বাল্যবিবাহ কমলেও আশঙ্কা রয়েই গেছে
২৫ নভেম্বর ২০১৬‘ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিচার্স ইন্সটিটিউট’ আইএফপিআরআই-এর গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৯৬ থেকে থেকে ২০০৫ সালে বাংলাদেশে ১৫ বছরের কম বয়সি মেয়েদের বিয়ের হার ছিল শকরা ১৫ দশমিক ৯ ভাগ, ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের বিয়ের হার ছিল ৪৬ দশমিক ৫ ভাগ৷ সব মিলিয়ে বাল্য বিবাহের হার ছিল শতকরা ৬২ দশমিক ৩ ভাগ৷
আর ২০০৬ সাল থেকে ২০১৫ সালে ১৫ বছরের কম বয়সি মেয়েদের বিয়ের হার শকরা ৫ দশমিক ৪ ভাগ, ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের বিয়ের হার ৩৭ দশমিক ৮ ভাগ৷ সব মিলিয়ে বাল্য বিবাহের হার শতকরা ৪৩ দশমিক ২ ভাগ৷
দৃশ্যত বাল্যবিয়ের হার কমলেও তাতে আত্মতৃপ্তির তেমন কোনো কারণ নেই৷ গত দুই দশকে ১৫ বছরের কম বয়সিদের বিবাহের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমলেও মধ্যবর্তী ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের বিয়ের হার বেশি কমেনি৷ মাত্র ১০ভাগের মতো কমেছে৷ বাল্যবিবাহ কমার কারণ হিসেবে দেখানো ১৫ বছর বয়সিদের বিবাহের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমা বাল্যবিবাহের হার কমায় ভূমিকা রেখেছে৷
এই গবেষণা প্রতিবেদনটি এমন এক সময়ে প্রকাশ করা হলো যখন বাংলাদেশ সরকার বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিবাহ নিষিদ্ধ আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে৷ বাল্যবিবাহ রোধ আইন-২০১৬-এর ওই খসড়ায় বলা হয়েছে মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর৷ তবে পিতা-মাতা ও আদালতের অনুমতিসাপেক্ষে বিশেষ বিবেচনায় ১৮ বছরের নীচেও বিয়ে বৈধ হবে৷ আর ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১ বছর৷
আইএফপিআরআই এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের হাউজহোল্ড সার্ভের তথ্য ব্যবহার করে৷ আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুরোধে তারা এই গবেষণাটি করে ২০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেয়৷
২০১৫ সালের হাউজহোল্ড সার্ভে করা হয় দেশের সাতটি বিভাগ ঢাকা, বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটের ৬,৫০০ পরিবারের কাছ থেকে নেয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে৷
গবেষণায় যে বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে তা হলো, অনিরাপদ মাতৃত্ব৷ বাংলাদেশের গর্ভবর্তী মায়েদের শতকরা ৬০ ভাগই কিশোরী৷ ফলে সন্তান জন্ম দেয়ার সময় নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়৷ তারা কম ওজন এবং এবং অপুষ্ট শিশু জন্ম দেন৷ আর কিশোরী বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে তাদের পড়াশুনা ছেড়ে দিতে হয়৷ পরবর্তীতে তারা কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়ে৷ এই মায়েরা নিজগৃহে নির্যাতনের শিকার হন৷ অর্থনৈতিক , সামাজিক এবং পারিবারিকভাবে তাদের সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটে৷
নারী নেত্রী এবং মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মানুষের মধ্যে এক ধরণের সচেতনতা বেড়েছে আর সে কারণেই ১৫ বছর বয়সের নীচে মেয়েদের বিবাহের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে৷ কিন্তু প্রধান আশঙ্কার জায়গা হলো, ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরির্তন তেমন হয়নি৷ আর এই বয়সের মেয়েদের প্রধানত বাংলাদেশে নিরাপত্তার কারণে অভিভাবকরা বিয়ে দিয়ে দেন৷''
তিনি বলেন, ‘‘সরকার নতুন যে আইন অনুমোদন করেছে তাতে এই আশঙ্কা আরো বেড়ে যাবে৷ বিশেষ ব্যবস্থায় অভিভাবকরা আদালতের অনুমতি নিয়ে ১৮ বছরের নিচের মেয়েদেরও বিয়ে দিতে পারবেন৷ এই আইনের অপব্যাহার হবে৷ এতে ওই ধরণের বিবাহ বেড়ে যাবে এবং অনিরাপদ মাতৃত্ব আরো বেড়ে যাবে, কারণ, বিয়ে বৈধ হলে মাতৃত্ব অবৈধ করা যায়না৷’’
তিনি মনে করেন, ‘‘এর ফলে নারী উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে৷ শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের প্রশ্নে নারীর পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে৷''
আর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ হাসিনা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সের মেয়েদের গর্ভধারণ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ৷ এই বয়সে গর্ভধারণ নানা শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি করে৷ তা দীর্ঘমেয়াদে মায়ের শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷ এর ফলে অপুষ্ট এবং কম ওজনের শিশু জন্ম নেয়৷ ওই শিশু নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হয়৷''
তাই তাঁর পরামর্শ, ‘‘ওই বয়সে মাতৃত্ব বা গর্ভধারণ কোনোভাবেই উৎসাহিত করা ঠিক না৷’’
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে নীচে মন্তব্যের ঘরে লিখুন৷