হিট শেল্টারগুলো অপেক্ষাকৃত কম ব্যবহৃত হয়৷ ইসাবেলা আনগেলোহফস্কি বার্সেলোনার মতো শহরগুলোর উপর জলবায়ুর প্রভাব নিয়ে কাজ করছেন৷ প্রতি গ্রীষ্মে শহরটিতে নয়শো মানুষ গরমে প্রাণ হারান৷
অটোনমাস ইউনিভার্সিটি অব বার্সেলোনা-এর ইসাবেলা আনগেলোহফস্কি বলেন, ‘‘শ্রমজীবীদের জেলাগুলোর ৩০ শতাংশ বাসিন্দা কোথাও যান না৷ বেশি গরম পড়লে তারা ঘরের মধ্যেই থাকেন৷ তারা হিট শেল্টারে যাওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেন না, বরং নিজের ঘরে থাকেন৷ এতে বৃদ্ধ ও নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন৷''
আর তাই যানবাহন এবং দূষণ কমিয়ে পুরো শহরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ৷ পাশাপাশি রাস্তাঘাট এবং চত্বরগুলোর সবুজায়নে মনোযোগ দেয়া হচ্ছে৷ ২০৩০ সাল নাগাদ জলবায়ুনিরপেক্ষ হতে চায় বার্সেলোনা৷
ইরমা ভেনটাইয়ল বলেন, ‘‘শেল্টারের মতো মানিয়ে নেয়ার উদ্যোগ ছাড়াও আমরা হিট-আইল্যান্ড প্রভাব কমানোর চেষ্টা করছি৷ আমরা প্রতিফলিত এবং জল-ভেদ্য ফুটপাত নিয়ে গবেষণা করছি, যেখানে গাছ লাগানো সম্ভব নয় সেখানে কৃত্রিম ছায়ার ব্যবস্থা করছি৷''
কংক্রিটের সাগরের মাঝে অবস্থিত ল্য প্রসপেরিটাট৷ চত্বরের কাছে কৃত্রিম সৈকত গড়া হয়েছে৷ অনেকে আশা করছেন যেসব স্থানে পর্যটক তেমন যান না সেগুলো আরো সবুজায়ন করা হবে৷
গ্রীষ্ম মাত্র শুরু হয়েছে এবং শহরটিও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে৷ অনেকের আশঙ্কা এবারও রেকর্ড ভাঙবে বার্সেলোনার তাপমাত্রা৷
প্রতিবেদন: নরম্যান স্ট্রিগেল/এআই