শনিবার রিপোলে ঐ ইমামের বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ৷ ইমাম আব্দেলবাকি এস সাটি অবশ্য জুনে রিপোল মসজিদে ইমামের দায়িত্ব ছেড়ে অন্যত্র চলে যান৷ মসজিদের বর্তমান ইমাম জানিয়েছেন, সাটি পরিচিতদের জানিয়েছিলেন যে তিন মাসের জন্য মরক্কোতে নিজের বাড়িতে যাচ্ছেন তিনি৷ তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা, ঐ ইমাম সন্দেহভাজন হামলাকারীদের হামলা চালাতে প্রভাবিত করেছিলেন৷ তবে পুলিশের ধারণা, আলকানার একটি বিস্ফোরণে সাটি নিহত হয়েছেন৷ সেখানে একটি অ্যাপার্টমেন্টে বোমা বানানোর সময় তা বিস্ফোরিত হয়েছিল৷ তবে সাটি তার ফ্ল্যাটে যে ব্যক্তির সঙ্গে থাকতেন, তিনি জানান, গত সপ্তাহে তাকে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল৷
মাদ্রিদ, ফ্রাংকফুর্ট, লন্ডন, প্যারিস, ব্রাসেলস, নিস, বার্সেলোনা – একের পর এক ভয়াবহ হামলার শিকার ইউরোপ৷ বড় শহরগুলিতে সন্ত্রাসের হুমকি নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তাও৷ গত ১৩ বছরে ইউরোপে বিভিন্ন হামলার তথ্য নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: REUTERS/Stringerস্পেনে হামলার এক দিন পরেই ফিনল্যান্ডের টুর্কু শহরে ছুরি চালিয়ে ২ জনকে হত্যা করে এক আততায়ী৷ তার ছুরির আঘাতে কমপক্ষে আরও ৬ জন আহত হয়েছে৷ পুলিশ তার পায়ে গুলি করে তাকে গ্রেফতার করেছে৷ গোটা দেশে সতর্কতা জারি করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Riihimakiপ্রথমে বার্সেলোনা, তারপর উপকূলবর্তী কামব্রিলস ও আলকানার শহর৷ পর পর তিনটি সন্ত্রাসী হামলার মুখে স্পেনের কাটালুনিয়া রাজ্য৷ বার্সেলোনা শহরে হামলার দায় স্বীকার করেছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস৷ এতে নিহত হন ১৩ জন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/O. Duranযুক্তরাজ্যের লন্ডনের একটি মসজিদের বাইরে মুসল্লিদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেয় এক ব্রিটিশ নাগরিক৷ এ ঘটনায় নিহত হন একজন, গুরুতর আহত হন অনেকেই৷ হামলাকারী অভিবাসীবিরোধী এবং মুসলিমবিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত ছিলেন৷
ছবি: Reuters/Y. Mokলন্ডন ব্রিজে ঘুরতে আসা পথচারীদের ওপর গাড়ি তুলে দেয় তিন ইসলামি জঙ্গি৷ তাতেই থেমে থাকেনি তারা৷ গাড়ি হামলার পর কাছেই বোরো মার্কেটে ছুরি নিয়ে হামলা চালিয়ে ৮ জনকে খুন করে জঙ্গিরা৷
ছবি: Reuters/S. Wermuthঘটনাস্থল যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার৷ নর্থ ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার অ্যরেনায় আরিয়ানা গ্রান্ডের কনসার্টে আত্মঘাতি হামলায় নিহত হন ২২ জন৷
ছবি: Reuters/D. Hoganএকটি ট্রাক হাইজ্যাক করে সুইডেনের স্টকহোমের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মধ্যে চালিয়ে দেয় হামলাকারী৷ এতে মারা যান চার পথচারী৷
ছবি: Reuters/A. Wiklundএই ঘটনায় একটি ভাড়া করা এসইউভি গাড়ি লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার ব্রিজে পথচারিদের ওপর তুলে দেয় হামলাকারী৷ এ ঘটনায় চারজন মারা যান৷ এরপর গাড়ি থেকে নেমে এক পুলিশ অফিসারকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে হামলাকারী৷
ছবি: DW/A. Frymann Rouchহামলার অস্ত্র হাইজ্যাক করা ট্রাক৷ এবার ঘটনাস্থল জার্মানির বার্লিন৷ বার্লিনের ক্রিসমাস মার্কেটে ভিড়ের মধ্যে চালানো এ হামলায় নিহত হন ১২ জন৷
