গিলগিট বালতিস্তানের নির্বাচন নিয়ে তীব্র বিতর্কে জড়িয়েছে ভারত এবং পাকিস্তান। ভারতের দাবি পাকিস্তান অবৈধ ভাবে ওই অঞ্চলটি দখল করে রেখেছে।
বিজ্ঞাপন
গিলগিট বালতিস্তানের নির্বাচন নিয়ে ফের বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে। আগামী ১৫ তারিখ সেখানে নির্বাচন হওয়ার কথা। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভোটের আগে গিলগিট বালতিস্তানকে একটি আলাদা পাক প্রদেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন। তারপরেই বিষয়টি নিয়ে কড়া বিবৃতি দিয়েছে ভারত। ভারতের বক্তব্য, ওই অঞ্চলটি অবৈধ ভাবে দখল করে রেখেছে পাকিস্তান। সেখানে ভোট করার বা আলাদা প্রদেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার কোনো অধিকার নেই পাকিস্তানের।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। আন্তর্জাতিক মঞ্চের হস্তক্ষেপে যুদ্ধ বন্ধ হলেও কাশ্মীর এবং লাদাখের একাংশ পাকিস্তান এবং অন্য অংশ ভারতের হাতে থেকে যায়। পাকিস্তানের কাশ্মীর অংশকে ভারত কোনোদিনই স্বীকার করেনি। ভারত ওই অঞ্চলটিকে পাক অধ্যুষিত কাশ্মীর হিসেবে চিহ্নিত করে। কাশ্মীর এবং লাদাখের সীমানায় অবস্থিত গিলগিট বালতিস্তান অঞ্চলটি নিয়ে তখন থেকেই দুই দেশের মধ্যে তীব্র বিরোধ রয়েছে। ভারতের দাবি, অবৈধ ভাবে পাকিস্তান ওই অঞ্চল দখল করে রেখেছে। বাস্তবে এলাকাটি ভারতের। কিন্তু পাকিস্তান কখনোই তা মেনে নেয়নি।
এশিয়ার মানচিত্রের যত রাজনীতি
এক দেশ থেকে আরেক দেশে বদলে যায় একই ভূখণ্ডের মানচিত্র৷ এশিয়ায় কেমন এই মানচিত্রের রাজনীতি, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/AFP/F. J. Brown
সরকারের যত কড়াকড়ি
ভারতের সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, উত্তর ভারতের অভিন্ন অঙ্গ জম্মু ও কাশ্মীর৷ তাই সেদেশের মানচিত্রে পাকিস্তান ও চীন নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকেও ভারতের অংশ হিসাবে দেখানো হয়৷ শুধু তাই নয়, ভারতে সরকার অনুমোদিত নকশা ছাড়া কাশ্মীরের অন্য সব মানচিত্র অবৈধ৷
পাকিস্তান যা বলছে
পাকিস্তানেও কাশ্মীরের মানচিত্র বেশ স্পর্শকাতর একটি বিষয়৷ কিন্তু ভারতের মতো সেখানে গোটা কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ হিসাবে দেখানো হয়না৷ এর বদলে মানচিত্রে কাশ্মীরের কিছু অংশের গায়ে ‘বিতর্কিত অংশ’ বা ‘অনির্দিষ্ট সীমান্ত’ লেখা থাকে৷
সরকারি মানচিত্র কতটা সঠিক?
