আদালতে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নামে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে ইডি। তাতে উঠে এসেছে চমকপ্রদ কিছু তথ্য।
বিজ্ঞাপন
পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী এবং সাবেক খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে রেশন দুর্নীতি মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। গত সপ্তাহে তাকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) অফিসারেরা দীর্ঘ জেরার পর গ্রেপ্তার করেছে। এরপর আদালতে তার বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হল।
জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক রাজনৈতিক মহলে বালু নামে পরিচিত। সেটাই তার ডাকনাম। ইডির দাবি, খাদ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রেশনের টাকা নয়-ছয় করে বিপুল কালো টাকা করেছিলেন বালু। প্রাথমিক তদন্তে যা প্রায় ৩০ কোটি বলে মনে করছে ইডি। যদিও টাকার অঙ্ক এখনো প্রকাশ্যে আনেনি ইডি। ইডি-র সূত্র নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে ডয়চে ভেলেকে একথা জানিয়েছেন।
ইডির বিরুদ্ধে অভিষেক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাম, চাকুরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ
কলকাতায় রাজভবনের বাইরে প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ইডি-সিবিআই ও অভিষেকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখালো সিপিএম। তার কিছুটা দূরেই হবু শিক্ষকরা প্রায় তিন বছর ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
রাজভবনের সামনে
কলকাতায় রাজভবনের সামনে মঞ্চ তৈরি করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিতেই তিনি রাজভবন অভিযানের ঘোষণা করেছিলেন। বুধবার সেই অভিযানও করেন। কিন্তু রাজ্যপাল তখন কলকাতা ছিলেন না। অভিষেক ঘোষণা করেন, রাজ্যপাল না আসা পর্যন্ত তারা ওখানেই অবস্থান করবেন। দিল্লিতে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে হেনস্থা ও ইডি-সিবিআই যেভাবে কাজ করছে, তার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বন্যা দেখতে রাজ্যপাল
অভিষেক যখন রাজভবন অভিযান করছেন, তখন রাজ্যপাল বন্যা পরিস্থিতি দেখতে উত্তরবঙ্গে। সেখান থেকে তিনি দিল্লি চলে যান। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত তিনি কলকাতা ফেরেননি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অভিষেক বিক্ষোভে
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এখনো বিক্ষোভ দেখিয়ে যাচ্ছেন। রাতে তিনি বিক্ষোভস্থলের পিছনে চলে যান। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ তিনি আবার মঞ্চে আসেন। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা না করে তিনি যাবেন না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রচুর পুলিশ মোতায়েন
বিক্ষোভস্থলে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে রাজভবনের সামনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কী করে মঞ্চ করে বিক্ষোভ দেখানোর অনুমতি দেয়া হলো, সে প্রশ্নও তুলছেন বিরোধীরা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অভিষেকের মঞ্চে নেতা-মন্ত্রী
অভিষেকের মঞ্চে তৃণমূলের প্রচুর নেতা-মন্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে। সেখানে গান-বাজনাও হচ্ছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কাছেই শিক্ষক-প্রার্থীদের বিক্ষোভ
অভিষেক যেখানে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তার থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে গত প্রায় তিন বছর ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের কথা তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা অবশ্য কানে নেন না বলে বিক্ষোভকারীদের দাবি। তারা সকলেই শিক্ষক হওয়ার পরীক্ষায় পাস করেছেন। কিন্তু দুর্নীতির জন্য চাকরি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এখনো বিক্ষোভ দেখিয়ে যাচ্ছেন
