বাল্টিক থেকে কৃষ্ণসাগর পর্যন্ত ন্যাটো ফোর্সের আবেদন
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
বাল্টিক রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে জার্মানির। তারাই ন্যাটোর কাছে এই আবেদন জানিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জার্মান চ্যান্সেলর এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট দুইজনেই জানিয়েছেন, রাশিয়া আলোচনার রাস্তা খুলতে আগ্রহী। শুধু তা-ই নয়, রাশিয়া জানিয়েছে, তারা যুদ্ধ চায় না। জার্মানি এবং ফ্রান্স দুই দেশই জানিয়েছে এসেছে, রাশিয়া সামান্য আগ্রাসন দেখালেও তাদের কঠিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে। কিন্তু এত কথার পরেও যে পূর্ব ইউরোপে উত্তেজনা প্রশমন হয়নি তা বুঝিয়ে দিল বাল্টিক অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলি।
বৃহস্পতিবার জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সঙ্গে তাদের দীর্ঘ বৈঠক হয়। বৈঠকে হাজির ছিলেন লাটভিয়া, এস্টোনিয়া এবং লিথুয়ানিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানরা। লাটভিয়ার প্রধানমন্ত্রী ক্রিসহানিস কারিন্স চ্যান্সেলর শলৎসকে জানান, তারা চাইছেন তাদের রাষ্ট্রে ন্যাটো বাহিনী মোতায়েন করা হোক। যেভাবে পূর্ব ইউরোপের প্রান্তে ইউক্রেনকে ঘিরে রাশিয়া সেনা সাজিয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতেই লাটভিয়ার এই আবেদন বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে একই সঙ্গে কারিন্স জানিয়েছেন, সরাসরি যুদ্ধের হুমকি আছে বলে তারা এখনো মনে করছেন না।
সত্যিই কি যুদ্ধপরিস্থিতিতে অস্ত্র পাঠায় না জার্মানি?
সংকটকালে জার্মানির কাছে অস্ত্র চেয়েছিল ইউক্রেন। কিন্তু জার্মানি জানিয়েছে তারা যুদ্ধপরিস্থিতিতে অস্ত্র পাঠায় না। সত্যি কি তাই?
ইউক্রেন সংকট শুরু হওয়ার পর জার্মানি সে দেশের সেনার জন্য বেশ কিছু যুদ্ধের হেলমেট পাটিয়েছিল। এরপর ইউক্রেন জার্মানির কাছে একাধিক প্রতিরক্ষার অস্ত্র চায়। কিন্তু জার্মানি জানিয়েছে, সংকটকালে, যুদ্ধপরিস্থিতিতে তারা অস্ত্র পাঠায় না। এটা জার্মানির নীতি।
ছবি: Getty Images
জার্মানির বক্তব্য
জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শোলৎস এবং জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক জানিয়েছেন, জার্মানি যুদ্ধপরিস্থিতিতে অস্ত্র পাঠায় না। তাতে যুদ্ধের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অস্ত্র পাঠাতে হলে সকলে মিলে ঘটনার মূল্যায়ন করতে হয়। ইউক্রেন সংকটের ক্ষেত্রে জোট সরকারের কেউই অস্ত্র পাঠানোর পক্ষে নয়।
ছবি: Pavlo Palamarchuk/AP/dpa/picture alliance
ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া
জার্মানির এই পদক্ষেপ মোটেই ভালো চোখে দেখছে না ইউক্রেন। বেয়ারবকের সঙ্গে বৈঠক করেননি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
ছবি: LEILA GORCHEV/AFP/Getty Images
সমাজমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
সমাজমাধ্যমে বহু মানুষ বলছেন, অতীতে যুদ্ধপরিস্থিতিতে অস্ত্র পাঠিয়েছে জার্মানি। তখন কোথায় ছিল তাদের নীতি? সৌদি আরব, তুরস্ক, মিশর, আরব আমিরাত সর্বত্র যুদ্ধে জার্মান অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে বলে অভিযোগ।
ছবি: Carsten Rehder/dpa/picture alliance
ফ্যাক্ট চেক: মিশর
জার্মানির অর্থ এবং পরিবেশ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট বলছে বহুদিন ধরে মিশরকে নিয়মিত অস্ত্র পাঠাচ্ছে জার্মানি। যে অস্ত্র মিশর ইয়েমেন এবং লিবিয়ার যুদ্ধে ব্যবহার করছে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র গত এক বছরে জার্মানি মিশরকে চার দশমিক তিন চার বিলিয়ন ইউরোর অস্ত্র বিক্রি করেছে।
ছবি: U.S. Navy/AP Photo/picture alliance