জাতিসংঘের বৈশ্বিক জিওস্প্যাশিয়াল তথ্যবিষয়ক কমিটির প্রধান টিম ট্রেনর বলেন, ‘‘মানচিত্রের ক্ষমতা অনেক৷ একটি মানচিত্র দেখলেই আমরা ভেবে নিই যে তা আসলে সঠিক তথ্য দিচ্ছে৷’’ তাঁর মতে, মানচিত্র বিশ্বের মানুষের চিন্তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে৷ তিনি আরো বলেন যে, এশিয়ার অনেক দেশের সরকারি মানচিত্রের সাথে সত্যের খুব কমই মিল আছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. J. Brown
দক্ষিণ চীন সাগরের উদাহরণ
২০১৯ সালের ‘এবোমিনেবল’ ছবিতে একটি বিশেষ মানচিত্র দেখানোর ফলে দক্ষিণ চীন সাগরের দখল নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ সেই মানচিত্রে তাইওয়ান ও গোটা দক্ষিণ চীন সাগরকে চীনের অংশ হিসাবে দেখানো হয়৷ যদিও আন্তর্জাতিক মহলে এই অঞ্চলের ওপর মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন্স, ব্রুনেই, ভিয়েতনাম ও তাইওয়ান প্রভৃতি দেশের দাবি রয়েছে৷
মানচিত্র বিশেষজ্ঞ টিম ট্রেনর বলেন, যে কোনো মানচিত্রকে সঠিক ধরে নেবার আগে প্রশ্ন করতে হবে যে সেই মানচিত্রের কাজটা ঠিক কী, আর কারাই বা তৈরি করেছে সেই মানচিত্র৷ তিনি বলেন, ‘‘কোনো মানচিত্রের একটি মাত্র নির্দিষ্ট নকশা থাকতে পারেনা৷’’ তাঁর মতে, ভালো মানচিত্র সেটাই যেখানে তথ্যের সূত্র ও তথ্যপ্রাপ্তির তারিখ দেওয়া থাকে৷ পাশাপাশি, বিতর্কিত সীমান্তের উল্লেখও থাকা উচিত৷
ছবি: Public Domain
অবস্থান অনুযায়ী বদলায় মানচিত্র
বিশ্বের বেশিরভাগ গবেষক ও সাধারণ নাগরিক মানচিত্র বিষয়ে ধারণা পেতে গুগল ম্যাপস বা গুগল আর্থ-এর মতো অ্যাপের ওপর নির্ভর করেন৷ কিন্তু ডয়চে ভেলেকে গুগল জানিয়েছে, অ্যাপ ব্যবহারকারী কোন মানচিত্র দেখতে পাবেন তা তার অবস্থানের ওপর নির্ভর করে৷ যেমন ভারতের বাসিন্দারা ভারত সরকার অনুমোদিত মানচিত্রই দেখতে পান৷ কিন্তু কেন অন্যান্য মানচিত্রের তথ্য দেয়না গুগল, সেবিষয়ে তাঁরা কিছু বলেনি৷
ছবি: Knight-Mozilla-MIT “The Open Internet” Hack Day/opennews.kzhu.io
6 ছবি1 | 6
দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল গিলগিট বালতিস্তান। জনবসতিও খুব বেশি নয়। এতদিন পাকিস্তান ওই অঞ্চলে আলাদা করে কোনো নির্বাচন করেনি। কিন্তু এ বছরের গোড়ায় গিলগিট বালতিস্তানকে আলাদা স্টেটাস দেওয়ার আলোচনা শুরু হয়। সেখানে আলাদা করে ভোটের প্রস্তুতিও শুরু হয়। কিছু দিন আগে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট গিলগিট বালতিস্তানে ভোটের দাবি মেনে নেয় এবং ভোটের দিন ঘোষণা করে। যদিও করোনার কারণে ভোটের প্রাথমিক সূচি পরিবর্তিত হয়।
রোববার পাক প্রধানমন্ত্রী আগামী ১৫ তারিখ ওই এলাকায় ভোটের চূড়ান্ত সূচি ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে ওই এলাকাকে প্রভিনসিয়াল স্টেটাস দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন। তারপরেই তীব্র বিরোধিতা শুরু করেছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, '১৯৪৭ সালে যে অ্যাকসেশন চুক্তির মাধ্যমে কাশ্মীর ভারতে যোগ দিয়েছিল, সেই চুক্তি অনুযায়ী গিলগিট বালতিস্তানও ভারতেরই অংশ। কিন্তু পাকিস্তান তা অবৈধ ভাবে দখল করে রেখেছে। ওই অঞ্চলে ভোট করার বা স্টেটাস বদলানোর কোনো অধিকার পাকিস্তানের নেই।'
কার, কতগুলো পারমাণবিক বোমা আছে
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে বর্তমানে ১৩,৪০০টি আণবিক বোমা আছে৷ তবে এ সব বোমার সংখ্যা কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/KCNA
রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশি
স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট সিপ্রি-র তথ্য অনুসারে রাশিয়ার কাছে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আণবিক বোমা রয়েছে৷ দেশটিতে এ ধরনের বোমার সংখ্যা ৬,৩৭৫টি৷ ১৯৪৯ সালে রাশিয়া প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা করেছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kolesnikova
