ভারত-পাকিস্তানের বাকযুদ্ধ নতুন বিষয় নয়৷ কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে ভাষণে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সরাসরি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সংকটের উল্লেখ করলেন, তা অভূতপূর্ব ঘটনা৷
বিজ্ঞাপন
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনা নিয়ে পাকিস্তান বিভিন্ন পর্যায়ে একের পর এক কড়া মন্তব্য করে চলেছে৷ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাকিস্তান সফরের সময়েও দুই দেশের শীতল সম্পর্কের স্পষ্ট পরিচয় পাওয়া গেছে৷ সেই শীতল পরিবেশ কাটিয়ে তুলতে ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির আসন্ন পাকিস্তান সফরের সময় ‘উষ্ণ অভ্যর্থনা'-র অঙ্গীকার করেছে পাকিস্তান৷ তবে উত্তেজনা যে কমার কোনো লক্ষণ নেই, তা স্পষ্ট হয়ে গেল ভারতের ৭০তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণে৷
ভাষণে মোদী বলেছেন, ‘‘আমি বালুচিস্তান, গিলগিট, বাল্টিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই৷ বালুচিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে যে নিপীড়ন চলছে, সে বিষয়ে গোটা বিশ্বকে পাকিস্তানের উত্তর দেবার সময় এসে গেছে৷'' তিনি আরও বলেন, এই সব এলাকার মানুষ গত কয়েক দিনে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে৷ তারা যে ভারতের সমর্থন চাইছে, এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয় বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন৷ এমনকি পেশোয়ার হামলায় নিষ্পাপ শিশুদের মৃত্যুর ঘটনারও উল্লেখ করেন মোদী৷
এই প্রথম কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের উল্লেখ করলেন৷ সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফসহ প্রশাসনের অনেক প্রতিনিধি যেভাবে সম্প্রতি কাশ্মীর প্রসঙ্গে কড়া বক্তব্য রেখে আসছেন, পাকিস্তানের মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখ করার পদক্ষেপকে তারই জবাব হিসেবে দেখছেন অনেক বিশেষজ্ঞ৷ উল্লেখ্য, কাশ্মীর নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার প্রস্তাবকে নস্যাৎ করে ভারত সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার পালটা প্রস্তাব দিয়েছে৷
১৪ই আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে ভারতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আবদুল বাসিত ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের স্বাধীনতা নিয়ে একাধিক মন্তব্য করেছিলেন৷ হাই কমিশন ভবনে পতাকা উত্তোলনের সময়ে তিনি বলেন, ‘‘এবারের স্বাধীনতা দিবসের দিনটি আমরা কাশ্মীরের স্বাধীনতা দিবসের জন্য উৎসর্গ করছি৷''
এদিকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে স্বাধীনতা দিবসের দিনে একাধিক হামলার খবর পাওয়া গেছে৷ সশস্ত্র জঙ্গিরা দু'টি পুলিশ স্টেশনের উপর হামলা চালিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে৷
কাশ্মীর সমস্যার সমাধান কি সম্ভব?
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সহিংসতা আবারো এই প্রশ্নকে উস্কে দিয়েছে৷ কি চায় কাশ্মীরের জনগণ? আর ভারত সরকার কি সেখানকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে? কাশ্মীরের বর্তমান সংকট নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP/T.Mustafa
সংঘর্ষের সূত্রপাত
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৮ জুলাই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে কথিত সংঘর্ষে স্থানীয় হিজবুল মুজাহিদীন কমান্ডার বুরহান ওয়ানি নিহত হওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে৷ বুরহান নিহত হওয়ার প্রতিবাদে হাজার হাজার ক্ষুব্ধ জনতা সড়কে নেমে নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর ইট পাটকেল ছুড়লে পাল্টা গুলি চলে তাদের ওপর৷ সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৪০ এরও বেশি নিহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Yasin
কারফিউয়ে জনজীবন অচল
কাশ্মীরি নেতাদের বনধের ডাকে সমগ্র কাশ্মীর উপত্যকার জনজীবন স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ কারফিউ জারি করেও নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না প্রতিবাদকারীদের৷ অন্যদিকে, খাবার ও ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে৷ মোবাইল ও ইন্টারনেট এবং ট্রেন সার্ভিস বন্ধ রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
আরো সেনা মোতায়েন
সাম্প্রতিক উত্তেজনার কারণে চলতি সপ্তাহে ওই অঞ্চলে বাড়তি ৮শ’ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
নিহতদের বেশিরভাগই তরুণ
সাম্প্রতিক সহিংসতার নিহত ৪৪ জনের মধ্যে বেশিরভাগই বয়সে তরুণ৷ তাদের বয়স ১৬ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে৷ আহতদের মধ্যে অনেক শিশু ও নারী রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে শতাধিক মানুষ
চিকিৎসকদের আশঙ্কা, কারফিউয়ের কারণে প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং রক্তের অভাবে আরো অনেকের মৃত্যু হতে পারে৷ প্রায় শতাধিক মানুষের চোখে শটগানের গুলি লেগেছে বলে জানিয়েছেন তারা৷ দ্রুত চিকিৎসা না হলে তারা দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন৷
ছবি: Reuters/D.Ismail
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক
কাশ্মীরে চলমান সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তান অভিযোগ করায় দু’পক্ষের সম্পর্ক আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে৷ পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে ভারত সরকারের অস্বস্তি বেড়েছে৷ ইসলামাবাদে সার্কভুক্ত দেশগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ যাবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Press Information Bureau
চাপে মোদী সরকার
কাশ্মীর পরিস্থিতির কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী অভ্যন্তরীণ চাপের মুখেও পড়তে পারেন বলে সরকারের একাংশের আশঙ্কা৷ প্রশ্ন উঠতে পারে, মোদীর পাকিস্তান নীতি নিয়েও৷ নরেন্দ্র মোদী সরকারের শুরুটাই হয়েছিল পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির বার্তা দিয়ে৷ পাঠানকোট হামলার পর পরিস্থিতি বদলে যায়৷ আর কাশ্মীর ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিন্দায় চাপে পড়েছে মোদী সরকার৷
ছবি: DW/J. Akhtar
কাশ্মীর কার ভূখণ্ড?
ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রই কাশ্মীরকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে আসছে৷ দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে ওই অঞ্চলটি নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে আছে পরমাণু শক্তিধর এই দুই রাষ্ট্র৷ এই সময়ের মাঝে দুটি দেশই দুইবার বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
যে কারণে সহিংসতা
মুসলিম অধ্যুষিত ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী কাশ্মীরের স্বাধীনতার লক্ষ্যে অস্ত্র তুলে নেয়৷ এরপর থেকে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি এবং সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায়ই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কাশ্মীর পরিস্থিতি৷