ফ্যাক্ট চেক: আরব
পরিসংখ্যান বলছে, ২০০২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে জার্মানি সৌদি আরবের কাছে কয়েকশো কোটি ইউরোর অস্ত্র বিক্রি করেছে। এর মধ্যে শুধু প্রতিরক্ষার অস্ত্র নয়, আক্রমণের অস্ত্রও আছে। ২০১৮ সালে সৌদি আরবকে ৪১ কোটি ৬০ লাখ ইউরোর অস্ত্র পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু জামাল খাশগজি খুনের পর অস্ত্র পাঠানোয় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জার্মানি। তারপরেও ২০২০ সালে সৌদি আরব তিন কোটি ৮০ লাখ ইউরোর জার্মান অস্ত্র পেয়েছে।
ছবি: Viktor Tolochko/Sputnik/dpa/picture alliance
আরব কী করে
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আরবও ওই অস্ত্র ইয়েমেনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। একাধিক মানবাধিকার রিপোর্ট বলছে, জার্মানির ওই অস্ত্র ব্যবহার করে আরব মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। কিন্তু জার্মানি অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করেনি।
ছবি: Viktor Tolochko/Sputnik/dpa/picture alliance
ফ্যাক্ট চেক: তুরস্ক
সাম্প্রতিককালে জার্মানির সঙ্গে তুরস্কের একাধিক বিষয়ে মতবিরোধ হয়েছে। কিন্তু তার জন্য তুরস্কের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ হয়নি। ওই অস্ত্র তুরস্ক লিবিয়া বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। কুর্দ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন ধরে ওই অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নানা কথা হয়েছে।
জার্মানির সরকারি রিপোর্ট বলছে, কাতারকেও নিয়মিত অস্ত্র বিক্রি করা হয়। কাতারও সেই অস্ত্র একাধিক যুদ্ধে ব্যবহার করেছে।
ছবি: Vadim Yakubyonok/BelTA/REUTERS
জার্মান অস্ত্র এবং আইএস
জার্মান গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, উত্তর ইরানের খোলা বাজারেও জার্মান অস্ত্র বিক্রি হচ্ছে। আইএস জঙ্গিদের হাতেও জার্মান অস্ত্র দেখা গেছে।
ছবি: Dabiq/Planet Pix via ZUMA Wire/ZUMAPRESS/picture alliance
10 ছবি1 | 10
শুধু লাটভিয়া নয়, বাকি দুইটি দেশও এই অভিমত সমর্থন করেছে। এস্টোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী কাজা কালাস স্পষ্ট জানিয়েছেন, তার দেশ ইউক্রেনকে সমর্থন করছে। রাশিয়া বন্দুকের নলের সামনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। তা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। তার বক্তব্য, ইউক্রেনকে হারিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে কোনোরকম সমঝোতায় রাজি নয় এস্টোনিয়া। এবং সে কারণেই ন্যাটোর ফোর্সকে তারা স্বাগত জানাচ্ছে।
অন্যদিকে ডেনমার্কও জানিয়ে দিয়েছে মার্কিন সেনাকে তারা স্বাগত জানাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ন্যাটো বাহিনী নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই। বস্তুত, শান্তির আলোচনা শুরু হলেও পূর্ব ইউরোপ জুড়ে সেনার সংখ্যা আরো বাড়িছে ন্যাটো এবং অ্যামেরিকা। জার্মানিও একাধিক দেশে নতুন করে সেনা পাঠিয়েছে।
জার্মান চ্যান্সেলর জানিয়েছেন, রাশিয়াকে একটি কথা বুঝে নিতে হবে। গোটা ইউরোপ একসঙ্গে আছে। রাশিয়া আগ্রাসন দেখালে গোটা ইউরোপ তার বিরোধিতা করবে। যুদ্ধ নয়, আলোচনার মাধ্যমেই তাই সমাধানসূত্রে পৌঁছাতে হবে।
গত কিছুদিনে আলোচনার পরিবেশ কিছুটা হলেও তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফ্রান্স এবং জার্মানির উদ্যোগে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা সম্ভব হয়েছে এবং তাতে উত্তাপ খানিকটা কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও রাশিয়াও এখনো পর্যন্ত সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার করেনি।