বালুর তৈরি শিল্পকর্ম দেখেছেন কখনো? গ্রান ক্যানারিয়াতে যিশুর জন্মের কাহিনী বালুর তৈরি ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন একদল শিল্পী৷ চলুন সেগুলো দেখে আসি৷
বিজ্ঞাপন
বড়দিনের গল্পের এক ব্যতিক্রমী উপস্থাপনা: গ্রান ক্যানারিয়ায় জড়ো হওয়া শিল্পীরা বড়দিনের নানা ঘটনা ফুটিয়ে তুলেছেন বালু দিয়ে তৈরি ভাস্কর্যের মাধ্যমে৷ বালুশিল্পী সানিটা রাভিনার ভাষায়, ‘‘এটা হচ্ছে যিশুর জন্মের সময়কার কাহিনীর ভিত্তিতে তৈরি আমার শিল্পকর্ম যেখানে দেখা যাচ্ছে শিশু যিশু মারিয়ার কোলে রয়েছেন এবং যোশেফ পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন৷ তাদেরকে শান্তিপূর্ণ, সুখি হিসেবে উপস্থাপন আমার কাছে জরুরী ছিল৷ অন্যথায় ছবিটা সঠিক হতো না বলে আমার মনে হয়েছে৷''
সানিটা রাভিনা লাটভিয়া থেকে এসেছেন৷ বালু দিয়ে তাঁর বড়দিনের এই চিত্রকর্ম তৈরিতে আটদিন সময় লেগেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘সম্ভবত বারো বা তের বছর বয়সে বালু দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি শুরু করি আমি৷ সেটা ছিল লাটভিয়াতে৷ শিশুদের এক প্রতিযোগিতায় সেটা করেছিলাম যা বছরে একবার হয়৷ জুলাই মাসের ঘটনা ছিল সেটা৷ আমি সেখানে যাওয়া শুরু করি৷ প্রথমদিকে অবশ্য আমি কিছুই জিততে পারিনি৷ তবে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি এই কাজে পারদর্শী হয়ে উঠি এবং প্রথম পুরস্কার পেতে শুরু করি৷''
বালু শিল্পকর্মে যিশু
03:37
ক্যানেরি দ্বীপের তাপমাত্রা এমন যে শীতের মাঝামাঝি সময়েও সেখানে সাঁতার কাটা যায়৷ অনেকটা গ্রীষ্মে বড়দিনের মৌসুমের মতো৷
লাস পামাসের জনপ্রিয় দ্বীপে আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে গেলে দর্শনার্থীদের মধ্যে বড়দিনের মৌসুমের অনুভূতি সৃষ্টি হয়৷ যিশুর জন্মের কাহিনীর ভিত্তিতে তৈরি নানা ভাস্কর্য তৈরির এই উৎসব ১৪ বছর ধরে চলছে৷ চলতি বছর এখানে আটটি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে, যেগুলো তৈরিতে দু'হাজার টন বালু ব্যবহার করা হয়েছে৷
লাস পামাসের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ কলম্বাস হাউস৷ এটারও বালুর ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে যেটা দেখতে অনেকটা বাথলহামের মতো৷ কিছু শিল্পী তাদের কাজের মাধ্যমে কিছু গোপন বার্তাও দিচ্ছেন৷ সানিটা বলেন, ‘‘আমি এখানে ইংরেজি এম অক্ষরটি লিখেছি৷ এর অর্থ মারিয়া এবং মা৷ এটা আমার ক্ষুদ্রবার্তা৷ এবং আমি মাঝেমাঝে এরকম করি৷ কখনো কখনো ছোট প্রাণী লুকিয়ে রাখি৷ এবার আমি চিন্তা করেছি যে আমি এম লিখবো৷ যারা এটা দেখবে, বুঝবে৷ যারা দেখবেনা, বুঝবেনা৷ এটা মজা৷''
গ্রান ক্যানারিয়ায় বড়দিন উপলক্ষ্যে বালুর এসব শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হয় যা জানুয়ারির সাত তারিখ অবধি উপভোগ করা যাবে৷
সমুদ্র সৈকতে বালুর দুর্গ
বিশ্বের সব সমুদ্র সৈকতেই প্রতিদিন কেউ না কেউ মাতেন অদ্ভুত এক খেলায়৷ বিশ্বের অনেক দেশে সেই খেলা শিল্পের মর্যাদা পেয়েছে৷ বালু দিয়ে দুর্গ গড়া! দেখুন তারই অসাধারণ কিছু নমুনা৷