তারা এখনো বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। হাতে পোস্টার। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তারা। তাদের বক্তব্য, রাজ্যের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে অভিষেক দিল্লি গিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, কলকাতায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তারাও তো এতদিন ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। কিন্তু তাদের কথা কেউ শোনে না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিপিএমের প্রতিবাদ
সিপিএমের নেতা সুজন চক্রবর্তীর দাবি, অন্য রাজ্যে ইডি-সিবিআই দুর্নীতির নামে বিরোধী দলের নেতাদের হেনস্থা করছে। আর পশ্চিমবঙ্গে তারা দুর্নীতির চাঁইদের ছেড়ে রাখছে। সেজন্যই সিজিও কমপ্লেক্সে অভিযানের ডাক দিয়েছিল সিপিএম। সেখানে কর্মী-সমর্থদের নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিপিএমের প্রচার
এই বাম দল বেশ কিছুদিন বলো বিজেমূলের তত্ত্ব সামনে এসেছে। এর অর্থ, বিজেপি ও তৃণমূল আসলে গোপনে হাত মিলিয়ে চলেছে। বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, রবীন দেবরা সমাবেশে এই অভিযোগই করেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পশ্চিমবঙ্গে ইন্ডিয়া জোট নয়
সিপিএম আগেই জানিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে তারা তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাবে না। এখানে বিরোধীদের জোট হবে না। ভোটের আগে তারাও দুর্নীতির অভিযোগকে হাতিয়ার করে রাস্তায় নেমে পড়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
10 ছবি1 | 10
তবে আদালতে ইডি জানিয়েছে, রেশন দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করার জন্য জ্যোতিপ্রিয় মোট তিনটি সংস্থা তৈরি করেছিলেন। আপ্ত সহায়ক অমিত দে-র নামে কেনা ফ্ল্যাটের ঠিকানায় ওই কোম্পানিগুলি রেজিস্টার করানো হয়েছিল। ওই সংস্থাগুলির ডিরেক্টর করা হয়েছিল মন্ত্রীর মেয়ে এবং স্ত্রীকে। শুধু তা-ই নয়, একটি সংস্থার ডিরেক্টর পদ দেওয়া হয়েছিল বাড়ির পরিচারককেও। দীর্ঘ ১৭ বছর ওই ব্যক্তি বালুর বাড়িতে কাজ করেন বলে ইডির অভিযোগ।
বাকিবুরকে গ্রেপ্তারের পর এই সমস্ত তথ্য ইডির হাতে এসেছে বলে জানা গেছে। বস্তুত, সোমবার দুপুরেও ইডি দপ্তরে অমিত দে-কে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। একটি চিঠি ইডি দপ্তরে দিয়ে গেছেন মন্ত্রীর দাদা। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, চিঠিতে কী আছে, তা তিনি জানেন না।
মন্ত্রী কন্যা সুকন্যাও রোববার ইডি দপ্তরে গেছিলেন। ডয়চে ভেলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু তিনি কথা বলতে চাননি। কেবল জানিয়েছেন, জ্যোতিপ্রিয় আগের মতোই আছেন। হাসপাতালে তার হল্টার মনিটারিং চলছে। যদিও রোববার রাতে হাসপাতাল জানিয়েছে, জ্যোতিপ্রিয়কে কেবিনে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। হল্টার মনিটারিং আর প্রয়োজন নেই।
এদিকে সোমবার ডয়চে ভেলের কাছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, ''দীঘায় বেনামে তিনটি হোটেল আছে জ্যোতিপ্রিয়ের। ৫০টাকার স্ট্যাম্প পেপারে ওই হোটলগুলির লিজ নেওয়া হয়েছিল।'' শুভেন্দুর দাবি, কালো টাকা সাদা করতে ওই হোটেলগুলি বেনামে নেওয়া হয়েছিল। যদিও ডয়চে ভেলে শুভেন্দুর এই অভিযোগ খতিয়ে দেখেনি। শুভেন্দু জানিয়েছেন, প্রয়োজনে তিনি ইডিকে তার এই অভিযোগ জানাবেন।
বাম এবং কংগ্রেস সোমবার কলকাতায় খাদ্যভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেপ্তারে এতটুকু অবাক নেই। রাজ্যের সর্বত্র দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে।''