তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর কক্সবাজারের উখিয়ায় বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে৷ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস৷
বিজ্ঞাপন
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার দিকে লাগা আগুন বিকেল সোয়া ৫টার দিকে নিয়ন্ত্রণে এসেছে৷ তাদের সাতটি ইউনিট কাজ করেছে৷
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে রোহিঙ্গা শিবিরের কী সংখ্যক বসতঘর পুড়েছে তার কোনো হিসাব তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি৷
উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলীর বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, দুপুর আড়াইটায় উখিয়া উপজেলার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের বি-ব্লকে হঠাৎ করে আগুনের ঘটনা ঘটে৷ মুহূর্তের মধ্যে আগুন বিভিন্ন বসতঘরে ছড়িয়ে যায়৷
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, আগুন একসময় আশপাশের ১০ ও ১২ নম্বর আশ্রয় শিবিরেও ছড়িয়ে পড়ে৷
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, স্বেচ্ছাসেবীরাও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন৷ এ আগুনে অন্তত ৫০টি ঘর পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম৷
তবে প্রথম আলো জানিয়েছে, পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ির মধ্যে অন্তত ২০টি বেসরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, রোহিঙ্গা শিশুদের পাঠদানের লার্নিং সেন্টার ও ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র রয়েছে৷
আগুনের উৎস সম্পর্কে এখনও কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ৷ তবে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কামিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের বরাত দিয়ে প্রথম আলো জানিয়েছে, এ ঘটনায় ১৪-১৫ বছর বয়সি এক রোহিঙ্গা কিশোরকে দেশলাইসহ আটক করা হয়েছে৷ এই কিশোরকে ঘরে আগুন দিতে দেখেছেন অনেকে৷ তিনি জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে, এটি পরিকল্পিত বা নাশকতামূলক অগ্নিকাণ্ড কি না৷
রোববার বিকেলে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের শফিউল্লাহ কাটা এলাকার ১৬নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের ঘটনায় শতাধিক রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে যায়৷ তবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি৷
ছবি: Abdur Rahman
বছরের শুরুতে আগুন
২০২২ সালের দ্বিতীয় দিন ২ জানুয়ারি উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা পরিচালিত করোনা হাসপাতালে আগুন লাগে৷ এতে কেউ হতাহত না হলেও হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারের ১৬টি কেবিন পুড়ে যায়৷
ছবি: MOHAMMAD PONIR HOSSAIN/REUTERS
পরিসংখ্যান
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে ৬৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ ২০২০ সালে ঘটেছিল ৮২টি৷ যদিও রোহিঙ্গাদের হিসেবে এই সংখ্যা আরো বেশি৷ টেকনাফের চেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে উখিয়ার শরণার্থী শিবিরে৷
ছবি: Str/REUTERS
সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
গত বছরের ২২ মার্চ উখিয়ার বালুখালীর একটি শিবিরে আগুন লেগে শিশুসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল৷ আশ্রয় হারিয়েছিলেন প্রায় ৪৫ হাজার শরণার্থী৷ যদিও সেই সময় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর নিহতের সংখ্যা ১৫ জন বলে উল্লেখ করেছিল৷
ছবি: Shafiqur Rahman/AP Photo/picture alliance
সম্ভাব্য কারণ
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টেকনাফ স্টেশনের কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক জানান, রোহিঙ্গা শিবিরগুলো ঘনবসতিপূর্ণ৷ সেখানে ঝুপড়ি ঘর আছে৷ দুর্গম পাহাড়ে অবস্থানের কারণে আগুন লাগলে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় না৷ বেশিরভাগ ক্যাম্পে রাস্তার কারণে ভেতরে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে৷ রোহিঙ্গা শিবিরের অস্থায়ী আশ্রয়গুলির বেশিরভাগ বাঁশ, ত্রিপলের মতো দাহ্য পদার্থ দিয়ে তৈরি৷ ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে যায়৷
ছবি: AFP
টেকনাফে আগুন
২০২১ সালের জানুয়ারিতে টেকনাফে নথিভুক্ত শরণার্থী শিবিরে একাধিক ক্ষয়ক্ষতি হয়৷ পুড়ে যায় প্রায় ৪৫০টি ঘর৷ জানুয়ারি মাসে উখিয়ার ১৬ নম্বর শিবিরে আগুন লেগেছিল৷ ১৪ জানুয়ারি আরও একটি অগ্নিকাণ্ডে কয়েকশ ঘর পুড়ে গিয়েছিল৷
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
আগুন বালুখালিতে
২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন লাগে৷ ১৭ এপ্রিল আরও ১টি শিবিরে আগুনের ঘটনায় তিনটি দোকান পুড়ে যায়৷ সেই বছরের ২০ জুলাই বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরের ৯ নম্বর ক্যাম্পে আগুন লাগে৷
ছবি: MOHAMMAD PONIR HOSSAIN/REUTERS
কুতুপালংয়ে আগুন
২০২০ সালের মে মাসে কুতুপালংয়ের লাম্বাশেয়া শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে৷ ২০১৯ সালের এপ্রিলে কুতুপালংয়ের শিবিরে আগুন লেগে ২৪টি বাড়ি পুড়ে যায়৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয় মসজিদও৷
ছবি: Shafiqur Rahman/AP Photo/picture alliance
ভারতে রোহিঙ্গা শিবিরেও আগুন
ভারতের দিল্লির মদনপুর খাদার এলাকার রোহিঙ্গা শিবিরে ২০১৮ এবং ২০২১ সালে আগুন লেগেছিল৷ হরিয়ানার নুহ এলাকার রোহিঙ্গা শিবিরেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে৷
ছবি: Stringer/AA/picture alliance
9 ছবি1 | 9
এডিকে/এআই (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, প্রথম আলো, এপি, রয়টার্স)