যতটা দ্রুত ট্রাম্প শার্লটসভিলের ঘটনায় টুইট করেছেন, তার চেয়ে দ্রুত বার্সেলোনার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দেখালেন৷ সেখানে তিনি এমন এক জেনারেলের উদাহরণ টানলেন, যার বিরুদ্ধে শুকরের রক্তে বুলেট ডুবিয়ে মুসলিম সেনাদের হত্যা ও শুকরের সঙ্গে কবর দেয়ার একটি গল্প প্রচলিত আছে৷ তবে গল্পটি সত্য বলে কখনো প্রমাণিত হয়নি৷
বার্সেলোনা অ্যাটাকের পর ট্রাম্প প্রথমে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে একটি টুইট করেন৷ এর কিছুক্ষণের মধ্যেই এই টুইটটি করেন৷
ট্রাম্পের টুইটটি বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘‘গবেষণা করে দেখুন, জঙ্গিদের ধরার পর অ্যামেরিকান জেনারেল পার্শিং কী করেছিলেন৷ পরের ৩৫ বছর ইসলামি জঙ্গিবাদ হাওয়া হয়ে গিয়েছিল৷’’
১৯০৯ সাল থেকে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত জেনারেল জন পার্শিং আমেরিকার তৎকালীন উপনিবেশ ফিলিপিন্সের মোরো রাজ্যের গভর্নর ছিলেন৷
কথিত আছে, তিনি সেখানে ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীকে দমন করার জন্য ৫০ জনকে ধরে তার ৪৯ জনকে শুকরের রক্তে ভেজা বুলেট দিয়ে গুলি করান৷ এরপর একজনকে ছেড়ে দেন কী ঘটেছিল তা বলার জন্য৷
মাদ্রিদ, ফ্রাংকফুর্ট, লন্ডন, প্যারিস, ব্রাসেলস, নিস, বার্সেলোনা – একের পর এক ভয়াবহ হামলার শিকার ইউরোপ৷ বড় শহরগুলিতে সন্ত্রাসের হুমকি নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তাও৷ গত ১৩ বছরে ইউরোপে বিভিন্ন হামলার তথ্য নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: REUTERS/Stringerস্পেনে হামলার এক দিন পরেই ফিনল্যান্ডের টুর্কু শহরে ছুরি চালিয়ে ২ জনকে হত্যা করে এক আততায়ী৷ তার ছুরির আঘাতে কমপক্ষে আরও ৬ জন আহত হয়েছে৷ পুলিশ তার পায়ে গুলি করে তাকে গ্রেফতার করেছে৷ গোটা দেশে সতর্কতা জারি করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Riihimakiপ্রথমে বার্সেলোনা, তারপর উপকূলবর্তী কামব্রিলস ও আলকানার শহর৷ পর পর তিনটি সন্ত্রাসী হামলার মুখে স্পেনের কাটালুনিয়া রাজ্য৷ বার্সেলোনা শহরে হামলার দায় স্বীকার করেছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস৷ এতে নিহত হন ১৩ জন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/O. Duranযুক্তরাজ্যের লন্ডনের একটি মসজিদের বাইরে মুসল্লিদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেয় এক ব্রিটিশ নাগরিক৷ এ ঘটনায় নিহত হন একজন, গুরুতর আহত হন অনেকেই৷ হামলাকারী অভিবাসীবিরোধী এবং মুসলিমবিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত ছিলেন৷
ছবি: Reuters/Y. Mokলন্ডন ব্রিজে ঘুরতে আসা পথচারীদের ওপর গাড়ি তুলে দেয় তিন ইসলামি জঙ্গি৷ তাতেই থেমে থাকেনি তারা৷ গাড়ি হামলার পর কাছেই বোরো মার্কেটে ছুরি নিয়ে হামলা চালিয়ে ৮ জনকে খুন করে জঙ্গিরা৷
ছবি: Reuters/S. Wermuthঘটনাস্থল যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার৷ নর্থ ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার অ্যরেনায় আরিয়ানা গ্রান্ডের কনসার্টে আত্মঘাতি হামলায় নিহত হন ২২ জন৷