ছবি: picture alliance / NurPhotoফ্রান্সের পর্যটননগরী নিসে চলছিল বাস্তিল দিবস উদযাপনের আয়োজন৷ ফলে ভিড়ও ছিল অস্বাভাবিক৷ আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ট্রাক হামলা চালিয়ে ৮৬ জনকে হত্যা করে হামলাকারী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Langsdonবেলজিয়ামের ব্রাসেলস বিমানবন্দর ও সাবওয়েতে আত্মঘাতি হামলায় ৩২ জন নিহত হন, আহত হন শতাধিক৷ ইউরোপের অন্যান্য শহরে হামলায় এই হামলাকারীরাই জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/bsnyderফ্রান্সের প্যারিসে বাতাক্লঁ কনসার্ট হল ও আরো কয়েকটি এলাকায় একযোগে হামলা চালায়৷ নিহত হন ১৩০ জন৷ হামলাকারীরা জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের অনুসারী ছিল৷
ছবি: Reutersডেনমার্কের কোপেনহেগেন৷ এক বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন চলচ্চিত্র নির্মাতা ফিন ন্যোরগর্ট৷ এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যও আহত হন৷ একদিন পর একই হামলাকারী (যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে ওমর আল-হোসাইন নামে) একটি সিনাগগে হামলা চালিয়ে এক নিরাপত্তাকর্মীকে হত্যা করে৷ পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় হামলাকারী৷
ছবি: Reuters/H. Hanschkeফ্রান্সের প্যারিসে ব্যাঙ্গাত্মক পত্রিকা শার্লি এব্দোর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ১৭ জনকে হত্যা করা হয়৷ জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদা এই ঘটনার দায় স্বীকার করে৷ শার্লি এবদোয় মুসলিমদের মহানবী হযরত মোহাম্মদকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করার প্রতিশোধ বলে উল্লেখ করা হয় ঘটনাটিকে৷
ছবি: picture-alliance/Pixsell/S. Strukicবেলজিয়ামের ব্রাসেলসে এক ইহুদি জাদুঘরে কালাশনিকভ রাইফেল নিয়ে হামলা চালিয়ে চার জনকে হত্যা করে হামলাকারী৷ অভিযুক্ত ব্যক্তি সিরিয়ায় আইএস-এর হয়ে যুদ্ধ করেছে বলে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Y. Boudlalআল-কায়েদার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত দুই জঙ্গি লন্ডনের রাস্তায় লি রিগবি নামের এক ব্রিটিশ সৈন্যকে তাড়া করে এবং কুপিয়ে হত্যা করে৷
ছবি: picture alliance/AP Photoআল-কায়েদার সাথে সংশ্লিষ্ট এক বন্দুকধারী ফ্রান্সের টুলুস শহরে তিন ইহুদি স্কুলছাত্র, এক ইহুদি রাবাই এবং তিন প্যারাট্রুপারকে হত্যা করে৷
ছবি: REUTERSআন্ডার্স বেরিং ব্রেইভিক নামের এক মুসলিমবিদ্বেষী হামলাকারী, নরওয়ের অসলোতে বোমা হামলা চালায়৷ এরপর নরওয়ের উটোয়া দ্বীপের এক যুব ক্যাম্পে গুলি চালিয়ে ৭৭ জনকে হত্যা করে৷
ছবি: dapdশার্লি এব্দোর অফিসে হামলার ঘটনা৷ মুসলিমদের মহানবী হযরত মোহাম্মদের কার্টুন চিত্র প্রকাশ করায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় ম্যাগাজিনটির অফিসে৷ তবে এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি৷
ছবি: picture-alliance/abacaজার্মানির ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে ইসলামি জঙ্গি আরিদ উকা গুলি চালিয়ে দুই মার্কিন বৈমানিককে হত্যা করে৷ হামলাকারী আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের কর্মকান্ড নিয়ে একটি ভুয়া ভিডিও দেখে এ হামলায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে বলে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে৷
