কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের চূড়ান্ত তালিকায় ছিলেন বাংলাদেশের মনি বেগম, যিনি বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন৷ বিজয়ী না হলেও মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
২০ নভেম্বর কিডস রাইট ফাউন্ডেশন এ বছরের আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার ঘোষণা করেন৷ সেখানে প্রথম তিনজনের চূড়ান্ত তালিকায় ছিলেন ১৭ বছরের বাংলাদেশি মনি বেগম৷ তিনি বাল্যবিবাহের হাত থেকে ২০০ টিরও বেশি মেয়েকে উদ্ধার করেছেন৷ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি গ্রামে তাঁর বসবাস৷
তাঁর বয়স যখন ১২ বছর তখন বড় বোনকে স্বামীর হাতে নির্যাতিত হতে দেখেছিলেন তিনি৷ তাঁর বোনের বিয়ে হয়েছিল ১২ বছর বয়সে৷ ঠিক সেসময় তাঁর এক বান্ধবীর বিয়ে ঠিক হয়, যা তিনি আটকে দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন৷ কিন্তু সেই ব্যর্থতা তাঁকে আরও সাহসী করে তোলে৷ ২০১৪ সালে তিনি বাল্যবিবাহ বন্ধে একটি ক্লাব গঠন করেন৷ আশেপাশের গ্রামে গিয়ে মেয়েদের উৎসাহ ও সাহস দিতে শুরু করেন, যাতে তারা নিজেরাই প্রতিবাদ শুরু করে৷ বর্তমানে এই ক্লাবের সদস্য সংখ্যা ৭০৷
১৬ নভেম্বর কিডস রাইটস তাদের পাতায় মনি বেগমের ভিডিও পোস্ট করে৷ এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ বার দেখা হয়েছে এটি৷ ৩১৯ বার শেয়ার হয়েছে৷ সবাই মনি বেগমকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ জুগিয়েছেন৷
যেসব দেশে যৌতুক আইনত নিষিদ্ধ, তবে...
বিশ্বের অনেক দেশে যৌতুক দেয়া বা নেয়া আইনত নিষিদ্ধ৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও এই চর্চা অব্যাহত রয়েছে৷ চলুন এরকম কয়েকটি দেশের কথা জেনে নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Vennemann
বাংলাদেশ
বাংলাদেশে ১৯৮০ সাল থেকে যৌতুক দেয়া বা নেয়া নিষিদ্ধ৷ তবে মাঝেমাঝেই দেশটিতে যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীর উপর নির্মম নির্যাতন বা যৌতুক চাওয়ায় স্বামীর কারাবাসের খবর শোনা যায়৷ কখনো কখনো স্বামীর পরিবারের যৌতুকের চাহিদা মেটাতে না পেরে নারীদের আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে৷
ছবি: picture-alliance/ANN/courtesy of Maheen Khan
ভারত
ভারতে ১৯৬১ সালে যৌতুক প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়৷ কিন্তু তারপরেও যৌতুক প্রথা অব্যাহত রয়েছে৷ বিয়ের সময় হিন্দু নারীদের পরিবারের তরফ থেকে অনেক উপহার দেয়া হয় নবদম্পতিকে৷ এই চর্চা হিন্দু সমাজে দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত রয়েছে৷ দেশটিতে প্রতি ঘণ্টায় একজন নারী যৌতুক সংক্রান্ত কারণে মৃত্যুবরণ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/D. Solanki
পাকিস্তান
যৌতুক অবৈধ করতে পাঁচটি আলাদা আলাদা আইন করেছে করেছে পাকিস্তান৷ প্রথম আইনটি করা হয়েছিল ১৯৬৪ সালে, আর সর্বশেষটি ২০০৮ সালে৷ তা সত্ত্বেও যৌতুক প্রথা থামানো যায়নি৷ যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীর গায়ে এসিড নিক্ষেপের ঘটনাও দেশটিতে বিরল নয়৷
ছবি: picture-alliance/AA/M. Bilal
নেপাল
নেপালে যৌতুক নিষিদ্ধ হয়েছে খুব বেশি দিন হয়নি৷ সামাজিক প্রথা এবং চর্চা অ্যাক্টের আওতায় ২০০৯ সালে যৌতুক নিষিদ্ধ করা হয়েছে দেশটিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/N. Shrestha
কেনিয়া
যে কোনো ধরনের যৌতুক দেয়া বা নেয়া কেনিয়াতে নিষিদ্ধ হয়েছে ২০১২ সালে৷ দেশটিতে পুরুষদের যৌতুক দিতে হয়৷ আর সেই যৌতুক কী হবে তা নির্ধারণে রীতিমত দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনাও হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/D. Kurokawa
গ্রিস
যৌতুক প্রথা গ্রিসে নিষিদ্ধ করা হয় ১৯৮৩ সালে৷ ইউরোপের দেশটির পাহাড়ি অঞ্চলে অতীতে যৌতুক দেয়া ছাড়া মেয়েদের বিয়ে দেয়া একরকম অসম্ভব ব্যাপার ছিল৷ তবে এখন পরিস্থিতি অনেক বদলেছে৷
পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইনের আওতায় চলতি বছরের মে মাসে অস্ট্রেলিয়ায় যৌতুক বাতিল করা হয়েছে৷ ২০১৪ সালে সেদেশে বসবাসরত এক ভারতীয় নারী যৌতুক দিতে না পারায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন৷ সেই ঘটনার পর দেশটিতে অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে যাতে যৌতুকের দেয়া বা নেয়া চলতে না পারে সেদিকে কড়া নজর দেয়া হয়৷