ছবি: Reuters/D. Hoganএকটি ট্রাক হাইজ্যাক করে সুইডেনের স্টকহোমের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মধ্যে চালিয়ে দেয় হামলাকারী৷ এতে মারা যান চার পথচারী৷
ছবি: Reuters/A. Wiklundএই ঘটনায় একটি ভাড়া করা এসইউভি গাড়ি লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার ব্রিজে পথচারিদের ওপর তুলে দেয় হামলাকারী৷ এ ঘটনায় চারজন মারা যান৷ এরপর গাড়ি থেকে নেমে এক পুলিশ অফিসারকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে হামলাকারী৷
ছবি: DW/A. Frymann Rouchহামলার অস্ত্র হাইজ্যাক করা ট্রাক৷ এবার ঘটনাস্থল জার্মানির বার্লিন৷ বার্লিনের ক্রিসমাস মার্কেটে ভিড়ের মধ্যে চালানো এ হামলায় নিহত হন ১২ জন৷
ছবি: picture alliance / NurPhotoফ্রান্সের পর্যটননগরী নিসে চলছিল বাস্তিল দিবস উদযাপনের আয়োজন৷ ফলে ভিড়ও ছিল অস্বাভাবিক৷ আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ট্রাক হামলা চালিয়ে ৮৬ জনকে হত্যা করে হামলাকারী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Langsdonবেলজিয়ামের ব্রাসেলস বিমানবন্দর ও সাবওয়েতে আত্মঘাতি হামলায় ৩২ জন নিহত হন, আহত হন শতাধিক৷ ইউরোপের অন্যান্য শহরে হামলায় এই হামলাকারীরাই জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/bsnyderফ্রান্সের প্যারিসে বাতাক্লঁ কনসার্ট হল ও আরো কয়েকটি এলাকায় একযোগে হামলা চালায়৷ নিহত হন ১৩০ জন৷ হামলাকারীরা জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের অনুসারী ছিল৷
ছবি: Reutersডেনমার্কের কোপেনহেগেন৷ এক বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন চলচ্চিত্র নির্মাতা ফিন ন্যোরগর্ট৷ এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যও আহত হন৷ একদিন পর একই হামলাকারী (যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে ওমর আল-হোসাইন নামে) একটি সিনাগগে হামলা চালিয়ে এক নিরাপত্তাকর্মীকে হত্যা করে৷ পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় হামলাকারী৷
ছবি: Reuters/H. Hanschkeফ্রান্সের প্যারিসে ব্যাঙ্গাত্মক পত্রিকা শার্লি এব্দোর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ১৭ জনকে হত্যা করা হয়৷ জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদা এই ঘটনার দায় স্বীকার করে৷ শার্লি এবদোয় মুসলিমদের মহানবী হযরত মোহাম্মদকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করার প্রতিশোধ বলে উল্লেখ করা হয় ঘটনাটিকে৷
ছবি: picture-alliance/Pixsell/S. Strukicবেলজিয়ামের ব্রাসেলসে এক ইহুদি জাদুঘরে কালাশনিকভ রাইফেল নিয়ে হামলা চালিয়ে চার জনকে হত্যা করে হামলাকারী৷ অভিযুক্ত ব্যক্তি সিরিয়ায় আইএস-এর হয়ে যুদ্ধ করেছে বলে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Y. Boudlalআল-কায়েদার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত দুই জঙ্গি লন্ডনের রাস্তায় লি রিগবি নামের এক ব্রিটিশ সৈন্যকে তাড়া করে এবং কুপিয়ে হত্যা করে৷