ছবি: Getty Images/M. Renders
ঘর বাঁধা বাঁধা খেলা
শৈশবে সুযোগ পেলে বালু দিয়ে ঘর বাঁধা বাঁধা খেলেনি এমন মানুষ পৃথিবীতে কমই আছে৷ শৈশবের এই নেশা অনেকে আবার চিরকাল ধরে রাখেন – সমুদ্রের কাছে গিয়ে বালু দিয়ে গড়ে তোলেন অসাধারণ সব শিল্পকর্ম৷
ছবি: Colourbox/O. Dimier
অনন্য বেলজিয়াম
বালু দিয়ে শিল্প সৃষ্টিতে বেলজিয়ানদের জুড়ি মেলা ভার৷ এই শিল্পকে নিজেদের সংস্কৃতির অংশ করে ধরেও রেখেছে দেশটি৷ দারুণ একটা উৎসব হয় সেখানে৷ সে উৎসবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শত শত লোক শুধু বালু দিয়ে দুর্গ, মূর্তি ইত্যাদি গড়ে৷ বন্দর নগর অস্টেন্ডেতে ক’দিন আগেও হয়ে গেল এমন এক উৎসব৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
বরফ-রানি
অস্টেন্ডের উৎসবে এখন বরফ রানি ‘এলসা’-র রাজত্ব৷ ১২টি দেশের ৩০ জন শিল্পীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল ‘এলসা’৷ শিল্পীরা কাজটি করেছেন ডিজনি গ্রুপের হয়ে৷ ঝড়-বৃষ্টি সামলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ অবস্তাতেই থাকবে অপূর্ব সুন্দর এই বালুর মূর্তি৷ এমন পরিকল্পনা মাথায় রেখেই ‘এলসা’-কে গড়েছেন শিল্পীরা৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
সমুদ্রের দেবতা
বালু দিয়ে দুর্গ বা মূর্তি গড়া অস্ট্রেলিয়াতেও বেশ জনপ্রিয়৷ মেলবোর্নে প্রতি বছর আয়োজন করা হয় এমন শিল্পের প্রদর্শনী৷ ওপরের ছবিটি ২০১৩ সালের প্রদর্শনীর৷ সেবার প্রদর্শনীর ‘থিম’ ছিল ‘আন্ডার দ্য সি’, অর্থাৎ সমুদ্রের নীচের জগত৷ তাই গ্রীক পুরান থেকে উঠে এসেছিলেন সমুদ্রের দেবতা পসিডন৷
ছবি: Getty Images/G. Denholm
রহস্য
‘বালুর বাঁধ’ মানেই নাকি ভঙুর কিছু৷ কিন্তু বালি দিয়ে গড়া মূর্তি, দুর্গ বা অট্টালিকা কেন এত উঁচু, এত বড় হলেও ভাঙে না? রহস্যটা কী? আসলে নাজুক বালুর স্বভাব বদলাতে অনেক রকমের কৌশলের আশ্রয় নিতে হয় শিল্পীদের৷ কখনো কখনো খুব ভারি কিছু দিয়ে চেপে বালুকে পাথরের মতো শক্ত করা হয়৷ সুইজারল্যান্ডের রহশাস-এর এক উৎসবে প্রদর্শিত এই মূর্তিটিকে ওভাবেই শক্ত করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/DUMONT Bildarchiv
সবচেয়ে বড় জাদুঘর
জাপানেও সমুদ্র আছে, বালু নিয়ে শিল্পের খেলাও আছে সেখানে৷ ২০০৬ সালে বালু-শিল্প নিদর্শনের সবচেয়ে বড় জাদুঘরটির উদ্বোধন হয়েছে টোট্টরি শহরে৷ এছাড়া আশিয়া সমুদ্র সৈকতে বালু দিয়ে মূর্তি তৈরির উৎসবও হয় প্রতি বছর৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo
শিশুগন দেয় মন.....
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান বা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সব দেশের অজপাড়াগাঁয়ের শিশু-কিশোরদের মতো ইউরোপ-অ্যামেরিকার শিশু-কিশোররাও বালু পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে৷ নিমেষেই তারাও মেতে ওঠে স্বপ্নের সৌধ গড়ার খেলায়৷