দ্বিতীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা বানিয়েছে এবং একমাত্র দেশ যারা যুদ্ধেও এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে৷ দেশটির কাছে এখন ৫,৮০০ টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
চীনও পিছিয়ে নেই
৩২০টি পারমাণবিক বোমা আছে চীনের৷ রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সংখ্যাটা কম হলেও দেশটি ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়াচ্ছে৷ যেমন ২০১৯ সালেই তাদের কাছে ২৯০ টি বোমা ছিল৷ স্থল, আকাশ বা সমুদ্রপথে সেগুলো ছোঁড়া সম্ভব৷
ছবি: Getty Images
সাবমেরিনে পারমাণবিক বোমা
ফ্রান্সের কাছে পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে ২৯০টি৷ এগুলোর অধিকাংশই রয়েছে সাবমেরিনে৷ দেশটির অন্তত একটি সাবমেরিন সবসময় পারমাণবিক বোমা নিয়ে টহল দেয়৷
ছবি: AP
যুক্তরাজ্যেরও আছে পারমাণবিক বোমা
২১৫টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে যুক্তরাজ্যের কাছে৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এই দেশটি ১৯৫২ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kaminski
দক্ষিণ এশিয়ায় এগিয়ে পাকিস্তান
ইতোমধ্যে তিনবার প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে পাকিস্তান৷ দেশটির আছে ১৬০টি আণবিক বোমা৷ সাম্প্রতিক সময়ে পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়িয়েছে দেশটি৷ অনেকে আশঙ্কা করেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে দেশটির লড়াই কোন এক সময় পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP
থেমে নেই ভারত
পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়াচ্ছে ভারতও৷ দেশটি প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ১৯৭৪ সালে৷ সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, তাদের কাছে এখন ১৫০টি বোমা রয়েছে৷ ভারত অবশ্য জানিয়েছে, তারা আগে কোনো দেশকে আঘাত করবে না, আর যেসব দেশের পারমাণবিক বোমা নেই, সেসব দেশের বিরুদ্ধে তারা এ ধরনের বোমা ব্যবহার করবে না কোনোদিন৷
ছবি: Reuters
ইসরায়েল সম্পর্কে তথ্য কম
ইসরায়েল অবশ্য নিজের দেশের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে তেমন কিছু জনসমক্ষে প্রকাশ করে না৷ যদিও দেশটির নব্বইটি পারমাণবিক ‘ওয়ারহেড’ আছে বলে উল্লেখ করেছে সিপ্রি৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
উত্তর কোরিয়া সবার নীচে
পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করে উত্তর কোরিয়াও৷ এখন দেশটির কাছে থাকা বোমার সংখ্যা আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০টি৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও পাকিস্তান ওই অঞ্চলে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দেওয়া, কাশ্মীর এবং লাদাখকে ভেঙে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করার পরেই পাকিস্তান গিলগিট বালতিস্তান নিয়ে এত বড় পদক্ষেপ নিল। গত এক বছর ধরে পাকিস্তান কাশ্মীর নিয়ে ভারতের পদক্ষেপ নিয়ে বহু বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করেছে। চীন এবং সহযোগী রাষ্ট্র তুরস্ক এবং আরব বিশ্বকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাময়িক সাহায্যও তারা পেয়েছে।
জাতিসংঘে কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছে চীন। তুরস্ক কাশ্মীর নিয়ে ভারতবিরোধী মন্তব্য করেছে। সম্প্রতি সৌদি আরবভারতের ম্যাপ থেকে কাশ্মীর বাদ দিয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চ এ বিষয়ে বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অন্যদিকে ভারত সফল ভাবেই আন্তর্জাতিক মঞ্চকে বোঝাতে পেরেছে, কাশ্মীর সমস্যা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। পাকিস্তানের সে বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনো অধিকার নেই।
গিলগিট বালতিস্তান নিয়ে সেই অস্ত্রই ব্যবহার করছে পাকিস্তান। তাদের বক্তব্য, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের মন্তব্যের কোনো অধিকার নেই। যদিও ভারত ওই অঞ্চলটিকে পাকিস্তানের অংশ বলতেই রাজি নয়।