ছবি: picture alliance/AP Photoআল-কায়েদার সাথে সংশ্লিষ্ট এক বন্দুকধারী ফ্রান্সের টুলুস শহরে তিন ইহুদি স্কুলছাত্র, এক ইহুদি রাবাই এবং তিন প্যারাট্রুপারকে হত্যা করে৷
ছবি: REUTERSআন্ডার্স বেরিং ব্রেইভিক নামের এক মুসলিমবিদ্বেষী হামলাকারী, নরওয়ের অসলোতে বোমা হামলা চালায়৷ এরপর নরওয়ের উটোয়া দ্বীপের এক যুব ক্যাম্পে গুলি চালিয়ে ৭৭ জনকে হত্যা করে৷
ছবি: dapdশার্লি এব্দোর অফিসে হামলার ঘটনা৷ মুসলিমদের মহানবী হযরত মোহাম্মদের কার্টুন চিত্র প্রকাশ করায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় ম্যাগাজিনটির অফিসে৷ তবে এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি৷
ছবি: picture-alliance/abacaজার্মানির ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে ইসলামি জঙ্গি আরিদ উকা গুলি চালিয়ে দুই মার্কিন বৈমানিককে হত্যা করে৷ হামলাকারী আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের কর্মকান্ড নিয়ে একটি ভুয়া ভিডিও দেখে এ হামলায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে বলে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে৷
ছবি: APলন্ডনে আল-কায়েদার সাথে জড়িত চার আত্মঘাতি জঙ্গি তিনটি সাবওয়ে ট্রেন এবং একটি বাসে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়৷ এই ঘটনায় ৫২ জন যাত্রী নিহত হন৷
ছবি: APস্পেনের মাদ্রিদে চারটি ট্রেনে অফিসগামী যাত্রীদের ওপর বোমা হামলা চালানো হয়৷ মোট নিহত হন ১৯১ জন যাত্রী৷
ছবি: AP আরেকটি ‘মিথ’ চালু আছে, তা হলো পার্শিং মৃত মুসলিম জঙ্গিদের শুকরের সঙ্গে কবর দেন৷ তবে এসব ঘটনার কোনো ঐতিহাসিক সত্যতা নেই৷
ট্রাম্পের এই টুইটের পর সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে৷ গত বছর নির্বাচনের প্রচারণার সময়ও ট্রাম্প এ বিষয়টির অবতারণা করেছিলেন৷ সাউথ ক্যারোলাইনাতে প্রচারণার সময় পার্শিংয়ের নাম খুবই কৃতজ্ঞতার সুরে স্মরণ করেন তিনি৷ অতি ডানপন্থিদের সমর্থন আদায়ে তাঁর এসব কৌশল কাজে লেগেছে বলে ধারণা করা হয়৷
এবারও তাঁর এই মন্তব্য ‘বিশেষ রাজনৈতিক’ ফায়দা লোটার অংশ হিসেবেই করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ এক সপ্তাহ আগে ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলে একজন ‘সাদা' উগ্রতাবাদী জনতার উপর একইভাবে গাড়ি তুলে দেয়৷ সেই ঘটনার পর দু'দিন লেগেছে ট্রাম্পকে অতি ডানপন্থিদের ঘটনার জন্য দায়ী করতে৷ অবশ্য পরদিনই দু'পক্ষকেই দায়ী করে আবারো বক্তব্য দেন তিনি৷
অন্যদিকে, বার্সেলোনার ঘটনার পর ট্রাম্পের ‘প্রতিক্রিয়া’ ছিল খুবই দ্রুত ও একেবারেই বিপরীত৷
ফ্রেঞ্চ প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ অবশ্য দু'টি ঘটনাতেই একইরকমের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন এবং সেটা ট্রাম্পের বিরুদ্ধেই গেছে৷ নিজ দেশের ঘটনায় তিনি টুইট করেছেন, ‘‘আমাদের একতাবদ্ধ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ৷'' আর যুক্তরাষ্ট্রের ঘটনায় তিনি লেখেন, ‘‘যারা বর্ণ ও জাতবিদ্বেষের বিপক্ষে লড়ছে, আমরা তাদের সঙ্গে আছি৷ এই যুদ্ধ আমাদের সবার৷’’
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...