ছবি: APলন্ডনে আল-কায়েদার সাথে জড়িত চার আত্মঘাতি জঙ্গি তিনটি সাবওয়ে ট্রেন এবং একটি বাসে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়৷ এই ঘটনায় ৫২ জন যাত্রী নিহত হন৷
ছবি: APস্পেনের মাদ্রিদে চারটি ট্রেনে অফিসগামী যাত্রীদের ওপর বোমা হামলা চালানো হয়৷ মোট নিহত হন ১৯১ জন যাত্রী৷
ছবি: AP
স্থানীয় মুসলিমদের আতঙ্ক
বার্সেলোনায় সিরিজ হামলার পর থেকে সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে৷ বার্সেলোনার রাভালের কেন্দ্রে একটি ছোট মসজিদ৷ সেখানকার ইমাম রাজা মিয়া জানালেন, মুসল্লিরা গত দু'দিনে খুব একটা আসছে না মসজিদে৷ রাজা ন'বছর আগে বাংলাদেশ থেকে বার্সেলোনায় আসেন৷ তিনি জানান, ‘‘আমাদের সবার মধ্যে এতটাই আতঙ্ক বিরাজ করছে যে অনেকেই বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না৷ অনেক কম মানুষ নামাজ পড়তে আসছেন৷ সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ জন নামাজ পড়তে আসেন, সেখানে ১০ থেকে ১৫ জন এখন নামাজ পড়তে আসছেন৷'' বৃহস্পতিবার এই শহরেই ভিড়ের মধ্যে গাড়ি চালিয়ে ১৪ জনকে হত্যা করা হয় এবং আহত হয় বেশ কয়েকজন৷ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে তথাকথিত ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস৷ এর কয়েক ঘণ্টা পরে ক্যামব্রিলসে একই ধরনের হামলায় আরও একজন নিহত হয়৷ পুলিশের গুলিতে সন্দেহভাজন পাঁচজন নিহত হয়৷
স্পেনে চরম ডানপন্থি দলগুলোর আধিপত্য তেমন একটা চোখে পড়ে না৷ সরকারি এক জরিপে দেখা গেছে, স্পেনের মাত্র চার ভাগ মানুষ অভিবাসীদের ‘সমস্যা' হিসেবে মনে করে৷ তবে এটা ঠিক যে সাম্প্রতিককালে ইউরোপ জুড়ে যে জঙ্গি হামলার ঘটনাগুলো ঘটেছে, তার দায় স্বীকার করেছে ইসলামি জঙ্গি দল বা আইএস৷ এরপর থেকে বিদেশিদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনের ঘটনা বেড়েছে৷ বিভিন্ন জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে ২০১৪ সালে এমন ঘটনার সংখ্যা যেখানে মাত্র ৪৮টি রেকর্ড করা হয়েছিল, ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩৪টিতে৷ তাই বার্সেলোনায় এই হামলার পর এরকমহামলা অনেক বেড়ে যাবে বলে আশংকা করছেন স্থানীয় মুসলমানরা৷
কাটালান: ইসলামি জঙ্গিবাদ যেখানে একটি সমস্যা
স্পেনের অন্যান্য শহরের চেয়ে বার্সেলোনায় ইসলামি উগ্রবাদীরা বেশি সোচ্চার৷ এটা হয়ত সেখানকার সরকারের স্বৈরাচারী আচরণের কারণে৷ এছাড়া এই শহরে বহুজাতিক মানুষের বাস৷
২০১০ সালে উইকিলিক্সের ফাঁস হওয়ার তথ্যে দেখা যায়, মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ সেসময়ই কাটালানে তরুণ মুসলিমদের মধ্যে উগ্রবাদী আচরণ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছিল এবং সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেছিল৷ বলা হয়, কাটালান যে হুমকির মুখে এটা স্পষ্ট৷ আরও বলা হয়েছে, বার্সেলোনায় মুসলিম সম্প্রদায় বেশ বড় এবং তাদের মধ্যে কিছু যুবক ও তরুণদের দলে টানছে জিহাদি দলগুলো৷ উত্তর আফ্রিকা, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসীরা এদের মধ্যে অন্যতম৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)